১৮৮৬, ৪ঠা জানুয়ারি
কাশীপুর বাগানে ভক্তসঙ্গে
ঈশ্বরের জন্য শ্রীযুক্ত নরেন্দ্রের ব্যাকুলতা
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ কাশীপুরের বাগানে উপরের সেই পূর্বপরিচিত ঘরে বসিয়া আছেন। দক্ষিণেশ্বর-কালীমন্দির হইতে শ্রীযুক্ত রাম চাটুজ্যে তাঁহার কুশল সংবাদ লইতে আসিয়াছিলেন। ঠাকুর মণির সহিত সেই সকল কথা কহিতেছেন – বলিতেছেন – ওখানে (দক্ষিণেশ্বরে) কি এখন বড় ঠাণ্ডা?
আজ ২১শে পৌষ, কৃষ্ণা চতুর্দশী, সোমবার, ৪ঠা জানুয়ারি, ১৮৮৬ খ্রীষ্টাব্দ। অপরাহ্ন – বেলা ৪টা বাজিয়া গিয়াছে।
নরেন্দ্র আসিয়া বসিলেন। ঠাকুর তাঁহাকে মাঝে মাঝে দেখিতেছেন ও তাঁহার দিকে চাহিয়া ঈষৎ হাসিতেছেন, – যেন তাঁহার স্নেহ উথলিয়া পড়িতেছে। মণিকে সঙ্কেত করিয়া বলিতেছেন, “কেঁদেছিল!” ঠাকুর কিঞ্চিৎ চুপ করিলেন। আবার মণিকে সঙ্কেত করিয়া বলিতেছেন, “কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি থেকে এসেছিল!”
সকলে চুপ করিয়া আছেন। এইবার নরেন্দ্র কথা কহিতেছেন –
নরেন্দ্র – ওখানে আজ যাব মনে করেছি।
শ্রীরামকৃষ্ণ – কোথায়?
নরেন্দ্র – দক্ষিণেশ্বরে – বেলতলায় – ওখানে রাত্রে ধুনি জ্বালাব।
শ্রীরামকৃষ্ণ – না; ওরা (ম্যাগাজিনের কর্তৃপক্ষীয়েরা) দেবে না। পঞ্চবটী বেশ জায়গা, – অনেক সাধু ধ্যান-জপ করেছে!
“কিন্তু বড় শীত আর অন্ধকার।”
সকলে চুপ করিয়া আছেন। ঠাকুর আবার কথা কহিতেছেন।
শ্রীরামকৃষ্ণ (নরেন্দ্রের প্রতি, সহাস্যে) – পড়বি না?
নরেনদ্র (ঠাকুর ও মণির দিকে চাহিয়া) – ঔষধ পেলে বাঁচি, যাতে পড়া-টড়া যা হয়েছে সব ভুলে যাই!
শ্রীযুক্ত (বুড়ো) গোপাল বসিয়া আছেন। তিনি বলিতেছেন – আমিও ওই সঙ্গে যাব। শ্রীযুক্ত কালীপদ (ঘোষ) ঠাকুরের জন্য আঙ্গুর আনিয়াছিলেন। আঙ্গুরের বাক্স ঠাকুরের পার্শ্বে ছিল। ঠাকুর ভক্তদের আঙ্গুর বিতরণ করিতেছেন। প্রথমেই নরেন্দ্রকে দিলেন – তাহার পর হরিরলুঠের মতো ছড়াইয়া দিলেন, ভক্তেরা যে যেমন পাইলেন কুড়াইয়া লইলেন!