ভবঘুরেকথা
যীশু খ্রিস্ট ইশা খ্রিস্টান ঈশ্বরপুত্র

প্রভু বলেছেন, ‘‘আমাকে যে অনুসরণ করে, অন্ধকারে তার বিচরণ নয়।’’ খ্রীষ্টের উক্তিটির অর্থ এই যে- আমরা যদি আমাদের অন্তর থেকে সর্বপ্রকার অন্ধকার দূর করে সত্যজ্ঞানের উদ্দীপন চাই, তাহলে আমাদের খ্রীষ্টের জীবন ও চরিত্রকে আদর্শ স্বরূপ মেনে চলতে হবে।

তাই যীশুখ্রীষ্টের জীবন অনুধ্যান আমাদের অবশ্যকরণীয়। খ্রীষ্টের উপদেশাবলী শ্রেষ্ঠ গুরুর শ্রেষ্ঠ শিক্ষার চেয়ে কত-না শ্রেয়! উপলব্ধি করার ক্ষমতা যার আছে, সেই পাবে তার নিগূঢ় অমৃতের সন্ধান। কিন্তু হায়! আমরা অনেকেই মঙ্গলসমাচার বারবার পঠন ও শ্রবণে আমাদের মনে বিশেষ নিষ্ঠা জাগে না, কারণ খ্রীষ্টের আত্মিক অনুপ্রেরণায় আমরা উদ্বুদ্ধ হই না।

কেউ যদি খ্রীষ্টবাণীর তাৎপর্যের সম্যক্‌ উপলব্ধি ও রসাস্বাদনে উৎসুক হয় তাহলে, সে যেন খ্রীষ্টেরই জীবনাদর্শে নিজের জীবন গড়ে তোলার সংকল্প করে। দুর্জ্ঞেয় ত্রিপুরুষ-বাদের যত-ই সূক্ষ্ম পর্যালোচক হও না কেন, বিনয়ের অভাবে তুমি যদি ত্রিপুরুষ-পরমেশ্বরেরই অপ্রীতিভাজন হয়ে পড়-তবে কী লাভ? সত্যি, জ্ঞানগর্ভ বাক্যের উচ্চারণে মানুষ পুণ্যবান হয় না, হয় না ধর্মশীল; সদাচরণেই সে লাভ করে ভগবানের মৈত্রী।

আর আমি তো বলি, অনুতাপের লক্ষণোপসর্গ নির্ণয়ের চেয়ে অনুতাপের উপলব্ধিই অধিকতর কার্যকরী। পুণ্যশাস্ত্রের সূত্রাবলী, জ্ঞানীজনের উক্তিসমূহ কণ্ঠস্থ করে থাকলেও, ভগবানের প্রসাদ ও কৃপাই তুমি যদি না অর্জন কর-তবে সবই তো নিষ্ফল।

সবই অসার-ভগবৎভক্তি ব্যতীত; সবই অনর্থক- ঐশ সেবা ব্যতিরেকে। সংসার তুচ্ছ জেনে স্বর্গরাজ্য-অভিযানই চূড়ান্ত প্রজ্ঞা-নিদর্শন। ক্ষয়শীল ঐশ্চর্যের সন্ধান, অল্পায়ু সম্পদে আস্থা-মহামূর্খতার পরিচয়। সংসারসুলভ সম্মানের অন্বেষণ, উচ্চপদের লিপ্সা- মহা মূর্খতার পরিচয়।

ইন্দ্রিয়লালসার চরিতার্থতা, দণ্ডনীয় সমস্ত বাসনা- মহামূর্খতার পরিচয়। সৎজীবনযাপনে যত্নবান না হয়ে দীর্ঘায়ুর আকাঙ্ক্ষা- মহা মূর্খতার পরিচয়। পরলোকের কথা ভুলে ইহলোকেই মনোনিবেশ- মহা মূর্খতার পরিচয়। ক্ষণস্থায়ীর মোহে চিরানন্দের অভিযানে পরাঙ্মুখতা- মহামূর্খতার পরিচয়।

‘‘দর্শনে চোখ লাভ করে না তৃপ্তি, শ্রবণে কান লাভ করে না তুষ্টি’’- প্রবাদটা তুমি সর্বদাই মনে রাখবে। এমনি ভাবে দৃশ্য সব-কিছুরই প্রতি অনুরাগ থেকে নিবৃত্ত হয়ে তুমি অদৃশ্য সত্তার অনুধাবন করবে। যারা ইন্দ্রিয়পরবশ, আপন বিবেক কলুষিত ক’রে তারা ঐশ প্রসাদে বঞ্চিত হয়।

বিনয় মানুষমাত্রই স্বভাবত জ্ঞানান্বেষী; কিন্তু ধর্মভীরুতা-বিচ্যুত জ্ঞানে লাভ আছে কী? আত্মাভিমানভরে আকাশমণ্ডল পর্যবেক্ষণে নিরত হয়ে আপন পরিত্রাণ বিষয়ে যে-জ্ঞানী অনবহিত, ধর্মভীরু ঈশ্বরসেবক গ্রামবাসী মানুষ তার চেয়ে অনেক ভালো। আত্মজ্ঞানের প্রকৃত ফলঃ আপন অযোগ্যতার উপলব্ধি, স্তুতিবাদের প্রতি বিতৃষ্ণা।

……………………………..
ফাদার দ্যতিয়েন অনুবাদিত ‘‘খ্রীষ্টানুকরণ’’ থেকে
পুণঃপ্রচারে বিনীত -প্রণয় সেন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!