ভবঘুরেকথা
ফকির লালন শাহ্

ফকির লালনের বাণী : সাধকদেশ

৪০১.
কল ছুটিলে যাবে হাওয়া
কে রবে কোথায়।

৪০২.
আপন দেহের কল না ঢুঁড়ে
বেভুল হলে কলমা পড়ে।

৪০৪.
ফকির লালন বলে মুর্শিদ ছেড়ে
কে পাবে খোদায়।

৪০৫.
মুর্শিদ ধনী গুণমণি গোপনে র’ল।
এ সংসারে তারে চিনা না রে গেল।

৪০৬.
চার যুগে সে রয় গোপনে
দেখা নাই কারো সনে
ব্রক্ষ্মা বিষ্ণু না পায় ধ্যানে
মনিগণে ঘুরে ম’ল;
নূরনবীকে মেহের করে
আপনি দিদার দিল।

৪০৭.
ইঞ্জিল তৌরাত জব্বুর কোরআন
চার কিতাব করলেন ছোবহান
কোনটা তার করলেন নিশান
তার প্রমান জগতে কি রল;
সে কখন কোন ধিয়ানে থাকে
কিছুই না জানা গেল।

৪০৮.
সাধুর জবানে শুনি
ধরাতে আছেন ধনী
কথা কয়না গুনমনি
চেনা বিষম দায় হল;
ভেবে লালন বলে মলেম ঘুরে
মানব জনম অসার হল।

৪০৯.
ধরো চোর হাওয়ার ঘরে ফাঁদ পেতে।
সেকি সামান্য চোরা ধরবি কোণা কানচিতে।

৪১০.
পাতালে চোরের বহর
দেখায় আসমানের উপর।

৪১১.
তিন তারের হচ্ছে খুব
শুভা শুভ যোগ মতে।

৪১২.
কোথা ঘর কেবা সেনা
কে করে ঠিকঠিকানা।

৪১৩.
হাওয়ায় তার লেনাদেনা
হাওয়ায় মুলাধার তাতে।

৪১৪.
চোর ধরে রাখবি যদি
হৃদ গারদ করগে খাটি।

৪১৫.
লালন কয় খুটিনাটি
থাকতে কি চোর দেয় ছুতে।

৪১৬.
যে পথে সাঁই চলে ফেরে
তার খবর কে করে।

৪১৭.
সে পথে আছে সদায়
বিষম কালনাগিনীর ভয়
যদি কেউ আজগবি যায়
অমনি উঠে ছোঁ মারে;
পলকভরে বিষ ধেয়ে তার
ওঠে ব্রহ্মারন্ধ্রে রে।

৪১৮.
যে জানে উলট-মন্ত্র
খাটায়ে সেই তন্ত্র
গুরু-রূপ করে নজর
বিষ ধরে সাধন করে;
ও তার করণ-রীতি সাঁই দরদী
দরশন দিবে তারে।

৪১৯.
সেই যে অধর ধরা
যে দিকে ও চাহে তারা
চৈতন্য-গুণীন যারা
গুণ শেখে তার দ্বারে;
সামান্যে কি পারবে যেতে
সেই রূপ কাপের ভিতরে।

৪২০.
ভয় পেয়ে জন্মাবধি
সে পথে না যায় যদি
হবে না সাধন সিদ্ধি
তাও শুনে মন ঝরে;
লালন বলে, যা কর সাঁই
থাকতে হয় সে পথ ধরে।

৪২১.
কে বোঝে সাঁইর লীলা খেলা।
ওসে আপনি গুরু আপনি চেলা।

৪২২.
সপ্ততলার উপরে সে
নিরূপে রয় অচিন দেশে।

৪২৩.
প্রকাশ্য রূপ লীলাবাসে
চেনা যায় না বেদের ঘোলা।

৪২৪.
অঙ্গের আভায় সবে সৃষ্টি
করিল সে পরম ইষ্টি।

৪২৫.
তবে কেন আকার নাস্তি
বলি না জেনে সে ভেদ নিরালা।

৪২৬.
যদি কারো হয় চক্ষুদান
সেই দেখে সেরূপ বর্তমান।

৪২৭.
লালন বলে তার ধ্যানজ্ঞান
হারে দেখি এ সব পুঁথির পালা।

৪২৮.
মেরে সাইঁর আজব কুদরতি তা কেউ বুঝতে পারে।
আপনি রাজা আপনি প্রজা ভবের পরে।

৪২৯.
আহাদ রূপ লুকায় হাদি
আহাম্মদী রূপ ধরে,
এ মর্ম না জেনে বান্দা
পড়বি ফেরে।

৪৩০.
বাজীকর পুতলা নাচায়
কথা কওয়ায় আপনি তারে।

৪৩১.
জীব দেহ সাই চালায় ফেরায়
সেই প্রকারে।

৪৩২.
আপনারে চিনবে যে জন
পড়বে সে ভেদের ঘরে।

৪৩৩.
কে কথা কয়রে দেখা দেয় না।
নড়ে চড়ে হাতের কাছে
খুঁজলে জনম ভর মেলে না।

৪৩৪.
খুঁজি তারে আসমান জমিন
আমারে চিনিনে আমি।

৪৩৫.
এ বিষম ভূলে ভ্রমি
আমি কোনজন সে কোনজনা।

৪৩৬.
রাম রহিম বলছে যে জন
ক্ষিতি পবন জল কি হুতাশন।

৪৩৭.
শুধালে তার অন্বেষণ
মূর্খ দেখে কেউ বলে না।

৪৩৮.
হাতের কাছে হয় না খবর
কি দেখতে যাও দিল্লি লাহোর।

৪৩৯.
সিরাজ সাঁই কয় লালন তোর
সদাই মনের ভ্রম গেল না।

৪৪০.
না জানি কেমন রূপ সে।
রূপের সৌরভ যার
ত্রিভুবন মোহিত করেছে।

৪৪১.
রূপ দেখিতে হয় বাসনা
পাই নে তাঁর উপাসনা।

৪৪২.
কোথায় বাড়ি কোথায় ঠিকানা
আমি খুঁজে পাব কোনো দেশে।

৪৪৩.
আকার কি সাকার ভাবিব
নিরাকার কি জ্যোতি রূপ।

৪৪৪.
এ কথা কারে শুধাবো
সৃষ্টি করলে কোথায় বসে।

৪৪৫.
রূপের দেশে গোল যদি রয়
কি করিতে কি করে যাই।

৪৪৬.
সাধ্য কিরে আমার সেরূপ চিনিতে।
অহর্নিশি মায়ার ঠুসি জ্ঞান-চক্ষেতে।

৪৪৭.
ঈশান কোণে হামেশ ঘড়ি
সে নড়ে কি আমি নড়ি।

৪৪৮.
আমার আমি হাতড়ে ফিরি
না পাই ধরিতে।

৪৪৯.
সে আমি অচিন একজন
এক জাগাতে থাকি দুজন।

৪৫০.
ফাঁকে থাকি লক্ষ যোজন
না পাই দেখিতে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!