ফকির লালনের বাণী : গৌরলীলা
১.
ঐ গোরা কি শুধুই গোরা ওগো নাগরী,
দেখ দেখ চেয়ে দেখ কেমন রূপছিরি।
২.
শ্যাম অঙ্গে গৌরাঙ্গ মাখা
নয়ন দুটি আঁকা-বাঁকা,
মন বুঝে দিচ্ছে দেখা
ঐ ব্রজের বংশীধারী।
৩.
না জানি কোন ভাব লয়ে
এসেছে শ্যাম গৌর হয়ে,
আর কয়দিন রাখবে ছাপায়ে
নিজ রূপ মাধুরী।
৪.
যে হোক সে হোক নাগরা
করবে কুলের কুলহারা,
লালন কয় দেখলো যারা
সৌভাগ্য কপাল তারি।
৫.
বল গো সজনী আমার
কেমন সেই গৌর গুণমণি,
জগৎ-জনার মন
রূপে করে পাগলিনী।
৬.
একবার যদি দেখতাম তারে
রাখতাম সে রূপ হৃদয়পুরে,
রোগ-শোক সব যেত দূরে
শীতল হত মহাপ্রাণী।
৭.
মন-মোহিনীর মনহরা
দেখি নি কোথা সে গোরা,
আমায় লয়ে চল গো তোরা
দেখে শীতল হই ধনি।
৮.
নদেবাসীর ভাগ্য ছিল
গৌর হেরে মুক্তি পেল।
১০.
গেল গেল এ চার কুল
তা’তে ক্ষতি নাই,
যদি গৌর চাঁদকে পাই।
১১.
কি ছার কূলের গৌরব করি
অকূলের কূল গৌর হরি,
এ ভব তরঙ্গে তরী
গৌর গোঁসাই।
১২.
জন্মিলে মরিতে হবে,
কুল কি কার সঙ্গে যাবে,
মিছে কেবল দুই দিন
ভবে, কূলের বড়াই।
১৩.
ছিলাম কূলের কূলবালা,
স্কন্ধে লয়ে আছলা ঝোলা,
লালন বলে গৌর বালা
আর কারে ডরাই।
১৪.
কে দেখেছে গৌরাঙ্গ চাঁদে রে।
১৫.
সে চাঁদ গোপীনাথ মন্দিরে গেল
আর তো এলো না ফিরে।
১৬.
যাঁর জন্যে কুলমান গেল
সে আমারে ফাঁকি দিলো,
কলঙ্ক জগত রটিল
লোকে বলবে কি আমারে।
১৭.
দরশনে দুঃখ হরে
পরশিলে পরশ করে,
হেন চন্দ্র গৌর আমার
লুকালো কোন শহরে।
১৮.
যে গৌর সেই গৌরাঙ্গ
হৃদ মাঝারে আছে গৌরাঙ্গ,
লালন বলে হেন সঙ্গ
হলো না কর্মের ফ্যারে।
১৯.
প্রাণ গৌররূপ দেখতে যামিনী।
কত কুলের কন্যে, গোরার জন্যে
হয়েছে পাগলিনী।
২০.
সকাল বেলা যেতে ঘাটে
গৌরাঙ্গ রূপ উদয় পাটে,
করুয়া ধারণ তার করেতে
কোটিতে ডোর-কোপিনী।
২১.
আনন্দ আর মন মিলে
কুল মজালে এই দু’জনে,
তারা ঘরে রইতে না দিলে
করেছে পাগলিনী।
২২.
ব্রজে ছিল কালো ধারণ
নদেয় এসে গৌর বরণ,
লালন বলে রাগের করণ
দরশনে রূপ ঝাপিনী।
২৩.
সে কি আমার কবার কথা
আপন বেগে আপনি মরি।
২৪.
গৌর এসে হৃদয়ে বসে
করলো আমার মন-চুরি।
২৫.
কিবা গৌর রূপ লম্পটে
ধৈর্যের ডুরি দেয় গো কেটে
লজ্জা ভয় সব যায় গো ছুটে
যখন ওই রূপ মনে করি।
২৬.
গৌর দেখা দিয়ে ঘুমের ঘোরে
চেতন হয়ে পাই নে তারে,
লুকাইল কোন শহরে
নব রূপের রসবিহারী।
২৭.
মেঘে যেমন চাতকেরে
দেখা দিয়ে ফাঁকে ফেলে,
লালন বলে তাই আমারে
করলো গৌর বরাবরই।
২৮.
বুঝবিরে গৌর প্রেমের কালে
আমার মত প্রাণ কাঁদিলে।
২৯.
দেখা দিয়ে গৌর ভবের শহর
আড়ালে লুকালে।
৩০.
যেদিন হতে গৌর হেরেছি
আমাতে কি আমি আছি।
৩১.
কী যেন কী হয়ে গেছি
প্রন কাঁদে গৌর বলে।
৩২.
তোমরা থাক জাত কূল লয়ে
আমি যাই চাঁদ গৌর বলে।
৩৩.
আমার দু:খ বুঝলি না রে
এক মরনে না মরিলে।
৩৪.
চাঁদ মুখেতে মধুর হসি
আমি ঐ রূপ ভালোবাসি।
৩৫.
লোকে করে দ্বেষাদ্বেষী
গৌর বলে যাই গো চলে।
৩৬.
একা গৌর নয় গৌরঙ্গ
নয় বাঁকা শ্যাম ত্রিভঙ্গ।
৩৭.
এমনই তার অঙ্গ গন্ধ
লালন কয় জগত মাতালে।
৩৮.
বুঝবিরে গৌর প্রেমের কালে
আমার মত প্রাণ কাঁদিলে।
৩৯.
দেখা দিয়ে গৌর ভবের শহর
আড়ালে লুকালে।
৪০.
যেদিন হতে গৌর হেরেছি
আমাতে কি আমি আছি।
৪১.
কী যেন কী হয়ে গেছি
প্রন কাঁদে গৌর বলে।
৪২.
কাজ কি আমার এ ছার কুলে।
যদি গৌরচাঁদ মেলে।
৪৩.
মনচোরা নাগরা রাই
অকুলের কুল জগৎ গোঁসাই।
৪৪.
সব কুল আশায়,সেই কুল দোহাই
বিপদ ঘটালে তার কপালে।
৪৫.
কুলে কালি দিয়ে ভজিব সই
অন্তিমকালের বন্ধু যে ওই।
৪৬.
ভব বন্ধুজন, কী করিবে তখন
দীনবন্ধু দয়া না করিলে।
৪৭.
কুলের গৌরবী যারা
গৌর গৌরব কি জানে তারা।
৪৮.
যে ভাবে সে লাভ, জানা যাবে সব
লালন বলে অন্তিম হিসাব কালে।
৪৯.
ও গৌরের প্রেম রাখিতে
সামান্যে কি পারবি তোরা,
কুলশীলে ইস্তফা দিয়ে
হইতে হবে জ্যান্তে মরা।
৫০.
থেকে থেকে গোরার হৃদয়
কত না ভাব হয় গো উদয়,
ভাব জেনে ভাব দিতে সদাই
জানবি কঠিন কেমন ধারা।