খাজা মঈনুদ্দিন চিশতীর পত্র : এক
(কুতুবউদ্দিন কাকীকে লেখা পত্র)
আমার প্রাণ ও হৃদয়ের বন্ধু, আমার ভাই খাজা কুতুবদ্দিন দেহলবি, খোদা তোমাকে দোজাহানের সৌভাগ্য প্রদান করুন। বান্দা মিসকিন মুঈনুদ্দিনের সালাম জানবে। পর সমাচার এ যে, আসরারে এলাহি (খোদা তত্ত্ব) সম্বন্ধে যা কিছু লিখছি তা তোমার সত্যিকার মুরিদদেরকে ও সত্যপথ অনুসন্ধানকারীদের বেশ ভালোভাবে বুঝিয়ে দেবে। তারা যেন ভুল পথে না যায়, সে দিকে লক্ষ্য রেখো।
আজিজমান (আমার প্রিয়), যে ব্যক্তি খোদাকে চিনতে সক্ষম হয়েছে যে কখনো সওয়াল জবাব ও খাহেশ বা আরজু পেশ করবে না। যে ব্যক্তি এখনো খোদাকে জানতে সক্ষম হয় নি সে ব্যক্তি এ কথার ভেদ উপলব্ধি করতে পারবে না।
দ্বিতীয়ত হেরেস ও হাওয়াকে (লোভ ও লালসা) যে ব্যক্তি দূরীভূত করতে পেরেছে সে সফলকাম হয়ে মঞ্জিলে মকসুদে পৌঁছাতে পেরেছে। এ রকম ব্যক্তির জন্যই পবিত্র কোরানে বলা হযেছে, ‘যে স্বীয় নফসকে যাবতীয় খাহেশ থেকে নির্লিপ্ত করেছে সে বেহেশতে তার স্থান করে নিয়েছে।’
যাদের হৃদয়কে মহিমান্বিত খোদা বিমুখ করে দিয়েছেন, তাদরেকে কাম প্রবৃত্তির নর্দমায় চির নিমজ্জিত করেছেন। খাজা বায়জিদ বোস্তামি বর্ণনা করেছেন যে, এক রাতে তিনি স্বপ্ন যোগে খোদার দিদার লাভ করেছিলেন।
খোদা তখন জিজ্ঞেস করছিল, ‘হে বায়জিদ! তুমি কী চাও?’
উত্তরে বায়জিদ বলেছিলেন, ‘তুমি যাহা চাও হে আমার রব, আমিও তাই চাই।’
তখন খোদা বললেন, ‘হে বায়জিদ! তুমি যেভাবে আমার হয়ে গেছ, আমিও সেভাবে তোমার হয়ে গেলাম।’
অন্য একদিন আমার রওশন জামির (বাতেন আলোকদাতা) পীর খাজা উসমান হারুনি বললেন, অনেক দরবেশ আছে যারা বলে যে, তালেবের কামেলিয়াত হাসিল হলে তার এবাদত করার প্রয়োজন হয় না। তাদের এ কথাটিও ভুল।
কুতুবুদ্দিন, যদি তাসাওফের মহাজ্ঞানে জ্ঞানী হতে চাও তবে বাহ্যিক সুখ-সম্পদের আশা পরিত্যাগ কর এবং মহাসম্পদশালী চিরশান্তি ও আরামদাতা পরম সৃষ্টিকর্তার ভালোবাসা লাভের উদ্দেশ্য একাগ্র চিত্তে সচেষ্ট হও।
যদি তুমি এটা করতে পার তবে জেনো, তুমি তাসাওফের আলেম হয়েছ। নফসজাত আরাম আয়েশের আকাঙ্খা করা তালেবে মাওলার পক্ষে একেবারেই অনুচিত। তালেবে মাওলার হৃদয়ে এ খেয়াল বিদ্যমান থাকলে সে শয়তানের ধোঁকা থেকে আত্মরক্ষা করতে পারবে এবং এতে তার লক্ষ্যে পৌঁছা সহজ হবে।
একদিন আমার পীর দস্তগির খাজা উসমান হারুনি বললেন, ‘মুঈনুদ্দিন! তুমি কি অবগত আছো, সাহেবে হুজুর কাকে বলে? সাহেবে হুজুর হলো ওই ব্যক্তি, যে সর্বদা মাকামে অবুদিয়াতে মশগুল থাকে এবং যাবতীয় ঘটনাবলী খোদার পক্ষ থেকে সংঘটিত হচ্ছে বলে বিশ্বাস করে এবং তাতেই রাজি থাকে।’
যা কিছুই সংঘটিত হোক না কেন তা খোদার তরফ থেকে রহমত স্বরূপ সে মনে করে। সকল এবাদতের উদ্দেশ্য এটাই। যে ব্যক্তি এ রকম মানসিক ও আত্মিক অবস্থা অর্জন করতে পেরছে সে দোজাহানের বাদশাহ-এমন কি দোজাহানের বাদশাও তার মোহতাজ।
অন্য একদিন আমার রওশন জামির (বাতেন আলোকদাতা) পীর খাজা উসমান হারুনি বললেন, অনেক দরবেশ আছে যারা বলে যে, তালেবের কামেলিয়াত হাসিল হলে তার এবাদত করার প্রয়োজন হয় না। তাদের এ কথাটিও ভুল।
এ রকম পেয়ালা পানকারী এশকের জলোয়াতে উন্মত্ত হয়ে জামালিয়াতের (সৌন্দর্যের) অপর সমুদ্রে সর্বদা সন্তরণ করতে থাকবে। এ সময় তার শান্তি-অশান্তি এবং আরাম বে-আরাম হয়ে যায়।
কারণ সরোয়ারে কায়েনাত মহানবী সদা সর্বদা খোদার এবাদত ও ধ্যানে মশগুল থাকতেন। এতো অবিশ্রান্ত কামাল (পরিপূর্ণ) এবাদত করেও তিনি বলতেন, ‘আমি তোমার সে রকম এবাদত করতে সক্ষম হয়নি যে রকম করা উচিত ছিল।’
শাফিয়ে রোজে মাহাশার হয়েও তিনি নেহায়েত আজিজি ও এনকেসারি সহকারে সমগ্র মাখলুকের উদ্ধারের মহামন্ত্র কলেমা তৈয়্যবা (লা-ইলাহা ইল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলাল্লা) শয়নে-স্বপনে জাগরণে শত কাজের ভেতরও সর্বদা পাঠ করতেন।
কুতুবদ্দিন! স্মরণ রেখো, যথাযোগ্য এবাদত ও রিয়াজত ব্যতীত কোন আরেফ কামেলিয়াতের দরজায় পৌঁছতে পারে না। বিশেষ করে সত্যিকার ভাবে নামাজ আদায় না করলে খোদার হুজুরি ও আগাহি (সীমাপ্য ও তত্ত্ব) বৃদ্ধি পায় না।
আর এ নামাজই হলো প্রকৃত মেরাজ।
যে ব্যক্তি এ গৃঢ়তত্ত্বে উপলব্ধি করে সিদক্ব অন্তরে প্রকৃতভাবে নামাজ আদায় করে তার এমন পিপাসা অনুভূত হবে যেন সে আগুনের উত্তপ্ত পেয়ালা পান করেছে।
এ রকম পেয়ালা পানকারী এশকের জলোয়াতে উন্মত্ত হয়ে জামালিয়াতের (সৌন্দর্যের) অপর সমুদ্রে সর্বদা সন্তরণ করতে থাকবে। এ সময় তার শান্তি-অশান্তি এবং আরাম বে-আরাম হয়ে যায়।
খাজা মঈনুদ্দিন চিশতীর পত্র:২>>
…………………….
আপনার গুরুবাড়ির সাধুসঙ্গ, আখড়া, আশ্রম, দরবার শরীফ, অসাম্প্রদায়িক ওরশের তথ্য প্রদান করে এই দিনপঞ্জিকে আরো সমৃদ্ধ করুন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….
…………………….
আরো পড়ুন:
খাজা মঈনুদ্দিন চিশতীর পত্র:১
খাজা মঈনুদ্দিন চিশতীর পত্র:২
খাজা মঈনুদ্দিন চিশতীর পত্র:৩
খাজা মঈনুদ্দিন চিশতীর পত্র:৪
খাজা মঈনুদ্দিন চিশতীর পত্র:৫
খাজা মঈনুদ্দিন চিশতীর পত্র:৬
খাজা মঈনুদ্দিন চিশতীর পত্র:৭