ফকির লালনের বাণী : সিদ্ধিদেশ
১০১.
সারিয়া আপনার জান
আবেগেতে দাও বলীদান,
নবীজির হাদিস প্রমাণ
‘মুতু কাবালা আন্তা মউত’ তাই।
১০২.
কেমনে হবে কোরবানী
সে ভেদ প্রকাশ নাহি জানি।
১০৩.
শুদ্ধ আগম পায় যে জনা।
নিগুমেতে উঠছে আগম
সেই পেয়েছে নূর নবীর বেনা।
১০৪.
হুহুংকার ছাড়লে বিন্দু
তাহাতে জন্মালে ডিম্বু।
১০৫.
দশ হাজার বছর ছিল সেজদায়
তার আওয়াজ শুনে হয় দুইখানা।
১০৬.
অঙ্গ ভেঙ্গে করলেন ছয়খান
পাঁচ তনেতে বসালেন জান।
১০৭.
কে বুঝিবে মালেক সাঁইয়ের কাম
স্বজলায় রূপ গঠলেন তৎক্ষণা।
১০৮.
যাতে হয় আদমের দৌলাত
পাঁচ চিজ তখন করলেন খয়রাত।
১০৯.
নীরে শুনি নিরঞ্জন হলো।
নূর ছিলো পাঁজা পাঁজা
এরা কোন নূরে এলো।
১১০.
কোন নূরে হয় আসমান জমিন
কোন নূরে হয় পবন পানি।
১১১.
কোন নূরে ভাসিলেন গনি
সে নূরে কোন নূর আসিল।
১১২.
তুয়া নামে রক্ত পয়দা
কোন নূরে গঠিল খোদা।
১১৩.
আরশ কুরসি মোহাম্মদা
কোন নূর জুদাই করিল।
১১৪.
আদম বলো কোন নূরে হয়
মা হাওয়া কি সেই নূরে নয়।
১১৫.
কত রতি নূর ঝরে কোথায়
ইহার ভেদ খুলে বলো।
১১৬.
মোহাম্মদ যে নূরে হয়
খাতুনে জান্নাত কি সেই নূরে নয়।
১১৭.
শুদ্ধ প্রেম রসিক বিনে কে তারে পায়।
যার নাম আলেক মানুষ
আলেকে রয়।
১১৮.
রস রতি অনুসারে
নিগূঢ় ভেদ জানতে পারে,
রতিতে মতি ঝরে
মূল খণ্ড হয়।
১১৯.
নীরে নিরঞ্জন আমার
আদি লীলা করে প্রচার,
জানলে আপন জন্মের বিচার
সব জানা যায়।
১২০.
আপন আপন জন্মলতা
খুঁজ তার মূলটি কোথা।
১২১.
নিচে পদ্ম চরকবানে যুগল মিলন চাঁদ চকরা।
সূর্যের সুসঙ্গে কমল, কিরূপে হয় যুগল মিলন
জনলিনে মন হলি কেবল কামাবশে মাতোয়ারা।
১২২.
স্ত্রীলিঙ্গ পুংলিঙ্গ ভবে,নপুংসক না সম্ভবে
যে লিঙ্গ ব্রম্মান্ড পরে, কি দিব তুলনা তারে
রসিক জনা জানতে পারে,অরসিকের চমৎকারা।
১২৩.
সামর্থাকে পূর্ণ জেনে, বসে আছে সেই গুমানে
যে রতিতে জন্মে মতি, সে রতির কি আকৃতি
যারে বলে সুধার পতি, ত্রিলোকের সেই নিহারা।
১২৪.
শোণিত শুত্রু চম্পকলি,কোন স্বরূপ কাহারে বলি
ভৃঙ্গরতির কর নিরূপণ,চম্পকলির অলি যে জন
গুরু ভেবে বলছে লালন, কিসে যাবে তারে ধরা।
১২৫.
দেখলাম কী কুদরতিময়।
বিনাবীজে আজগবী গাছ ফলধরেছে তাই।
১২৬.
নাই সে গাছের আগাগোড়া শুন্যভরে আছে খাড়া,
ফল ধরে ফুলটি ছাড়া দেখে ধাঁ ধা হয়।
১২৭.
বলবো কি সেই গাছের কথা ফুলে মধু ফলে সুধা,
সৌরভে তার হরে দরিদ্রতা যায়।
১২৮.
জানলে গাছের অর্থ বাণী চেতন বটে সেই ধনী,
গুরু বলে তারে মানী অধীন লালন কয়।
১২৯.
প্রেম পাথারে যে সাঁতারে
তার মরণের ভয় কি আছে।
১৩০.
স্বরূপ মরণে সদা
মত্ত যারা ঐ কাজে।
১৩১.
শুদ্ধ প্রেম রসিকের ধর্ম
মানে না বেদ বিধির কর্ম।
১৩২.
রসরাজ রসিকের মর্ম
রসিক বৈ আর কে জেনেছে।
১৩৩.
শব্দ স্পর্শ রূপ রস গন্ধ
এই পঞ্চে হয় নিত্যানন্দ।
১৩৪.
যার অন্তরে সদানন্দ
নিরানন্দ জানে না সে।
১৩৫.
পাগল পায় পাগলের পারা
দুই নয়নে বহে ধারা।
১৩৬.
যেন সুর ধ্বনির ধারা
লালন কয় ধারায় ধারা মিশে আছে।
১৩৭.
কিবা রূপের ঝলক দিচ্ছে দ্বিদলে।
সে রূপ দেখলে নয়ন যায় ভুলে,
ফণি-মণি সৌদামিনী যিনি
এরূপ উজলে।
১৩৮.
অস্থি-চর্ম শূন্যরূপ
আছে মহারসের কূপ
বেগে ঢেউ খেলে।
১৩৯.
ও তার এক বিন্দু অপার সিন্ধু
হয়রে এ ভূমণ্ডলে।
১৪০.
দেহের দল পদ্ম যার
উপাসনা নাই গো তার
কোথা কি মেলে।
১৪১.
তীর্থ-ব্রত যার জন্য এই দেহে তার
সব মেলে।
১৪২.
রসিক যারা সচেতন
রস-রতি টেনে উজান
রূপ উদয় পেলে।
১৪৩.
লালন গোঁড়া লেঙটি এড়া
মিছে বেড়ায় রূপ ভুলে।
১৪৪.
মোকামে একটি রূপের বাতি
জ্বলছে রে সদায়।
১৪৫.
নাহি তেল তার নাহি তুলা
আজগুবি হয়েছে উদয়।
১৪৬.
মোকামের মধ্যে মোকাম
স্বর্ণশিখর বলি যার নাম।
১৪৭.
বাতির লণ্ঠন সদায় মুদাম
ত্রিভূবনে কিরণ ধায়।
১৪৮.
দিবানিশি আট প্রহরে
এক রূপে সে চার রূপ ধরে।
১৪৯.
বর্ত থাকতে দেখলি না রে
ঘুরে ম’লি বেদের ধোঁকায়।
১৫০.
যে জন জানে সেই বাতির খবর
ঘুঁচেছে তার নয়নের ঘোর।