ভবঘুরেকথা
ফকির লালন

ফকির লালনের বাণী : গৌরলীলা

৫১.
পুরুষ নারীর ভাব থাকিতে
পারবি নে সে ভাব রাখিতে।

৫২.
আপনার আপনি হয় ভুলিতে
যে জন গৌররূপ নিহারা।

৫৩.
গৃহে ছিলি ভালই ছিলি
গৌরহাটায় কেন মরতে এলি,
লালন বলে কি আর বলি
দুকূল যেন হোসনে হারা।

৫৪.
কি বলিস গো তোরা আজ আমারে।

৫৫.
চাঁদ গোরাংগ ভুজংগ.ফণী
দংশিল যার হ্রদয় মাঝারে।

৫৬.
গৌর রূপের কালে যারে দংশায়
সে বিষ কি ওঝাতে পায়।

৫৭.
বিষ ক্ষনেক নাই, ক্ষনেক পাওয়া যায়
ধনন্তরী ওঝা যায়রে ফিরে।

৫৮.
ভুলবো না ভুলবোনা বলি
কটাক্ষেতে অমনি ভুলি,
গ্যান পবন বায় সকলি
ব্রন্মমন্ত্রে ঝাড়িলে না সারে।

৫৯.
যদি মিলে রসিক সুজন
রসিক জনার জুরায় জীবন।

৬০.
ধর গো ধর গৌরাঙ্গ চাঁদেরে।
গৌর যেন পড়েনা ভূমে,
বিভোর হয়ে ভূমির উপরে।

৬১.
ভাবে গৌর হয়ে মত্ত
বাহু তুলে করে নৃত্য,
কোথা পদ কোথা হস্ত
ঠাওর নাই তার অন্তরে।

৬২.
মুখে বলে হরি হরি
নয়নে বইছে বারি,
তার ঢলঢল তনু তরি
বুঝি পড়া মাত্র যায় মরে।

৬৩.
কার ভাবে শচীমাতা
মলিন বদন ঔদাস্যতা,
ফকির লালন বলে ব্রজের কথা
পড়েছে মনের দ্বারে।

৬৪.
আর কি গৌর আসবে ফিরে।

৬৫.
মানুষ ভজে যে যা করে
গৌরচাঁদ গিয়েছে সেরে।

৬৬.
একবার এসে এই নদীয়ায়
মানুষরূপে হয়ে উদয়,
প্রেম বিলালে যথা তথায়
গেলেন প্রভু নিজপুরে।

৬৭.
চার যুগের ভজনাদি
বেদেতে রাখিয়া বিধি,
বেদের নিগূঢ় রসপাস্তি
সঁপে গেলেন শ্রীরূপেরে।

৬৮.
আর কি আসবে অদ্বৈত গোঁসাই
আনবে গৌর এই নদীয়ায়।

৬৯.
লালন বলে সে দয়াময়
কারো মিলে ভাগ্যশিরে।

৭০.
গৌর প্রেম করবি যদি ও নাগরী
কূলের গৌরব আর কোরনা।

৭১.
কূলের লোভে মান বাড়াবি,
কূল হারাবি গৌর চাঁদ দেখা দেবেনা।

৭২.
ফুল ছিটাও বনে বনে- মনে মনে
বনমালীর ভাব জানোনা।

৭৩.
চৌদ্দ বছর বনে বনে- রামের সনে
সীতা, লক্ষণ এই তিন জনা।

৭৪.
যত সব টাকা কড়ি- এ ঘর বাড়ি
কিছুই তো সঙ্গে যাবেনা।

৭৫.
মরলে পাস কড়াকড়ি- তুলসী, দড়ি
কাঠ খরি আর চট বিছানা।

৭৬.
গৌরের সঙ্গে যাবি- দাসী হবি,
এটাই মনে কর বাসনা।

৭৭.
লালন কয়, মনে প্রাণে-এতই টানে,
ঐ পিরিতের খেদ মেটে না।

৭৮.
আয় কে যাবি গৌরচাঁদের হাটে।

৭৯.
তোরা আয় না মনে হয়ে খাঁটি
ধাক্কায় যেন যাসনে চটে ফেটে।

৮০.
প্রেমপাথারে তুফান ভারি
ধাক্কা লাগে ব্রহ্মপুরী।

৮১.
কর্মগুণে কর্মতরী
কারো কারো তাতে বেঁচে ওঠা।

৮২.
চতুরালি থাকলে বলো
প্রেমযাজনে বাধবে কলহ।

৮৩.
হারিয়ে শেষ দুইটি কুলও
কাঁদাকাটি লাগবে পথে ঘাটে।

৮৪.
আগে দুঃখ পাছে সুখ হয়
সয়ে বয়ে কেউ যদি রয়।

৮৫.
লালন বলে প্রেম পরশ পায়
সামান্য মনে তাই কি ঘটে।

৮৬.
গুরু দেখায় গৌর
তাই দেখি কি গুরু দেখি।

৮৭.
গৌর দেখতে গুরু হারাই
কোনরূপে দিই আখি।

৮৮.
গুরু গৌর রইল দুই ঠাই
কিরূপে এক রূপ করি তাই।

৮৯.
এক নিরূপণ না হলে মন
সকল হবে ফাঁকি।

৯০.
পবর্তের নাই উপাসনা
আন্দাজে কি হয় সাধনা,
মিছে সদায় সাধুর হাটায়
নাম পাড়ায় সাধকি।

৯১.
এক রাজ্যে দুইজন রাজা
কারে বা কর দেবে প্রজা।

৯২.
গোল করো না গোল করো না
ওগো নাগরী।
দেখ দেখি ঠাওরে দেখি
কেমন ঐ গৌরাঙ্গ হরি।

৯৩.
সাধু কী ও যাদুকারী
এসেছে এই নদেপুরী,
খাটবে না হেথায় ভারিভুরি
তাই ভেবে মরি।

৯৪.
বেদ-পুরাণে কয় সমাচার
কৈলিতে আর নাই অবতার,
যে কয় সেই গিরিধর
এসেছে নদেপুরী।

৯৫.
বেদে যা নাই তাই যদি হয়
পুঁথি পড়ে কেন মরতে যায়।

৯৬.
আজ আমায় কৌপিন
দে গো ভারতী গোঁসাই।

৯৭.
কাঙ্গাল হব মেঙ্গে খাব
রাজরাজ্যের আর কার্য নাই।

৯৮.
এমনি যদি নাহি পারি
ভিক্ষার ছলে বলবো হরি,
এই বাসনা মনে করি
বলিব নাম ঠাঁই অঠাঁই।

৯৯.
সাধুশাস্ত্রে জানা গেল
সুখ চেয়ে সোয়াস্তি ভাল।

১০০.
খাই বা না খাই নিষ্কলহ
তাতে যদি মুক্তি পাই।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!