বেদে সংশয় ও নাস্তিক্য : তিন
-সুকুমারী ভট্টাচার্য
গোষ্ঠীবদ্ধ সমাজব্যবস্থা ও তার ধর্মাচরণ ভেঙে গেলে নতুন একটি সমাজের গঠনের সূচনাকালে রচয়িতারা বেদের ব্রাহ্মণসাহিত্যে যজ্ঞের সংখ্যা, অনুপুঙ্খ, ব্যাপ্তি, ইত্যাদি নিয়ে ব্যাপৃত হয়ে পড়লেন; আশঙ্কা ওই একই, সামাজিক সংহতি পাছে নষ্ট হয়। যুক্তির বেশি প্রয়োগ ঘটলে আপ্তবাক্য প্রামাণ্যতা হারায়, সংশয়ের সংখ্যা, গভীরতা ও ব্যাপ্তি বাড়ে। তা বলে সমাজপতিরা কি যুক্তির কোনও ভূমিকাই স্বীকার করেননি?
করেছিলেন বই-কি, শাস্ত্রবাক্য যে অভ্রান্ত, মান্য এবং চূড়ান্ত ভাবে প্রামাণ্য, এইটে প্রমাণ করার জন্যে সুদীর্ঘকাল ধরে ব্রাহ্মণসাহিত্য, দর্শনপ্রস্থানগুলি, টীকা, ভাষ্য, ধর্মশাস্ত্র ও নিবন্ধ রচনা হয়েছে। এবং শুধু ভারতবর্ষে নয়, খ্রিস্টান, ইসলাম ও অন্যান্য সমস্ত ধর্মের ক্ষেত্রেই এ ব্যাপারটা একই কথা বলা হয়।
এত আয়োজন সত্ত্বেও যদি সংশয়ী বলে, ‘তোমরা যা বলছি তা আমার বিশ্বাস হয় না, কে দেখেছে দেবতাদের উৎপত্তি, কে বলেছে যজ্ঞে ফল হয়, কেন মানতে যার যা দেখতে পাইনে, বুদ্ধিতে যুক্তিতে যার কোনও হদিস মেলে না। তাকে?’
রাসায়নিক প্রক্রিয়াতেই উপাদানে অবিদ্যমান গুণ বা লক্ষণ পরিণত পদার্থে উদ্ভূত হয়। তেমনই করে মানুষের শরীরের ইন্দ্রিয়ের বিশেষ ধরনের সমাবেশ ঘটলে, ইন্দ্রিয়গুলিতে অনুপস্থিত নতুন ব্যাপার, চেতনার উদয় হয়, এই চেতনাতে আছে মনন, ইচ্ছা ও অনুভব। এর বাইরে চেতনার কোনও প্রকাশ লোকায়ত দর্শন মানেনি। এই দিয়েই মানুষের জীবনের অভিজ্ঞতাগুলির ব্যাখ্যা হয়; হয় না।
এ তো সর্বনাশ সমাজের পক্ষে। কাজেই নাস্তিক, বেদনিন্দক, ইহলোকবাদী, লোকায়তিক ভূতাবাদ, সাংখ্য, প্রধানবাদ, পরমাণুবাদ ও ন্যায়–এদের যারা স্বীকার করে তারা এবং এদের ভিনদেশি বিকল্পরা সর্বদেশের শাস্ত্রে ধিকৃত। কিন্তু মুশকিল হল, ‘যদি ভারতীয় দর্শনে কোনও কিছু সার্থক ভাবে প্রাগ্রসর বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে থাকে।
তবে তা হল লোকায়ত মত, অর্থাৎ (সেই মত যা বলে) চেতনা, যাকে সাধারণত আত্মা বা মনের বিশিষ্ট লক্ষণ বলা হয়, তা কেবলমাত্র বস্তু থেকেই উদ্ভূত।’(১৬) এই মত ছিল লোকায়ত। লোকে তো জানত যে আত্মা বলে কোনও কিছুকে দেখা যায় না, অতএব সেটা আছে কি না, মৃত্যুর পর থাকবে কি না। এ বিষয়ে তা স্বাভাবিক ভাবেই লোকের সন্দেহ হবে।
চার্বক যেমন বলেন, শাক থেকে সুরা হয়, অথচ শাকে সুরার কোনও গুণই নেই; রাসায়নিক প্রক্রিয়াতেই বস্তুর এমন গুণগত, আকৃতিগত, প্রকৃতিগত পরিবর্তন হয়; কাজেই শরীরে বিশিষ্ট ধরনের অবয়বসংস্থান ঘটলে আপনিই তার থেকে চেতনার উদ্ভব হয়। যেমন চুন সাদা, হলুদ হলদে রঙের, অথচ এ দুটি মেশালে লাল রং হয়, অথচ লাল রং হলুদেও ছিল না, চুনেও ছিল না।
রাসায়নিক প্রক্রিয়াতেই উপাদানে অবিদ্যমান গুণ বা লক্ষণ পরিণত পদার্থে উদ্ভূত হয়। তেমনই করে মানুষের শরীরের ইন্দ্রিয়ের বিশেষ ধরনের সমাবেশ ঘটলে, ইন্দ্রিয়গুলিতে অনুপস্থিত নতুন ব্যাপার, চেতনার উদয় হয়, এই চেতনাতে আছে মনন, ইচ্ছা ও অনুভব। এর বাইরে চেতনার কোনও প্রকাশ লোকায়ত দর্শন মানেনি। এই দিয়েই মানুষের জীবনের অভিজ্ঞতাগুলির ব্যাখ্যা হয়; হয় না।
শুধু মরণোত্তর আত্মার। সাধারণ মানুষের সে আত্মায় কোনও প্রয়োজনই নেই, এবং যেহেতু ইন্দ্রিয়গুলির কাছে তার কোনও প্রমাণ মেলে না, চিন্তায় কল্পনায় কেউ কেউ তাকে শাস্ত্রকারদের নির্দেশিত রূপে অবধারণ হয়তো করতে পারেন, কিন্তু অধিকাংশ সাধারণ মানুষের এমন আত্মার কোনও প্রয়োজনও নেই এবং দেহবিনিমুক্ত এই অবস্তুকে তারা সম্যকবুপে ধারণাও করতে পারে না, চায়ও না। অতএব একটি লোকায়ত অনাস্থা বৈদিক সমাজে ব্যাপক ভাবেই ছিল।
বিশ্বাসের পরম্পরা
অনাস্থা কীসে? আগেই দেখেছি, বেদের প্রামাণ্যতায়, দেবদেবী, স্বর্গনরক, পরলোক, আত্মা ও জন্মান্তরে। অনাস্থা নেতিবাচক; কিন্তু আস্থা বা বিশ্বাস যে সাধারণ মানুষের এ সব তত্ত্বে কোনও দিন ছিল, তারও তো কোনও প্রমাণ নেই!
সেই ঋগ্বেদের আদিপর্বের ঋষিমণ্ডলগুলি (২-৭) থেকেই তো বহু অনাস্থার প্রকাশ রয়েছে। তা হলে সর্বজনীন বা ব্যাপক ভাবে বিশ্বাস কোনও দিন ছিল তা প্রমাণ করা যাবে না, বরং যেটা স্বতঃসিদ্ধ সেটা হল, কিছু মানুষ সর্বদেশে সর্বকালে বিশ্বাস না করে বাঁচতে পারে না; তাদেরকে সমাজপতি ও শাস্ত্রকাররা যা বিশ্বাস করতে বলত তারা তাই বিশ্বাস করত।
আবার কোনও কোনও অবৈদিক, সম্ভবত প্রাগার্য গোষ্ঠীর সম্বন্ধে তাচ্ছিল্য ভরে বলা হয়েছে যে, তারা শিশ্নদেব, অর্থাৎ হয়তো একান্ত ভাবে যৌনতাপরায়ণ অথবা লিঙ্গপূজক। এ ছাড়াও নানা রকমের মতবাদ অবশ্যই ছিল কারণ যজুর্বেদের ‘শিবসংকল্পসূত্র’ এবং অথর্ববেদের বহু সূক্তে উল্লেখ পাই যাদের বিশ্বাস ও আচরণ ভিন্ন’। তাই নানা মত ও পথ।
সম্ভবত এরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল, তাই সমাজে সংহতি রক্ষিত হত, যজ্ঞক্রিয়া সম্পাদিত হত, বিশেষ কোনও বৈপ্লবিক চিন্তা প্রশ্রয় পেত না। এরা সমাজে সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও আপনিই প্রমাণিত হয় যে, সমাজে সংখ্যালঘু মানুষ অন্য রকম ছিল, তাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো বিশ্বাস করার দরকারই বোধ করত না; তাদের মননে ও আচরণে এ সব সম্বন্ধে একটা সহজাত ঔদাসীন্য ও অনীহাই ছিল।
চিরকালই পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষের সম্বন্ধেই এ কথা প্রযোজ্য। এদের মধ্যে অধিকাংশই হয়তো সক্রিয় ভাবে যজ্ঞক্রিয়ায় যোগ দিত। কিন্তু সে-ব্যাপারে বিশ্বাসের বদলে যা তাদের প্রণোদিত করত, তা দীর্ঘকালের ঐতিহ্য থেকে সঞ্জাত একটা জড়, অসচেতন অভ্যাস, যেমনটি আজও অধিকাংশ পুজোআচ্চার অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে সত্য।
আর সর্বদেশে সর্বকালে যা সত্য তা হল সমাজে স্বল্পসংখ্যক কিছু মানুষ ছিল যারা বিশ্বাস করতে চাইত, কিন্তু পারত না। এদের চিত্তবৃত্তি অতিশয় জাগ্রত ছিল, তাই যুক্তিতে মননে যাকে সিদ্ধ করতে পারত না তা বিশ্বাসও করতে পারত না।
এদের সাধ্য ছিল না মননের সাক্ষ্যের বিরুদ্ধে শুধু চিরাচরিত, ঐতিহ্যগত আপ্তবাক্য বলেই কোনও কিছুর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ ও সেই অনুসারে আচরণ, অর্থাৎ সচেতন ভাবে, স্বেচ্ছায়, সক্রিয় ভাবে যজ্ঞকর্মে অংশগ্রহণ করার।
আর্যদের যজ্ঞনির্ভর সমাজের বাইরে তখনই ছিল বৃহৎ প্রাগার্য গোষ্ঠী, যাদের ধর্মবিশ্বাস এবং আচরণ ও অনুষ্ঠান অবশ্যই ভিন্ন ছিল। বেদ এদের মধ্যে কাউকে তুচ্ছ করে যতি’ বলেছে এবং খবর দিয়েছে যে দেবশ্রেষ্ঠ ইন্দ্র যতিদের সালাবৃকদের (wolf-hounds?) কাছে সমর্পণ করেছেন।
আবার কোনও কোনও অবৈদিক, সম্ভবত প্রাগার্য গোষ্ঠীর সম্বন্ধে তাচ্ছিল্য ভরে বলা হয়েছে যে, তারা শিশ্নদেব, অর্থাৎ হয়তো একান্ত ভাবে যৌনতাপরায়ণ অথবা লিঙ্গপূজক। এ ছাড়াও নানা রকমের মতবাদ অবশ্যই ছিল কারণ যজুর্বেদের ‘শিবসংকল্পসূত্র’ এবং অথর্ববেদের বহু সূক্তে উল্লেখ পাই যাদের বিশ্বাস ও আচরণ ভিন্ন’। তাই নানা মত ও পথ।
সে-ভয় থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্যই মুখ্যত সর্বজ্ঞ, সর্বব্যাপী, সর্বশক্তিমান দেবতার কল্পনা। এ ছাড়া ছিল বিস্ময়: সৌন্দর্য, আকাশের ব্যাপ্তি, মানবদেহের শোভা–কে এ সব সৃষ্টি করল? যে-ই করে থাকুক। সে মহান, শক্তিমান, মঙ্গলময়, শ্ৰীময়–অতএব নমস্য। এখানে কার্যকরণবোধের কোনও ব্যাপারই নেই; আছে শুধু পৃথিবী ও মানুষের শোভায়, মহিমায় মানুষের মুগ্ধতা।
তখনই সমাজে সহাবস্থান করত, যদিও সম্ভবত, অধিকাংশের না হলেও মুখ্য অংশের ধর্মাচরণ ছিল যজ্ঞকেন্দ্রিক। কিন্তু সমাজের মানুষ যারা কৌতুহলী, স্বাধীনচেতা, নিজের গোষ্ঠীর বিশ্বাস ও আচরণে অতৃপ্ত তারা সেই অনুসন্ধিৎসা বা নানা ধরনের মত, পথ ও আচরণের যাচাই করত। সমাজে প্রচলিত আপ্তবাক্যনির্ভর ধর্মাচরণে এরা অসহিষ্ণু। এরা সন্দেহ প্রকাশ করত। কথায় এবং সম্ভবত আচরণেও।
প্রথা সিদ্ধ ধর্মাচরণকে নিয়ে এরা কখনও ব্যঙ্গকৌতুক করেছে, কখনও-বা জিজ্ঞাসু ব্রহ্মচারীর মতো অধিক বিদ্বান বা মনস্বীর কাছে আপন সংশয় ব্যক্ত করে সমাধানের সন্ধান চেয়েছে। তৎকালীন ইতিহাস ও সাহিত্য থেকে যেটা প্রতিপন্ন হয় তা হল, একটি প্রধান মত ও বহুজন-আচরিত একটি ধর্মপন্থা থাকা সত্ত্বেও তখনই সমাজে বহু বিশ্বাসের আকল্প চালু ছিল, এবং কালের গতিতে এ সব আকল্প বহু ধর্ম ও দর্শনপ্রস্থানের আকারে নানা বিকল্পের বুপে প্রতিভাত হচ্ছিল। ফলে চোখ বুজে বেদ রচয়িতাদের বিশ্বাস মেনে নেওয়ার মতো মানসিকতা অনেকেরই ছিল না।
প্রতিবাদী বা অবিশ্বাসীকে সব দেশেই চিরকাল সমাজের শক্তিমান গোষ্ঠী অবজ্ঞা করেছে। বাইবেল-এ বারবার বলা হয়েছে, মূঢ় মনে মনে বলেছে ঈশ্বর নেই।’[১৭] ইসলামি ধর্মতত্ত্বে নাস্তিকের পরিণাম খুব যন্ত্রণাময় একটি নরক ‘হাবিয়া দোজখ’-এ। ভারতবর্ষেও বারবারই বলা হয়েছে নাস্তিক, চার্বাকপন্থী, লোকায়ত, বার্হস্পত্যপহী, ইত্যাদি মানুষের পরিণতি শোচনীয়।
সমাজের শৃঙ্খলা, যজ্ঞনিষ্ঠ ধর্মবোধে যাদের অন্তরাত্মা শান্তি পায়নি, যারা সৃষ্টিতে, বিশ্বচরাচরে এবং সমাজে কার্যকারণ সম্পর্ক খুঁজেছে কিন্তু পায়নি–শাস্ত্রে তাদের প্রতি অতি পরুষ অভিশাপবাণী উচ্চারিত হয়েছে। তারা প্রকাশ্যে প্রতিরোধী; অন্তরে প্রচ্ছন্ন বিপ্লবী।
শাস্ত্রকর্তারা যে-শৃঙ্খলা রচনা করেছেন, তাদের কাছে সেটা শৃঙ্খল বলে প্রতিভাত হয়েছে, কারণ তার মধ্যে কার্যকারণ পরম্পরার শৃঙ্খলা নেই। এই কার্যকারণের সন্ধান করে যে-যুক্তিপ্রস্থান, তা-ই পরবর্তীকালে আম্বীক্ষিকী–তৰ্কশাস্ত্র বলে অভিহিত হয়েছে এবং এগুলির চর্চাকে শাপশাপান্ত করা হয়েছে।
ধর্মবিশ্বাসের উদ্ভব নিয়ে পণ্ডিতেরা মোটামুটি একমত যে, এর উৎসে আছে ভয় ও বিস্ময়। বিশ্বচরাচরে পূর্বাভাস ছাড়াই বহু বিপদ আসে–ঝড়, বজ্রপাত, খরা, বন্যা, মহামারি, অভাব, অনাহার, ঈতি (শস্যের ক্ষতিকারী ঘটনা), শোক, মৃত্যু এবং বিচ্ছেদ। এ ছাড়াও ছিল হিংস্র শ্বাপদ ও শক্তিমান অত্যাচারী গোষ্ঠী এবং বহু আকস্মিক দুর্বিপাক। এগুলির ওপরে মানুষের হাত ছিল না, তাই ভয় জগত প্রাণে।
সে-ভয় থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্যই মুখ্যত সর্বজ্ঞ, সর্বব্যাপী, সর্বশক্তিমান দেবতার কল্পনা। এ ছাড়া ছিল বিস্ময়: সৌন্দর্য, আকাশের ব্যাপ্তি, মানবদেহের শোভা–কে এ সব সৃষ্টি করল? যে-ই করে থাকুক। সে মহান, শক্তিমান, মঙ্গলময়, শ্ৰীময়–অতএব নমস্য। এখানে কার্যকরণবোধের কোনও ব্যাপারই নেই; আছে শুধু পৃথিবী ও মানুষের শোভায়, মহিমায় মানুষের মুগ্ধতা।
সন্দেহ ও নাস্তিক্যের ভিত্তিভূমি মানুষের অবচেতনে এই প্রত্যয় যে, সংসারে নিষ্কারণ কিছুই ঘটে না, সব কিছুই কার্যকরণ পরম্পরায় গ্রথিত, তার কতক আমাদের জানা। কিছু-বা অজানা, কিন্তু সত্যকার আকস্মিক বলে কিছুই নেই। কোনও না কোনও দিন সেই সব কারণ জানা যাবে, যা এখনও মানুষের অজানা।
ভয় জাগে মানুষের নিয়ন্ত্রণক্ষমতার বাইরের ঘটনা থেকে–যে-অশুভ ভয়ংকর, ক্ষতিকর শক্তি বিশ্বে, জীবনে ও সমাজে বিদ্যমান, যার কাছে প্রতিনিয়ত পরাজিত হচ্ছে মানুষের সীমিত ক্ষমতা। স্বভাবতই সে-সম্বন্ধে মানুষের মনে একটা প্রবল ত্রাসের সৃষ্টি হয়। এখানেও কার্যকারণ সম্পর্ক মানুষের বোধের সম্পূর্ণ বাইরে থাকে। কেন কী হয়, মানুষ ভেবে পায় না।
শাস্ত্রকার সমাধান জুগিয়ে দেন দেবমণ্ডলী নির্মাণ করে; জীবনের সমস্ত বিপদ-বিপর্যয় থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্যে তাঁদের শরণাপন্ন হওয়ার যথাবিহিত উপায় নির্দেশ করে। সে-উপায় যজ্ঞ। কেমন করে করতে হবে সে বিষয়েও তারা বিস্তারিত নির্দেশ দেন। কিন্তু সমস্ত বোধের ও বিশ্বাসের জগৎটি নির্মিত হয়।
কার্যকরণ পরম্পরাকে পরিহার করে। যতক্ষণ এই সব নিয়ে জীবনের অবাঞ্ছিত অভিজ্ঞতা থেকে মানুষ বাস্তবে এবং/বা কল্পনায় নিস্তার পায়, ততক্ষণ সবই ঠিকঠাক চলে। কিন্তু যখন কারও মনে প্রশ্ন আসে, দেবতারা যে আছেন তার প্রমাণ কী? যজ্ঞে যে ইষ্টফল পাওয়া যায় তা যখন অভিজ্ঞতার সঙ্গে মিলছে না।
তখন তারই বা প্রমাণ কী? যজ্ঞ যে প্রণালীতে অনুষ্ঠিত হয় সেটা যে যথার্থ, অর্থাৎ দেবতাদের প্রীতিজনক, তার প্রমাণ কোথায়? এই অবস্থায় মানুষ না জেনে খোঁজ করে কার্যকরণ সম্পর্কের, এবং এইটিকেই পৃথিবীর সর্বত্রই চিরদিনই অত্যন্ত আপত্তিজনক এবং সমাজের পক্ষে নাশকতামূলক আচরণ বলে মনে করা হয়েছে।
যজ্ঞ এবং বিশ্বাসের আকল্পের অনুপুঙ্খ নিয়ে সন্দেহ থেকে আরম্ভ করে সমস্ত বিশ্বাসের মূল তত্ত্বটি সম্পর্কে সংশয় জাগলে তা নাস্তিক্য বলেই অভিহিত হয়। সংশয়, অজ্ঞেয়বাদ ও নাস্তিক্য একই অভিজ্ঞতার বিভিন্ন মাত্রা ও স্তরে বিন্যস্ত; চুড়ান্ত অবস্থানটি নাস্তিক্য, অর্থাৎ বিশ্বাসের সাবিক অভাব। কিন্তু যথার্থ ধর্মবিশ্বাসে. সর্বদাই একটি সন্দেহ সংশ্লিষ্ট থাকে।[১৮]
বিশ্বাসে যেমন সন্দেহ অন্তলীন থাকে, তেমনই সন্দেহের অন্তরেও একটি বিশ্বাস থাকে। কবি টেনিসন বলেন, ‘খাটি সন্দেহের মধ্যে অনেক বেশি বিশ্বাস থাকে।[১৯] কী সেই বিশ্বাস? কার্যকরণ-পরম্পরা; আজ এখনও আমরা না বুঝতে পারলেও সেটা যে আছে এমন বিশ্বাস।
সন্দেহ ও নাস্তিক্যের ভিত্তিভূমি মানুষের অবচেতনে এই প্রত্যয় যে, সংসারে নিষ্কারণ কিছুই ঘটে না, সব কিছুই কার্যকরণ পরম্পরায় গ্রথিত, তার কতক আমাদের জানা। কিছু-বা অজানা, কিন্তু সত্যকার আকস্মিক বলে কিছুই নেই। কোনও না কোনও দিন সেই সব কারণ জানা যাবে, যা এখনও মানুষের অজানা।
প্রশ্ন ও প্রগতি
এই প্রত্যয় সন্দেহের ভিত্তি বলেই সন্দেহ পৃথিবীর জ্ঞানবিজ্ঞানের অগ্রগতির কারণ। আপেল মাটিতে পড়ে কেন, এ প্রশ্ন নিউটনকে যদি বিচলিত না করত তা হলে মাধ্যাকর্ষণ তত্ত্ব
আবিষ্কারই হতে পারত না। তেমনই, কে দেখেছে ইন্দ্রকে জন্মাতে? এ প্রশ্ন মানুষকে ভাবিয়েছে যে, যেহেতু সব মানুষই একদিন জন্মায় এবং অধিকাংশ দেবতাই যাস্কের মতে মনুষ্যকৃতি, তাই ইন্দ্রেরও নিশ্চয়ই একদিন জন্ম হয়েছিল, কিন্তু কেউ তো তা দেখেনি। অতএব ইন্দ্রের জন্ম ব্যাপারটাই সংশয়াচ্ছন্ন এবং তার ফলে ইন্দ্রের অস্তিত্বও সংশয়াতীত নয়।
নেম ভার্গব বলে: ইন্দ্র নেই। এই উক্তি খণ্ডন করতে একটি সূক্ত জুড়ে ধ্রুবপদ সৃষ্টি করতে হল, ‘স জনাস ইন্দ্র:’। কিন্তু জনমানসে প্রশ্ন এবং নেম ভাগবের ইন্দ্রকে অস্বীকার করা ঘোষণাটি রয়ে গেল। পুরোনো বহু দেবতা, ভগ, পর্জন্য, ইলা, ভারতী, মার্তণ্ড, অর্যমা, দক্ষ, অংশ–এরা ধীরে ধীরে লুপ্ত হয়ে গেল, নতুন অনেক দেবতা স্থান পেল দেবমণ্ডলীতে, দেবমণ্ডলীর বিবর্তন ঘটল, তা আর স্থাণু রইল না।
জ্ঞকে অস্বীকার করে জন্ম নিয়েছে জন্মান্তরবাদ, মোক্ষ ও নির্বাণের কল্পনা, এতে সমাজের অগ্রগতি নিশ্চয়ই হয়নি। বরং ক্ষতিই হয়েছে; কিন্তু পরম্পরাক্রমে লব্ধ বিশ্বাসের ছকটিকে মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করার এই চেষ্টার (justifying the ways of God to men) মধ্যে নতুন করে চিন্তা করতে হয়েছে মানুষকে, এবং বানপ্রস্থ ও যতি দুটি আশ্রমকে আশ্রমবগের অন্তর্গত করতে হয়েছে, এতে কিছুকালের জন্য অন্তত সামাজিক সংহতি রক্ষিত হয়েছে।
তেমনই পূর্বতন বহু যজ্ঞে ফল হচ্ছিল না। দেখে মানুষ সন্দেহ প্রকাশ করেছে, সরে এসেছে, কখনও-বা কোনও সন্ন্যাসী সম্প্রদায়ে যোগ দিয়েছে কারণ সমাজের মূল ধর্মধারা তাদের চিহ্নিত করেছে নাস্তিক, বেদবিরোধী বলে। এই বিরোধ প্রকাশিত হয়েছে সন্দেহের বুপে, কখনও-বা আরও গভীর, ব্যাপক বা মৌলিক হলে, নাস্তিক্যের বুপে।
এর ফলে চিন্তাশীল মানুষ নতুন করে চিন্তা করেছে, কখনও উত্তর পেয়েছে, তখন সমাজে জ্ঞানের জগতের পরিসর বেড়েছে। রাহুকেতুর গ্রাসে সূর্য-চন্দ্র-গ্রহণ মানুষ ততদিনই বিশ্বাস করেছে। যতদিন তার চেয়ে সংগততর কোনও ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। পাওয়া গেলেই জ্ঞান বেড়েছে, মানুষ পুরাতন কুসংস্কার ত্যাগ করে কার্যকরণ-পরম্পরার সন্ধান পেয়ে জ্ঞানের জগতের দিকচক্রবালকে প্রসারিত করেছে।
দেখা যাচ্ছে, জ্ঞানের বৃদ্ধির জন্যে, ঐতিহ্যবাহিত কুসংস্কারের পরিবর্তে কার্যকরণ-সংবলিত যথার্থ তথ্য জানিবার জন্যে প্রাথমিক প্রয়োজনই হল সন্দেহ, অস্বীকার করা, প্রচলিত ধারণার বিরোধিতা করা, শাস্ত্র-পুরোহিতের দেওয়া ব্যাখ্যাকে পরিহার করা, তাকে ভুল, অযথার্থ বলে ঘোষণা করা।
এর পরে যদি কেউ সংগততর, বেশি যুক্তিপূর্ণ কার্যকরণ-পরম্পরায় গ্রথিত কোনও সমাধান পেশ করেন যা সমাজপতিরা তাদের স্বাৰ্থহানি না হলে স্বীকার করে; আর তাদের স্বার্থহানি হলে সরাসরি নাস্তিক, পাষণ্ড, পাপী বলে ব্যাখ্যাত ও প্রশ্নকর্তা দুজনকেই শাপশাপ্ত করে। কিন্তু যখন সমাধান পাওয়া যায়, তখন সমাজ জ্ঞানের জগতে এক ধাপ এগিয়ে যায়।
এটা সম্ভবতই হত না যদি না প্রাথমিক স্তরে প্রশ্ন, সন্দেহ বা নাস্তিক্য ঘোষিত হত। যজ্ঞ ও বেদ সম্বন্ধে সংশয় ঘোষিত হতে হতে জৈন, বৌদ্ধ, আজীবিক ও আরও বহু বেদবিরোধী প্রস্থান রচিত হয়েছে, ফলে জীবনজিজ্ঞাসা গভীরতর হয়েছে, দর্শন ও নীতি সমৃদ্ধ হয়েছে।
যজ্ঞকে অস্বীকার করে জন্ম নিয়েছে জন্মান্তরবাদ, মোক্ষ ও নির্বাণের কল্পনা, এতে সমাজের অগ্রগতি নিশ্চয়ই হয়নি। বরং ক্ষতিই হয়েছে; কিন্তু পরম্পরাক্রমে লব্ধ বিশ্বাসের ছকটিকে মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করার এই চেষ্টার (justifying the ways of God to men) মধ্যে নতুন করে চিন্তা করতে হয়েছে মানুষকে, এবং বানপ্রস্থ ও যতি দুটি আশ্রমকে আশ্রমবগের অন্তর্গত করতে হয়েছে, এতে কিছুকালের জন্য অন্তত সামাজিক সংহতি রক্ষিত হয়েছে।
যাস্কের বহু বুৎপত্তি ভুল। কিন্তু শব্দমাত্রেরই যে বুৎপত্তি আছে এই বিশ্বাসই বুৎপত্তিশাস্ত্রের সৃষ্টির মূলে এবং এরই বিশ্বাস এসেছে প্রশ্ন ও সন্দেহের মধ্যে দিয়ে, ‘তৎ কাবিশ্বিনৌ?’ ‘তা হলে অশ্বিনরা কারা?’ উত্তরে যা বলা হল, তার সাব-কটি বিকল্পই বুৎপত্তি হিসেবে অগ্রাহ্য।
কিন্তু দেবতাদের একটি বাস্তব পটভূমিকা আছে, এ বিশ্বাসের ওপরেই সাব-কটি বিকল্প প্রতিষ্ঠিত, এবং এ উত্তর মিলত না যদি মূলে প্রশ্নটি না থাকত। সমস্ত বেদাঙ্গের সৃষ্টি ওই প্রশ্ন থেকে। (অথর্ববেদে যত উদ্ভিজ্জ ও খনিজ দিয়ে রোগ সারার কথা আছে তার সবই বিজ্ঞানসিদ্ধ নয়, কিন্তু অভিজ্ঞতায় পাওয়া কিছু জ্ঞানের সঙ্গে প্রশ্ন ও সন্দেহ থেকে উৎপন্ন অনুসন্ধিৎসা ওই সব আবিষ্কারের মূলে।)
ঐতিহ্যধারায় প্রাপ্ত বিশ্বাস, শাস্ত্র ও আপ্তবাক্যকে আজ থেকে সওয়া তিন হাজার বছর আগে যে-ভারতীয়রা সন্দেহ করে জীবন সম্বন্ধে নানা মাত্রার, নানা যন্ত্রণাদীর্ণ জিজ্ঞাসাকে এত তীব্র ভাবে উচ্চারণ করতে পেরেছেন, তারা অবশ্যই নমস্য; কারণ তাঁরাই যুক্তিতর্কের সূত্রে নবতর সত্যের পথে এ জাতিকে রওনা করে দিতে পেরেছেন। তাদের সংশয় ও নাস্তিক্য আমাদের গর্বের বস্তু- এক সমৃদ্ধ উত্তরাধিকার। তাই নিয়েই এই লেখা।
রোগই একটা প্রশ্ন, স্বাস্থ্য স্বাভাবিক, তার থেকে বিচ্যুতিই রোগ; তা কেন হবে এই প্রশ্নই ভেষজশাস্ত্র আবিষ্কারের মূলে। পৃথিবীতে এখনও অনেক জাতি আছে যারা মোটামুটি এক ধরনের চলনসই জীবনযাত্রার উপায় নির্ধারণ করে সেই অনুসারে জীবন কাটিয়ে দিচ্ছে, তার বাইরে তাদের উন্নতি হয়নি, কারণ তার বাইরে তারা প্রশ্নই করেনি।
যে-জাত যত বেশি তীব্র, দুরূহ, গভীর ও ব্যাপক প্রশ্ন করেছে, নিতান্ত হতদরিদ্র না হলে সে-জাত প্রশ্নোত্তরের কার্যকারণ পরম্পরা অবলম্বন করে তত বেশি এগোতে পেরেছে। আপ্তবাক্য মেনে নিয়ে স্তব্ধ নিস্তরঙ্গ সুখের বদ্ধ জলাশয়ে বাস করা যায়। অনেকে তা করেওছে। কিন্তু অন্য বিকল্পটি মানুষের মনুষ্যত্বের মর্যাদার পক্ষে বেশি গৌরবজনক।
পরিশেষে, মনে রাখা প্রয়োজন যে, ভারতীয় আর্যদের প্রথমতম রচনা ঋগ্বেদের প্রথম পর্যায় থেকেই এত সংশয়। একটি সজীব জনগোষ্ঠীই পারে, পদে পদে সংশয় বোধ করতে। এ কথা অনায়াসেই ধরে নেওয়া যায় যে, তদানীন্তন মানুষের মনে যত সন্দেহ এসেছিল তার সবই রক্ষিত হয়নি। হয়তো বহু প্রশ্ন সমাজপতিদের কাছে অত্যন্ত অস্বস্তিজনক ছিল বলে সেগুলিকে লুপ্ত করে দেওয়া হয়েছিল, যে-কারণে চার্যাকের মতবাদ পূর্ণাঙ্গ ভাবে রক্ষিত হয়নি।
চার্বাকের প্রভাব যে জনমানসে খুবই বিস্তৃত ছিল তার প্রমাণ, এ মতকে খণ্ডন না করে কোনও দর্শনপ্রস্থান-রচয়িতাই জলগ্রহণ করেননি। তা-ও চার্বকিমতের যেটুকু রক্ষিত হয়েছে তার মধ্যে শাস্ত্ৰীসুলভ সংহতি নেই, শুধু সেইটুকুই চার্বাকের কৃতি হলে চার্বাকের জনপ্রিয়তা এত বাড়িত না এবং চিন্তাশীল মানুষ তাঁর অনুগামী হতেন না।
তেমন মানুষ যে চার্বাকপন্থী হয়েছিলেন তার প্রমাণ হল, এ মতের খণ্ডনে এত গরজ, ঔৎসুক্য ও চিন্তাশ্রম। শুধু নির্বোধিরা চার্বাকপন্থী হলে শাস্ত্রকাররা এত ভয় পেত না। বহু বুদ্ধিমান মানুষ তার মতের অনুসরণ করেছিলেন বলেই তার সম্বন্ধে এত আতঙ্ক। এবং চার্বাকের মত ধর্মের মূল ধরে টান দিয়েছিল, আত্মা পরলোক ঈশ্বর অস্বীকার করে।
নাস্তিক্য সন্দেহের চূড়ান্ত অবস্থান। আনুষঙ্গিক বহু সন্দেহ ধীরে ধীরে এসে ঠেকে নাস্তিক্যে। নেম ভার্গবের ‘ইন্দ্র নেই’ বলা সেকালে নাস্তিক্য। নচিকেতা যখন বলে, ‘কেউ কেউ বলে মৃত্যুর পরে কিছুই থাকে না।’ তখন সে সমাজে সঞ্চরমাণ নাস্তিক্যকেই প্রকাশ করে।
অত প্রাচীনকালে আত মৌলিক সংশয় ও নাস্তিক্য যো-জাতির মধ্যে উদগত হতে পেরেছিল, সে-জাতি নিঃসংশয়ে একটি অত্যন্ত সজীব, নিয়ত মননশীল জাতি, যারা প্রশ্নসমস্যা-সংকুল চিন্তাজগতে আপস করতে অস্বীকার করেছিল। প্রচলিত মত ও পথে তাদের চিত্ত তৃপ্তি পায়নি, তাদের চাই ভূমা, কারণ তাদের ‘নাল্পে সুখমস্তি’।
ঐতিহ্যধারায় প্রাপ্ত বিশ্বাস, শাস্ত্র ও আপ্তবাক্যকে আজ থেকে সওয়া তিন হাজার বছর আগে যে-ভারতীয়রা সন্দেহ করে জীবন সম্বন্ধে নানা মাত্রার, নানা যন্ত্রণাদীর্ণ জিজ্ঞাসাকে এত তীব্র ভাবে উচ্চারণ করতে পেরেছেন, তারা অবশ্যই নমস্য; কারণ তাঁরাই যুক্তিতর্কের সূত্রে নবতর সত্যের পথে এ জাতিকে রওনা করে দিতে পেরেছেন। তাদের সংশয় ও নাস্তিক্য আমাদের গর্বের বস্তু- এক সমৃদ্ধ উত্তরাধিকার। তাই নিয়েই এই লেখা।
……………….
[১৬] ‘ … if there is anything in traditional Indian philosophy that has successfully stood the test of advanced scientific knowledge, it is the proposition of the Loka-yatas viz. that consciousness-ordinarily understood as the differential of the spirit or the soul–is only a product of mater.’–Chatterjee, op cit, p 610
[১৭] The fool hath said in his heart, there is no god Psalms’ 14.1, 531, etal
[১৮] ‘Authentic religious faith … must always entail doubt…- Macmillan Encyclopaedia of Religion Doubt, p. 425
[১৯] There lives more faith in honest doubt.’–In Memoriam, (Sud rt W)
…………………
বেদে সংশয় ও নাস্তিক্য – সুকুমারী ভট্টাচার্য।
……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….
……………
আরও পড়ুন-
বেদে সংশয় ও নাস্তিক্য : এক
বেদে সংশয় ও নাস্তিক্য : দুই
বেদে সংশয় ও নাস্তিক্য : তিন
.……………….
আরও পড়ুন-
বেদ রচনার গোড়ার দিক : এক
বেদ রচনার গোড়ার দিক : দুই