ভবঘুরেকথা
ফকির শাহ সুলতান আহম্মদ জালালী

-মোতওয়াল্লী চিলু ভূঁইয়া জালালী

: জালালী দর্শন বা উপাসনা :

‘আত্মজ্ঞান সাধনায় ৪টি ধাপ বা স্তর’

‘স্থূল-দুই’

স্থূল জগতের প্রতি আকর্ষণ কি কারণে হয়?

পাঠাগারের জ্ঞান আমাদের মস্তিকে ছোট শিশুটির মতোই শিক্ষা দিয়েছে ও গড়েছে! দেহ বৃদ্ধি হলেও সীমাবদ্ধ ভাব অতিক্রম করতে পারে না।

সীমাবদ্ধ ভাব কি?

জন্ম হইতে অদ্য পর্যন্ত যে পাঠাগারের পুঞ্জীভূত জ্ঞান, তোমার মস্তিষ্কের কোষকে সঞ্চালন করে এসেছে। ইহার বাহিরে চিন্তা বা ভাবনা করার যে জ্ঞান শক্তিটুকু এখনও বর্তমান। উহা ঘৃণা লজ্জা ও ভয় এই ত্রিবিধ কারণে আর নূতনোত্ত কিছু দেখতে পারে না। এরূপ জ্ঞানকেই সীমাবদ্ধ জ্ঞান বা ভাব বলা হয়।

স্থূল জ্ঞান বা পাঠাগারের জ্ঞান জীব আবদ্ধ হইয়া পড়ে। ইহা জীবকে মানুষে পরিণত হইতে বাঁধা দেয়! এই জ্ঞান জড় কেন্দ্রিক জ্ঞানই প্রদান করে মাত্র। দেহকে আরো অধিকতর কামনায় ও বাসনায় নিমজ্জিত করে। তেমনি সকল ধর্মই একটি দল বা সীমাবদ্ধ ভাব অর্থাৎ ধর্মের নামে মানুষে মানুষে বৈষম্যের শিক্ষাই দিতেছে।

মানুষের ধর্ম তো একটিই হয়, সেইটি সৃষ্টিকে ভালোবাসা। জীবকে ভালবাসা ও মানুষকে প্রেম শিক্ষা দেওয়ায় কথাই জালালী দর্শন শিক্ষা দেয়।

জালালী দর্শন, ‘শেওলা’ পুস্তকের বাণীতে- “হে মানব! উপাসনার তিনটি ভাব। যথা- সাত্ত্বিক, রাজসিক ও তামসিক। আল্লাহর গুণ আছে, যাহারা ভাবে, তাহারা তামসিক ভাব নিয়া খেলা করিতেছে।

নিজের শক্তিতে সব কাজ করিতেছে বলিয়া যাহারা মনে করে, তাহাই রাজসিক ভাব বা ক্রোধ। আল্লাহ নির্গুণ ব্রহ্ম যাহারা মনে করে তাহাই সাত্ত্বিক ভাব। সেই ভাবের উদয় যাঁহার হইয়াছে, সে নিজেই নিত্য নিরঞ্জন।

আল্লাহর গুণ আছে বলিয়া মনে করিলে, তাহা হইলে অসীমকে সীমার ভিতরে আনা হয়। কিন্তু তাহা কোনো উপাসনা নয়। তাঁহাকে সীমাবদ্ধ করাই পাপ। যাঁহার কান্না হাসি নাই, যাঁহাকে ডাকিলে কোনো সাড়া পাওয়া যায় না, তাঁহাকে কিভাবে সীমাবদ্ধ করা যায়? তোমরা জান কি তিনি যে অসীম?

বিশ্বময় যে দিকে তাকাই, সে দিকেই দেখিতে পাওয়া যায় তাঁহারই অনন্ত রূপ। এই আকুল সাগরে সাঁতার দিয়ে কে পাইবে কূল? যদি কেহ তাঁহার দর্শন করিতে চাও, তবে নিজের আত্ম তত্ত্বের দিকে দৃষ্টি করিলে তাঁহার দর্শন মিলিবে।”

“চেয়ে দেখ তুই আপনাকে।
এ গড়ন গড়িল কে
এ ভূষণ পরিল কে?

কার সাধ্য অবণীতে
গড়িবারে হেন মতে,
তুলনা যার ত্রিজগতে
কেহই না দেখে।।

সর্ববশক্তি এক ঠাঁই
আহা বলি হারি যাই,
পঞ্চাত্বক ষড়রসে
পবন জল পাবকে।।

আমি কিংবা তিনি এই
নতুবা কি যেই সেই?
নাভি গন্ধে মৃগ যথা
বন বন ভটকে।।”
-শ্রীমনোমোহন দত্ত

 

………………………………….……………..
জালালী দর্শন সম্পর্কে জানতে আরো পড়ুন-
মৃত্যু ও পরকাল
সৃষ্টিতত্ত্ব
পুনর্জন্ম
স্বর্গ
নরক
দ্বৈত-অদ্বৈত-বিশিষ্ট অদ্বৈত
আত্মজ্ঞান সাধনায় চারটি ধাপ বা স্তর
স্থূল
স্থূল-২

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!