-মোতওয়াল্লী চিলু ভূঁইয়া জালালী
: জালালী দর্শন বা উপাসনা :
মানবের নিজ কর্মফল, কর্মগুণেই প্রাপ্ত হয়! মানব সব সময় নরকেই বাস করছে; আবার মানব যে সকল কর্ম করিয়া দুঃখ- যন্ত্রণা ভোগ করছে ইহাও নরক। প্রতিটি মুহূর্ত ভয়ংকর- হয়তো শারীরিক অথবা মানসিক নানান প্রকারের! তুমি যদিও ভাগ্যগুণে ভালো আছ; নয়তো তোমারই আপনজন কেহ বিরাট সমস্যায় আক্রান্ত।
অনেক মানুষ আছে কঠিন রোগে আক্রান্ত, অনেকেই আছে হাড় ভাঙা পরিশ্রম করে দারিদ্র্য নিয়ে নিত্য দিন সংগ্রাম করছে। অর্থের অভাবে স্ত্রী- পুত্র কন্যা, পিতা-মাতাকে ভরণ পোষণ সঠিকভাবে করতে পারছেন না। আবার কত মামলা দায়ের হয়েছে কারো কারো। চতুর্দিকে হিংস্র স্বভাবের মানুষের অত্যাচারে তুমি ভীত সন্ত্রস্ত থাক। ইহারা দুঃখের সমুদ্র নয় কি?
বাস্তবিকভাবে তুমি যে দেহটা বহন করে চলেছ ইহা কি এই মূহুর্তে বিকল হতে পারে না? তোমার দেহরূপ কারাগারে তুমি সর্বদা বন্দী। ইহাই বাস্তব নরক। এই নরক হইতে মুক্তি পাওয়ার উপায় কি? বরং যেদিন তোমার ভবলীলা শেষ হবে সেইমহূর্ত হইতে তোমার যন্ত্রণা আর থাকবে না।
মুক্তির কোন সুযোগও আর থাকবে না। তোমার যতক্ষণ জ্ঞানসত্ত্বা বিদ্যমান আছে, মুক্তিরও সম্ভবতা ততক্ষণ থাকে। জ্ঞান বা বিবেক বর্জিত কর্মই দুখের কারণ। কর্মই কারণ; যেমন কর্ম তেমন ফল। মানবের মধ্যেই নরক এর অবস্থান।
মৃত্যুর পরেও মানব এই ব্রহ্মণ্ডেই শব্দময় শরীর নিয়ে অচেতনভাবে এই বায়ুময় সমুদ্রেই থাকে। আমরা যখন কথা বলি তৎক্ষণাৎ ইহা একটি আকৃতি নিয়ে কর্ণে প্রবেশ করে। শব্দের ধ্বংস নাই। সাধারণের মৃত্যুর পরে কেবল মাত্র একটি শব্দময় শরীর ধারণ করে শব্দময় ব্রহ্মাণ্ডই নির্জীব সূক্ষ্ম চেতনা রহিত হইয়া বায়ুময় ব্রহ্মাণ্ডই থাকে।
এক কোটির মধ্যে নিরানব্বই লাখ মানবেরই এই পরিণতি হয়। ইহা ছাড়া দ্বিতীয় কোন নরক বা hell কোথাও নেই। তবে ইন্দ্রিয় ও অতীন্দ্রিয় জগতের অধিপতি ব্রহ্মজয়ী জ্ঞানীরা এই দুই জগৎ পরিচালনা করেন। সীমালঙ্ঘনকারীদের এই জগতেই শাস্তি দেওয়া হয়।
মৃত্যুর পরে আর কোন বিচার নাই, মুক্তিও নাই। শব্দময় ব্রহ্মাণ্ডই ইহার শেষ পরিণতি। চেতনার বিলুপ্তিই ব্যক্তির মৃত্যু অর্থাৎ শক্তির বিকাশমান গতি রুদ্ধ হইয়া যায়, নিম্নমুখী গতি লাভ করে, ইহার উর্ধে উঠে না ইহাই নরকে গমন; অনন্তকাল এইরূপ নরকেই ইহার পরিণাম। ইহাই জালালী দর্শন।
………………………………….……………..
জালালী দর্শন সম্পর্কে জানতে আরো পড়ুন-
মৃত্যু ও পরকাল
সৃষ্টিতত্ত্ব
পুনর্জন্ম
স্বর্গ
নরক
দ্বৈত-অদ্বৈত-বিশিষ্ট অদ্বৈত
আত্মজ্ঞান সাধনায় চারটি ধাপ বা স্তর
স্থূল
স্থূল-২
………………………..
জালালী উপাসনা বা দর্শন
লেখক ভক্ত মোতওয়াল্লী চিলু ভূঁইয়া জালালী।