ফকির লালনের বাণী : সাধকদেশ
৯০১.
যে দুখে আমার মন
আছে সদায় উচাটন
বললে সারে না;
গুরু বিনে আর না দেখি কিনার
তারে আমি ভজলাম না।
৯০২.
অনাথের নাথ যে জনা মোর
সে আছে কোন অচিন শহর
তারে চিনলাম না;
কি করি কি হয়, দিনের দিন যায়
কবে পুরবে মনের বাসনা।
৯০৩.
অন্য ধনের নয় রে দুখী
মন বলে হৃদয়ে রাখি
শ্রীচরণখানা;
লালন বলে, মোর পাপের নাই ওর
তাইতে আশা পূর্ণ হল না।
৯০৪.
মনচোরারে কোথা পাই।
কোথা যাই মনরে আজ
কিসে বোঝাই।
৯০৫.
নিস্কলঙ্ক ছিলাম ঘরে
কিবা রূপ নয়নে হেরে
প্রাণে আমার ধৈর্য নাই।
৯০৬.
ও সে চাঁদ বটে কি মানুষ দেখে হলাম বেঁহুশ
থেকে থেকে আমার মনে পড়ে তাই।
৯০৭.
রূপের কালে আমায় দংশিলে
ও বিষ উঠিল ধেয়ে ব্রক্ষমূলে
কেমনে সে বিষ নামাই।
৯০৮.
ও বিষ গাঁঠরী করা না যায় হরা
কী করিবে এসে করিরাজ গোঁসাই।
৯০৯.
মন বুঝে ধন দিতে পারে
কে আছে এই ভাবনগরে
কার কাছে এই প্রাণে জুড়াই।
৯১০.
যদি গুরু দয়াময় এই অনল নিভায়
লালন বলে সেই তো উপায়।
৯১১.
কোন রসে কোন রতির খেলা।
জানতে হয় এই বেলা।
৯১২.
সাড়ে তিন রতি বটে, লেখা যায় শাস্ত্র পাটে
সাধকের মূল তিন রস ঘটে, তিনশো ষাট রসের বালা।
৯১৩.
জানিলে সেই রসের ভিয়ান
রসিক তারে যায় বলা।
৯১৪.
তিন রস সাড়ে তিন রতি, বিভাগ করে স্থিতি
গুরুঠাঁই জেনে পাতি; সাধন করে নিরালা,
তখন মানুষ জনম সফল হবে
এড়াবে শমন জ্বালা।
৯১৫.
রসরতির নাই বিচক্ষণ, আন্দাজী কি হয় রে সাধন
কিসে হয় পাপ্তি সে ধন; মেটে না মনের ঘোলা,
উজান কি ভেটেনে পড়ি
ত্রিবেণীর ত্রি-নালা।
৯১৬.
শুদ্ধ রসের রসিক হলে, রসতরি উজান চলে
ভিয়ানে সিদ্ধি ফলে; অমৃত মিছরী উলা,
লালন বলে কেবল আমার
শুধুই জল তোলা ফেলা।
৯১৭.
শুদ্ধপ্রেম সাধলো যাঁরা কামরতি রাখলো কোথা,
বল গো রসিক রসের মাফিক ঘুঁচাও আমার মনের ব্যথা।
৯১৮.
আগে উদয় কামের রতি রস আগমন তাহে গতি,
সেই রসে করে স্থিতি খেলছে রসিক প্রেমদাতা।
৯১৯.
মন জানে না রসের করণ জানে না সে প্রেমের ধরন,
জলসেচিয়ে হয়রে মরণ কথায় কেবল বাজি জেতা।
৯২০.
মনের বাধ্য যেজন আপনার আপনি ভোলে সে জন,
বেবে কয় ফকির লালন ডাকলে সে তো কয় না কথা।
৯২১.
আমার হয় না রে সে মনের মত মন
কিসে জানবো সেই রাগের কারণ।
৯২২.
আমি জানবো কি সে রাগের কারণ
আমার হয় না রে সে মনের মত মন।
৯২৩.
পড়ে রিপু ইন্দ্রিয় ভোলে
মন বেড়ায় রে ডালে আলে
দুই মনে এক মন হইলে
এড়াই শমন।
৯২৪.
হয় না রে সে মনের মত মন
আমার হয় না রে সে মনের মত মন।
৯২৫.
রসিক ভক্ত যারা মনে মন মিশালো তারা
শাসন করে তিনটি ধারা
পেল রতন
তারা পেল রতন।
৯২৬.
হয় না রে সে মনের মত মন
আমার হয় না রে সে মনের মত মন।
৯২৭.
কবে হবে নাগিনী বস সাধবো কবে অমৃত-রস
দরবেশ সিরাজ সাঁই কয়, বিষে বিনাশ
হলি লালন।
৯২৮.
হয় না রে সে মনের মত মন
আমার হয় না রে সে মনের মত মন।
৯২৯.
কিসে জানবো সেই রাগের কারণ
ও কিসে জানবো
সেই রাগের কারণ।
৯৩০.
হয় না রে সে মনের মত মন
আমার হয় না রে সে মনের মত মন।
৯৩১.
সে করণ সিদ্ধি করা সামান্যের কাজ নয়।
গরল হতে সুধা নিতে আতশে প্রাণ যায়।
৯৩২.
সাপের মুখে নাচায় বেঙ্গা
এ বড় আজব রাঙ্গা।
৯৩৩.
রসিক যদি হয় রে ঘোঙ্গা
তারে অমনি ধরে খায়।
৯৩৪.
ধন্বন্তরি গুণ শিখিলে
সে মানে না রূপের কালে।
৯৩৫.
সে গুণ তার উল্টায়ে ফেলে
মস্তকে দংশায়।
৯৩৬.
আত্মতত্ত্বের যে অনুরাগী
নিষ্ঠা রতি ভড়ং ত্যাগী।
৯৩৭.
লালন বলে রসিক যোগী
সে তো আমার কার্য নয়।
৯৩৮.
কোন সাধনে শমনজ্বালা যায়,
ধর্মাধর্ম বেদের মর্ম মনের অধিকার রয়।
৯৩৯.
দান যজ্ঞ স্তব ব্রত কর পুণ্যফল সে পেতে পারে,
সে ফল ফুরায়ে গেলে আবার ঘুরতে ফিরতে হয়।
৯৪০.
নির্বাণ মুক্তি সেধে সে তো লয় হবে পশুর মতো,
সাধন করে এমন তত্ত্ব মুখে কেবা সাধতে চায়।
৯৪১.
পথের গোলমালে পড়ে মূল হারালাম নদীর জলে,
লালন বলে কেশে ধরে লাগাও গুরু কিনারায়।
৯৪২.
কোন সাধনে পাই গো তারে,
মন অহির্নিশি চায় গো যারে।
৯৪৩.
দান যজ্ঞ স্তব ব্রত তাতে গুরু হয় না রত,
সাধুশাস্ত্রে কয় সদা তো কোনটি জানি সত্য করে।
৯৪৪.
পন্চ প্রকার মুক্তিবিধি অষ্টাদশ প্রকারে সিদ্ধি,
এই সকল হেতুভক্তি তাতে বশ নয় শাঁইজি মোরে।
৯৪৫.
ঠিক পড়ে না প্রবর্তের ঘর সাধন সিদ্ধি হয় কী প্রকার,
সিরাজ শাঁই কয় লালন তোমার নজর হয় না কোলের ঘোরে।
৯৪৬.
আমি কোন সাধনে তারে পাই।
আমার জীবনের জীবন সাঁই।
৯৪৭.
সাধিলে সিদ্ধির ঘরে
শুনেছি সেও পায় না তারে
সাধু যে ব্যক্তি।
৯৪৮.
পেলে যে মুক্তি
ও কে যাবে অমনি শুনি রে ভাই।
৯৪৯.
শাক্ত শৈব্য বৈরাগ্য ভাব
তাতে যদি হয় চরণ লাভ
তবে দয়াময়;
কেন সর্বদায়
বিধি বলে দুষিবে তাই।
৯৫০.
গেল না রে মনের ভ্রান্ত
পেলেন না সে ভাবের অন্ত
কয় মূঢ লালন;
ভবে এসে মন
কি করিতে ওরে কি করে যাই।