ফকির লালনের বাণী : কৃষ্ণলীলা
৩০১.
আমি ঘুরব নগর যোগিনী বেশে
সুখ নাই যে মনে গো সখী।
৩০২.
তোরা যদি দেখিস কালারে
বলে দে খবর আমারে।
৩০৩.
নইলে আমি প্রাণ ত্যাজিব যমুনার জলে
কালার আশায় জীবন গেল একাকি।
৩০৪.
কালাচাঁদকে হারিয়ে হলাম যোগিনী
দিবানিশি না জুড়ায় পরানি।
৩০৫.
লালন কয় কালার চরণ পেলাম না
এখন কেঁদে হবে কী।
৩০৬.
আমি কার ছায়ায় দাঁড়াই বলো।
হায় রে বিধি মোর কপালে কি
ইহাই ছিলো।
৩০৭.
কালার রূপে নয়ন দিয়ে
প্রেমানলে ম’লাম জ্বলে।
৩০৮.
ওরে বিধি এ কি হলো আমার
কাঁদতে কাঁদতে জনম গেলো।
৩০৯.
জগতে হয় যতো ব্যাধি
নিদানে হয় তাহার বিধি।
৩১০.
আমার এ ব্যাধির নাই আর ওষুধী
প্রাণের বন্ধু কোথায় রইল।
৩১১.
প্রাণের মানুষ কোথায় লুকালো
আর আমার লাগে না ভালো।
৩১২.
আমার দেহলতা দিনে দিনে শুকাইল
ফকির লালন বলে রাধার কপাল ভলো।
৩১৩.
মাধবী বনে বন্ধু ছিল সই লো,
বন্ধু আমার কেলে সোনা কোন্ বনে লুকালো।
৩১৪.
মাধবীতলায় গায়,
মাধবীলতার ছায়,
দেখ দেখ সব লতায় পাতায়,
বন্ধুরুপে আলো।
৩১৫.
কৃষ্ণপ্রেমের এমনি ধারা,
করলো আমায় পাগলপারা,
হলাম জাতি কুল মান হারা,
এ কেমন জ্বালা হলো।
৩১৬.
নাম ধরে বাজায় বাঁশি,
অকুল বিজনেতে বসি,
ঐ শোন কি বলে বাঁশি,
কোন্ বনে বাজলো সই লো।
৩১৭.
আমায় দিয়েছে ফাঁকি,
প্রাণটা শুধু আছে বাকি,
ফকির লালন কয়, বন্ধুর লাগি,
অন্তর পুড়ে ছাই হলো।
৩১৮.
করে কামসাগরে এই কামনা।
দান করিয়ে মধু কুলের
কুলবঁধূ পেয়েছে বঁধূ কেলেসোনা।
৩১৯.
করে কঠোর ব্রত ক্ষীরোদার
কূলে কুল ভাসিয়ে দিয়েছে অকুলে।
৩২০.
সেই কুলের কাঁটা করিলে
যে কুলটা, গোপীকুলের যতো ব্রজাঙ্গনা।
৩২১.
গেলো গেলো কুল করিলে ভুল
অকুল পাথারে ভাসায়ে দুকুল।
৩২২.
কেঁদে হয় আকুল পেলো না
সে কুল, কুলে এসে কুল ধ্বংস করো না।
৩২৩.
করিয়ে ঘটা বাঁধাইলে যে ল্যাটা
এখন সবাই মোরে তোরে ঝাঁটা।
৩২৪.
তাই লালন ভনে মরেছে বঁধু নিজগুণে
কুল ভেঙ্গে অকুলে যেয়ে করলো মহাঘটনা।
৩২৫.
ধরগো ধর সখি
আজ আমার কী হলো,
আমার প্রাণ যেন
কেমন করে উঠল।
৩২৬.
সে যেন কী করলো আমার
কী যেন দিয়া।
৩২৭.
আমি সইতে নারি কইতে নারি
সে আমার কি গিয়াছে নিয়া।
৩২৮.
আমার ঘরেতে গুরুগঞ্জন
বাহিরেতে সমাজ বন্ধন।
৩২৯.
আমি আর কতকাল এ সব বচন
শুনে শুনে রইবো সইয়া।
৩৩০.
অতৃপ্ত নয়নের আশা
লজ্জাভয় রমণীয় ভূষা।
৩৩১.
আমার যে প্রেমের বিষে লাগলো নেশা
কে দিবে তা বুঝাইয়া।
৩৩২.
যে যাতনা সয়ে থাকি
মনের জলে ভিজাই আঁখি।
৩৩৩.
আমার কে আছে ব্যথার ব্যথী
লালন রসে সব বিসর্জন দিয়া।