ভবঘুরেকথা
কৃষ্ণ রাধা ব্রজলীলা প্রেম কালা বৃন্দাবন

ধীরে ধীরে দূরে গেল কিশোরীর মান,
বিরহে বহিল শ্বাস, বিষন্ন-বয়ান।
প্রদোষে সলাজে রাই চান সখি-পানে,
আসি তারে কন হরি আনন্দে সেখানে।

ত্বমসি মম ভূষণং ত্বমসি মম জীবনম্ ত্বমসি মম জলধিরত্নম্।
ভবতু ভবতীহ ময়ি সততমনুরোধিনী তত্র মম হৃদয়মতিযত্নম্।|
নীলনলিনাভমপি তন্বি তব লোচনম্ ধারয়তি কোকনদরূপম্।
কুসুমশর-বাণ-ভাবেন যদি রঞ্জয়সি কৃষ্ণমিদমেতদনুরূপম্।|

– হে রাধে, তুমি যদি নীলকে লাল করতে পারো। এত ক্রোধ তোমার? তাহলে আমার এই কৃষ্ণবর্ণ অঙ্গকেও তুমি গৌর করতে পারো।

স্ফুরতু কুচকুম্ভয়োরুপরি মণিমঞ্জরী রঞ্জয়তু তব হৃদয়দেশম্।
রসতু রসনাপি তব ঘনজঘনমণ্ডলে ঘোষয়তু মন্মথনিদেশম্।।

– ঐ দেখ, মন মথের ইঙ্গিত – তুমি আমাকে আর ফিরিয়ে দিও না। আমায় ভূজলতায় বন্ধন করো।
প্রেমানন্দ দান করো। তুমি অভিমান করেছো বটে, আমি অপরাধ করেছি তাই।
কিন্তু আর আমায় দূরে রেখো না।

স্থলকমলগঞ্জনং মম হৃদয়রঞ্জনম্ জনিত-রতি-রঙ্গ-পরভাগম্।
ভণ মসৃণ-বাণি করবাণি চরণদ্বয়ং সরস-লসদলক্তকরাগম্।।

– আমি করজোড়ে অনুরোধ করছি, আমায় অনুমতি দাও – আমি আলতা দিয়ে তোমার যুগল চরণ সাজিয়ে দেই, আর ধারে ধারে লিখে যাই- “আমি রাধার দাস ছাড়া, আর কেউ নই।”

স্মর-গরল-খণ্ডনং মম শিরসিমণ্ডনম্ দেহি পদপল্লবমুদারম্।
জ্বলতি ময়ি দারুণো মদনকদনানলো হরতু তদুপাহিতবিকারম্।।

– হে রাধে তুমি জানো না তুমি যখন থেকে আমাকে দূরে রেখেছো, আমি কী যন্ত্রণা ভোগ করছি। তুমি থাকতে মদন আমাকে শর নিক্ষেপ করতে পারে না। পাঁচটা শরের একটাও শর আমার কাছে আসে না।

এইসময় রাধারাণী ও পঞ্চ শরে দগ্ধ, ভগবানও পঞ্চ শরে দগ্ধ। এইজন্যে মদনমোহন বৃন্দাবনে মদন জব্দ। রাধা ছাড়া নয়, রাধা সনে রত।

ইতি চটুল-চাটু-পটু-চারু মুবৈরিণো রাধিকামধি বচনজাতম্।

– অনেক মিছিমিছি কথা বললেন রাধার মন ভোলানোর জন্য।
ভগবান খুব চতুর। এমন এমন কথাগুলো বললেন, যাতে রাধিকা তাঁর কথায় তুষ্ট হয়।

জয়তি পদ্মাবতী-রমণ-জয়দেবকবি-ভারতী-ভণিতমতিশাতম্।।

– শ্রী ভারতী বীণাপাণির চরণ বন্দনা করে, তাঁর কথা চিন্তা করে কবিকে যা জানালেন, কবি বলেছেন আমি একটা কথাও লিখি না, একটা কথাও বলি না। যা উনি করান তাই আমি করি।

শুধু মাধবকে রাধারাণীর চরণ দিতে পারিনি বলেই, তিনি আমার ছদ্মবেশে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন।

পীন স্তন আর ঘন জঘন তোমায়
সর্ব্বদা ব্যাপিছে রাই অন্তর আমার,
বিনা পঞ্চ-শর আর অপর কাহার
নাহি স্থান প্রবেশিতে অন্তরে আমার।

বৃথা শঙ্কা তবে ধনি ত্যজ লো এখন;
হে কিশোরি, কর আজ্ঞা করি আলিঙ্গন।
করহ দশনাঘাত, বাঁধ ভুজে মোরে,
দাও হে বেদন আরো পীন-স্তন-তারে;
দুঃখ দিয়া পাও সুখ, দুঃখ নাহি তায়,
কিন্তু যেন স্মর শরে দহে না আমায়।

মানিনি লো তোমার এ বিষম ভ্রূভঙ্গ
মোহে যুব-জনে যেন ভীষণ তুজঙ্গ;
নাশিতে সে বিষ, মন্ত্র কিছু নাহি আর,
সিদ্ধ মন্ত্র, অধরের অমৃত তোমার।

মিছা কেন আছ মৌনে সুবিষম মানে,
কর প্রেমালাপ প্রিয়ে সুপঞ্চম-তানে।
নাশহ সন্তাপ ঘোর প্রেম-দৃষ্টি-ভরে,
সুমুখি বিমুখী কেন আমার উপরে?
সাধিতে এসেছি নিজে তব প্রেম-আশে,
করিও না অবিচার, ত্যজ না এ দাসে।

বাঁধুলি রক্তিমা তব অধর ধরিছে;
মধূকের পাণ্ডু-কান্তি কপোলে রাজিছে;
সুনীল নলিন জিনি নয়ন তোমার;
তিলের কুসুম সম শোভা নাসিকার;
কুন্দ-কান্তি ধরে প্রিয়ে দশন তোমার;
বদন তোমার পঞ্চ-কুসুম-আধার।
তোমার সহায় মাত্র লয়ে ফুল-শর
জিনিবারে পারে এই বিশ্ব-চরাচর।
মদনে অলস প্রিয়ে তোমার নয়ন
সুরবালা মদালসা সম সুশোভন;
ইন্দু-নিভ সুমধুর তোমার বয়ান
ইন্দুসন্দীপনী সুর-অঙ্গনা সমান;
জন-মনোরম এই তোমার গমন
সুর-রামা মনোরমা সমান শোভন;
রম্ভাতরু জিনি তব গুরু উরু-দ্বয়
অপ্সরা রম্ভার করে সৌন্দর্য্যেরে জয়;
বিবিধ করাতে তব বিহার সুন্দর
সুর-বালা কলাবতী সম মনোহর;
চিত্রে লেখা যেন তব ভুরু-রেখা কম
অলকা-সুন্দরী চারু চিত্রলেখা সম;
ভূতলবাসিনী হয়ে, একি চমৎকার,
তুমি সুর-কামিনীর কান্তির আধার।

যেই হরি কংস-করি-সনে ঘোর রণে,
হেরি তার কুম্ভ স্মরি রাধা-পীন-স্তনে
মদন-আবেশ-ভরে ক্ষণ-কাল তরে
অবশ হইয়ে পুনঃ তারে বধ করে;
উঠে যাহে কংস-দলে শোক কোলাহল;
সেই হরি তোমাদের করুন মঙ্গল।

……………………………….
আরও আধ্যাত্মিক তথ্য পেতে ও জানতে : ভারতের সাধক-সাধিকা 

পুণঃপ্রচারে বিনীত -প্রণয় সেন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!