ভবঘুরেকথা
ফকির লালন

ফকির লালনের বাণী : সাধকদেশ

১৫১.
ঘর ছেরে ছেঞ্ছেতে বাসা
অপথে তার যাওয়া আসা,
না জেনে তার ভেদ খোলাসা
কথায় কি মেলে।

১৫২.
জলে যেমন চাঁদ দেখা যায়
ধরতে গেলে হাতে কে পায়।

১৫৩.
চাঁদ ধরা ফাঁদ জানো নারে মন।
লেহাজ নাই তোমার নাচানাচি সার
একবারে লাফে দিয়ে ধরতে চাও গগণ।

১৫৪.
সামান্য রসের মর্ম পাবে কে
কি বল প্রেমরসের রসিক সে।

১৫৫.
সে প্রেম কেমন, করো নিরূপণ
প্রেমের সন্ধি জেনে থাক চেতন।

১৫৬.
ভক্তিপাত্র আগে করবে নির্ণয়
মুক্তিদাতা এসে তাতে বারাম দেয়।

১৫৭.
নইলে হবে না, প্রেম উপাসনা
মিছে জল ছেঁচিয়ে হবে মরণ।

১৫৮.
মুক্তিদাতা আছে নয়নের অজান
ভক্তিপাত্র সিড়ি দেখো বর্তমান।

১৫৯.
মুখে গুরু গুরু বলো, সিঁড়ি ধরে চলো
সিঁড়ি ছাড়লে ফাঁকে পড়বি লালন।

১৬০.
পূর্ণচন্দ্র উদয় কখন কর মন বিবেচনা।
আগমে আছে প্রকাশি
ষোল কলাই পূর্ণশশী;
পনেরই পূর্ণমাসী
শুনে মনের ঘোল গেলনা।

১৬১.
সাতাইশ নক্ষত্র সাঁইত্রিশ যোগেতে
কোন সময় চলে সাইত্রিশেতে
যোগের এমনি লক্ষণ
অমৃত ফলের স্থান;
জানত যদি দরিদ্র মন
অশুসার কিছুই রইত না।

১৬২.
পূর্ণিমার যোগাযোগ হলে
শুকনা নদী উজান চলে
ত্রিবেণীর পিছল ঘাটে
নিঃশব্দে বন্যা ছোটে;
চাঁদ-চকোরে ভাটার চোটে
বাঁধ ভেঙ্গে যায় তত্ক্ষণা।

১৬৩.
নিচের চাঁদ রাহুতে ঘেরা
গগন চাঁদ কি পাব ধরা
দখল হয় রে অমাবস্যে
তখন চন্দ্র রয় কোন দেশে;
লালন ফকির হারায় দিশে
চোখ থাকতে হয়ে কানা।

১৬৪.
সৃষ্টিতত্ত্ব দ্বাপরলীলা আমি শুনতে পাই।
চাঁদ হতে হয় চাঁদের সৃষ্টি
চাঁদেতে হয় চাঁদময়।

১৬৫.
জল থেকে হয় মাটির সৃষ্টি
জাল দিলে জল হয় গো মাটি।

১৬৬.
বুঝে দেখ এই কথাটি
ঝিয়ের পেটে মা জন্মায়।

১৬৭.
এক মেয়ের নাম কলাবতী
নয় মাসে তার গর্ভবতী,
এগার মাসে সন্তান তিনটি
মেঝ সন্তান ফকির হয়।

১৬৮.
ডিমের ভেতর থাকলে ছানা
ডাকলে যেমন কথা কয় না।

১৬৯.
সেথায় সাঁইয়ের আনাগোনা
দিনরাত্রি আহার যোগায়।

১৭০.
মাকে ছুঁলে ছেলের মরণ
জীবলোকে তাই করে ধারণ।

১৭১.
অমাবস্যার দিনে চন্দ্র যেয়ে থাকে কোন শহরে।
প্রতিপদে হয় সে উদয় দৃষ্টি হয় না কেন তারে।

১৭২.
মাসে মাসে চাঁদের উদয়
অমাবস্যা মাস অন্তে হয়।

১৭৩.
সূর্যের অমাবস্যা নির্ণয়
জানতে হবে নিহাজ করে।

১৭৪.
ষোলকলা হইলে শশী
তবে তো হয় পূর্ণমাসী।

১৭৫.
পনেরই পূর্ণিমা কিসি
পণ্ডিতেরা কয় সংসারে।

১৭৬.
জানতে পারলে দেহচন্দর
স্বর্ণচাদেঁর পায় সে খবর।

১৭৭.
চারটি চন্দ্র ভাবের ভুবনে।
তাঁর দুটি চন্দ্র প্রকাশ হয়
তাই জানে অনেক জনে।

১৭৮.
যে জানে সেই চাঁদের ভেদকথা
বলবো কি তাঁর ভক্তির ক্ষমতা।

১৭৯.
যে চাঁদ ধরে পাই চাঁদ অন্বেষণ
সে চাঁদ কেউ না পাই গুণে।

১৮০.
এক চাঁদে চার চন্দ্র মিশে রয়
ক্ষণেক ক্ষণেক ভিবিন্ন রূপ হয়।

১৮১.
ও সে মণিকোঠার খবর পেলে
সকল খবর সেই জানে।

১৮২.
ধরতে পারে মূল চন্দ্র কোনজন
গরল চন্দ্রের কর অন্বেষণ।

১৮৩.
মনরে কবে ভবে সূর্যের যোগ হয়
কর বিবেচনা,
চন্দ্রকান্ত যোগ মাসান্ত
ভবে আছে জানা।

১৮৪.
যে জাগে সেই যোগের সাথে
অমূল্য ধন পাবে হাতে,
ক্ষুধা তৃষ্ণা যাবে তাতে
এমন ধন খুঁজলে না।

১৮৫.
চন্দ্রকান্তি সূর্যকান্তি
ধরে আছে আলেক পন্থি,
যুগলেতে হলে একান্তি
পাবে উপাসনা।

১৮৬.
অখণ্ড উদ্ভব রতি
রসিকের প্রাণ রসের প্রতি,
লালন ভেবে কয় সাম্প্রতি
দেহ খুঁজে দেখ না।

১৮৭.
কোনদিন সূর্যের অমাবস্যে।
দেখি চাঁদের অমাবস্যে হয় মাসে মাসে।

১৮৮.
আকাশে পাতালে শুনবো না
দেহরতির চাই উপাসনা,
কোন পথে কখন, করে আগমন
চাঁদ চকোর খেলে কখন আসে।

১৮৯.
বার মাসে ফোটে চব্বিশ ফুল
জানতে হয় কোন ফুলে কার মূল,
আন্দাজি সাধন, কর না রে মন
মূল ভুলিলে ফল পাবি কিসে।

১৯০.
যে করে এই আসমানি কারবার
না জান তার কোথা বাড়িঘর।

১৯১.
যে জন হাওয়ার ঘরে ফাঁদ পেতেছে।
ঘুঁচেছে তার মনের আঁধার, সে যে
দিন ছাড়া নিরিখ বেঁধেছে।

১৯২.
হাওয়ার দমে বেঁধে ভেলা
অধর চাঁদ মোর করছে খেলা।

১৯৩.
ঊর্ধে নালে সদা চলা
বহু সাধন-গুণে কেউ দেখেছে।

১৯৪.
হাওয়া দ্বারে দম কুঠরি
মাঝখানে অটল বিহারী।

১৯৫.
শূন্য বিহার স্বর্ণ পুরী
কলকাঠি তার ব্রহ্মদ্বারে আছে।

১৯৬.
মন ছুটে প্রেম-ফাঁসি করে
জান শিকারী শিকার ধরে।

১৯৭.
ত্রিধারা বয়রে নদীর তীরধারা বয়।
কোন ধারাতে কি ধনপ্রাপ্তি হয়।

১৯৮.
তীরধারায় যোগানন্দ কার সঙ্গে কার কি সম্বন্ধ
শুনলে ঘোঁচে মনের সন্দেহ প্রেমানন্দ বাড়ে হৃদয়
শক্তিতত্ত্ব পরমতত্ত্ব সত্য সত্য যাহার হয়।

১৯৯.
তারুণ্যে কারুন্যে এসে লাবণ্যেতে কখন মেশে
যার আছে এসব দিশে সচেতন তারে বলা যায়
আমার হলো মতিমন্দ সে পথে ডোবে না মনুরায়।

২০০.
কখন হয় শুকনো নদী কখন হয় বর্ষা অতি
কোনখানে তার কলের স্থিতি সাধকেরা করে নির্নয়
অবোধ লালন না বুঝে ডুবে কিনারায়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!