৫১.
মান সরোবর নামটি গো তাঁর লালমতি আছে
অপার তাঁয় ডুবতে পারলে না,
ডুবতে যেয়ে খাবি খেয়ে
সুখটা বোঝো তৎক্ষণা।।
৫২.
জল সেচে নদী শুকায় কার বা
এমন সাধ্য হয় পায় পরশখানা,
লালন বলে সন্ধি পেলে
যায় সমুদ্র লঙ্ঘনা।।
৫৩.
মুর্শিদকে মানিলে
খোদায় মান্য হয় ।
শুভা যদি হয় কাহারো
কেতাব দেখলে মিটে যায়।।
৫৪.
মুর্শিদ যা ইশারা দেয়
বন্দেগির তরিকা যে হয়
কোরানেতে সাফ লেখা যায়
আকার অলি দরবেশ
তারাও কয় ।।
৫৫.
মুর্শিদের মেহের হলে
খোদার মেহের তারে বলে
মুর্শিদ না ভজিলে
তার কি আছে উপায় ।।
৫৬.
মুর্শিদ পথের দাড়া
যাবা কোথায় তার ছাড়া।।
৫৭.
কি করি কোন পথে যাই
মনে কিছু ঠিক পড়ে না,
দোটানাতে ভাবছি বসে ওই ভাবনা।।
৫৮.
কেউ বলে মক্কায় যেয়ে,
হজ্ব করিয়ে যাবে গুনা,
কেউ বলে মানুষ ভজে
মানুষ হনা।।
৫৯.
কেউ বলে পড়লে কালাম
পায় সে আরাম বেস্তখানা,
কেউ বলে ঐ সুখের ঠাঁই
কায়েম রয় না।।
৬০.
মন তোর আপন বলতে আর কে আছে
তুমি কার কাঁদায় কাঁদো মিছে।।
৬১.
মিছে মায়ার মদ খেও না
প্রাপ্তপদ ভুলে যেও না
এবার গেলে আর হবেনা
পড়বি কয় যুগের প্যাঁচে।।
৬২.
আসতে একা এলি রে মন
যেতেও একা যাবি তখন
সিরাজ সাঁই বলে রে লালন
কার নাচায় নাচো মিছে।।
৬৩.
মন এখনো সাধ আছে
আল ঠেলা বলে,
চুল পেকে হয়েছে হুড়ো
চামড়া বুড়োর ঝুলমুলে।।
৬৪.
গায়ে ভষ্ম মেখে লোকেরে দেখাও
মনে মনে মনকলাটি খাও,
তোমার নাই সবুরই চাম কুঠরি
ছাড়বিরে আর কোনকালে।।
৬৫.
হেঁটে যেতে হাঁটু নড়বড়ায়
তবু যেতে সাধ মন বারোপাড়ায়,
ঢেংড়ার সুমার বুদ্ধি তোমার
ভুচ কুয়ারা জানলে।।
৬৬.
কেউ বলে পাগল বুড়ো পীর
আমার মন রয় না স্থির,
মন কি মুনাই নইলে কি ভাই
লালন কয় ভুরো সিজাই অকালে।।
৬৭.
কে তোমার আর যাবে সাথে।
কোথায় রবে এ ভাই বন্ধু
পড়বি যেদিন কালের হাতে।।
৬৮.
যে আশাতে ভবে আসা
হল না তার রতি মাসা,
ঘটাইলি মন কি দুর্দশা
কুরসে কুসঙ্গে মেতে।।
৬৯.
যারে ধরে পাবি নিস্তার
তারে সদাই ভাবলি রে পর।।
৭০.
গুণে পড়ে সারলি দফা
করলি রফা গোলেমালে,
ভাবলিনে মন কোথা সে ধন
ভাজলি বেগুন পরের তেলে।।
৭১.
করলি বহু পড়াশোনা
কাজে কামে ঝলসে কানা,
কথায় তো চিড়ে ভেজে না
জল কিংবা দুধ না দিলে।।
৭২.
আর কি হবে এমন জনম
লুটবি মজা মনের মতন,
বাবার হোটেল ভাঙবে যখন
খাবি তখন কার বা শালে।।
৭৩.
হায়রে মজা তিলে খাজা
খেয়ে দেখলিনে মন কেমন মজা,
লালন কয় বেজাতের রাজা
হয়ে রইলাম একই কালে।।
৭৪.
উদয় কলিকালরে ভাই আমি বলি তাই।
হাগড়া বেঁধে নেংটী ছিঁড়ে
লোক বুঝি হাসিয়া যায়।।
৭৫.
কারো বিশ্বাস কেউ করে না
শঠে শঠে সকল কারখানা।।
…………………………………..
চিত্র:
ফকির লালন সাঁইজির প্রকৃত কোনো ছবি নেই। লেখাতে ব্যবহৃত ছবিটি লালন ফকিরের কাল্পনিক একটি ছবি মাত্র। বহুল ব্যবহৃত হলেও এই ছবির সাথে লালন সাঁইজির আদৌ কোনো যোগসূত্র খুজে পাওয়া যায় না।