ভবঘুরেকথা
মহাত্মা ফকির লালন সাঁইজি

ফকির লালনের বাণী : সাধকদেশ

৭০১.
হাওয়া দমের যে কারিগরি নিগুম তত্ত্বে শুনি
বলতে ডরাই সে সব অসম্ভব বাণী।

৭০২.
লীলা নিত্যকারী হাওয়া যোগেশ্বরী
হাওয়ার ঘরে দমের হয় লেনাদেনা।

৭০৩.
ও সে বাদশা নির্বাণ হাওয়ার গুণ বলিব কি আর
এক অঙ্গে দম হলো আর এক অঙ্গে শুমার।

৭০৪.
হাওয়ার দম শুমারে খেলছে সদায় ঘরে
কলকাঠি যার হাতে বাইরে সে জনা।

৭০৫.
ও সে হাওয়া শক্তি ধরে যোগে জানতে পারে
নিগূঢ় করণ কারণ সেই যাবে সেরে।

৭০৬.
লালন বলে মোর কোলে বিষম ঘোর
হাওয়ায় ফাঁদ পাতিলে সব যেতো জানা।

৭০৭.
পড়ো ইবনে আবদুল্লা।
পড়লে যাবে জীবের
মনের ময়লা।

৭০৮.
একরা বিসমে রাব্বিকা
আছে সুরা ত্রিশ পারা
নবিজী তা পড়ে না;
জিবরাইল তা শোনে না
মোহর নবুয়ত দিলেন খোদাতালা।

৭০৯.
হেরা পর্বত গুহাতে
বসেছিলেন দীনের নবী মোশাহেদাতে
সেথায় জিবরাইল হয়ে হাজির
খেলাফত দিলেন মালেক আল্লা।

৭১০.
নবির পৃষ্ঠে মোহর নবুয়ত রয়
আশেকেতে আকাশ দেখে
ভক্তগণকে কয়;
লালন বলে এ ভেদ জানলে
যাবে মনের ত্রিতাপজ্বালা।

৭১১.
আগে কপাট মারো কামের ঘরে,
মানুষ ঝলক দেবে রূপ নিহারে।

৭১২.
হাওয়া ধর অগ্নি স্থির করো
যাতে মরিয়ে বাঁচিতে পারো।

৭১৩.
বারে বারে করি মানা
লীলার বসে বাস করো না।

৭১৪.
জানো না মন পারাহীন দর্পণ
তাতে কি হয় রূপ দরশন।

৭১৫.
কে তোমারে এ বেশভূষণ
পরাইল বলো শুনি,
জিন্দাদেহে মূর্দার বসন
খিরকা তাজ আর ডোর কোপনী।

৭১৬.
জ্যান্তে মরার পোশাক পরা
আপন সুরত আপনি সারা,
ভবলোক ধ্বংস করা
এহি তো অসম্ভব করণই।

৭১৭.
মরনের যে আগে মরে
শমন ছোঁবে না তাঁরে,
শুনেছি তাই সাধুর দ্বারে
তাই বুঝি করছো ধনী।

৭১৮.
সেজেছো সাজ ভালোই তোরো
মরে যদি বাঁচতে পারো,
লালন বলে যদি ফেরো
দুকুল হবে অপমানী।

৭১৯.
সে কি আমার কবার কথা আপন বেগে আপনি মরি।
গৌর এসে হৃদয়ে বসে করলো আমার মন-চুরি।

৭২০.
কিবা গৌর রূপ লম্পটে
ধৈর্যের ডুরি দেয় গো কেটে।

৭২১.
লজ্জা ভয় সব যায় গো ছুটে
যখন ওই রূপ মনে করি।

৭২২.
গৌর দেখা দিয়ে ঘুমের ঘোরে
চেতন হয়ে পাই নে তারে।

৭২৩.
মেঘে যেমন চাতকেরে
দেখা দিয়ে ফাঁকে ফেলে,
লালন বলে তাই আমারে
করলো গৌর বরাবরই।

৭২৪.
আপন ঘরের খবর নেনা।
অনা’সে দেখতে পাবি
কোনখানে সাঁইর বারামখানা।

৭২৫.
কোমলকোঠা কারে বলি
কোন মোকাম তার কোথা গলি।

৭২৬.
কোন সময় পড়ে ফুলি
মধু খায় সে অলিজনা।

৭২৭.
সূক্ষ্মজ্ঞান যার ঐক্য মুখ্য
সাধকেরই উপলক্ষ।

৭২৮.
অপরূপ তার বৃক্ষ
দেখলে চোখের পাপ থাকে না।

৭২৯.
শুক্লনদীর সুখ সরোবর
তিলে তিলে হয় গো সাঁতার।

৭৩০.
দেখে শুনে জ্ঞান হইলো না।
কি করিতে কি করিলাম
দুগ্ধেতে যেমন মিশালি চোনা।

৭৩১.
মদন রাজার ডাংকা ভারি
হলাম তাহার আজ্ঞাকারি।

৭৩২.
যার মাটিতে বসত করি
চিরদিন তারে চিনলাম না।

৭৩৩.
রাগের আশ্রয় নিলে রে মন
কি করিতে পারে মদন।

৭৩৪.
আমার হলো কামলোভী মন
মদন রাজার গাটরি টানা।

৭৩৫.
উপর হাকিম একই দিনে
দয়া করেন নিজগুণে।

৭৩৬.
ভুলবো না ভুলবো না বলি
কাজের বেলায় ঠিক থাকে না,
আমি বলি ভুলবো নারে
স্বভাবে ছাড়ে না মোরে।

৭৩৭.
কটাক্ষে মন পাগল করে
দিব্যজ্ঞানের দিয়ে হানা,
সঙ্গগুণে রঙ্গ ধরে
জানলাম কার্য অনুসারে।

৭৩৮.
কুসঙ্গে সম্বন্ধ জুড়ে সুমতি
মোর গেলো ছেড়ে,
খাবি খেলাম আপায়
পড়ে এ লজ্জা মলেও যায় না।

৭৩৯.
যে চোরের দায় দেশান্তরী
সে চোর হলো সঙ্গধারী মদনরাজার,
ডঙ্কা ভারি কামজ্বালা দেয়
অন্তপুরী ভুলে যায়।

৭৪০.
মোর মনকাণ্ডারি কী
করবে গুরুজনা,
রঙ্গে মেতে সঙ্গ সাজিয়ে
বসি আছি মগ্ন হয়ে।

৭৪১.
সুসঙ্গের সঙ্গ করে
জানতাম যদি সুসঙ্গেরে,
লালন বলে তবে কিরে
ছ্যাঁচড়ে মারে মালখানা।

৭৪২.
মনেরে বুঝাইতে আমার দিন হলো আখেরি।
বোঝে না সে আপন মরণ
একি অবিচারি।

৭৪৩.
ফাঁদ পাতিলাম শিকার বলে
সে ফাঁদ বাধিল আপন গলে।

৭৪৪.
পর ধরতে যাই লোভ দেখায়ে
আপনি লোভে পড়ি যেয়ে,
হাতের মামলা হারাইয়ে
কেঁদে কেঁদে ফিরি।

৭৪৫.
ছা’র জন্য আনলাম আদার
আদারে ছা খেল এবার,
লালন বলে বুঝলাম আমার
ভগ্নদশা ভারি।

৭৪৬.
মনেরে বুঝাবো কতো।
যে পথে মরণ ফাঁসি
সেই পথে মন সদাই রত।

৭৪৭.
যে জলে লবণ জন্মায়
সেই জলে লবণ গলে যায়।

৭৪৮.
তেমনি আমার মন মনোয়
একা একা হচ্ছে হত।

৭৪৯.
চারের লোভে মৎস গিয়ে
জলের উপর পড়ে ঝাঁপিয়ে।

৭৫০.
তেমনি আমার মন ভেয়ে
মরণ ফাঁসি নিচ্ছে সে তো।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!