-ড. এমদাদুল হক
৪১
গুরু-শিষ্য সম্পর্কের স্তম্ভ ৭টি- বিশ্বাস, সততা, সহনশীলতা, অভয়, ত্যাগ, ধৈর্য ও আনন্দ। সম্পর্কের শুরু হয় বিশ্বস্ততা থেকে, পরিণতি লাভ করে বিশ্বাসে। তবে বিশ্বস্ততার স্তরেও একত্ব বিশ্বাসে ঐকতান থাকা জরুরি।
সততা হলো- কথার সঙ্গে কাজের মিল, চিন্তার সঙ্গে কথার মিল। কথায় ও কাজে মিল না থাকা আত্মপ্রবঞ্চনা। আত্মপ্রবঞ্চনা থেকে মুক্ত হওয়াই আত্মজাগরণের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
দ্বন্দ্বের উৎপত্তিস্থল জগৎ নয়- ব্যক্তির অন্তর্জগৎ। অন্তর্জগতে যদি দ্বন্দ্ব না থাকে, তবে অস্তিত্বে দ্বন্দ্বের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এমন ব্যক্তিই কেবল পবিত্র সম্পর্ক স্থাপনের জন্য প্রস্তুত হয়।
সহনশীলতা হলো অভিযোগ, দোষারোপ ও বিচার করা থেকে বিরত থাকা। পবিত্র সম্পর্কে বিচার থাকতেই পারে না, কারণ বিচার মানেই অবিশ্বাস। আর অবিশ্বাস মানেই অপবিত্রতা।
অভয় মানে আক্রমণও নাই, প্রতিরক্ষাও নাই। অভয় মানে এই নিশ্চয়তা প্রদান যে, কারো দ্বারা কোনো ক্ষতি হবে না। পবিত্র সম্পর্কে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকতেই পারে না। কারো ক্ষতি করার চিন্তাও যদি উদিত হয়, তবে তা অসততা। অসততা মানেই জ্ঞানযাত্রার সমাপ্তি।
যে সম্পর্কে সন্দেহ থাকে, ভয় থাকে, ক্রোধ থাকে, সে সম্পর্ক পবিত্র হতে পারে না। গুরু-শিষ্যের মধ্যে এমন আচরণ যদি কোনো পক্ষ থেকে দেখা দেয়, তবে তৎক্ষণাৎ তা সংশোধন করে নেওয়া চাই। অন্যথায় শিক্ষা গ্রহণ ও শিক্ষাদান কোনোটিই সম্ভব না।
গুরু-শিষ্যের সম্পর্কে ত্যাগ একটি মুখ্য বিষয়। ত্যাগ মানে এটি নয় যে, শিষ্য গুরুকে গাড়ি কিনে দিবে! আর গুরু শিষ্যকে খেতাব দিবে কিংবা শিনায়-শিনায় জ্ঞানদানের বাহানা করবে। এখানে ত্যাগের অর্থ ছেড়ে দেওয়া। নতুন নৌকায় উঠতে হলে পুরাণ নৌকা ছেড়ে দিতে হয়। এই ‘ছেড়ে দেওয়া’ হতে পারে অভ্যাস, পূর্ব-ধারণা কিংবা অন্যকিছু।
পবিত্র সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য চাই ধৈর্য। অসীম ধৈর্য। পবিত্র সম্পর্কে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরও পরমানন্দের জন্য ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হয়। ধৈর্য মানেই অপেক্ষা- অস্থিরতা ছাড়া, অভিযোগ ছাড়া মধুর অপেক্ষা। সন্দেহ ছাড়া অপেক্ষা, কুঞ্জ সাজিয়ে অপেক্ষা। এজন্যই বলা হয় যে, ঈশ্বর ধৈর্যশীলদের সঙ্গে থাকেন।
যে সম্পর্কে ভয় নাই, সন্দেহ নাই, ক্রোধ নাই, অবিশ্বাস নাই, দ্বন্দ্ব নাই সে সম্পর্কে কি আছে? আছে প্রেম। প্রেম মানে শব্দহীন নীরব সংযোগ- বলার কিছু নাই, না বলারও কিছু নাই। এমন সম্পর্কই পবিত্র সম্পর্ক। এই সম্পর্কের মধ্যেই উদয় হয় পরম সত্য, পরমানন্দ।
৪২
জীবন মানেই সম্পর্ক। সম্পর্ক নাই তো জীবন নাই। তাই জীবনে একটি প্রশ্নই গুরুত্বপূর্ণ- কার সঙ্গে সম্পর্ক করলাম? কী সম্পর্ক করলাম? সম্পর্ক কতটুকু পবিত্র হলো?
দুঃখ মানে, সম্পর্ক অপবিত্র। সুখ মানে, সম্পর্ক পবিত্র। আনন্দ মানে সম্পর্ক পবিত্র। বিষণ্ণতা মানে সম্পর্ক অপবিত্র। কী সম্পর্ক আমরা গড়ে তুলেছি নিজের সঙ্গে? মাতা-পিতা, সঙ্গী, সন্তানের সঙ্গে? মানুষের সঙ্গে?
আকাশের সঙ্গে আমার সম্পর্ক কী? বাতাসের সঙ্গে, আগুনের সঙ্গে, মাটির সঙ্গে আমার কী সম্পর্ক? এইসব সম্পর্কই হলো আয়না, যে আয়নায় নিজেকে দেখা যায়। নিজেকে জানা মানে সম্পর্কের আয়নায় নিজেকে দেখা। আত্মোয়ন্নন মানে সম্পর্কের উন্নয়ন।
কার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ? বস্তুর সঙ্গে? মানুষের সঙ্গে? নাকি প্রকৃতির সঙ্গে? বস্তুর সঙ্গে সম্পর্ক মানে- বাড়ি, গাড়ি, টাকা-পয়সা, টিভি, ফ্রিজ, এসি, ইত্যাদির সঙ্গে সম্পর্ক।
মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক মানে, আমি তোমাকে ভালোবাসি, কিন্তু তালগাছ আমার। তুমিও যদি আমার হও, তবে তালগাছ আমাদের হতে পারে। আমরা যেভাবে তালগাছের উপর মালিকানা চাই, ঠিক সেভাবে ব্যক্তির উপরও মালিকানা চাই। মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হলেই মনে হয়- সম্পর্ক হয়েছে।
যাকে আমরা পছন্দ করি, তার উপর নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। তাই জমির মালিকানা রেজেস্ট্রি করার মতোই আমরা সম্পর্ক রেজিস্ট্রি করি।
মানুষ আমাদের কাছে গরু বরাবর। গরু আমাদের কাছে ডেক্সি বরাবর। আমরা নিজে না খেয়ে গরুকে খাওয়াই। কারণ গরুকে আমরা খুব ভালোবাসি। ভালোবাসার এই গরুটিকেই আমরা এমনভাবে জবাই করি যেন দিয়াশলাইয়ের একটি কাঠি ভাঙলাম। আমরা এমনভাবে মানুষের হৃদয় ছিঁড়ে দেই যেন গাছের একটা পাতা ছিঁড়লাম।
মানুষ আমাদের কাছে মুরগী, আর মুরগী আমাদের কাছে মাল। সেই আমরাই ধর্মের কথা বলি, প্রেমের গান গাই। আসলে আমরা প্রেম চাই না- দাস চাই। দাসপ্রথা বিলুপ্ত হয়েছে বহু পূর্বে, কিন্তু আমাদের অন্তর্জগতে চলছে দাস হওয়ার ও দাস বানানোর বিধ্বংসী প্রবণতা।
দাস আমাদের খুব পছন্দ। আমরা সেই বিড়ালকেই ভালোবাসি যে আমাদের দাসত্ব করে, যা বলি তা মান্য করে। আমাদের কাছে ভালো মানুষ হলো- একান্ত বাধ্য মানুষ, দাস মানুষ।
টিভি ফ্রিস, কুকুর বিড়াল আর মানুষের পার্থক্য কি? টিভি না চললে আমরা ফেলে দেই, কুকুর অবাধ্য হলে তাড়িয়ে দেই, স্ত্রী অবাধ্য হলে আরেকটি বিয়ে করি, শিষ্য অবাধ্য হলে লানৎ দেই।
যেই পৃথিবীতে দাসত্বের এতো মূল্য সে পৃথিবীতে সম্পর্ক কোথায়? জীবন কোথায়? যেখানে গুরু শিষ্যকে দাস বানানোর তালে থাকে সেখানে শিক্ষা কোথায়?
৪৩
‘মানুষ সামাজিক জীব’- কথাটির সরল অর্থ হলো, মানুষ সম্পর্ক নির্ভর জীব। একজনের সঙ্গে আরেকজনের সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে উঠে পরিবার। পরিবার নিয়ে গড়ে উঠে সমাজ। পরিবার শুধু যে সন্তানের জন্ম দেয় তা নয়- পরিবার শিক্ষা দেয়, সংস্কার দেয়, প্রথা দেয়, ধর্ম দেয়।
নিজের নাম-ধাম ও অর্জনের নিরন্তরতা বজায় রাখার মাধ্যমও হয়ে উঠে পরিবারই। নিজের বংশধারা বহমান রাখা মানুষকে একধরনের অমরত্বের অনুভূতি দেয়।
সারা পৃথিবীর জন্য যে লোকটি চরম নিষ্ঠুর সেও পরিবারের জন্য খুব দয়ালু। যে লোকটি টাকার জন্য খুন করে, সেও নিজ সন্তান ও সঙ্গীকে ভালোবাসে। কিন্তু কতক্ষণ? যতক্ষণ পরিবার তার চাহিদা পূরণ করে। যেই স্ত্রীর ভরণ পোষণের জন্য চুরি করতেও স্বামী দ্বিধা করে না, সেই স্ত্রীই যদি মনোরঞ্জন না করতে পারে, তবে তালাক। এটিই বাস্তবতা।
তাহলে আমরা কি চাই? সম্পর্ক নাকি মনোরঞ্জন? আসলে আমাদের কোনো সম্পর্কই সম্পর্ক না। সব সম্পর্কের আড়ালে সুপ্ত রয়েছে সংকীর্ণ ব্যক্তিস্বার্থ।
যখন কারো সঙ্গে আমাদের সংযোগ হয়- আমরা হিসাব করি- তার কাছ থেকে কী পাওয়া যাবে। যেখানে চাওয়া-পাওয়ার এতো হিসাব, তাকে সম্পর্ক না বলে, ‘প্রত্যাশা পূরণের রাজনীতি’ বলা যথাযথ।
যেখানে রাজনীতি আছে সেখানে দ্বন্দ্ব তো থাকবেই। যেখানে দ্বন্দ্ব আছে, সেখানে সম্পর্ক তো থাকবেই না- থাকবে শোষক এবং শোষিত।
আমরা প্রেমের কথা বলি। কোথায় প্রেম? যেখানে ভোগই মূল কথা সেখানে প্রেম কোথায়? স্ত্রী, পুত্র, পুত্রী, প্রতিবেশী, বৃক্ষ, নদী, পাখি সবই তো আমাদের কাছে ভোগের উপাদান।
যদি ভোগে লাগে খুব ভালো- যদি ভোগে না লাগে চরম মন্দ। তাহলে আমি কেমন মানুষ? সম্পর্কের আয়নায় কী দেখা যায়?
৪৪
স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া, বউ শাশুরির যুদ্ধ, ভাইয়ে ভাইয়ে সংঘর্ষ, বান্ধবীর প্রতারণা, বন্ধুর বিশ্বাসঘাতকতা, প্রতিবেশীর বৈরিতা এইগুলো হলো আমাদের বাস্তব সমস্যা। এইসব সমস্যা থেকে পালানো যায় না। আমরা যেখানেই যাই না কেন, সম্পর্কের এই সমস্যাগুলো আমাদের সঙ্গে যায়।
জীবনের মূল যেমন সম্পর্ক তেমনি ধর্মের মূলও সম্পর্ক। আচার, অনুষ্ঠান, তীর্থ ভ্রমণ, জন্মদিন, মৃত্যুদিন পালন করা ধর্ম নয়- এইগুলো সম্পর্ক থেকে পালানোর উপলক্ষ্য মাত্র।
ধর্ম হলো সম্পর্কের মধ্যে সত্য আবিষ্কার করা। সম্পর্ক ছাড়া সত্যের অস্তিত্বই নেই। তথাকথিক শাস্ত্রীয় সত্য ডগমা ছাড়া আর কিছু নয়। ডগমার মধ্যে যদি সত্য থাকেও, তবে তা মানুষকে অসত্যের দিকে ধাবিত করে। যেমন, যে স্বামী স্ত্রীকে ডগমা মোতাবেক লঘু প্রহার করে, সে-ই স্ত্রীর অধিকার, স্বামীর অধিকার, স্ত্রীর দায়িত্ব, স্বামীর দায়িত্ব নিয়ে ফতোয়া দেয়।
যে প্রকৃতই সত্য চায় সে সত্যের সংস্থাপন করে সম্পর্কের মধ্যে। সম্পর্ক অধিকার নয়- দায়িত্বও নয়। শ্বাস নেওয়া অধিকার নাকি দায়িত্ব? শ্বাস কি? শ্বাস হলো বাতাসের সঙ্গে অস্তিত্বের সম্পর্ক।
যারা ধর্মশাস্ত্র নিয়ে আলোচনা করে তারা বুঝেনি ধর্মের মর্ম। ধর্মের মর্ম শাস্ত্র নয়- সম্পর্ক। ধর্ম ও ধর্মশাস্ত্র নিয়ে আলোচনা করা বিরোধ উৎপাদক। অতএব, অধর্ম। যদি প্রকৃতই কেউ ধর্ম নিয়ে আলোচনা করতে চায়, তবে সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করুক।
ইজম কখনো একত্বের ভিত্তি হতে পারে না। জগতে বহু ইজম আছে- ভালো ইজম একটিও নেই। কারণ ইজমের ভিত্তি বিভক্তি। বিভক্তি নিয়ে আলোচনা ভক্তি বাড়ায় না।
ধর্ম ইজম ছাড়া আর কিছু নয়। ধর্ম শব্দের আভিধানিক অর্থ নিয়ে টানাটানি করা বৃথা। অভিধানে ধর্ম থাকে না। ধর্ম থাকে বাস্তব জীবনযাপনে। আর, বাস্তব জীবনযাপনে ধর্ম হলো- ‘যাহা বিভেদ উৎপন্ন করে’।
প্রথম স্তরের বিভেদক: ইসলাম, খ্রিস্টান, ইহুদি, সনাতন, বৌদ্ধ, জৈন ইত্যাদি। দ্বিতীয় স্তরের বিভেদক: শিয়া, সুন্নী, ওহাবি, সুফি ইত্যাদি। তৃতীয় স্তরের বিভেদক: চিশতিয়া, কাদিরিয়া, নকশেবন্দিয়া, মোজাদ্দেদিয়া ইত্যাদি…।
ধর্মের কাজ: দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক, বাৎসরিক আচারানুষ্ঠানের পুনরাবৃত্তি।
অতিরিক্ত কাজ: গোত্র গঠন, শাস্ত্রের উল্টা-পাল্টা ব্যাখা, গান-বাজনা, নাচানাচি, পশু বলি, তথাকথিত মেডিটেশন, প্রসাদ বিতরণ। ধর্মের সাজসজ্জা: তসবিহ, মালা, আগরবাতি, ধূপ, সাম্প্রদায়িক পোশাক, পাগড়ি, টুপি, মুণ্ডিত মস্তক কিংবা বাবরি চুল।
এগুলোর সঙ্গে জীবনযাপনের কোনো সম্বন্ধ নাই। জীবনযাপন সম্পর্ক নির্ভর- ডগমা নির্ভর নয়। ধর্মের কেন্দ্র জীবন নয়- মরণ। মরণের পর কী হবে? স্বর্গে যাবে নাকি নরকে? পুনর্জন্ম হবে নাকি পুনরুত্থান? এই নিয়ে ধর্মের কাজ-কারবার।
তবু ধর্ম টিকে আছে কেন? কারণ সম্পর্ক ভালো না। সম্পর্কের সমস্যা সমাধান করা কঠিন। মানুষ সহজ চায়। সহজ হলো সম্পর্কের বারোটা বাজিয়ে তথাকথিত বিভেদমূলক অনুষ্ঠান ও আনুষ্ঠানিকতা নিয়ে ব্যস্ত থাকা।
সত্য হলো এই যে, সম্পর্ক ছাড়া ধর্ম নাই। সম্পর্ক ছাড়া নিজেকে জানার, নিজেকে চেনার কোনো উপায়ও নাই।
৪৫
বাহিরে যত বড়লোকিই আমরা দেখাই না কেন, ভেতরে ভেতরে খুব দরিদ্র। আমাদেরকে সর্বদাই তাড়া করে জীবনের অনিশ্চয়তা। তাই আমরা আসলে সম্পর্ক খুঁজি না- খুঁজি অবলম্বন।
অবস্থার যত উন্নতিই হোক না কেন মানুষের অভাব যায় না। যে যত বড় হয়, তদাপেক্ষা বড়র সঙ্গে তার লেনদেন শুরু হয়। তুলনা তাকে সন্তুষ্ট হতে দেয় না। সে উপরে-উপরে দেখায়, খুব ভালো আছে; কিন্তু তার ভেতরে ভেতরে জ্বলতে থাকে আরো পাওয়ার লোভ- ক্ষমতা, খ্যাতি, টাকা।
যদি এসবের লোভ না থাকে তবে নিঃসঙ্গতা দূর করার আকাঙ্ক্ষা তো থাকেই। যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষ নিজের সঙ্গে ‘পবিত্র সম্পর্ক’ গড়ে না তুলতে পারে ততক্ষণ পর্যন্ত নিঃসঙ্গতা তাকে তাড়া করবেই।
তাই কারো সঙ্গে পবিত্র সম্পর্ক গড়ে তুলতে হলে নিজের সঙ্গে সম্পর্কটি পবিত্র হওয়া চাই সর্বাগ্রে। কাউকে ভালোবাসতে হলে নিজেকে ভালোবাসা চাই সর্বাগ্রে। আর এটিই মানবজাতির সবচেয়ে বড় সমস্যা।
জগতে এমন মানুষের সংখ্যা খুব কম, যে নিজেকে ভালোবাসে। যে কাজটি এখনই করা দরকার, না করলে নিজের কিংবা আরেকজনের ক্ষতি হতে পারে, তা করতে আমাদের ভালো লাগে না। যে কাজটি করার কোনো দরকারই নাই, যা করলেই বরং নিজের এবং আরেকজনের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা প্রকট, তা করতে আমাদের খুব ভালো লাগে।
চিনি খেলে ক্ষতির সম্ভাবনা প্রকট, কিন্তু চিনি মজা লাগে। লেবু কিংবা জাম্বুরাতে উপকারের সম্ভাবনা প্রকট, কিন্তু মজা লাগে না। টক।
সরি বলবো কি বলবো না, এ নিয়ে আমরা খুব দীর্ঘসূত্রিতা করি কিন্তু ল্যাং মারতে এক মুহূর্তও দেরী করি না।
সত্য বলতে আমরা আমতা আমতা করি, কিন্তু মিথ্যা চট করে বলে ফেলি।
প্রশংসা করার বেলায় আমরা খুব চিন্তা ভাবনা করি, নিন্দা করতে চিন্তা-ভাবনা করতে হয় না। বই কিনবো নাকি কিনবো না, এ নিয়ে ভাবতে-ভাবতে আমরা অবশেষে না কেনার সিদ্ধান্ত নেই। কিন্তু সিগারেট কিনবো নাকি কিনবো না এ নিয়ে ভাববার দরকারই নাই।
এই অদ্ভুত দ্বন্দ্বগুলো আমাদের জীবনের সর্বক্ষেত্রে। আমরা বুঝি- এই অস্বাভাবিক দ্বন্দ্বগুলোর জন্য আমাদের দুঃখ বাড়ছে, অস্থিরতা বাড়ছে, সমস্যা বাড়ছে; কিন্তু আমরা জীবনযাপনে শৃঙ্খলা আনতে পারি না। সাময়িক মজা আমাদেরকে বিভ্রান্ত করে দেয়।
এ থেকে মুক্তির উপায় কি? বিশৃঙ্খলা থেকে মুক্তির উপায় শৃঙ্খলা। যদি কেউ বিশৃঙ্খলাকেই চয়ন করতে চায়, করতে পারে; তবে শৃঙ্খলার সঙ্গে বিশৃঙ্খল হলে বেশি বিশৃঙ্খল হওয়া যাবে নিশ্চয়।
……………………
আরো পড়ুন-
জীবনবেদ : পর্ব এক
জীবনবেদ : পর্ব দুই
জীবনবেদ : পর্ব তিন
জীবনবেদ : পর্ব চার
জীবনবেদ : পর্ব পাঁচ
জীবনবেদ : পর্ব ছয়
জীবনবেদ : পর্ব সাত
জীবনবেদ : পর্ব আট
জীবনবেদ : পর্ব নয়
জীবনবেদ : পর্ব দশ
জীবনবেদ : পর্ব এগারো
জীবনবেদ : পর্ব বারো
জীবনবেদ : পর্ব তেরো
জীবনবেদ : পর্ব চৌদ্দ
জীবনবেদ : পর্ব পনের
জীবনবেদ : পর্ব ষোল
জীবনবেদ : পর্ব সতের
জীবনবেদ : পর্ব আঠার
জীবনবেদ : পর্ব উনিশ
জীবনবেদ : পর্ব বিশ
জীবনবেদ : শেষ পর্ব