ভবঘুরেকথা
ফকির লালন শাহ্

ফকির লালনের বাণী : সাধকদেশ

১১৫১.
গুরু সুভাব দাও আমার মনে
রাঙা চরণ যেন ভূলি নে।

১১৫২.
তুমি নির্দয় যার প্রতি
ও তার সদায় ঘটে কুমতি।

১১৫৩.
তুমি মনোরথের সারথী
যথা লও যাই সেইখানে।

১১৫৪.
তুমি মন্ত্রের মন তরী
গুরু তুমি তন্ত্রের তন্তরী।

১১৫৫.
গুরু তুমি যন্ত্রের যন্তরী
না বাজাও বাজবে কেনে।

১১৫৬.
জন্ম অন্ধ মোর নয়ন
গুরু তুমি বৈদ্য সচেতন।

১১৫৭.
অতি বিনয় করে বলছে লালন
জ্ঞান অঞ্জন দাও নয়নে।

১১৫৮.
আমার দিন কি যাবে এই হালে
আমি পড়ে আছি অকূলে।

১১৫৯.
কত অধম পাপী তাপী
অবহেলে ত্বরাইলে।

১১৬০.
জগাই মাধাই দুটি রে ভাই
কাদা ফেলে মারিল গায়
প্রভু তারেও তো নিলে।

১১৬১.
আমি কি তোর কেহ নই দয়াল
তাই কি মনে ভাবিলে।

১১৬২.
অহল্যা পাষাণী ছিল
সেও তো মানব হলো
প্রভুর চরণ ধুলে।

১১৬৩.
আমি পাপী ডাকি সদায়
দয়া হবে কোন কালে।

১১৬৪.
তোমার নাম লয়ে যদি মরি
তবুও দেখব তোমারি
আমি যাব কোন কূলে।

১১৬৫.
তোমা বৈ আর কেউ নাই আমার
মূঢ লালন কেঁদে কয়।

১১৬৬.
মানুষ লুকায় কোন শহরে।
এবার মানুষ খুঁজে পাইনে তারে।

১১৬৭.
ব্রজ ছেড়ে নদীয়া এলো
তার পূর্বান্তরে খবর ছিল,
এবে নদে ছেড়ে কোথায় গেল
যে জান বল মোরে।

১১৬৮.
স্বরুপ সেই রুপ দেখা
যেমন চাঁদের আভা।

১১৬৯.
এমনি মতো থাকে কোথা
প্রভু ক্ষণেক ক্ষণেক বারাম দেয় রে।

১১৭০.
কেউ বলে তার নিজ ভজন
করে নিজ দেশে গমন।

১১৭১.
মনে মনে ভাবে লালন
এবার নিজ দেশ বলি কারে।

১১৭২.
মিলন হবে কত দিনে
আমার মনের মানুষের সনে।

১১৭৩.
চাতক প্রায় অহর্নিশি
চেয়ে আছে কালো শশী।

১১৭৪.
হব বলে চরণদাসী
তা হয় না কপাল গুণে।

১১৭৫.
মেঘের বিদ্যুৎ মেঘে যেমন
লুকালে না পায় অন্বেষণ।

১১৭৬.
কালারে হারায়ে তেমন
ঐ রূপ হেরি এ দর্পণে।

১১৭৭.
ঐ রূপ যখন স্মরণ হয়
থাকে না লোকলজ্জার ভয়।

১১৭৮.
লালন ফকির ভেবে বলে সদাই
ও প্রেম যে করে সেই জানে।

১১৭৯.
সেই অটল রূপের উপাসনা।
ভবে কেউ জানে কেউ জানে না।

১১৮০.
বৈকুণ্ঠে গোলকের উপর
আছে রে সেই রূপের বিহার।

১১৮১.
কৃষ্ণের কেউ নয় সে অধর
রাধার প্রতি সেই জনা।

১১৮২.
স্বরূপ রূপের এই যে ধরণ
দোহার ভাবে টলে দোহার মন।

১১৮৩.
অটলকে টলাতে রে মন
পারে বলে কোন জনা।

১১৮৪.
নিরাকারে জল হইতে জন্মে
শক্তির ধারা সেই অবিম্বে।

১১৮৫.
লালন বলে তাঁর অনুপ্রেমে
দিন থাকতে জেনে নে না।

১১৮৬.
হীরা মতি জহুরা কোটিময়।
সে চাঁদ লক্ষ যোজন ফাঁকে রয়
কোটি চন্দ্র কোটি ময়।

১১৮৭.
উনকোটি দেবতা সঙ্গে আছে গাঁথা
ব্রহ্মা বিষ্ণু নারায়ণ জয় জয়।

১১৮৮.
যে জন শুদ্ধ সাধক হয় সে চাঁদ দেখিতে পায়
সে জন মৃনাল ধরে উজান ধায়।

১১৮৯.
ষড়চক্র পরে আছে আদি বিধান তার
পূর্ণ করে ষোলকলা ভেদ করে সপ্ততলা।

১১৯০.
তার উপরে বসে কালা মধু পান করে
মহেন্দ্র যোগে সে চাঁদ দেখা যায়।

১১৯১.
নব লক্ষ ধেনু চরায় রাখালে
চাঁদের খবর সেই জানে চাঁদ ধরেছে বৃন্দাবনে
শ্রীরাধার চরণে ভাণ্ড ভেঙ্গে ননী খায় গোপালে।

১২০০.
লালনের ফকিরি করা নয় ফিকিরি
দরবেশ সিরাজ সাঁই যদি ছায়া দেয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!