ভবঘুরেকথা
ফকির লালন শাহ্

ফকির লালনের বাণী : কৃষ্ণলীলা : এক

১.
কে বোঝে সেই কৃষ্ণের
অপার লীলা।

২.
শু‌নি ব্রজ ছাড়া তিলার্ধ নয়
কে মথুরায় রাজা হলে।

৩.
কৃষ্ণ রাধা ছাড়া তিলার্ধ নয়
ভারত পুরাণে তাহাই কয়,
তবে কেন ধ‌নি দুর্জয়
বিচ্ছেদে জগৎ জানালে।

৪.
নিগূম খবর জানা গেল
কৃষ্ণ হতে রাধা হল,
তবে কেন এমন বল
আগে রাধা পাছে কৃষ্ণ বলে।

৫.
সবে বলে অটলহ‌রি,
সে কেন হয় দণ্ডধা‌রি।

৬.
কৃষ্ণ লীলার লীলে ওঠাইকে
ঠাঁই দিবে কেউ সে সাধ্য নাই।

৭.
অনাদির আদি শ্রীকৃষ্ণ নিধি
তাঁর কি আছে কভু গোষ্ঠখেলা।

৮.
ব্রহ্মরূপে সে অটলে বসে
লীলাকারী তাঁর অংশকলা।

৯.
পূর্ণচন্দ্র কৃষ্ণ রসিক সে জন
শক্তিতে উদয় শক্তিতে সৃজন।

১০.
মহাভাবে সর্বচিত্ত আকর্ষণ
বৃহদাগমে তাঁরে বিষ্ণু বলা।

১১.
সত্য সত্য স্মরণ বেদ আগমে কয়
সচ্চিদানন্দ রূপে পূর্ণ ব্রহ্ম হয়।

১২.
জন্মমৃত্যু যার নাই ভবের পর
সে তো নয় স্বয়ং কভু নন্দলালা।

১৩.
গুরুকৃপা বলে কোনো ভাগ্যবান
দেখেছে সেরূপ পেয়ে চক্ষুদান।

১৪.
মা তোমার গোপাল নেমেছে কালিদায়।
সে যে বাঁচে এমন সাধ্য নাই।

১৫.
মরে সে নাগের হাতে
বিষ লেগে গোপালের গায়।

১৬.
বিষে করিল জরা জরা
বিষেতে তার প্রাণ যায়।

১৭.
কংসের কমলের কারণ
কালিদায় করিল নীলরতন,
লালন বলে পুত্রের কারণ
বাঁচবে না যশোদা মায়।

১৮.
বলি মা তোর চরণ ধরে
ননী চুরি আর করবো না।

১৯.
দয়া নাই মা তোর অন্তরে
স্বল্পেতে গেলো জানা।

২০.
সেই মা জননী নিঠুর হলে
কে বোঝে শিশুর বেদনা।

২১.
ছেড়ে দে মা হাতের বাঁধন
যাই যেদিকে যায় দুই নয়ন।

২২.
পরের মাকে ডাকবো এখন
তোর গৃহে আর থাকবো না।

২৩.
যে না বোঝে ছেলের বেদন
সেই ছেলের মার বৃথা জীবন।

২৪.
গোপালকে আজ মারলি গো মা কোন পরাণে,
সে কি সামান্য ছেলে মা তুই ভাবলি মনে।

২৫.
দেবেরও দুর্লভ গোপাল,
চিনে নাই যার ফ্যারে কপাল।

২৬.
ও মা, যে চরণ পাওয়ার আশায়
শ্মশানবাসী হয়,
দেবের দেব শিব পঞ্চাননে।

২৭.
একদিন যার ধেনু হরে,
নিলেন ব্রহ্মা পাতালপুরে।

২৮.
ও মা, তাতে ব্রহ্মা দোষী হয়-
সবাই জানতে পায়,
তুমি জানো না এই বৃন্দাবনে।

২৯.
যোগীন্দ্র মণিন্দ্র আদি,
যোগ সেধে না পায় নিধি।

৩০.
চেনে না যশোদা রাণী
গোপাল কি সামান্য ছেলে
ধ্যানে যারে পায় না মুনি।

৩১.
একদিন চরণ ঘেমেছিল
তাইতো মন্দাকিনী হলো।

৩২.
বিজলী বাঞ্ছিত সে ধন
মানুষরুপে এই বৃন্দাবন।

৩৩.
জানে যত রসিক সুজন
সে কালার গুনখানি।

৩৪.
দেবের দুর্লভ গোপাল
ব্রহ্মা তার হরিল গোপাল,
অধম বলে আবার গোপাল
কীর্তি গোপাল করলে শুনি।

৩৫.
নারীর এতো মান ভাল নয় গো কিশোরী।
যতো সাধে শ্যাম আরও মান বাড়াও ভারি।

৩৬.
ধন্য তোর বুকের জোর
কাঁদাও জগত ঈশ্বর
করে মান জারি;
ইহার প্রতিশোধ কি না নিবেন
সেই হরি।

৩৭.
ভাবেতে বুঝলাম দড়
শ্যাম হইতে মান বড়
হলো তোমারি।

৩৮.
দেখেছ কে কোথায়
পুরুষকে নারীর পায়ে ধরায়
সে কোন নারী।

৩৯.
কালার কথা কেন বলো আমায়
ও যার নাম শুনিলে আগুন জ্বলে,
কাপে অঙ্গ পুরে যায়।

৪০.
যে কৃষ্ণ রাধার অলি
তারে ভোলায় চন্দ্রাবলি।

৪১.
সতেক হাড়ির ব্যাঞ্জন চাকা
রাই বলে ধির তারে দেখা।

৪২.
যাও হে শ্যাম রাইকুঞ্জে আর এস না।
এলে ভাল হবে না।

৪৩.
গাছ কেটে জল ঢাল পাতায়
এ চাতুরী শিখলে কোথায়।

৪৪.
করতে যাও শ্যাম নাগরালি
যাও যথা সে চন্দ্রাবলি।

৪৫.
কেলে সোনা জানা গেল
উপরে কালো ভিতরে কালো।

৪৬.
প্যারী ক্ষম অপরাধ আমার।
মান-তরঙ্গে কর পার।

৪৭.
তুমি রাধে কল্পতরু
ভাব প্রেম রসের গুরু।

৪৮.
পূর্বরাগ অবধি যারে
আশ্রয় দিলে নৈরেকারে,
অল্প দোষে এ দাসেরে
ত্যজিলে কি পৌরুষ তোমার।

৪৯.
ভালমন্দ যতই করি
তবু প্রেমদাস তোমারি,
লালন বলে মরি মরি
হরির একি ঋণ স্বীকার।

৫০.
করে কামসাগরে এই কামনা।
দান করিয়ে মধু কুলের কুলবঁধু
পেয়েছে বঁধু কেলেসোনা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!