ফেরেশতা সৃষ্টি ও তাঁদের গুণাবলীর আলোচনা
– আবুল ফিদা হাফিজ ইবনে কাসি
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন- তারা বলে, দয়াময় সম্ভান গ্রহণ করেছেন। তিনি পবিত্র, মহান! তারা তাে তাঁর সম্মানিত বান্দা। তারা আগে বাড়িয়ে কথা বলে না, তারা তো আদেশ অনুসারেই কাজ করে থাকে।
তাদের সম্মুখে ও পশ্চাতে যা কিছু আছে তা তিনি অবগত। তারা সুপারিশ করে শুধু তাদের জন্য যাদের প্রতি তিনি সন্তুষ্ট এবং তারা তাঁর ভয়ে ভীত- সন্ত্রস্ত। তাদের মধ্যে যে বলবে, আমিই ইলাহ তিনি ব্যতীত; তাকে আমি প্রতিফল দেব জাহান্নাম; এভাবেই আমি জালিমদেরকে শান্তি দিয়ে থাকি। (২১ : ২৬- ২৯)
অর্থাৎ- আকাশমণ্ডলী উৰ্ব্বদেশ থেকে ভেঙ্গে পড়বার উপক্রম হয় এবং ফেরেশতাগণ তাদের প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এবং পৃথিবীবাসীদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে; জেনে রেখ, আল্লাহ, তিনি তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (৪২ : ৫)
অর্থাৎ- যারা আরশ ধারণ করে আছে এবং যারা এর চারদিক ঘিরে আছে, তারা তাদের প্রতিপালকের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে প্রশংসার সাথে এবং তাতে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং মুমিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে বলে, হে আমাদের প্রতিপালক!
তোমার দয়া ও জ্ঞান সর্বব্যাপী; অতএব, যারা তাওবা করে ও তোমার পথ অবলম্বন করে তুমি তাদেরকে ক্ষমা কর এবং জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা কর।
হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি তাদেরকে দাখিল কর স্থায়ী জান্নাতে, যার প্রতিশ্রুতি তুমি তাদেরকে দিয়েছ এবং তাদের পিতা- মাতা, পতি- পত্নী ও সন্তান- সন্ততিদের মধ্যে যারা সৎকর্ম পরাক্রমশালী করেছে তাদেরকেও।
অর্থাৎ- তারা অহংকার করলেও যারা তোমার প্রতিপালকের সান্নিধ্যে তারা তো দিনে ও রাতে তার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এবং তারা ক্লান্তি বোধ করে না। (৪১ : ৩৮)
অর্থাৎ- তাঁর সান্নিধ্যে যারা আছে তারা অহংকারবশে তাঁর ইবাদত করা থেকে বিমুখ হয় না এবং ক্লান্তিও বোধ করে না। তারা দিবারাত্রি তার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে; তারা শৈথিল্য করে না। (২১, ৪ ১৯- ২০)
অর্থাৎ- আমাদের প্রত্যেকের জন্যই নির্ধারিত স্থান আছে আমরা তো সারিবদ্ধভাবে দণ্ডায়মান এবং আমরা অবশ্যই তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণাকারী। (৩৭ : ১৬৪- ১৬৬)
অর্থাৎ- আমরা আপনার প্রতিপালকের আদেশ ব্যতীত অবতরণ করি না। যা আমাদের সামনে ও পেছনে আছে এবং যা এ দু’- এর অন্তর্বতী তা তারই এবং তোমার প্রতিপালক ভুলবার ‘…’।
অর্থাৎ- অবশ্যই আছে তােমাদের জন্য তত্ত্বাবধায়কগণ: সম্মানিত লিপিকারবৃন্দ; তারা জানে তোমরা যা কর।
অর্থাৎ- তােমার প্রতিপালকের বাহিনী সম্পর্কে একমাত্র তিনিই জানেন। (৭৪ : ৩১)
অর্থাৎ- ফেরেশতাগণ তাদের নিকট প্রবেশ করবে। প্রতিটি দরজা দিয়ে এবং বলবে, তোমরা ধৈর্যধারণ করেছ বলে তোমাদের প্রতি শান্তি; কতই না ভালো এ পরিণাম! (১৩)
অর্থাৎ- প্রশংসা আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা আল্লাহরই, যিনি বাণীবাহক করেন ফেরেশতাদেরকে যারা দু’- দু তিন- তিন অথবা চার- চার পক্ষ বিশিষ্ট। তিনি তাঁর সৃষ্টি যা ইচ্ছা! বৃদ্ধি করেন। আল্লাহ সর্ববিষয়ে শক্তিমান। (৩৫ : ১)
তার ছ’শ ডানা রয়েছে। প্রতি দু’টি ডানার মধ্যে ঠিক ততটুকু ব্যবধান যতটুকু ব্যবধান পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তদ্বয়ের মধ্যে। রাসূলুল্লাহ (সা) এ আকৃতিতে তাকে দু’বার দেখেছেন। একবার দেখেছেন আসমান থেকে যমীনে অবতরণরত অবস্থায়।
যেদিন আকাশ মেঘপুঞ্জসহ বিদীর্ণ হবে এবং ফেরেশতাদেরকে নামিয়ে দেওয়া হবে, সেদিন প্রকৃত কর্তৃত্ব হবে দয়াময়ের এবং কাফিরদের জন্য সেদিন হবে কঠিন।
অর্থাৎ- যারা আমার সাক্ষাত কামনা করে না তারা বলে, আমাদের নিকট ফেরেশতা অবতীর্ণ করা হয় না কেন? অথবা আমরা আমাদের প্রতিপালককে প্রত্যক্ষ করি না কেন? তারা তাদের অন্তরে অহংকার পোষণ করে এবং তারা সীমালংঘন করেছে গুরুতররূপে। সেদিন তারা ফেরেশতাদেরকে প্রত্যক্ষ করবে। সেদিন অপরাধীদের জন্য সুসংবাদ থাকবে না এবং তারা বলবে, রক্ষা কর, রক্ষা করা। (২৫ : ২১- ২২)
যে কেউ আল্লাহর, তার ফেরেশতাগণের, তার রাসূলগণের এবং জিবরাঈল ও মীকাঈলের শক্র সে জেনে রাখুক, আল্লাহ নিশ্চয় কাফিরদের শক্র। (২ : ৯৮)
হে মু’মিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার- পরিজনকে রক্ষা করা আগুন থেকে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যাতে নিয়োজিত আছে নির্মম হৃদয়, কঠোর স্বভাব ফেরেশতাগণ, যারা অমান্য করে না। আল্লাহ যা আদেশ করেন তা এবং তারা যা করতে আদিষ্ট হয় তা- ই করে। (৬৬ : ৬)
ফেরেশতা প্রসঙ্গ অনেক আয়াতেই রয়েছে। সেগুলোতে আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে ইবাদত ও দৈহিক কাঠামাে সৌন্দর্যে, অবয়বের বিশালতায় এবং বিভিন্ন আকৃতি ধারণে পুরঙ্গমতায় শক্তির অধিকারী বলে পরিচয় প্রদান করেছেন।
যেমন আল্লাহ্ তা’আলা বলেন- এবং যখন আমার প্রেরিত ফেরেশতাগণ লুতের নিকট আসল, তখন তাদের আগমনে সে বিষন্ন হলো এবং নিজকে তাদের রক্ষায় অসমর্থ মনে করল এবং বলল, এ এক নিদারুণ দিন! তার সম্প্রদায় তার নিকট উদ্রান্ত হয়ে ছুটে আসল এবং পূর্ব থেকে তারা কুকর্মে লিপ্ত ছিল। (১১ : ৭৭- ৭৮)
তাফসীরের কিতাবে আমি উল্লেখ করেছি, যা একাধিক আলিম বলেছেন যে, ফেরেশতাগণ তাদের সামনে পরীক্ষাস্বরূপ সুদৰ্শন যুবকের আকৃতিতে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। অবশেষে লুত (আ)- এর সম্প্রদায়ের উপর প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় এবং আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে পরাক্রমশালী শক্তিধর রূপে পাকড়াও করেন।
অনুরূপভাবে জিবরাঈল (আ) নবী করীম (সা)- এর নিকট বিভিন্ন আকৃতিতে আগমন করতেন। কখনো আসতেন দিহয়া ইব্ন খলীফা কালবী (রা)- এর আকৃতিতে, কখনো বা কোন বেদুঈনের রূপে, আবার কখনো তিনি স্বরূপে আগমন করতেন।
তার ছ’শ ডানা রয়েছে। প্রতি দু’টি ডানার মধ্যে ঠিক ততটুকু ব্যবধান যতটুকু ব্যবধান পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তদ্বয়ের মধ্যে। রাসূলুল্লাহ (সা) এ আকৃতিতে তাকে দু’বার দেখেছেন। একবার দেখেছেন আসমান থেকে যমীনে অবতরণরত অবস্থায়।
আর একবার দেখেছেন জান্নাতুল মাওয়ার নিকটবতীর্ণ সিদরাতুল মুনতাহার কাছে (মি’রাজের রাতে)। আল্লাহ তা’আলা বলেন- তাকে শিক্ষা দান করে শক্তিশালী প্রজ্ঞাসম্পন্ন সে নিজ আকৃতিতে স্থির হয়েছিল, তখন সে উর্ধ্ব দিগন্তে, তারপর সে তার নিকটবতী হলো, অতি নিকটবতী। (৫৩ ৪ ৫- ৮)
আরো দেখলাম, তার গোড়া থেকে দু’টো অদৃশ্য নদী এবং দু’টো দৃশ্যমান নদী প্রবাহিত হচ্ছে। অদৃশ্য দু’টো গেছে জান্নাতে আর দৃশ্যমান দু’টো হচ্ছে নীল ও ফোরাত। ‘পৃথিবী ও তার মধ্যকার সাগর ও নদ- নদী সৃষ্টি’ শিরোনামে পূর্বে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
এ আয়াতে যার কথা বলা হয়েছে তিনি হলেন জিবরাঈল (আ) যেমনটি আমরা একাধিক সাহাবা সূত্রে বর্ণনা করেছি। তন্মধ্যে ইব্ন মাসউদ (রা), আবু হুরায়রা (রা), আবু যর (রা) ও আয়েশা (রা) অন্যতম।
অর্থাৎ- ফলে তাদের মধ্যে দু’ ধনুকের ব্যবধান থাকে অথবা তারও কম। তখন আল্লাহ তাঁর বান্দার প্রতি যা ওহী করবার তা ওহী করলেন। (৫৩ : ৯- ১০)
‘তার বান্দার প্রতি’ অর্থাৎ আল্লাহর বান্দা মুহাম্মদ (সা)- এর প্রতি।
তারপর আল্লাহ বলেন- নিশ্চয় সে (মুহাম্মদ) তাকে (জিবরাঈল) আরেকবার দেখেছিল প্রান্তবতীর্ণ কুল গাছের নিকট, যার নিকট অবস্থিত বাসোদ্যান। যখন বৃক্ষটি, যদ্বারা আচ্ছাদিত হওয়ার তদ্বারা ছিল। আচ্ছাদিত, তার দৃষ্টি বিভ্রম হয়নি, দৃষ্টি লক্ষচ্যুতও হয়নি। (৫৩ : ১৩- ১৭)
সূরা বনী ইস্রাঈলে মি’রাজের হাদীসসমূহে আমরা উল্লেখ করেছি যে, সিন্দরাতুল মুনতাহা সপ্তম আকাশে অবস্থিত। অন্য বর্ণনায় আছে, তা ষষ্ঠ আকাশে। এর অর্থ হচ্ছে সিদরাতুল মুনতাহার মূল হলো ষষ্ঠ আকাশে আর তার ডাল- পালা হলো সপ্তম আকাশে।
যখন সিদরাতুল মুনতাহা আল্লাহ তা’আলার আদেশে যা তাকে আচ্ছাদিত করার তা তাকে আচ্ছাদিত করলাে- এর ব্যাখ্যায় কেউ কেউ বলেন, তাকে আচ্ছাদিত করেছে একপাল সােনার পতঙ্গ। কেউ বলেন, নানা প্রকার রং যার অবর্ণনীয়রূপ তাকে আচ্ছাদিত করে রেখেছে।
কারো কারো মতে, কাকের মত ফেরেশতাগণ তাকে আচ্ছাদিত করে রেখেছে। কেউ কেউ বলেন, মহান প্রতিপালকের নূর তাকে আচ্ছাদিত করে রেখেছে- যার অবর্নণীয় সৌন্দর্য ও ঔজ্জ্বল্য বর্ণনাতীত। এ অভিমতগুলোর মধ্যে কোন পরস্পর বিরোধিতা নেই। কারণ সবগুলো বিষয় একই ক্ষেত্রে পাওয়া যেতে পারে।
আমরা আরো উল্লেখ করেছি যে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : তারপর আমাকে সিদরাতুল মুনতাহার দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। আমি দেখলাম, তার ফুলগুলো ঠিক পর্বতের চূড়ার ন্যায় বড় বড়। অন্য বর্ণনায় আছে, ‘হিজারের পর্বত চূড়ার ন্যায়, আমি আরো দেখতে পেলাম তার পাতাগুলো হাতীর কানের মত।’
আরো দেখলাম, তার গোড়া থেকে দু’টো অদৃশ্য নদী এবং দু’টো দৃশ্যমান নদী প্রবাহিত হচ্ছে। অদৃশ্য দু’টো গেছে জান্নাতে আর দৃশ্যমান দু’টো হচ্ছে নীল ও ফোরাত। ‘পৃথিবী ও তার মধ্যকার সাগর ও নদ- নদী সৃষ্টি’ শিরোনামে পূর্বে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
উক্ত হাদীসে এও আছে যে, তারপর বায়তুল মা’মূরকে আমার সম্মুখে উপস্থাপিত করা হয়। লক্ষ্য করলাম, প্রতিদিন সত্তর হাজার ফেরেশতা তাতে প্রবেশ করেন। তারপর আর কখনো তারা সেখানে ফিরে আসে না। নবী করীম (সা) আরো জানান যে,
তিনি ইবরাহীম খলীল (আ)- কে বায়তুল মামুরে ঠেস দিয়ে বসা অবস্থায় দেখেছিলেন। এ প্রসঙ্গে আমরা এও বলে এসেছি যে, বায়তুল মামুর সপ্তম আকাশে ঠিক তেমনিভাবে অবস্থিত, যেমন পৃথিবীতে কা’বার অবস্থান।
সুফিয়ান ছাওরী, শু’বা ও আবুল আহওয়াস ইব্ন ফাওয়া (র) সূত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি আলী ইব্ন আবু তালিব (রা)- কে বায়তুল মা’মূর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেছিলেন, তা আকাশে অবস্থিত যুদ্রাহ নামক একটি মসজিদ।
আকাশে অবস্থিত ঘরটির নাম হলো, বায়তুল ইযযাত এবং তার রক্ষণাবেক্ষণকারী ফেরেশতাদের যিনি প্রধান, তার নাম হলো ইসমাঈল। সত্তর হাজার ফেরেশতা প্রতিদিন বায়তুল মামুরে প্রবেশ করেন এবং পরে কোনদিন সেখানে ফিরে আসার সুযোগ পান না।
কা’বার ঠিক বরাবর উপরে তার অবস্থান। পৃথিবীতে বায়তুল্লাহর মর্যাদা যতটুকু আকাশে তার মর্যাদা ঠিক ততটুকু। প্রতিদিন সত্তর হাজার ফেরেশতা তাতে সালাত আদায় করেন যারা দ্বিতীয়বার আর কখনো সেখানে আসেন না। ভিন্ন সূত্রেও হযরত আলী (রা) থেকে এরূপ বর্ণনা রয়েছে।
ইমাম তাবারানী (র) বর্ণনা করেন যে, ইব্ন আব্বাস (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : ‘বায়তুল মা মূর আকাশে অবস্থিত। তাকে যুরাহ নামে অভিহিত করা হয়। বায়তুল্লাহর ঠিক বরাবর উপরে তার অবস্থান। উপর থেকে পড়ে গেলে তা ঠিক তার উপরই এসে পড়বে।
প্রতিদিন সত্তর হাজার ফেরেশতা তাতে প্রবেশ করেন। তারপর তারা তা আর কখনো দেখেন না। পৃথিবীতে মক্কা শরীফের মর্যাদা যতটুকু আকাশে তার মর্যাদা ঠিক ততটুকু। আওফী অনুরূপ বর্ণনা ইব্ন আব্বাস (রা), মুজাহিদ (র), ইকরিম (রা), রবী ইব্ন আনাস (র) ও সুদী (র) প্রমুখ থেকেও করেছেন।
কাতাদা (র) বলেন, আমাদেরকে জানানো হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা) একদিন তার সাহাবাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন- তোমরা কি জান, বায়তুল মা’মূর কী? জবাবে তারা বললেন, আল্লাহ এবং তার রাসূল- ই ভালো জানেন।
তখন তিনি বললেন- ‘(বায়তুল মা’মূর) কা’বার বরাবর আকাশে অবস্থিত একটি মসজিদ যদি তা উপর থেকে নিচে পড়তো তাহলে কা’বার উপরই পড়তো। প্রতিদিন সত্তর হাজার ফেরেশতা তাতে সালাত আদায় করেন। আর কখনো তারা ফিরে আসেন না।
যাহাহাক ধারণা করেন যে, বায়তুল মামুরকে ইবলীস গোত্রীয় একদল ফেরেশতা আবাদ করে থাকেন। এদেরকে জিন বলা হয়ে থাকে। তিনি বলতেন, তার খাদেমরা ঐ গোত্রভুক্ত। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।
অন্যরা বলেন- প্রতি আকাশে একটি করে ঘর আছে। সংশ্লিষ্ট আকাশের ফেরেশতাগণ তার মধ্যে ইবাদত করে তাকে আবাদ করে রাখেন। পালাক্রমে তারা সেখানে এসে থাকেন যেভাবে পৃথিবীবাসী প্রতি বছর হজ্জ করে এবং সর্বদা উমরা তাওয়াফ ও সালাতের মাধ্যমে বায়তুল্লাহকে আবাদ করে রাখে।
সাঈদ ইব্ন ইয়াহয়া ইব্ন সাঈদ উমাবী তার আল- মাগাষী কিতাবের শুরুতে বলেছেন : আবু উবায়দ মুজাহিদ এর হাদীসে বর্ণনা করেছেন যে, সাত আসমান ও সাত যমীনের মধ্যে হারম শরীফ- এর মর্যাদাকে সমুন্নত করা হয়েছে।
এটি চৌদ্দটি গৃহের চতুর্থটি, প্রতি আসমানে একটি এবং প্রতি যমীনে একটি করে সম্মানিত ঘর আছে যার একটি উপর থেকে পতিত হলে তা নিচেরটির উপর গিয়ে পতিত হবে।
হাজ্জাজের মুআযযিন আবু সুলায়মান থেকে আমাশ ও আবু মু’আবিয়া সূত্রে সাঈদ ইব্ন ইয়াহয়া বর্ণনা করেন যে, আবু সুলায়মান বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইব্ন আমর (রা)- কে বলতে শুনেছি- হারম শরীফ সাত আকাশে বিশেষভাবে সম্মানিত। পৃথিবীতে তার অবস্থান। তার বায়তুল মুকাদ্দাসও সাত আকাশে সম্মানিত। তার অবস্থানও পৃথিবীতে।
যেমন কোন এক কবি বলেন- আকাশকে যিনি উর্ধ্বে স্থাপন করেছেন; তিনি তার জন্য একটি ঘর নির্মাণ করেছেন যার স্তম্ভগুলো অত্যন্ত মজবুত ও দীর্ঘ।
আকাশে অবস্থিত ঘরটির নাম হলো, বায়তুল ইযযাত এবং তার রক্ষণাবেক্ষণকারী ফেরেশতাদের যিনি প্রধান, তার নাম হলো ইসমাঈল। সত্তর হাজার ফেরেশতা প্রতিদিন বায়তুল মামুরে প্রবেশ করেন এবং পরে কোনদিন সেখানে ফিরে আসার সুযোগ পান না।
অন্য এক হাদীসে নবী করীম (সা) বলেন- ফেরেশতাগণ তাদের প্রতিপালকের নিকট যেভাবে সারিবদ্ধ হয়; তোমরা কি সেভাবে সারিবদ্ধ হতে পার না? সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন, তারা তাদের প্রতিপালকের নিকট কিভাবে সারিবদ্ধ হয়?
তারা কেবল সপ্তম আকাশেরই অধিবাসী। অন্য আকাশের ফিরিশতাগণের তো প্রশ্নই উঠে না। আর এ জন্যই আল্লাহ তা’আলা বলেন- তোমার প্রতিপালকের বাহিনী সম্পর্কে একমাত্র তিনিই জানেন। (৭৪ : ৩১) ইমাম আহমদ (র) বর্ণনা করেন যে, আবু যর (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন-
‘নিশ্চয় আমি এমন অনেক কিছু দেখি, যা তোমরা দেখতে পাও না এবং এমন অনেক কিছু শুনি, যা তোমরা শুনতে পাও না।
আকাশ চড় চড় শব্দ করে। আর তার চড় চড় শব্দ করারই কথা। আকাশে চার আঙ্গুল পরিমাণ জায়গাও খালি নেই যাতে কোন ফেরেশতা সিজদায় না। পড়ে আছেন। আমি যা জানি, তোমরা যদি তা জানতে, তাহলে তোমরা অল্প হাসতে ও বেশি কান্দতে।
শয্যায় নারী সম্ভোগ করতে না এবং লোকালয় ত্যাগ করে বিজন প্রান্তরে চলে গিয়ে উচ্চস্বরে আল্লাহর নিকট দুআ করতে থাকতে।’
অর্থাৎ- আল্লাহর শপথ! আমি খুশি হতাম। যদি আমি বৃক্ষ রূপে জন্মগ্রহণ করে কর্তিত হয়ে যেতম!
ইমাম তিরমিয়ী ও ইব্ন মাজাহ (র) ইসরাঈলের হাদীস থেকে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিয়ী (র) হাদীসটি হাসান গরীব বলে মন্তব্য করেছেন। আবার আবু যর (রা) থেকে মওকুফ সূত্রেও হাদীসটি বর্ণিত হয়ে থাকে।
তাবারানী (র) বর্ণনা করেন যে, জাবির (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : সাত আকাশে কোথাও এক পা, এক বিঘাত বা এক করতল পরিমাণ স্থান ফাঁকা নেই। যাতে কোন না কোন ফেরেশতা হয় দাঁড়িয়ে আছেন, কিংবা সিজদায় পড়ে আছেন নতুবা রুকৃরত আছেন।
তারপর যখন কিয়ামতের দিন আসবে তখন তারা সকলে বলবেন, আমরা আপনার ইবাদতের হক আদায় করতে পারিনি। তবে আমরা আপনার সাথে কোন কিছু শরীক সাব্যস্ত করিনি।
এ হাদীসদ্বয় প্রমাণ করে যে, সাত আকাশের এমন কোন স্থান নেই। যেখানে কোন কোন ফেরেশতা বিভিন্ন প্রকার ইবাদতে লিপ্ত নন। কেউ সদা দণ্ডায়মান, কেউ সদা সিজদারত আবার কেউবা অন্য কোন ইবাদতে ব্যস্ত আছেন। আল্লাহ তা’আলার আদেশ মতে তারা সর্বদাই তাদের ইবাদত, তাসবীহ, যিকির- আযকার ও অন্যান্য আমলে নিযুক্ত রয়েছেন।
আমাদের প্রত্যেকের জন্যই নির্ধারিত স্থান আছে এবং আমরা তো সারিবদ্ধভাবে দণ্ডায়মান এবং আমরা অবশ্যই তার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণাকারী। (৩৭ : ১৬৪- ১৬৬)
অন্য এক হাদীসে নবী করীম (সা) বলেন- ফেরেশতাগণ তাদের প্রতিপালকের নিকট যেভাবে সারিবদ্ধ হয়; তোমরা কি সেভাবে সারিবদ্ধ হতে পার না? সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন, তারা তাদের প্রতিপালকের নিকট কিভাবে সারিবদ্ধ হয়?
জবাবে রাসূলুল্লাহ (সা) বললেনঃ তারা প্রথম সারি পূর্ণ করে নেয় এবং সারি যথা নিয়মে সোজা করে নেয়।
অন্য এক হাদীসে তিনি বলেন- তিনভাবে অন্যদের উপর আমাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়েছে। গোটা পৃথিবীকে আমাদের জন্য মসজিদ এবং তার মাটিকে আমাদের জন্য পাক বানানো হয়েছে। আর আমাদের সারিসমূহকে ফেরেশতাদের সারির মর্যাদা দান করা হয়েছে।
অনুরূপ কিয়ামতের দিনও তারা মহান প্রতিপালকের সম্মুখে সারিবদ্ধভাবে উপস্থিত হবে।
অর্থাৎ- আর যখন তোমার প্রতিপালক উপস্থিত হবেন এবং সারিবদ্ধভাবে ফেরেশতাগণও।
তারপর তাঁরা তাদের প্রতিপালকের সম্মুখে সারিবদ্ধভাবে দুণ্ডায়মান হবে। যেমন আল্লাহ সেদিন রূহ ও ফেরেশতাগণ সারিবদ্ধভাবে দাড়াবে; দয়াময় যাকে অনুমতি দেবেন; সে ব্যতীত অন্যরা কথা বলবে না এবং সে যথাৰ্থ বলবো। (৭৮ : ৩৮)
…এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আলিমগণ বলেন, জিবরাঈল (আ) তার প্রবল শক্তি দ্বারা লুত (আ)- এর সম্প্রদায়ের বসতিগুলো- যা ছিল সাতটি- তাতে বসবাসকারী লোকজন যারা ছিল প্রায় চার লাখ এবং তাদের পশু- পক্ষী, জীব- জানোয়ার, জমি- জমা, অট্টালিকাদিসহ তার একটি ডানার কোণে তুলে নিয়ে তিনি উর্ধ্ব আকাশে পৌঁছে যান।
এখানে ‘…’ শব্দ দ্বারা আদম- সন্তান বুঝানো হয়েছে। ইব্ন আব্বাস (র), হাসান ও কাতাদা (র) এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। কেউ কেউ বলেন; …হলো, ফেরেশতাদের একটি শ্রেণী; আকারে যারা আদম- সন্তানের সাথে সাদৃশ্য রাখেন। ইব্ন আব্বাস (র), মুজাহিদ, আবু সালিহ ও আমাশ।
এ কথা বলেছেন। কেউ বলেন, …হলেন জিবরাঈল (আ)। এ অভিমত শা’বী, সাঈদ ইব্ন জুবায়র ও যিহাক (র)- এর। আবার কেউ বলেন, ‘…’ একজন ফেরেশতার নাম, যার অবয়ব গোটা সৃষ্টি জগতের সুমান।
আলী ইব্ন আবু তালহা ইব্ন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন,। এমন একজন ফেরেশতা যিনি দৈহিক গঠনে ফেরেশতা জগতে সর্বশ্রেষ্ঠদের অন্যতম।
ইব্ন মাসউদ (রা) সূত্রে ইব্ন জারীর (র) বর্ণনা করেন যে, ইব্ন মাসউদ (রা) বলেন : e;; চতুর্থ আকাশে অবস্থান করেন। আকাশসমূহের সবকিছু এবং পাহাড়-পর্বত অপেক্ষাও বৃহৎ। তিনি ফেরেশতাদের অন্তর্ভুক্ত। প্রতিদিন তিনি বার হাজার তাসবীহ পাঠ করেন।
প্রতিটি তাসবীহ থেকে আল্লাহ তা’আলা একজন করে ফেরেশতা সৃষ্টি করেন। কিয়ামতের দিন একাই তিনি এক সারিতে দণ্ডায়মান হবেন। তবে এ বর্ণনাটি একান্তই গরীব শ্রেণীভুক্ত।
তাবারানী (র) বর্ণনা করেন যে, ইব্ন আব্বাস (রা) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা)- কে বলতে শুনেছি যে, ‘আল্লাহর এমন একজন ফেরেশতা আছেন, তাকে যদি বলা হয় যে, তুমি এক গ্রাসে আকাশ ও পৃথিবীসমূহকে গিলে ফেল; তবে তিনি তা করতে সক্ষম।
তার তাসবীহ হলো, এ হাদীসটিও অত্যন্ত গরীব। কোন কোন রিওয়ায়তে হাদীসটি মওকুফ রূপে বর্ণিত। আরশ বহনকারী ফেরেশতাদের বিবরণে আমরা জাবির ইব্ন আবদুল্লাহ (রা) সূত্রে উল্লেখ করেছি যে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন-
‘আরশ বহনকারী আল্লাহর ফেরেশতাদের এক ফেরেশতা সম্পর্কে বলার জন্য আমাকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তার কানের লতি থেকে কাঁধ পর্যন্ত সাতশ’ বছরের দূরত্ব।’ দাউদ ও ইব্ন আবু হাতিম (র) তা বর্ণনা করেছেন। আবু জিবরাঈল (আ)- এর পরিচিতি অধ্যায়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বর্ণিত হয়েছে।
…এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আলিমগণ বলেন, জিবরাঈল (আ) তার প্রবল শক্তি দ্বারা লুত (আ)- এর সম্প্রদায়ের বসতিগুলো- যা ছিল সাতটি- তাতে বসবাসকারী লোকজন যারা ছিল প্রায় চার লাখ এবং তাদের পশু- পক্ষী, জীব- জানোয়ার, জমি- জমা, অট্টালিকাদিসহ তার একটি ডানার কোণে তুলে নিয়ে তিনি উর্ধ্ব আকাশে পৌঁছে যান।
এমনকি ফেরেশতাগণ কুকুরের ঘেউ ঘেউ ও মুরগীর আওয়াজ পর্যন্ত শুনতে পান। তারপর তিনি তাকে উল্টিয়ে উপর দিক নিচে করে দেন। এটাই হলো এ, এর তাৎপর্য। আল্লাহর বাণী : …; অর্থ অপরূপ সুন্দর আকৃতিসম্পন্ন। যেমন অন্য আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেন- এ, নিশ্চয় এ কুরআন এক সম্মানিত রাসূলের বাহিত বার্তা। (৬৯ 🙂
আবদুল্লাহ (রা) থেকে ইব্ন জারীর (র) বর্ণনা করেন যে, আবদুল্লাহ (রা) এ। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সা) জিবরাঈল (আ)- কে সূক্ষ্ম রেশমের তৈরি দুই জোড়া পোশাক পরিহিত অবস্থায় দেখেছেন। তিনি তখন আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যবর্তী গোটা স্থান জুড়ে অবস্থান করছিলেন।’ এর সনদও উত্তম ও প্রামাণ্য।
অর্থাৎ জিবরাঈল (আ) রাসূলুল্লাহর দূত করীম- সুদর্শন।
অর্থ আরশের অর্থ প্রবল শক্তিমান মহান অধিপতির নিকটে তার উচ্চ মর্যাদা রয়েছে। مُظاپع অর্থ উর্দ্ধ জগতে তিনি সকলের অনুকরণীয়। অর্থ তিনি গুরুত্বপূর্ণ আমানতের অধিকারী। নবীগণের মাঝে দূত হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেছিলেন, যিনি তাদের উপর সত্য সংবাদ ও ভারসাম্যপূর্ণ শরীয়ত সম্বলিত ওহী নাযিল করতেন।
তিনি রাসূলুল্লাহ (সা)- এর নিকট আগমন করতেন। তাঁর নিকট তিনি অবতরণ করতেন বিভিন্ন রূপে। যেমন আমরা পূর্বে বর্ণনা করেছি।
আল্লাহ্ তা’আলা জিবরাঈল (আ)- কে যে আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন; রাসূলুল্লাহ (সা) সে আকৃতিতে তাকে দু’বার দেখেছেন। তার রয়েছে ছ’শ ডানা। যেমন ইমাম বুখারী (র) তালক ইব্ন গান্নাম ও যায়েদ শায়বানী (র) সূত্রে বর্ণনা করেন। যায়েদ শায়বানী (র) বলেন, আমি যির (র)- কে আল্লাহর বাণী-
সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বললেন- ‘আবদুল্লাহ ইব্ন মাসউদ (রা:) আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, মুহাম্মদ (সা) জিবরাঈল (আ)- কে তার ছ’শ ডানাসহ দেখেছেন।
ইমাম আহমদ (র) বর্ণনা করেন যে, আবদুল্লাহ বলেন- রাসূলুল্লাহ (সা) জিবরাঈল (আ)- কে তাঁর নিজ আকৃতিতে দেখেছেন। তার ছ’শ ডানা ছিল। প্রতিটি ডানা দিগন্ত আচ্ছাদিত করে ফেলেছিল। তার ডানা থেকে ঝরে পড়ছিল নানা বর্ণের মুক্তা ও ইয়াকৃত। এ সম্পর্কে আল্লাহই সমধিক অবহিত।
ইমাম আহমদ (র) বর্ণনা করেন যে, ইব্ন মাসউদ (রা) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : আমি জিবরাঈল (আ)-কে দেখেছি। তার ছ’শ ডানা ছিল। তাঁর পালক থেকে নানা বর্ণের মণি- মুক্ত ছড়িয়ে পড়ছিল।
আহমদ (র) বর্ণনা করেন যে, ইব্ন মাসউদ (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : ‘আমি সিন্দরাতুল মুনতাহা’র নিকট জিবরাঈল (আ)- কে দেখেছি। তখন ছিল তার ছ’শ ডানা।
হুসায়ন (রা) বলেন, আমি আসিমকে ডানাসমূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি আমাকে তা জানাতে অস্বীকৃতি জানান। পরে তাঁর জনৈক সংগী আমাকে জানান যে, তাঁর ডানা পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যবতী দূরত্রে সমান। উল্লেখ্য যে, এ রিওয়ায়েতগুলোর সনদ উত্তম ও নির্ভরযোগ্য। ইমাম আহমদ (র) এককভাবেই তা বর্ণনা করেছেন।
ইমাম আহমদ (র) বর্ণনা করেন যে, শাকীক (র) বলেন, আমি ইব্ন মাসউদ (রা)- কে বলতে শুনেছি যে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন- ‘আমি জিবরাঈলকে তারুণ্য দীপ্ত যুবকের আকৃতিতে দেখেছি, যেন তাঁর সাথে মুক্তা ঝুলছে।’ এর সনদ সহীহ।
আবদুল্লাহ (রা) থেকে ইব্ন জারীর (র) বর্ণনা করেন যে, আবদুল্লাহ (রা) এ। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সা) জিবরাঈল (আ)- কে সূক্ষ্ম রেশমের তৈরি দুই জোড়া পোশাক পরিহিত অবস্থায় দেখেছেন। তিনি তখন আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যবর্তী গোটা স্থান জুড়ে অবস্থান করছিলেন।’ এর সনদও উত্তম ও প্রামাণ্য।
ইমাম বুখারী (র) বর্ণনা করেন যে, ইব্ন শিহাব (র) বলেন, উমর ইব্ন আবদুল আয়ীয (র) একদিন আসর পড়তে কিছুটা বিলম্ব করে ফেলেন। তখন উরওয়া (রা) তাকে বললেন, নিশ্চয়ই জিবরাঈল (আ) অবতরণ করে রাসূলুল্লাহ (সা)- এর সামনে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করেছিলেন।
সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফে আছে যে, মাসরূক বলেন, আমি একদিন আয়েশা (রা)- এর নিকট ছিলাম। তখন আমি বললাম, আল্লাহ তা’আলা কি এ কথা বলছেন না যে,
(সে তাে (মুহাম্মদ) তাকে (জিবরাঈলকে) স্পষ্ট দিগন্তে দেখেছে। (৮১ : ২৯) (নিশ্চয় সে তাকে আরেকবার দেখেছিল।) (৫৩ : ১৩) উত্তরে আয়েশা (রা) বললেন, এ উম্মতের আমিই প্রথম ব্যক্তি যে রাসূলুল্লাহ (সা)- কে এ সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিল। উত্তরে তিনি বলেছিলেন?
উনি হলেন জিবরাঈল।’ তিনি তাঁকে আল্লাহ সৃষ্ট তার আসল অবয়বে মাত্র দু’বার দেখেছেন। তিনি তাকে দেখেছেন আসমান থেকে যমীনে অবতরণরত অবস্থায়। তখন তাঁর সুবিশাল দেহ আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যবতী স্থানকে জুড়ে রেখেছিল।
ইমাম বুখারী (র) বর্ণনা করেন যে, ইব্ন আব্বাস (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) জিবরাঈল (আ)- কে বললেন- ‘আচ্ছা, আপনি আমার সঙ্গে যতবার সাক্ষাৎ করে থাকেন তার চেয়ে অধিক সাক্ষাৎ করতে পারেন না?’ ইব্ন আব্বাস (রা) বলেন, তারপর নিম্নোক্ত আয়াতটি নাযিল হয়-
আমরা আপনার প্রতিপালকের আদেশ ব্যতীত অবতরণ করি না। যা আমাদের সম্মুখে ও পশ্চাতে আছে এবং যা এ দু’- এর অন্তর্বতীর্ণ তা তারই। (১৯ : ৬৪)
ইমাম বুখারী (র) বর্ণনা করেন যে, ইব্ন আব্বাস (রা) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সা) সর্বাপেক্ষা বেশি দানশীল ছিলেন। আর তাঁর এ বিদ্যান্যতা রমযান মাসে, যখন জিবরাঈল (আ) তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন, তখন অনেক বেশি বৃদ্ধি পেতো।
জিবরাঈল (আ) রমযানের প্রতি রাতে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে কুরআনের দারুস দিতেন।’ মোটকথা, রাসূলুল্লাহ (সা) কল্যাণ সাধনে মুক্ত বায়ু অপেক্ষাও অধিকতর উদার ছিলেন।
ইমাম বুখারী (র) বর্ণনা করেন যে, ইব্ন শিহাব (র) বলেন, উমর ইব্ন আবদুল আয়ীয (র) একদিন আসর পড়তে কিছুটা বিলম্ব করে ফেলেন। তখন উরওয়া (রা) তাকে বললেন, নিশ্চয়ই জিবরাঈল (আ) অবতরণ করে রাসূলুল্লাহ (সা)- এর সামনে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করেছিলেন।
এ কথা শুনে উমর (রা) বললেন, হে উরওয়া! তুমি যা বলছি, আমার তা জানা আছে। ‘আমি বশীর ইব্ন আবু মাসউদকে তার পিতার বরাতে বলতে শুনেছি যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সা)- কে বলতে শুনেছেন- জিবরাঈল (আ) অবতরণ করলেন।
তারপর তিনি সঙ্গে সালাত আদায় করলাম। এভাবে আঙ্গুল দ্বারা গুণে গুণে তিনি পাচ নামাযের কথা উল্লেখ করেন।
এবার ইসরাফীল (আ)- এর পরিচিতি জানা যাক। ইনি আরশ বহনকারী ফেরেশতাদের একজন। ইনি সেই ফেরেশতা, যিনি তার প্রতিপালকের আদেশে শিঙ্গায় তিনটি ফুৎকার… সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফে আছে যে, মাসরূক বলেন, আমি একদিন আয়েশা (রা)- এর নিকট ছিলাম। তখন আমি বললাম, আল্লাহ তা’আলা কি এ কথা বলছেন না যে-
(সে তাে (মুহাম্মদ) তাকে (জিবরাঈলকে) স্পষ্ট দিগন্তে দেখেছে। (৮১ : ২৯) (নিশ্চয় সে তাকে আরেকবার দেখেছিল।) (৫৩ : ১৩) উত্তরে আয়েশা (রা) বললেন, এ উম্মতের আমিই প্রথম ব্যক্তি যে রাসূলুল্লাহ (সা)- কে এ সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিল।
ফলে রূহগুলো কবরে গিয়ে দেহের মধ্যে ঢুকে পড়ে এমনভাবে মিশে যাবে যেমনটি বিষ সৰ্পদষ্ট ব্যক্তির মধ্যে মিশে যায়। এতে দেহগুলো প্রাণবন্ত হয়ে যাবে এবং কবরসমূহ বিদীর্ণ হয়ে যাবে আর তারা দ্রুত গতিতে হাশরের ময়দানের দিকে বেরিয়ে পড়বে।
উত্তরে তিনি বলেছিলেন? উনি হলেন জিবরাঈল।’ তিনি তাঁকে আল্লাহ সৃষ্ট তার আসল অবয়বে মাত্র দু’বার দেখেছেন। তিনি তাকে দেখেছেন আসমান থেকে যমীনে অবতরণরত অবস্থায়। তখন তাঁর সুবিশাল দেহ আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যবতী স্থানকে জুড়ে রেখেছিল।
ইমাম বুখারী (র) বর্ণনা করেন যে, ইব্ন আব্বাস (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) জিবরাঈল (আ)- কে বললেন- ‘আচ্ছা, আপনি আমার সঙ্গে যতবার সাক্ষাৎ করে থাকেন তার চেয়ে অধিক সাক্ষাৎ করতে পারেন না?’ ইব্ন আব্বাস (রা) বলেন, তারপর নিম্নোক্ত আয়াতটি নাযিল হয়-
আমরা আপনার প্রতিপালকের আদেশ ব্যতীত অবতরণ করি না। যা আমাদের সম্মুখে ও পশ্চাতে আছে এবং যা এ দু’- এর অন্তর্বতীর্ণ তা তারই। (১৯ : ৬৪)
ইমাম বুখারী (র) বর্ণনা করেন যে, ইব্ন আব্বাস (রা) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সা) সর্বাপেক্ষা বেশি দানশীল ছিলেন। আর তাঁর এ বিদ্যান্যতা রমযান মাসে, যখন জিবরাঈল (আ) তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন, তখন অনেক বেশি বৃদ্ধি পেতো।
জিবরাঈল (আ) রমযানের প্রতি রাতে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে কুরআনের দারুস দিতেন।’ মোটকথা, রাসূলুল্লাহ (সা) কল্যাণ সাধনে মুক্ত বায়ু অপেক্ষাও অধিকতর উদার ছিলেন।
ইমাম বুখারী (র) বর্ণনা করেন যে, ইব্ন শিহাব (র) বলেন, উমর ইব্ন আবদুল আয়ীয (র) একদিন আসর পড়তে কিছুটা বিলম্ব করে ফেলেন। তখন উরওয়া (রা) তাকে বললেন, নিশ্চয়ই জিবরাঈল (আ) অবতরণ করে রাসূলুল্লাহ (সা)- এর সামনে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করেছিলেন।
এ কথা শুনে উমর (রা) বললেন, হে উরওয়া! তুমি যা বলছি, আমার তা জানা আছে। ‘আমি বশীর ইব্ন আবু মাসউদকে তার পিতার বরাতে বলতে শুনেছি যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সা)- কে বলতে শুনেছেন : জিবরাঈল (আ) অবতরণ করলেন।
তারপর তিনি সঙ্গে সালাত আদায় করলাম। এভাবে আঙ্গুল দ্বারা গুণে গুণে তিনি পাচ নামাযের কথা উল্লেখ করেন।
এবার ইসরাফীল (আ)- এর পরিচিতি জানা যাক। ইনি আরশ বহনকারী ফেরেশতাদের একজন। ইনি সেই ফেরেশতা, যিনি তার প্রতিপালকের আদেশে শিঙ্গায় তিনটি ফুৎকার দেবেন। প্রথমটি ভীতি সৃষ্টির, দ্বিতীয়টি ধ্বংসের এবং তৃতীয়টি পুনরুত্থানের। এর বিস্তারিত আলোচনা পরে আমাদের এ কিতাবের যথাস্থানে আসবে ইনশাআল্লাহ।
সূর (১-০) হলো একটি শিঙ্গা, যাতে ফুৎকার দেয়া হবে। তার প্রতিটি- আওয়াজ আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যবতী দূরত্বের সমান। আল্লাহ যখন তাকে পুনরুত্থানের জন্য ফুৎকার দেয়ার আদেশ করবেন, তখন মানুষের রূহগুলো তার মধ্যে অবস্থান নিয়ে থাকবে।
তারপর যখন তিনি ফুৎকার দেবেন, তখন রূহগুলো বিহবল চিত্তে বেরিয়ে আসবে। ফলে আল্লাহ তা’আলা বলবেন, আমার ইযযত ও পরাক্রমের শপথ! প্রতিটি রূহ তার দেহে ফিরে যাক দুনিয়াতে যে দেহকে প্রাণবন্ত রাখতো।
ফলে রূহগুলো কবরে গিয়ে দেহের মধ্যে ঢুকে পড়ে এমনভাবে মিশে যাবে যেমনটি বিষ সৰ্পদষ্ট ব্যক্তির মধ্যে মিশে যায়। এতে দেহগুলো প্রাণবন্ত হয়ে যাবে এবং কবরসমূহ বিদীর্ণ হয়ে যাবে আর তারা দ্রুত গতিতে হাশরের ময়দানের দিকে বেরিয়ে পড়বে।
যথাস্থানে এর বিস্তারিত আলোচনা আসবে। আর এজন্যই রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন- আমি কিভাবে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি যেখানে শিঙ্গাধারী ফেরেশতা শিঙ্গা মুখে নিয়ে মাথা ঝুকিয়ে অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছেন।
বললেন, উদ্ভিদাদি ও বৃষ্টির দায়িত্বে। আমি বললাম, আর মালাকুল মউত কোন দায়িত্বে আছেন? বললেন, রূহ কবয করার দায়িত্বে। আমি তো মনে করেছিলাম, উনি কিয়ামত কায়েম করার জন্য অবতরণ করেছেন বুঝি! আর আপনি আমার যে ভাবগতি দেখেছিলেন, তা কিয়ামত কায়েম হওয়ার ভয়েই হয়েছিল।
একথা শুনে সাহাবাগণ বললেন, তাহলে আমরা কি দু’আ পাঠ করবো ইয়া রাসূলাল্লাহ! জবাবে রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, তোমরা বলবে?
-‘আমাদের আল্লাহই যথেষ্ট। তিনি উত্তম অভিভাবক। আল্লাহর উপরই আমাদের ভরসা।’
ইমাম আহমদ (র) ও তিরমিয়ী (র) আবু সাঈদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত আতিয়্যা আল- আওফী- এর হাদীস থেকে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
ইমাম আহমদ (র) বর্ণনা করেন যে, আবু সাঈদ খুদরী (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) শিঙ্গাধারী ফেরেশতার কথা আলোচনা প্রসঙ্গে বলেন, তার ডানে জিবরাঈল ও বামে মীকাঈল (আ) অবস্থান করছেন।
তাবারানী (র) বর্ণনা করেন যে, ইব্ন আব্বাস (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) একদিন বসা অবস্থায় ছিলেন। জিবরাঈল (আ) তখন তাঁর পাশে অবস্থান করছিলেন। এমন সময়ে দিগন্ত ভেদ করে বুকে ঝুকে ইসরাফীল (আ) পৃথিবীর নিকটবতী হতে শুরু করেন।
হঠাৎ দেখা গেল একজন ফেরেশতা বিশেষ এক আকৃতিতে নবী করীম (সা)- এর সামনে উপস্থিত হয়ে বললেন, হে মুহাম্মদ! বান্দা নবী ও বাদশাহ নবী এ দু’য়ের কোন একটি বেছে নেয়ার জন্য আল্লাহ তা’আলা আপনাকে আদেশ করছেন।
রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন- তখন জিবরাঈল (আ) তার হাত দ্বারা আমার প্রতি ইংগিতে বলেন যে, আপনি বিনয় অবলম্বন করুন। এতে আমি বুঝতে পারলাম যে, তিনি আমার মঙ্গলার্থেই বলছেন। ফলে আমি বললাম : আমি বান্দা নবী হওয়াই পছন্দ করি। তারপর সে ফেরেশতা আকাশে উঠে গেলে আমি বললাম, হে জিবরাঈল! এ…
ব্যাপারে। আমি আপনার নিকট জিজ্ঞেস করব বলে মনস্থ করেছিলাম। কিন্তু আপনার ভাবগতি দেখে আর তা জিজ্ঞেস করতে পারলাম না। এবার বলুন, ইনি কে, হে জিবরাঈল? জবাবে জিবরাঈল (আ) বললেন- ইনি ইসরাফীল (আ)।
যেদিন আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করেছেন সেদিন থেকেই তিনি তাঁর সম্মুখে পদদ্বয় সোজা রেখে নত মস্তকে দাঁড়িয়ে আছেন। কখনো তিনি চোখ তুলেও তাকান না। তার ও মহান প্রতিপালকের মধ্যে রয়েছে সত্তরটি নূরের পর্দা। তার কোন একটির কাছে ঘোিষলে তা তাকে পুড়িয়ে ফেলবে।
তার সামনে একটি ফলক আছে। আকাশ কিংবা পৃথিবীর ব্যাপারে আল্লাহ কোন আদেশ দিলে সে ফলকটি উঠে গিয়ে তা তার ললাট- দেশে আঘাত করে। তখন তিনি চােখ তুলে তাকান। সে আদেশ যদি আমার কর্ম সম্পৃক্ত হয়; তাহলে সে ব্যাপারে আমাকে তিনি আদেশ দেন।
আর যদি তা মীকাঈল- এর কাজ সংক্রান্ত হয় তাহলে তিনি তাঁকে তার আদেশ দেন। আর যদি তা মালাকুল মাউতের কাজ হয় তবে তিনি তাকে তার আদেশ দেন। আমি বললাম, হে জিবরাঈল! আপনার দায়িত্ব কী? তিনি বললেন, বায়ু ও সৈন্য সংক্রান্ত। আমি বললাম, আর মীকাঈল কিসের দায়িত্বে নিয়োজিত?
বললেন, উদ্ভিদাদি ও বৃষ্টির দায়িত্বে। আমি বললাম, আর মালাকুল মউত কোন দায়িত্বে আছেন? বললেন, রূহ কবয করার দায়িত্বে। আমি তো মনে করেছিলাম, উনি কিয়ামত কায়েম করার জন্য অবতরণ করেছেন বুঝি! আর আপনি আমার যে ভাবগতি দেখেছিলেন, তা কিয়ামত কায়েম হওয়ার ভয়েই হয়েছিল।
জিবরাঈল (আ)- এর দায়িত্ব ছিল উম্মতের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য নবী- রাসূলগণের নিকট হিদায়াত নিয়ে আসা। মীকাঈল (আ) বৃষ্টি ও উদ্ভিদাদির দায়িত্বে নিয়ােজিত, যার মাধ্যমে এ দুনিয়াতে জীবিকা সৃষ্টি করা হয়। তাঁর অনেক সহযোগী ফেরেশতা আছেন, আল্লাহর আদেশ অনুসারে তিনি যা বলেন তারা তা পালন করেন।
এ সূত্রে এটি গরীব হাদীস। সহীহ মুসলিমে আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা) রাতে যখন নামায পড়ার জন্য দণ্ডায়মান হতেন, তখন তিনি বলতেন-
হে আল্লাহ! হে জিবরাঈল, মীকাঈল ও ইসরাষকীল- এর প্রতিপালক! হে আকাশসমূহ ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা, গুপ্ত ও প্রকাশ্য সবকিছুর পরিজ্ঞতা! তুমিই তো তোমার বান্দাদের মাঝে সে বিষয়ে মীমাংসা করবে, যে বিষয়ে তারা মতবিরোধে লিপ্ত ছিল।
তুমি আমাকে সত্যের বিরোধপূর্ণ বিষয়ে হিদায়ত দান কর। তুমি তো যাকে ইচ্ছা কর তাকেই সঠিক পথের সন্ধান দিতে পার।
শিঙ্গা সম্পর্কিত হাদীসে আছে যে, ইসরাফীল (আ)- ই হবেন প্রথম, যাকে আল্লাহ ধ্বংসের পর শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়ার জন্য পুনজীবিত করবেন।
মুহাম্মদ ইব্ন হাসান নাক্কাশ (র) বলেন, ইসরাফীল (আ)- ই ফেরেশতাদের মধ্যে সর্বপ্রথম সিজদা করেছিলেন। এরই পুরস্কারস্বরূপ তাকে লাওহে মাহফুজের কর্তৃত্ব দেওয়া হয়েছে। আবুল التعريف والاعلام بما انهم فى القرآن من নামক কিতাবে এ কথাটি বর্ণনা করেছেন।
আল্লাহ তা’আলা বলেন- যে কেউ আল্লাহর, তার ফেরেশতাদের, তার রাসূলগণের এবং জিবরাঈল ও মীকাঈলের শত্রু ‘…’। (২ : ৯৮)
এ আয়াতে বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন হওয়ার কারণে জিবরাঈল ও মীকাঈল (আ)- কে এর উপর- করা হয়েছে। জিবরাঈল হলেন এক মহান ফেরেশতা। পূর্বেই তাঁর প্রসঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আর মীকাঈল (আ) হলেন বৃষ্টি ও উদ্ভিদাদির দায়িত্বে নিয়ােজিত।
তিনি আল্লাহ থেকে প্রাপ্ত বিশেষ মর্যাদার অধিকারী ও নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতাদের অন্যতম।
ইমাম আহমদ (র) আনাস ইব্ন মালিক (রা) সূত্রে রিওয়ায়েত করেন, তিনি বলেছেন যে, নবী করীম (সা) জিবরাঈল (আ)- কে বললেন- ‘ব্যাপার কি, আমি মীকাঈল (আ)- কে কখনো হাসতে দেখলাম না যে? উত্তরে জিবরাঈল (আ) বললেন, মীকাঈল (আ) জাহান্নাম সৃষ্টির পর থেকে এ যাবত কখনো হাসেন নি।
এ হলো সে সব ফেরেশতার আলোচনা, পবিত্র কুরআনে যাদের কথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। সিহাহ সিত্তায় নবী করীম (সা)- এর দু’আয়ও এঁদের উল্লেখ রয়েছে।
জিবরাঈল (আ)- এর দায়িত্ব ছিল উম্মতের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য নবী- রাসূলগণের নিকট হিদায়াত নিয়ে আসা। মীকাঈল (আ) বৃষ্টি ও উদ্ভিদাদির দায়িত্বে নিয়ােজিত, যার মাধ্যমে এ দুনিয়াতে জীবিকা সৃষ্টি করা হয়। তাঁর অনেক সহযোগী ফেরেশতা আছেন, আল্লাহর আদেশ অনুসারে তিনি যা বলেন তারা তা পালন করেন।
আল্লাহ তা’আলার মর্জি অনুযায়ী তারা বাতাস ও মেঘমালা পরিচালিত করে থাকেন। আর পূর্বে আমরা বর্ণনা করে এসেছি যে, আকাশ থেকে যে ফোঁটাটিই পতিত হয়, তার সাথে একজন ফেরেশতা থাকেন যিনি সে ফোটাটি পৃথিবীর যথাস্থানে স্থাপন করেন।
পক্ষান্তরে ইসরাফীল (আ)-কে কবর থেকে উত্থানের এবং কৃতজ্ঞদের সাফল্য লাভ ও কৃতঘ্নদের পরিণতি লাভ করার উদ্দেশ্যে পুনরুত্থান দিবসে উপস্থিত হওয়ার জন্য শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়ার দায়িত্বে নিয়ােজিত করে রাখা হয়েছে।
ইব্ন আব্বাস (রা) ও মুজাহিদ (র) প্রমুখ থেকে বর্ণিত যে, তারা বলেন, গোটা পৃথিবী মালাকুল মাউতের সামনে একটি পাত্রের ন্যায়। তার যে কোন অংশ থেকে ইচ্ছা তিনি হাত বাড়িয়ে গ্রহণ করতে পারেন। আমরা এও উল্লেখ করেছি যে, মৃত্যুর ফেরেশতাগণ মানুষের নিকট তার আমল অনুপাতে আগমন করে থাকেন।
ঐ দিন কৃতজ্ঞদের পাপ মার্জনা করা হবে এবং তাদের পুণ্য কর্মের প্রতিফল দেওয়া হবে। আর কৃতঘ্নীদের আমল বিক্ষিপ্ত ধুলির ন্যায় হয়ে যাবে আর সে নিজের ধ্বংস ও মৃত্যু কামনা করবে।
মোটকথা, জিবরাঈল (আ) হিদায়েত অবতারণের দায়িত্ব পালন করেন, মীকাঈল (আ) জীবিকা প্রদানের দায়িত্ব পালন করেন আর ইসরাফীল (আ) পালন করেন সাহায্য দান ও প্রতিদানের দায়িত্ব। কিন্তু মালাকুল মাউতের নাম কুরআন এবং সহীহ হাদীসসমূহের কোথাও স্পষ্ট উল্লেখ নেই।
তবে কোন কোন রিওয়ায়েতে তাকে আযরাঈল নামে অভিহিত করা হয়েছে। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।
আল্লাহ তা’আলা বলেন- বল, তোমাদের জন্য মৃত্যুর ফেরেশতা তোমাদের প্রাণ হরণ করবে। অবশেষে তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট প্রত্যানীত হবে। (৩২ : ১১)
এ মালাকুল মাউতেরও কিছু সহযোগী ফেরেশতা আছেন, যারা মানুষের রূহকে দেহ থেকে বের করে তা কণ্ঠনালী পর্যন্ত নিয়ে আসেন, তারপর মালাকুল মউত নিজ হাতে তা কবয করেন।
তিনি তা কবয করার পর সহযোগী ফেরেশতাগণ এক পলকের জন্যও তা তার হাতে থাকতে না দিয়ে সংগে সংগে তাঁরা তাকে নিয়ে উপযুক্ত কাফনে আবৃত করেন। নিমের আয়াতে এ বিষয়ে বিস্তুরিত আলোচনা করা হয়েছে- لم د ك ه م ا ، و بیثبات اللهٔ الذین آم نوا بالقول الكابيت فى الحيوة الدنيا وفي
الأجرة. অর্থাৎ- যারা শাশ্বত বাণীতে বিশ্বাসী তাদেরকে ইহজীবনে ও পরজীবনে আল্লাহ সুপ্রতিষ্ঠিত রাখবেন। (১৪ : ২৭)
তারপর তারা রূহাটি নিয়ে উর্ধ্ব জগতের দিকে রওয়ানা হন। রূহ যদি সৎকর্মপরায়ণ হয়, তাহলে তার জন্য আকাশের দ্বারসমূহ খুলে দেওয়া হয়। অন্যথায় তার সামনেই তা বন্ধ করে দিয়ে তাকে পৃথিবীর দিকে ছুড়ে ফেলা হয়।
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন- তিনিই তার বান্দাদের উপর পরাক্রমশালী এবং তিনিই তোমাদের রক্ষক প্রেরণ করেন; অবশেষে যখন তোমাদের কারো মৃত্যুকাল উপস্থিত হয়, তখন আমার প্রেরিতরা তার মৃত্যু ঘটায় এবং তার কোন ত্রুটি করে না। তারপর তাদের প্রকৃত প্রতিপালকের দিকে তারা প্রত্যানীত হয়। দেখ, কর্তৃত্ব তো তারই এবং হিসােব গ্রহণে তিনিই সর্বাপেক্ষা তৎপর।
ইব্ন আব্বাস (রা) ও মুজাহিদ (র) প্রমুখ থেকে বর্ণিত যে, তারা বলেন, গোটা পৃথিবী মালাকুল মাউতের সামনে একটি পাত্রের ন্যায়। তার যে কোন অংশ থেকে ইচ্ছা তিনি হাত বাড়িয়ে গ্রহণ করতে পারেন। আমরা এও উল্লেখ করেছি যে, মৃত্যুর ফেরেশতাগণ মানুষের নিকট তার আমল অনুপাতে আগমন করে থাকেন।
লোক যদি মু’মিন হয়, তবে তার নিকট উজ্জ্বল চেহারা, সাদা পোশাক ও হৃদয়বান ফেরেশতাগণ আগমন করেন। আর লোক যদি কাফির হয় তাহলে এর বিপরীতবেশী ফেরেশতাগণ আগমন করেন। এ ব্যাপারে আমরা মহান আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি।
তারপর মালাকুল মউত মহান আল্লাহর নিকট এসে বলবেন, হে আমার প্রতিপালক! জিবরাঈল এবং মীকাঈলও তো মারা গিয়েছেন। একথা শুনে আল্লাহ তা’আলা বলবেন- অথচ কে বেঁচে আছে সে সম্পর্কে তিনি সমধিক অবহিত, তাহলে আর কে বেঁচে আছে?
জাফর ইব্ন মুহাম্মদ তার পিতাকে বলতে শুনেন যে, একদা রাসূলুল্লাহ (সা) জনৈক আনসারীর শিয়রে বসে মালাকুল মাউতকে দেখতে পেয়ে তাকে বললেন- হে মালাকুল মউতা! আমার সাহাবীর সঙ্গে সদয় ব্যবহার করুন! কারণ সে মু’মিন। জবাবে মালাকুল মউত বললেন,
হে মুহাম্মদ! আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন এবং আপনার চোখ জুড়াক, কেননা আমি প্রত্যেকটি মুমিনের ব্যাপারেই সদয়। আপনি জেনে রাখুন, পৃথিবীর কোন মাটির কাচা ঘর বা পশম আচ্ছাদিত তাবু, তা জলে হোক বা স্থলে হোক এমন নেই, যেখানে আমি দৈনিক পাঁচবার লোকদের তল্লাশি না করে থাকি।
ফলে ছোট- বড় সকলকেই আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। আল্লাহর শপথ! হে মুহাম্মদ, আল্লাহর আদেশ ব্যতীত একটি মশার রূহ কবয করার সাধ্যও আমার নেই।
জাফর ইব্ন মুহাম্মদ বলেন, আমার আব্বা আমাকে জানিয়েছেন যে, মৃত্যুর ফেরেশতাগণ নামাযের সময়ও লোকদেরকে তল্লাশি করে ফিরেন। তখন কারো মৃত্যুর সময় এসে পড়লে যদি সে নামায্যের পাবন্দ হয়ে থাকে তাহলে ফেরেশতা তার নিকটে এসে শয়তানকে তাড়িয়ে দেন। এবং সে সঙ্কটময় মূহুর্তে তাকে এর তালকীন করেন।
এ হাদীসটি মুরসাল এবং কেউ কেউ এর সমালোচনা করেছেন। শিঙ্গা সম্পর্কিত হাদীসে আমরা আবু হুরায়রা (রা) সূত্রে রাসূলুল্লাহ (সা)- এর একটি দীর্ঘ হাদীস বর্ণনা করেছি। তাতে এও আছে যে, আল্লাহ্ তা’আলা ইসরাফীল (আ)- কে ধ্বংসের ফুৎকারের আদেশ করবেন।
সে মতে তিনি ফুৎকার দিলে আকাশসমূহ ও পৃথিবীর অধিবাসীরা সকলেই ধ্বংস হয়ে যাবে। কেবল তারাই নিরাপদ থাকবেন, যাদেরকে আল্লাহ নিরাপদ রাখতে ইচ্ছা করবেন। এভাবে তারা বিনাশ হয়ে গেলে মৃত্যুর ফেরেশতা আল্লাহ্ তা’আলার নিকট এসে বলবেন, হে আমার প্রতিপালক।
আপনি যাদেরকে রক্ষা করতে ইচ্ছা করেছেন তারা ব্যতীত আকাশসমূহ ও পৃথিবীর অধিবাসীদের সকলেই তো মারা গিয়েছে। কে কে জীবিত আছে তা জানা থাকা সত্ত্বেও আল্লাহ তা’আলা বলবেন : কে জীবিত রইলো? তিনি বলবেন, জীবিত আছেন। আপনি, যিনি চিরঞ্জীব, যার মৃত্যু নেই।
আর বেঁচে আছেন আপনার আরশ বহনকারিগণ এবং জিবরাঈল ও মীকাঈল। এ কথা শুনে আল্লাহ্ তা’আলা বলবেন- জিবরাঈল এবং মীকাঈলেরও মৃত্যু হয়ে যাক। তখন আরশ আল্লাহর সঙ্গে কথা বলবে। সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক!
জিবরাঈল এবং মীকাঈলও মারা যাবেন? আল্লাহ বলবেন : চুপ কর! আমার আরশের নিচে যারা আছে; তাদের প্রত্যেকের জন্য আমি মৃত্যু অবধারিত করে রেখেছি। তারপর তাঁরা দুজনও মারা যাবেন।
তারপর মালাকুল মউত মহান আল্লাহর নিকট এসে বলবেন, হে আমার প্রতিপালক! জিবরাঈল এবং মীকাঈলও তো মারা গিয়েছেন। একথা শুনে আল্লাহ তা’আলা বলবেন- অথচ কে বেঁচে আছে সে সম্পর্কে তিনি সমধিক অবহিত, তাহলে আর কে বেঁচে আছে?
কুরআনে যে সব ফেরেশতার নাম উল্লেখ করা হয়েছে; প্রাচীন যুগের বিপুল সংখ্যক আলিমের মতে তাদের মধ্যে হারূত এবং মারতও রয়েছেন। এদের কাহিনী সম্পর্কে বেশ কিছু রিওয়ায়েত বর্ণিত হয়েছে, যার বেশির ভাগই ইসরাঈলী বর্ণনা।
তিনি বলবেন, বেঁচে আছেন। আপনি চিরঞ্জীব সত্তা, যার মৃত্যু নেই। আর বেঁচে আছে আপনার আরশ বহনকারিগণ ও আমি। তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন : আমার আরশ বহনকারীদেরও মৃত্যু হোক। ফলে তারা মারা যাবেন এবং আল্লাহর আদেশে আরশ ইসরাফীলের নিকট থেকে শিঙ্গাটা নিয়ে নেবেন।
তারপর মালাকুল মউত এসে বলবেন, হে আমার প্রতিপালক! আপনার আরশ বহনকারিগণ মারা গেছেন। তা শুনে আল্লাহ তা’আলা বলবেন। যদিও কে বেঁচে আছে তা তিনিই সবচেয়ে ভালো জানেন- তাহলে আর কে বেঁচে আছে?
তিনি বলবেন, বেঁচে আছেন আপনি চিরঞ্জীব সত্তা, যার মৃত্যু নেই। আর বেঁচে আছি। আমি। তখন আল্লাহ্ তা’আলা। বলবেন- তুমিও আমার সৃষ্টিসমূহের একটি সৃষ্টি। আমি তোমাকে বিশেষ উদ্দেশ্যে সৃষ্টি…
করেছিলাম। অতএব, তুমিও মরে যাও। ফলে তিনিও মারা যাবেন। তারপর অবশিষ্ট থাকবেন। শুধু অদ্বিতীয় পরাক্রমশালী এক ও অমুখাপেক্ষী সত্তা, যিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং যাকে কেউ জন্ম দেয়নি, যার তুল্য কেউ নেই, যিনি প্রথমে যেমন ছিলেন, পরেও তেমনি থাকবেন।
ইমাম তাবারানী, ইব্ন জারীর এবং বায়হাকী (র) এ হাদীসটি সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন। আর হাফিজ আবু মূসা আল- মাদীনী আত- তওয়ালাত’ গ্রন্থে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তাঁর বর্ণনায় কিছু অতিরিক্ত বিরল কথাও আছে। তাহলো ‘আল্লাহ তা’আলা বলবেন : তুমি আমার সৃষ্টিসমূহের একটি সৃষ্টি।
তোমাকে আমি বিশেষ উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছিলাম। অতএব, তুমি এমনভাবে মরে যাও, যারপর আর কখনো তুমি জীবিত হবে না।’
কুরআনে যে সব ফেরেশতার নাম উল্লেখ করা হয়েছে; প্রাচীন যুগের বিপুল সংখ্যক আলিমের মতে তাদের মধ্যে হারূত এবং মারতও রয়েছেন। এদের কাহিনী সম্পর্কে বেশ কিছু রিওয়ায়েত বর্ণিত হয়েছে, যার বেশির ভাগই ইসরাঈলী বর্ণনা।
আবার কারো কারো মতে এরা দু’জন আকাশের ফেরেশতা। কিন্তু আল্লাহর পূর্ব নির্ধারণ অনুযায়ী তাদের এ দশা হয়েছে, যা বর্ণিত হয়েছে। যদি তা সঠিক হয়ে থাকে, তবে তাদের ঘটনা ইবলীসের ঘটনার সাথে তুল্য হবে, যদি ইবলীস ফেরেশতাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে।
ইমাম আহমদ (র) এ প্রসঙ্গে ইব্ন উমর (রা) থেকে একটি মারফু হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং ইব্ন হিব্বান তাঁর ‘তাকাসীম’ গ্রন্থে তাকে সহীহ বলে মন্তব্য করেছেন। তবে আমার মতে, বর্ণনাটির বিশুদ্ধতায় সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। হাদীসটি আবদুল্লাহ ইব্ন উমর (রা)- এর উপর মওকুফ হওয়াই অধিকতর যুক্তিসংগত।
সম্ভবত এটি তিনি কা’ব আহবার থেকে গ্রহণ করেছেন, যেমন পরে এর আলোচনা আসছে। উক্ত বর্ণনায় আছে যে, যুহরা তাদের সামনে সেরা সুন্দরী রমণীরূপে আত্মপ্রকাশ করেছিল।
আলী ইব্ন আব্বাস ও ইব্ন উমর (রা) থেকে বর্ণিত আছে যে, যুহরা একজন রমণী ছিল। হারূত ও মারূত তার নিকট কুপ্রস্তাব দিলে ইসমে আজম শিক্ষা দানের শর্তারোপ করে এবং তারা তাকে তা শিখিয়ে দেন। তখন সে তা পাঠ করে আকাশে উঠে যায় এবং (শুক্র) গ্রহের রূপ ধারণ করে।
হাকিম (র) তাঁর মুসতাদরাকে বর্ণনা করেন যে, ইব্ন আব্বাস (রা) বলেন, সে যুগে এমন একজন রূপসী রমণী ছিল, নারী সমাজে তার রূপ ছিল ঠিক নক্ষত্র জগতে যুহরার রূপের ন্যায়। যুহারা সম্পর্কে বর্ণিত পাঠগুলোর মধ্যে এটিই সর্বোত্তম।
কেউ কেউ বলেন, হারূত- মারূতের কাহিনীটি ইদরীস (আ)- এর আমলে ঘটেছিল। আবার কেউ বলেন, এটা সুলায়মান ইব্ন দাউদের আমলের ঘটনা। তাফসীরে আমরা এ কথাটি উল্লেখ করেছি।
মােটকথা, এসব হচ্ছে ইসরাঈলী বৰ্ণনা। কা’ব আহবার হলেন এর উৎস। যেমন আবদুর রাযযাক তাঁর তাফসীর গ্রন্থে কা’ব আহবার সূত্রে কাহিনীটি বর্ণনা করেছেন। আর সনদের দিক থেকে এটি বিশুদ্ধতর। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।
এ আয়াত দ্বারা জিনদের দু’টি গোত্রকে বুঝানো হয়েছে। ইব্ন হাযম (র) এ অভিমত ব্যক্তি করেছেন। তবে এ অভিমতটি একটি বিরল ও কপট কল্পিত অভিমত।
আবার কেউ কেউ অর্থ ‘…’ যের যােগে পড়েছেন এবং হারূত ও মারূতকে ইরানের সানীপন্থী দু’জন লোক বলে অভিহিত করেছেন। এটা যােহহাকের অভিমত।
আবার কারো কারো মতে এরা দু’জন আকাশের ফেরেশতা। কিন্তু আল্লাহর পূর্ব নির্ধারণ অনুযায়ী তাদের এ দশা হয়েছে, যা বর্ণিত হয়েছে। যদি তা সঠিক হয়ে থাকে, তবে তাদের ঘটনা ইবলীসের ঘটনার সাথে তুল্য হবে, যদি ইবলীস ফেরেশতাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে।
তখন পাহাড়ের ফেরেশতা আমাকে সালাম দিয়ে বললেন, হে মুহাম্মদ! আপনি যদি বলেন তা’হলে এ দু’পাহাড় চাপা দিয়ে ওদেরকে খতম করে দেই। জবাবে নবী করীম (সা) বললেন- ‘বরং আমি আশা করি যে, আল্লাহ তাদের ঔরস থেকে এমন প্রজন্ম সৃষ্টি করবেন যারা একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তার সঙ্গে কাউকে শরীক করবে না।
কিন্তু বিশুদ্ধতর কথা হলো, ইবলীস জিনদের অন্তর্ভুক্ত। এর আলোচনা পরে আসছে।
হাদীসে যেসব ফেরেশতার নাম এসেছে তন্মধ্যে মুনকার ও নাকীর অন্যতম। বিভিন্ন হাদীসে কবরের সওয়াল প্রসঙ্গে তাদের আলোচনা প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। আমরা ৫। …এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তা আলোচনা করেছি।’
এরা দু’জন কবরের পরীক্ষক। মৃত ব্যক্তিকে তার কবরে তার রব, দীন ও নবী সম্পর্কে প্রশ্ন করার দায়িত্বে এঁরা নিয়োজিত। এঁরা সৎকর্মশীল ও পাপাচারীদের পরীক্ষা নিয়ে থাকেন। এরা নীল রঙের, ভয়ংকর বড় বড় দাঁত, ভয়ানক আকৃতি ও ভয়ংকর গর্জন বিশিষ্ট।
আল্লাহ আমাদের কবরের আযাব থেকে রক্ষা করুন এবং ঈমানের অটল বাণী দ্বারা আমাদেরকে প্রতিষ্ঠিত রাখুন!! আমীন!
ইমাম বুখারী (র) বর্ণনা করেন যে, উরওয়া বলেন, উন্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা) একদিন নবী করীম (সা)- কে বললেন : আপনার উপর উহুদের দিনের চাইতে কঠিনতর কোনদিন এসেছে কি? উত্তরে নবী করীম (সা) বললেন-
তোমার সম্প্রদায় থেকে আমি যে আচরণ পেয়েছি। তন্মধ্যে আকাবার (তায়েফের) দিনের আচরণটি ছিল কঠোরতম। সেদিন আমি ইব্ন আবৃন্দ য়ালীল ইব্ন আবদ। কিলাল- এর নিকট আমার দাওয়াত পেশ করলাম। কিন্তু সে আমার দাওয়াতে কোন সাড়াই দিল না।
ফলে আমি বিষগ্ন মুখে ফিরে আসি এবং করনুছ ছাআলিবে পীেছা পর্যন্ত আমার ইশই ছিল না। সেখানে পৌছার পর উপর দিকে মাথা তুলে দেখতে পেলাম যে, একখণ্ড মেঘ আমার উপর ছায়াপাত রেখেছে। সেদিকে তাকিয়ে আমি তার মধ্যে জিবরাঈল (আ)- কে দেখতে পাই।
তিনি আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, আপনার সম্প্রদায় আপনাকে যা বলেছে এবং যে জবাব দিয়েছে আল্লাহ তা শুনেছেন। তিনি আপনার নিকট পাহাড়ের দায়িত্বে নিয়োজিত ফেরেশতাকে প্রেরণ করেছেন, যাতে আপনি তাকে তাদের ব্যাপারে যা ইচ্ছা আদেশ করেন।
তখন পাহাড়ের ফেরেশতা আমাকে সালাম দিয়ে বললেন, হে মুহাম্মদ! আপনি যদি বলেন তা’হলে এ দু’পাহাড় চাপা দিয়ে ওদেরকে খতম করে দেই। জবাবে নবী করীম (সা) বললেন- ‘বরং আমি আশা করি যে, আল্লাহ তাদের ঔরস থেকে এমন প্রজন্ম সৃষ্টি করবেন যারা একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তার সঙ্গে কাউকে শরীক করবে না।
ইমাম মুসলিম (র) ইব্ন ওহাবের হাদীস থেকে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
………………………
বি.দ্র: লেখার আরবী অংশগুলো ভুলত্রুটি হতে পারে এই বিবেচনায় এই পর্যায়ে উল্লেখ করা হয়নি। ভবিষ্যতে বিষয়টি উল্লেখ করার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। এই জন্য সকলের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।
……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….
……………………………..
আরও পড়ুন-
মহাবিশ্বের উৎপত্তি : প্রথম কিস্তি
মহাবিশ্বের উৎপত্তি : দ্বিতীয় কিস্তি
মহাবিশ্বের উৎপত্তি ও পরিণতি : প্রথম কিস্তি
মহাবিশ্বের উৎপত্তি ও পরিণতি : দ্বিতীয় কিস্তি
মহাবিশ্বের উৎপত্তি ও পরিণতি : তৃতীয় কিস্তি
মহাবিশ্বের উৎপত্তি ও পরিণতি : চতুর্থ কিস্তি
মহাবিশ্বের উৎপত্তি ও পরিণতি : পঞ্চম কিস্তি
মহাবিশ্বের উৎপত্তি ও পরিণতি : ষষ্ঠ কিস্তি
মহাবিশ্বের উৎপত্তি ও পরিণতি : সপ্তম কিস্তি
সৃষ্টিরহস্য সম্পর্কে প্লাতনের মতবাদ
মহাবিশ্বের সৃষ্টি কাহিনী
পবিত্র কোরানে সৃষ্টিতত্ত্ব
আরশ ও কুরসী সৃষ্টির বিবরণ
সাত যমীন প্রসঙ্গ
সাগর ও নদ-নদী
পরিচ্ছেদ : আকাশমণ্ডলী
ফেরেশতা সৃষ্টি ও তাঁদের গুণাবলীর আলোচনা
পরিচ্ছেদ : ফেরেশতাগণ
জিন সৃষ্টি ও শয়তানের কাহিনী
সীরাত বিশ্বকোষে বিশ্ব সৃষ্টির বিবরণ
আদম (আ) পৃথিবীর আদি মানব
আদম সৃষ্টির উদ্দেশ্য
আদম (আ)-এর সালাম
আদম (আ)-এর অধস্তন বংশধরগণ
হাদীসে আদম (আ)-এর সৃষ্টি প্রসঙ্গ
আদম (আ)-এর সৃষ্টি