ভবঘুরেকথা

ইমাম গাজ্জালীর বাণী: দুই

১৭.
নরম-কোমল কথা পাথরের চাইতে কঠিন হৃদয়কেও কোমল করে দেয়, কর্কশ-কঠিন কথা রেশমের চাইতে কোমল হৃদয়কেও কঠিন করে দেয়।

১৮.
আল্লাহ জুলুম-অত্যাচারের কারণে যেমন হাজ্জাজের প্রতিশোধ নিবেন, তেমনি হাজ্জাজের প্রতি কেউ জুলুম বা যবান-দরাযী করলে সেটারও বিচার করবেন।

১৯.
তিনটি অভ্যাস মানুষের জন্য সর্বমূখী কল্যাণ ডেকে আনে- সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছার প্রতি সন্তুষ্ট থাকা, বিপদের সময় দু’হাত তুলে খোদার কাছে সাহায্য চাওয়া এবং যে কোন সংকটে ধৈর্য ধারণ করা।

২০.
আপনার অবশ্যই নিজেকে বুঝিয়ে সন্তুষ্ট রাখতে হবে এই বলে যে সৃষ্টিকর্তা আপনার জন্য যা নির্ধারণ করে রেখেছেন সেটাই আপনার সবচাইতে সঠিক এবং সর্বাধিক কল্যাণকর।

২১.
আয়নায় নিজেকে সুদর্শন রূপে দেখলে পাপের কালিমা লেপন করে আমলনামা ধ্বংস করো না। আর যদি কালো-কুশ্রী হও তাহলে পাপ-পঙ্কিলতা থেকে তাওবা করে স্রষ্টার পথে ফিরে আসা।

২২.
সৃষ্টিকর্তার উপর পরিপূর্ণ নির্ভরশীলতা যেন সেই শিশুটির মতন যে খুব ভালো করে জানে সে যদি মাকে না-ও ডাকে তবু মা তার ব্যাপারে সম্পূর্ণ সচেতন এবং সঠিকভাবেই তার দেখাশোনা করছেন।

২৩.
সদুপদেশ গ্রহণ করার জন্য অন্তরে আগ্রহ সৃষ্টি না হওয়া এবং নিজের অভিমত খণ্ডিত হতে দেখেই অন্তরে ক্রোধের সৃষ্টি হওয়ার নামই অহংকার। আত্ম প্রশস্তি ও অহংকার মানুষকে নিম্নস্তরে নিয়ে যায়।

২৪.
ক্রোধ মনুষ্যত্বের আলোকশিখা নির্বাপিত করে দেয়। রাগমুক্ত জীবন গঠন করা। কঠোরতা পরিহার করা। শক্ত কথায় রেশমের মতো নরম অন্তরও পাথরের মতো শক্ত হয়ে যায়। অধ্যবসায়ের মাধ্যমে সাফল্য লাভ করা।

২৫.
উপকারী জ্ঞান তো সেটাই যা আপনার মাঝে স্রষ্টাভীতি সৃষ্টি করবে, আপনার সীমাবদ্ধতার ব্যাপারে আপনাকে সচেতন করবে, দুনিয়ার প্রতি আসক্তি কমিয়ে দিবে, আখিরাতের প্রতি আকাঙ্খা বাড়াবে এবং আপনার কাজের ত্রুটিগুলোর ব্যাপারে আপনার চোখকে উন্মুক্ত করে দিবে যেন আপনি সেগুলো সংশোধন করতে পারেন।

২৬.
সকল সৃষ্টির মাঝে স্রষ্টা মানুষকে জ্ঞান ও চেতনাশক্তি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। আবার খোদা কুরআনে চেতনাহীন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সমালোচনাও করেছেন। চেতনাহীন মানুষকে ঈমানের পথে ফিরিয়ে আনা ও অটল রাখার জন্য যুগে যুগে ওলি আওলিয়ারা মুক্তাঝরা বাণী ও উপদেশ দিয়েছেন। তাদের একজন ইমাম গাজ্জালী।

২৭.
দ্বীনি ইলমই হচ্ছে একমাত্র বিদ্যা যা তোমার অন্তরে খোদাভীতি সৃষ্টি করবে, নিজের দোষ-ত্রুটি উপলব্ধি করার জ্ঞান বাড়াবে, সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তার পরিচয় করিয়ে দিবে। দুনিয়ার মোহান্ধতা হ্রাস করে আখিরাতের প্রতি শওক ও আগ্রহ বৃদ্ধি করবে, পাপকার্যের কুফল সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করবে। ফলে, পাপাচার থেকে বেঁচে থাকার মন-মানসিকতা গড়ে উঠবে, শয়তানের ধোঁকা ও প্রতারণা সম্পর্কে সতর্ক করবে।

২৮.
জেনে রাখো- যে কোন ব্যক্তি নিজেকে খোদার কোন মাখলুকের তুলনায় উত্তম মনে করবে, সে-ই দাম্ভিক; অহংকারী। বস্তুতঃ তোমার এ কথা মনে রাখা উচিত, যে ব্যক্তি আখিরাতের জীবনে খোদার কাছে ভালো, সে-ই প্রকৃত ভালো। আর এটা এমন এক বিষয়, যা অদৃশ্য এবং জীবনের শেষ মূহুর্তের উপর নির্ভরশীল। অতএব, তোমার নিজেকে অন্যের তুলনায় উত্তম মনে করা নিতান্ত মূর্খতা ছাড়া কিছু নয়।

২৯.
আজকালকার যুগের তথাকথিত পণ্ডিতদের দেখা যায় যে, বাদানুবাদ ও যুক্তিতর্ক তাদের স্বভাবকে খুবই প্রভাবিত করে রেখেছে এবং নিশ্চুপ থাকা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠে না। কেননা, পাণ্ডিত্যের দাবীদার অসৎ বিদ্বানরা তাদেরকে বুঝিয়েছে যে, এই বিতর্ক একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ এবং এর দ্বারা মানুষের নিকট মর্যাদা পাওয়া যায়। খবরদার! এমন লোকদের থেকে তুমি ছুটে পালাও যেমন সিংহ দেখে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে তুমি পালাবে। জেনে রাখো, বাদানুবাদ যেমন মানুষের মনে ঘৃণার উদ্রেক করে, তেমনি এটি খোদার অসন্তুষ্টি ও রোষেরও কারণ হয় বটে!

৩০.
ইলম ও জ্ঞানচর্চার দ্বারা যদি তোমার উদ্দেশ্য হয়ে থাকে আত্মগৌরব ও বড়াই-অহংকার করা, সমকালীন লোকদের উপর প্রাধান্য বিস্তার করা, আপন প্রভাব ও প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠা করা, বিশ্ববাসীর নিকট প্রিয়পাত্র অথবা ভক্তিভাজন হওয়া, পার্থিব গৌরব অর্জন করা এবং রকমারী ধন-সম্পদ কুক্ষিগত করা, তাহলে জেনে রাখো- এই জ্ঞান অর্জনের দ্বারা তুমি তোমার দ্বীন ও ঈমান ধ্বংস করছ, স্বীয় মূল্যবান জীবন বিনষ্ট করছ। নশ্বর এই পৃথিবীর বিনিময়ে আখিরাতের অনন্ত জীবনকে বিক্রয় করে দিচ্ছ। নিঃসন্দেহে এটা অত্যন্ত গর্হিত ও ক্ষতিকর কাজ। এই ব্যবসায় তোমার বৃহৎ লোকসান ছাড়া লাভের কিছু অবশিষ্ট থাকছে না।

৩১.
যখন কোনো শিশুকে দেখ, তখন বলবে- এই শিশু খোদার কোন নাফরমানী করে নাই; কিন্তু আমি করেছি, অতএব, সে আমার চেয়ে ভাল। কোন বয়জোষ্ট্য লোককে দেখে বলবে- এই ব্যক্তি আমার আগে থেকেই খোদার বন্দেগী করে আসছে, অতএব, সে অবশ্যই আমার চেয়ে ভাল। যদি কোনো জ্ঞানী ব্যক্তিকে দেখ, তাহলে বলবে- সে যা কিছু পেয়েছে, আমি তা পাই নাই; সে যে মর্যাদায় পৌঁছেছে, আমি সেখানে পৌঁছাতে পারি নাই;

সে বিদ্বান, আমি মূর্খ; তাহলে কি করে আমি তাঁর সমকক্ষ হতে পারি? যদি সে মূর্খ হয়, তাহলে বলবে- এই লোকটি না-ফরমানী করে থাকলে অজ্ঞতাবশতঃ করেছে, আর আমি খোদার না-ফরমানী করেছি জেনে শুনে, সুতরাং খোদার শাস্তি আমার ক্ষেত্রে অধিকতর প্রযোজ্য; আমি জানিনা, শেষ পরিণতি কার ভাল হয়; আমারই না তার। যদি তুমি কোন কাফির ব্যক্তির প্রতি দৃষ্টিপাত কর, তাহলে বল;

আমি জানিনা, হয়তো বা সে মুসলমান হয়ে যাবে এবং তার জীবনাবসান নেক আমলের মধ্য দিয়ে হবে এবং ইসলাম গ্রহণের ওসীলায় তার সকল পূর্ব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে… আর আমি- খোদা না করুন- গোমরাহ হয়ে যেতে পারি, যার ফলে কুফর-শিরক ও পাপে লিপ্ত হয়ে আমার মৃত্যু হতে পারে; সুতরাং পরিণামে সে হয়তঃ খোদার নৈকট্য লাভ করবে আর আমি শাস্তি ভোগকারীদের দলভুক্ত হয়ে যাব।

<<ইমাম গাজ্জালীর বাণী: এক

……………….
আরও পড়ুন-
মহানবীর বাণী: এক
মহানবীর বাণী: দুই
মহানবীর বাণী: তিন
মহানবীর বাণী: চার
ইমাম গাজ্জালীর বাণী: এক
ইমাম গাজ্জালীর বাণী: দুই
গৌতম বুদ্ধের বাণী: এক
গৌতম বুদ্ধের বাণী: দুই
গৌতম বুদ্ধের বাণী: তিন
গৌতম বুদ্ধের বাণী: চার

গুরু নানকের বাণী: এক
গুরু নানকের বাণী: দুই
চৈতন্য মহাপ্রভুর বাণী
কনফুসিয়াসের বাণী: এক
কনফুসিয়াসের বাণী: দুই

…………………….

আপনার গুরুবাড়ির সাধুসঙ্গ, আখড়া, আশ্রম, দরবার শরীফ, অসাম্প্রদায়িক ওরশের তথ্য প্রদান করে এই দিনপঞ্জিকে আরো সমৃদ্ধ করুন- voboghurekotha@gmail.com

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!