শ্রীভগবান্ কোন বিশেষ পদার্থ নন, তিনিই বহুরূপে। এক একটি ব্যষ্টিরূপে এই পৃথিবীতে, তিনিই আবার সমষ্টিরূপে কৈলাসে। তিনি ছাড়া তুমি নাই। তুমি ফুল, তোমার অন্তরের ফল তিনি। আবার ফুল রূপে ভোক্তা হয়ে ফলরূপী ভগবান্কে ভোগ করছো তুমি।
শ্রীভগবান্ তোমার অণুতে পরমাণুতে আবদ্ধ। যা কিছু তা তাঁরই পূজা। নিজেকে তাঁরই দাস, তাঁরই কর্মে নিযুক্ত, সর্বদা এইরূপ ভাববে। এইভাবে সংসারে ইষ্টের সেবা করলে সত্ত্বর ভগবৎ সাক্ষাৎ হয়।
ঋষিগণ ধ্যানের মধ্যে যে শ্রীভগবানের রূপমাধুরীর বর্ণনা দিয়েছেন, তোমরাও ঋষির নির্দ্দিষ্ট পথে ভাবমূর্ত্তির দর্শন পেলেই সব পাবে। পূর্ণকে পেতে হলে ভাবের পূজা চাই, তার সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত কর্ম তাঁরই কর্ম বলে করা চাই। তবেই পাবে দর্শন। তবেই হবে ভব-বন্ধন মোচন।
মনের দ্বারা শ্রীভগবানের স্বরূপ উপলব্ধিই প্রকৃত নির্মল ও পবিত্র সুখ। তোমরা মনপ্রাণ পবিত্র করিয়া সচ্চিদানন্দ ভগবানের নাম রূপ চিন্তা কর। আর মুখে তাঁহার জয় উচ্চারণ কর।
দেশের বর্তমান অবস্থা দেখিয়া বিচলিত হইও না। বিশ্বাসটা হারাইও না। তুফানের সময় লক্ষ্যটা ঠিক রাখিতে হয়। হালের কাছে যে মাঝি আছে-তাঁহার দিকে। তাঁহার প্রেমের অভাব নাই। বিচারে ভুল নাই। শক্তির তুলনা নাই।
তিনি যে এক আধারে বিধান ও বিধাতা। ইহা ভুলিয়া যাইও না। বিধান অবমাননা করিয়া কেহ কখনও বিধাতাকে সুখি করিতে পারিবে না। আমাদের চলিতে হইবে তাঁহার বিধান অনুসারে। আর রাখিতে হইবে বিধাতার উপরে প্রেম, করিতে হইবে জীবের সেবারূপী ভগবৎ প্রিয় কার্য সাধন।
প্রাণ ভরিয়া শ্রীনাম কর! সাধন ভজন কর! প্রাণে শান্তি পাইবে! মনে খুঁটিনাটি, হিংসা, দ্বেষ, পরনিন্দা সর্বভাবে পরিত্যাগ কর! তাহা হইলেই চিত্তশুদ্ধি হইবে।
পরে শ্রীগুরুর স্বরূপ দর্শন করিতে পারিবে! প্রাণে আনন্দ পাইবে। অহংকার ও অভিমান ভগবান সহ্য করেন না। তাই ঐ ২টি সর্বদা ত্যাগ করিয়া চলিবে। বিশ্বের শান্তির নিমিত্ত দেহ মন ব্যস্ত রাখ…
সর্বজীবের সেবায় আত্মনিয়োগ কর। সর্বপ্রকারে সংযমী হও। তবেই প্রকৃত মানুষ হইতে পারিবে। সৎ-পথ, সৎজীবনযাপন, সৎলোকের সঙ্গ, সর্বজীবে প্রেম আর শ্রীভগবানের নাম কীর্তন ইহাই হইল বর্তমান পরিস্থিতিতে বাঁচিবার একমাত্র ঔষধ, সকলেই এই ঔষধ সেবন কর এবং যখনই পার সমবেত ভাবে অথবা একাকী শ্রীনাম কীর্তন কর-
“হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।”
…দেখ বৃক্ষ কাহারও কাছে কোন প্রার্থনা করে না। তোমাদেরও বৃক্ষের মত স্বভাব হওয়া দরকার। মানুষ মাত্রেই কর্তব্য নিজকে নিজে প্রস্তুত করা। মানুষের সর্বদা চেষ্টা রাখিতে হইবে যে শ্রীভগবানের বিধানের কোনরূপ ত্রুটি না হয়… উপর যেমন পরিষ্কার করা দরকার তেমন ভিতরও পরিষ্কার করা দরকার।
কালা ভজ, কাঁলী ভজ বুদ্ধি সোজা হওয়া চাই। …মন তৈরি করা মানুষের একান্ত দরকার। দেহ পবিত্র না থাকিলে ধর্ম কথা শুনে কিছু লাভ নাই। যখন শোনা যায় তখন মনে থাকে, পরে আর মনে থাকে না। কাজেই চিত্তশুদ্ধি সর্বপ্রথম দরকার।
বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে যাহা আছে তাহা আছে আমার দেহের মধ্যে। নিজেকে নিজে চেন, নিজেকে নিজে জান, নিজেকে নিজে ধর। প্রকৃত সাধকের বাহিরে যাহা থাকুক মনে মনে তাঁহার সহিত সর্বদা টান আছে।
শ্রীভগবানের সাথে যাহাদের সম্বন্ধ আছে তাহাদের মন কখনও ইতি উতি ধায় না। যা হবার তা হবে নিশ্চিত …শোকতাপ সকল তারই ইচ্ছায় হইতেছে। যাহা হচ্ছে আমার মঙ্গলের জন্য। এই ভাবে চিন্তা করিয়া কাজ করা দরকার। যে ভাবে হউক এবারে কর্ম শেষ করিব।
……………………………
দুর্গাপ্রসন্ন পরমহংসদেবের ‘বাণী চিরন্তনী’ থেকে বর্তমান পত্রিকা থেকে সংকলিত
আরও আধ্যাত্মিক তথ্য পেতে ও জানতে : ভারতের সাধক-সাধিকা
পুণঃপ্রচারে বিনীত – প্রণয় সেন