-মোতওয়াল্লী চিলু ভূঁইয়া জালালী
: জালালী দর্শন বা উপাসনা :
‘আত্মজ্ঞান সাধনায় ৪টি ধাপ বা স্তর’
এই পর্বের আলোচনা- ‘স্থূল’
মানবের শরীর ও যাহা কিছু দৃশ্যমান বা স্থূলকায় উহাকেই স্থূল বলা হয়। সাধক সহজেই বুঝতে পারেন যে, প্রকৃতির বৈচিত্র্যময় রূপ সামগ্রী পরিবর্তনশীল; রূপ ভেঙেই রূপের তৈয়ার হচ্ছে।
জালালী দর্শনে “এই মহা-সৃষ্টি তাহার রূপ মাত্র। এই রূপেতেই পরমাত্মা বিলীন। কীটপতঙ্গ, দানব-মানবাদি, গাছ-বৃক্ষ তরুলতা যাহা কিছু আছে, তাঁহারই রূপের বিকাশ। রূপ মায়া মাত্র। মায়াই নশ্বর, পরম অবিনশ্বর। মায়া হইতে বঞ্চিত হওয়ার পরই তাহার সাধারণ জ্ঞান জন্মে।”
অর্থাৎ স্থূল রূপের মায়া ত্যাগ না করে কেহ সাধক হইতে পারে না। আমাদের শত শত মায়া; শঙ্কর আচার্যের মায়াবাদ অনুসারে, সাধারণত ‘মায়া’ বলতে এমন একটি অনির্বচনীয় শক্তিকে বুঝায়, যা রহস্যজনকভাবে জগৎরূপে প্রতিভাত।
কোনো বস্তু বা বিষয় প্রকৃতই যা নয় সেভাবে প্রতিভাত হবার নামই মায়া। এ জাতীয় ভ্রান্ত জ্ঞানকেই সাধারণত মায়া বলে আখ্যায়িত করা হয়।
স্থূল দেহের আবরণে চৈতন্য শক্তি মনের তরঙ্গে লুকিয়ে থাকে এবং আমরা অজ্ঞতার কারণে আমাদেরকে স্থূল দেহরূপে দর্শন করি এবং জগতের প্রতি আকৃষ্ট হই। যথার্থ জ্ঞান লাভ করলে আমরা যেমন বুঝতে পারি যে আমরা কেবল স্থূলদেহ নই।
স্থূল দেহধারী মনে করি বিধায় আমাদের স্বভাবের উপর মরিচা পড়েছে। স্থূল বিষয়ে আসক্তি জন্মায়। মন সর্বদাই পার্থিব বিষয় ভোগ বাসনায় আকৃষ্ট থাকে।
“বিনা সংগ্রামেতে শান্তি
কখনও কি হয়?
দ্বন্দ্ব বিনা মকরন্দ
না হয় উদয়।।
দ্বন্দ্বকে ভাবিলে মন্দ
শান্তি দ্বার থাকে বন্ধ,
ঘর্ষণে চন্দনে গন্ধ
মন্থনে মাখন হয়।।
গরলে আছে অমৃত,
দু:খে সুখে নিয়মিত,
মৃনাল কণ্টকাবৃত
মন্দে ভাল মিশে রয়।।”
দেহধারী মানবের অন্তর্মুখী অনুসন্ধান করিতে হইলে স্থূল জগতের বিষয় বাসনা কামনা রহিত করে। মানবের নিজ আত্মার অনুসন্ধান করিতে হয়। যেমন- বায়ুমণ্ডলে মেঘ সাজিলে চন্দ্র, সূর্য কিছুই দেখা যায় না।
আবার বায়ুর ধাক্কায় মেঘ সরিয়া গেলে তখনই চন্দ্র, সূর্য দেখা যায়। তদ্রূপ কামনার মেঘে হৃদাকাশ আচ্ছন্ন করিয়াছে। সেই কামনার পর্দার আড়ালে নির্গুণ সত্ত্বা বিন্দুরূপে চক্র ধারণ করিতেছে।
স্থূল জগতের কামনা মুক্ত হইলে মানব আত্মা ভেসে উঠে।
(পরবর্তী পোস্টে ‘প্রবর্ত’ স্তর লেখা দেওয়া হবে)।
………………………………….……………..
জালালী দর্শন সম্পর্কে জানতে আরো পড়ুন-
মৃত্যু ও পরকাল
সৃষ্টিতত্ত্ব
পুনর্জন্ম
স্বর্গ
নরক
দ্বৈত-অদ্বৈত-বিশিষ্ট অদ্বৈত
আত্মজ্ঞান সাধনায় চারটি ধাপ বা স্তর
স্থূল
স্থূল-২