ভবঘুরেকথা
রেইকি

‘রেইকি’ জাপানি শব্দ। রেইকি’র ‘রেই’ অর্থ সর্বব্যাপী বা মহাজাগতিক আর ‘কি’ অর্থ জীবনীশক্তি বা প্রাণশক্তি। মহাজাগতিক প্রাণশক্তি প্রবাহের একটি প্রক্রিয়া হল রেইকি। মহাজাগতিক প্রাণশক্তি প্রবাহকে আয়ত্ব করে যে চিকিৎসা পদ্ধতি তা কিন্তু নতুন নয়। জানা যায়,  কয়েক হাজার বছর আগে চিকিৎসা পদ্ধতি তিব্বতে প্রচলন ছিল।

এমনকি ভারত উপমহাদেশেও এর প্রচলন ছিল বলে জানা যায়। তবে এই রেইকি আধুনিকরূপে পুনরায় আনয়ন করেন জাপানের অধ্যাপক ড. মিকাও উসুই। মজার বিষয় হলো বিশ্বজুড়ে এই রেইকি’র প্রচলন থাকলেও দেশ ও জাতিভেদে এটি ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত।

যেমন- জার্মানিতে ‘মেমেরিজম’, ভারতে ‘মহাজাগতিক প্রাণশক্তি প্রাণা’, মুসলিম দেশগুলোতে ‘নূর-এ-এলাহী’, রাশিয়ায় ‘মায়োপ্লাজমিক এনার্জি’, চিনে ‘চি’, আমেরিকায় ‘কসমিক এনার্জি’ নামে পরিচিত। ভিন্ন ভিন্ন নাম হলেও এর পদ্ধতি মূলত একই।

অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ দিকে জাপানের কিয়োটো শহরের কোনো এক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট ছিলেন ড. উসুই। তার এক ছাত্র বাইবেলে যীশু যে স্পর্শের মাধ্যমে আরোগ্য লাভ সেবা দিয়েছিলেন সে সম্পর্কে জানার জন্য প্রশ্ন করলে এর যথাযথ উত্তর না দিতে পেরে উসুই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ড পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

তারপর তিনি এর উত্তর অনুসন্ধানে খ্রিস্টীয় ধর্মশাস্ত্রে গবেষণা করে ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করেন; কিন্তু প্রশ্নের যর্থাথ উত্তর না পেয়ে পুনরায় জাপান ফিরে আসেন। এরপর তিনি এই আরগ্যের রহস ভেদ করার জন্য বহু বৌদ্ধমঠে ঘুরে বেড়িয়েছেন। কিন্তু কেউই তাকে সময় দিতে চায়নি। তিনি দেখলেন মঠের সকলে যার যার আত্মশুদ্ধির কাজে ব্যস্ত।

এভাবে অনুসন্ধান করতে করতে তিনি মঠাধ্যক্ষের সন্ধান পেলেন যিনি তাকে এ বিষয়ে সহায়তা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। এতে তিনি আসার আলো দেখেন। জাপানি ভাষায় বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ পড়েও এর মূল রহস্য ভেদ করতে না পেরে তিনি চায়না ভাষা শিখতে শুরু করেন।

এরপর থেকে উসুই এই  মহাজাগতিক প্রাণশক্তি প্রবাহের বিদ্যা দিয়ে মানুষকে আরোগ্য দেয়া শুরু করেন। জানা যায়, তিনি তার জীবনদদ্দশায় প্রায় ২০০০ জন মানুষকে রেইকি সেবা দিয়ে সুস্থ্য করেছেন। এই রেইকি সেবা নিয়ে যে কেউ শারীরিক ও মানসিকভাবে ভালো থাকতে পারেন। তবে নিজে শিখে নিয়ে নিজেকে রেইকি করা সব চেয়ে ভালো।

চায়না ভাষার পর মূল বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ পড়ার জন্য পালি ভাষা শিখে তা থেকেও জানার এবং বুঝার চেষ্টা করেন। এভাবে ৭ বছর চেষ্টার পর তিনি তত্ত্বীয় জ্ঞান অর্জন করতে পারলেও ব্যবহারিক আরোগ্য লাভের শক্তি অর্জন করতে সমর্থ্য হননি।

তিনি বুঝতে পারেন কেবল তত্ত্ব দিয়ে এই রহস্য অনুধাবণ করা অসম্ভব তাই তিনি ধ্যানে বসার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। মঠাধ্যক্ষ অবশ্য তাকে সাবধান করে বললেন, এই পথ খুব বিপদজনক এতে জীবনাসন ও হতে পারে। কিন্তু উসুই তার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে ছিলেন অনড়। জানা যায়, এরপর উসুই জাপানের পবিত্র পর্বত কুটরীইয়ামার চূড়ায় আরোহন করে ২১টি পাথরের টুকরো নিয়ে।

২১ দিনের জন্য ধ্যানে বসেন। প্রতিদিন সেখান থেকে তিনি ১টি করে পাথর নিক্ষেপ করতে লাগলেন। এভাবে ২১ দিনের দিন তার সাধন সার্থকতা পায়। ২১ দিনের আত্মশুদ্ধির পর পাহাড় থেকে নিচে নেমে আসেন ক্লান্ত, ক্ষুধার্ত হয়ে। নামার পথে উনি পায়ে আঘাত প্রাপ্ত হন এবং নিজে নিজেই নিজেকে হিল করেন এবং ভালো হয়ে যান। 

এরপর থেকে উসুই এই  মহাজাগতিক প্রাণশক্তি প্রবাহের বিদ্যা দিয়ে মানুষকে আরোগ্য দেয়া শুরু করেন। জানা যায়, তিনি তার জীবনদদ্দশায় প্রায় ২০০০ জন মানুষকে রেইকি সেবা দিয়ে সুস্থ্য করেছেন। এই রেইকি সেবা নিয়ে যে কেউ শারীরিক ও মানসিকভাবে ভালো থাকতে পারেন। তবে নিজে শিখে নিয়ে নিজেকে রেইকি করা সব চেয়ে ভালো।


-সায়মা সাফীজ সুমী
রেইকি মাস্টার হিলার

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

…………………..
আরও পড়ুন-
রেইকি সারসংক্ষেপ
রেইকি এলো কোথা থেকে
রেইকির প্রাথমিক আলাপ

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!