ফকির লালনের বাণী : সাধকদেশ
৩০১.
পারো নিহেতু সাধন করিতে।
যাও নারে ছেড়ে জরা মৃত্যু
নাই যে দেশেতে।
৩০২.
নিহেতু সাধক যাঁরা
তাঁদের করণ খাঁটি জবান খাড়া,
উপশক্য কাটিয়ে তাঁরা
চলেছে পথে।
৩০৩.
মুক্তিপদ ত্যাজিয়ে সদাই
ভক্তি পদে রেখে হৃদয়,
শুদ্ধ প্রেমের হবে উদয়
সাঁই রাজি যাহাতে।
৩০৪.
সমঝে সাধন কর ভবে
এবার গেলে আর না হবে,
ফকির লালন বলে ঘুরতে
হবে লক্ষ যোনিতে।
৩০৫.
অখণ্ড মন্ডলাকারং ব্যাপ্তং যেন চরাচর।
গুরু তুমি পতিত পাবন পরম ঈশ্বর।
৩০৬.
ব্রহ্মা বিষ্ণু শিব তিনে
ভজে তোমায় নিশিদিনে,
আমি জানি নাকো তোমা বিনে
তুমি গুরু পরাৎপর।
৩০৭.
ভজে যদি না পাই তোমায়
এ দোষ আমি দেবো বা কার,
নয়ন দুটি তোমার উপর
যা করো তুমি এবার।
৩০৮.
যে জন গুরুর দ্বারে জাত বিকিয়েছে।
তার কি আর জাতির ভয় আছে।
৩০৯.
সুতোর টানে পুতুল যেমন
নেচে ফেরে সারা জনম।
৩১০.
নাচায় বাঁচায় সেহি একজন
গুরু নামে জগৎ জুড়েছে।
৩১১.
গুরুমাখা ত্রিজগৎময়
কান্নাহাসি স্বর্গনরক হয়।
৩১২.
উত্তম ম্লেচ্ছ কারে বলা যায়
দেখ গভীরেতে বুঝে।
৩১৩.
সকল পুণ্যের পুণ্যফল
গুরু বিনে নাই সম্বল।
৩১৪.
লালন কয় তার জনম সফল
যে জন গুরুধন পেয়েছে।
৩১৫.
যে সাধন জোরে কেটে যায় কর্মফাঁসি।
যদি জানবি সে সাধনের কথা
হও গুরুর দাসী।
৩১৬.
স্ত্রীলিঙ্গ পুংলিঙ্গ আর
নপুংসকে শাসিত কর,
আছে যে লিঙ্গ ব্রহ্মাণ্ডের পর
কর প্রকাশি।
৩১৭.
মারে মৎস্য না ছোঁয় পানি
রসিকের তেমন করণি,
আকর্ষণে আনে টানি
ক্ষিরোদ-শশী।
৩১৮.
কারণ সমুদ্রের পারে
গেলে পায় অধর চাঁদেরে,
অধীন লালন বলে নইলে ঘুরে
মরবি চুরাশী।
৩১৯.
মন আমার কুসর মাড়ায় জাট হলরে।
চিরদিন গুতায় পড়ে আটলো নারে।
৩২০.
কত রকম করি দমন
কতই করি বান্ধন ছান্দন।
৩২১.
কটাক্ষ মাতংগ মন
কখন যেন যায়রে সরে।
৩২২.
কপালের ফ্যার নইলে কি আর
লোভের কুকুর হই বারে বার।
৩২৩.
মন গুনে কি হয় না জানি
কখন যেন কি ঘটায়রে।
৩২৪.
মলয় পরবত কাষ্ঠের
সবে সার হয়, হয়না বাঁশের।
৩২৫.
ভজ মুরশিদের কদম এই বেলা।
চার পিয়ালা হৃদ-কমলে
ক্রমে হবে উজালা।
৩২৬.
নবীজীর খান্দানেতে
পিয়ালা চার মতে।
৩২৭.
জেনে নেও দিন থাকিতে
ওরে আমার মন-ভোলা।
৩২৮.
কোথায় হায়াত-নদী
ধারা বয় নিরবধি,
সে ধারা ধরবি যদি
দেখবি অটলের খেলা।
৩২৯.
এপারে কে আনিল
ওপার কে নিবে বল।
৩৩০.
আমি কি তাই জানলে সাধন সিদ্ধ হয়।
আমি কথার অর্থ ভারী, আমি তো সে আমি নয়।
৩৩১.
অনন্ত শহরে বাজারে
আমি মি শব্দ করে,
আমার আমি চিনতে নারে
বেদ পড়ি পাগলের প্রায়।
৩৩২.
মনসুর হাল্লাজ ফকির সে তো
বলেছিল আমি সত্য,
সই পরল সাঁইর আইন মত
শরায় কি তার মর্ম পায়।
৩৩৩.
কুম্বে এজনি কুম্বে এজনিল্লা
সাঁইর হুকুম দুই আমি হিল্লা,
লালন তেমনি কেটো মোল্লা
ভেদ না জেনে গোল বাধায়।
৩৩৪.
ভজরে জেনে শুনে।
নবী কলমা কালেন্দা আলী হনদাতা
ফাতেমা দাতা কি ধন দানে।
৩৩৫.
নিলে ফাতেমার স্মরণ ফতেহ্ হয় করণ
আছে ফরমান সাঁইর জবানে।
৩৩৬.
সৃষ্টিকর্তা সৃষ্টি করলেন সবারই
যুগে যুগে মাতা হন যোগেশ্বরী।
৩৩৭.
সুযোগ না বুঝে কুযোগে মজে
মারা গেল জীব ঘোর তুফানে।
৩৩৮.
শুনেছি মা তুমি অবিম্বধারী
বেদান্তের উপরে গম্ভু তাহারি।
৩৩৯.
তারে চেনা হলো ভার ওরে মন আমার
ভুলে রইলি ভবের ভাব-ভূষণে।
৩৪০.
সাড়ে সাত পান্তি পথের দাঁড়া
আদ্য পান্তি তার আদ্য মূলগোড়া।
৩৪১.
ধন্য আশেকিজনা এ দীন দুনিয়ায়।
আশেক জোরে গগনের চাঁদ পাতালে নামায়।
৩৪২.
সুইছিদ্রে চালায় হাতি
বিনা তেলে জ্বালায় বাতি।
৩৪৩.
কখন হয় নিষ্ঠারতি
ঠাঁই অঠাঁই সেহি রয়।
৩৪৪.
কাম করে না নাম জপে না
শুধু দেল আশেক দেওয়ানা,
তার কাছে মোর সাই রব্বানা
মদত সদাই।
৩৪৫.
মাশুকের আশেকি নামাজ
রাজি তাতে রয় বেনিয়াজ।
৩৪৬.
সাঁই আমার কখন খেলে কোন খেলা
জীবের কি সাধ্য আছে
গুণে পড়ে তাই বলা।
৩৪৭.
কখনো ধরে আকার কখনো হয় নিরাকার
কেউ বলে আকার সাকার
অপার ভেবে হই ঘোলা।
৩৪৮.
অবতার অবতারী সবই সম্ভব তারই
দেখ জগৎ ভরি এক চাঁদে হয় উজলা।
৩৪৯.
ভাণ্ড ব্রহ্মাণ্ড মাঝে
সাঁই বিনে কি খেল আছে,
ফকির লালন কয় নাম ধরে সে
কৃষ্ণ করিম কালা।
৩৫০.
আল্লার নাম সার করে যে জন বসে রয়।
তাঁর কিসের কালের ভয়।