ভবঘুরেকথা
ফকির লালন

ফকির লালনের বাণী : সাধকদেশ

১০০১.
অসময়ে কৃষি করে
মিছামিছি খেটে মরে
গাছ যদিও হয় বীজের জোরে, ফল ধরে না।

১০০২.
অমাবস্যায় পূর্ণিমা হয়
মহাযোগ সেই দিনে উদয়
লালন বলে তাহার সময় দণ্ড রয় না।

১০০৩.
দেখো না আপন দেল মন ঢুঁড়ে।
দীন দুনিয়ার মালিক সে যে আছে ধড়ে।

৮০৪.
আপনি ঘর সে আপনি ঘরী
আপনি করে চৌকিদারী,
আপনি সে করে চুরি
আপন ঘরে।

১০০৫.
আপনি ফানা আপনি ফকির
আপনি করে আপনার জিকির,
বুঝবে কেরে আলেক ফিকির
বেদভাষা পড়ে।

১০০৬.
নানা ছলে নানান মায়ায়
আমি আমি শব্দ কে কয়,
লালন কয় ছন্দি যে পায়
ঘোর যায় ছেড়ে।

১০০৭.
কীর্তিকর্মার খেলা কে বুঝতে পারে।
যে নিরাঞ্জন সে-ই নূরনবী
নামটি ধরে।

১০০৮.
চারেতে নাম আহাম্মদ হয়
মীম হরফ তার নফী লেখা যায়।

১০০৯.
এই কথাটি জানবো কোথায়
নিশ্চিত করে।

১০১০.
গঠিত সাঁই সয়াল সংসার
এক দেহে দুই দেহ হয় তার,
আহাদ আহাম্মদের বিচার
দেখ বিচারে।

১০১১.
এ কথা যাহারে শুধায়
ফাজেল সদা ঝগড়া বাধায়,
লালন বলে স্থুল ভুলে যায়
বৈদিকের তোড়ে।

১০১২.
গুরুর দয়া যারে হয় সেই জানে।
যে রূপে সাঁই বিরাজ
করে দেহ ভুবনে।

১০১৩.
শহরে সহস্র পাড়া
তিনটি পথ তার এক মহেড়া,
আলেক সোয়ার পবন ঘোড়া
ফিরছে সেইখানে।

১০১৪.
জলের বিম্ব আলের উপর
অখণ্ড প্রলয়ের মাঝার,
বিন্দু তে হয় সিন্ধু তাহার
ধারা বয় ত্রিগুণে।

১০১৫.
হাতের কাছে আজব শহর
রঙ বিরঙে উঠছে লহর,
সিরাজ সাঁই কয় লালন রে তোর
সদাই ঘোর মনে।

১০১৬.
গুরুপদে মতি আমার কই হলো।
আজ হবে কাল হবে বলে
কথায় কথায় দিন গেল।

১০১৭.
ইন্দ্ৰ আদি সব বিবাদী
সদায় বাধায় কল,
তারা কেউ শোনে না কারো কথা
উপায় কী করি বল।

১০১৮.
যে রূপ দেখি তাইতে আঁখি
হয়ে যায় রে বে-ভুলো,
দীপের আলো দেখে যেমন
পতঙ্গ পুড়ে মলো।

১০১৯.
কী করিতে এলাম ভবে
কী করে জনম গেল,
লালন বলে যজ্ঞের ঘৃত
সকলি কুত্তায় খেল।

১০২০.
গুরু রূপের পুলক ঝলক দিচ্ছে যার অন্তরে।
কিসের আবার সাধনভজন লোক জানিত করে।

১০২১.
বকের ধরণ করণ তাহার হয়
দিক ছাড়া তার নিরিখ সদায়,
ও সে পলক ভরে নিরিখ ধরে
যায় সে ভব পারে।

১০২২.
জ্যান্তে গুরু না পেলে হেথা
ম’লে পায় কথার কথা,
সাধক জানে গুরু মিলে না যথাতথা
সদায় দেখে ভজে তারে।

১০২৩.
গুরু ভক্তের তুল্য দেব কি
যে ভক্তিতে সাঁই থাকে রাজি,
লালন বলে গুরু রূপে
নি-রূপ মানুষ ফেরে।

১০২৪.
যে যা ভাবে সেইরূপ সে হয়,
রাম রহিম করিম কালা একই আল্লাহ জগতময়।

১০২৫.
কুল্লে সাইয়ুন মোহিত খোদা আল কোরানে কয় সে কথা,
এ কথা যার নাইরে বিচার পড়ে গোল বাঁধায়।

১০২৬.
আকার সাকার নাই নিরাকারে একে অস্তউদয় নির্জন ঘরে,
রূপ নিহারে এক বিনেরে তা কি দেখা যায়।

১০২৭.
এক নিহারে দাও মন আমার ছাড়িয়ে দুন আল্লাহর,
লালন বলে একরূপ খেলে ঘটে পটে সব জায়গায়।

১০২৮.
এ কি অনন্ত লীলা তার দেখ এবার।
আলেক পুরুষ খাকে বারি
ক্ষণেক ক্ষণেক হয় নিরাকার।

১০২৯.
আছে সাঁই নিরাকারে
ছিল কুদরতের জোরে,
সংসার সৃজনের তরে
ধরিলে প্রকৃতি আকার।

১০৩০.
শুনি সাঁই করিম কয় তার
কার অংশে তিন আকার,
কারে ভজে কারে পাব
দিশে পাইনে তার।

১০৩১.
ভেবে পাইনে তার অন্বেষণ
মনে কি বা পাবি তখন,
বিনয় করে বলছে লালন
ঘুঁচাও আমার ঘোর অন্ধকার।

১০৩২.
মূল হারালাম লাভ করতে এসে
দিয়ে ভাঙ্গা নায় বোঝাই ঠেসে।

১০৩৩.
জনমভাঙ্গা তরী আমার
বল ফুরালো জল সেঁচে।

১০৩৪.
গলুই ভাঙ্গা জলুই খসা
বরাবরই এমনি দশা।

১০৩৫.
গাবকালিতে যায় না কসা
কী করি তার নাই দিশে।

১০৩৬.
কত ছুতোর ডেকে আনি
সারতে এই ভাঙ্গা তরণী।

১০৩৭.
এক জাগায় খোঁচ গড়তে অমনি
আর এক জাগায় যায় খসে।

১০৩৮.
যে ছুতোরের নৌকা গঠন
তারে যদি পেতাম এখন।

১০৩৯.
চিরদিন জল সেঁচে আর
জল মানে না এই ভাঈা নায়।

১০৪০.
একমালা জল সেঁচতে গেলে
তিন মালা য়োগায় তেতলায়।

১০৪১.
আগা নায়ে মন মনোরায়
বসে বসে চুকুম খেলায়।

১০৪২.
আমার দশা তলা ফাসা
জল সেঁচি আর শুধরি গরাই।

১০৪৩.
ছুতোর ব্যাটার কারসাজিতে
জনম তরীর ছাদ আটা নাই।

১০৪৪.
নৌকায় আশে পাশে কাষ্ঠ সরল
মেজেল কাঠ গড়েছে তলায়।

১০৪৫.
মহাজনের অমূল্য ধন
মারা গেলো ডাকনী জোলায়।

১০৪৬.
ফকির লালন কয়
কী জানি হয় নিকাশের বেলায়।

১০৪৭.
সামাল সামাল সামাল তরী।
ভব নদীর তুফান ভারি।

১০৪৮.
নিরিখ রেখ ঈশান কোণে
চালাও তরী স্বযতনে।

১০৪৯.
খালি খালি মরবি প্রাণে
জানা যাবে মাঝিগিরি।

১০৫০.
না জানি কি হয় কপালে
চণ্ডিপাঠ ডুবিল জলে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!