ফকির লালনের বাণী : প্রবর্তদেশ
৬০১.
চার ভেঙ্গে দুই হলো পাকা
এই দুই বর্জোখ লেখাজোখা।
৬০২.
তাতে প’লো আরেক ধোকা
দুই দিক ঠিক কিসে হয় ধিয়ানে।
৬০৩.
যমন নৌকা ঠিক নাই বিনা পারায়
নিরাকারে মন কি দাঁড়ায়।
৬০৪.
লালন মিছে ঘুরে বেড়ায়
অধর ধরতে চায় বর্জোখ না চিনে।
৬০৫.
ঠিক মুসুল্লি বলছ কারে।
মুসুল্লি সব এ সংসারে।
৬০৬.
শুনবো সাঁইয়ের নিগূঢ় কথায়
আশা তসবির জন্ম কোথায়।
৬০৭.
কে পরালো খিলকা গলায়
মাথায় তাজ পড়ালো কে রে।
৬০৮.
একটি মরার পাঁচটি কাল্লা
কাল্লায় বলছে আল্লাহ আল্লাহ।
৬০৯.
কোন কাল্লায় হয় রাছুলউল্লাহ
সদাই নামে কে জপে রে।
৬১০.
তহবন পরে হলি খাঁটি
উপরে ডোর নিচে কোপনি।
৬১১.
লালন বলে এসব ফষ্টি
খাটবে নারে সাধুর দ্বারে।
৬১২.
মনের নেংটি এঁটে করো রে ফকিরী।
আমানতের ঘরে যেন হয় নারে চুরি।
৬১৩.
এদেশেতে দেখি সদায়
ডাকিনী যোগিনীর ভয়,
দিনেতে মানুষ ধরে খায়
থেকো হুঁশিয়ারী।
৬১৪.
বারে বারে বলি রে মন
করো রে আত্মসাধন,
আকর্ষণে দুষ্ট দমন
করো ধরি ধরি।
৬১৫.
কাজ দেখি ধড়ফড়ে
নেংটি তোমার নড়বড়ে,
খাটবে নারে লালন ভেড়ে
টাকশালে চাতুরী।
৬১৬.
অসারকে ভেবে সার দিন গেলো আমার
সার বধন এবার হলামরে হারা।
৬১৭.
হাওয়া বন্ধ হলে সব যাবে বিফলে
দেখে শুনে লালস গেল না মারা ।
৬১৮.
গুরু যার সহায় হয় এ সংসারে
লোভে সাঙ্গ দিয়ে সেই যাবে সেরে।
৬১৯.
অঘাটায় আজ মরণ হল আমারে।
জানলাম না গুরুর করণ কী ধারা।
৬২০.
মহতে কয় থাকলে পূর্ব স্কৃতি
দেখিতে শুনিতে হয় গুরুপদে মতি,
সে সুকৃতি আমার থাকতো যদি
তবে কি আর আমি হতাম পামরা।
৬২১.
সময় ছাড়িয়া জানিলাম এখন
গুরুকৃপা বিনে বৃথা এ জীবন।
৬২২.
বিনয় করে কয় ফকির লালন
আর কি আমি পাব অধরা।
৬২৩.
খুলবে কেন সে ধন মালের গ্রাহক বিনে।
মুক্তামণি রেখেছে ধনি বোঝাই করে সেই দোকানে।
৬২৪.
সাধু সওদাগর যারা
মালের মূল্য জানে তারা।
৬২৫.
মন দিয়ে মন অমূল্য রতন
জেনে চিনে তারাই কেনে।
৬২৬.
মাকাল ফলের রূপ দেখে
সদাই যেমন নাচে কাকে।
৬২৭.
তেমনি মন মোর চটকে বিভোর
সার পদার্থ নাহি চেনে।
৬২৮.
মন তোমার গুণ জানা গেল
পিতল কিনে সোনা বল।
৬২৯.
সিরাজ সাইর বচন মিথ্যা নয় লালন
মূল হারালি তুই দিনে দিনে।
৬৩০.
মন র’লো সেই রিপুর বশে রাত্রিদিনে।
মনের গেল না স্বভাব কিসে মেলে ভাব সাধুর সনে।
৬৩১.
আমি বলি শ্রীচরণ
মনে যদি হয় কখন,
অমনি উঠে হয়, দুষ্ট সে সময়
ধরে যেদিক টানে।
৬৩২.
নিজগুণে যা করেন সাঁই
তা বিনে আর ভরসা নাই,
তুমি জান মোর মনের ভক্তির জোর
যেরূপ মনে।
৬৩৩.
দিনে দিনে দিন ফুরালো
রঙমহল অন্ধকার হ’ল,
লালন বলে, হায় কী হবে
উপায় তো দেখি নে।
৬৩৪.
দিনে দিনে হলো আমার দিন আখেরি।
কোথায় ছিলাম কোথায় এলাম
আবার যাব কোথায় ভেবে মরি।
৬৩৫.
বসত করি দিবারাতে
ষোলজন বোম্বেটের সাথে,
যেতে দেয় না যেতে সরল পথে
পদে পদে করে দাগাদারি।
৬৩৬.
বাল্যকাল খেলায় গেলো
যৌবনে কলঙ্ক হলো,
বৃদ্ধকাল সামনে এলো
মহাকাল হ’লো অধিকারী।
৬৩৭.
যে আশাতে ভবে আশা
তাতে হ’লো ভগ্ন দশা,
লালন কয় একি দুর্দশা
উজাতে ভেটেনে প’ল তরী।
৬৩৮.
আশা পূর্ণ হলো না
আমার মনের বাসনা।
৬৩৯.
বিধাতা সংসারের রাজা
আমায় করে রাখলেন প্রজা।
৬৪০.
কর না দিলে দেয় গো সাজা
কারো দোহাই মানেনা।
৬৪১.
বাঞ্ছা করি যুগল পদে
সাধ মিটাব ঐ পদ সেধে।
৬৪২.
বিধি বৈমুখ হলো তাতে
দিল সংসার যাতনা।
৬৪৩.
পরে গেলাম বিধির বামে
ভুল হলো মোর মূল সাধনে।
৬৪৪.
লালন বলে এই নিদানে
মুর্শিদ ফেলে যেও না।
৬৪৫.
মরলে গুরু প্রাপ্তি হবে
সেতো কথার কথা,
জীবন থাকিতে যাকে
না দেখিলাম হেথা।
৬৪৬.
সেবা মূল করণ তারি
না পেয়ে কার সেবা করি,
আান্দাজি হাতড়ে ফিরি
কোথা তার লতাপাতা।
৬৪৭.
সাধন হবে এই ভবে যার
সেই রূপ চক্ষে হবে নিহার,
তাই বটে সেই রূপ সাকার
মেলে সে যথাতথা।
৬৪৮.
ভজে পাই কি পেয়ে ভজি
কোন ভজনে হয় সে রাজি,
সিরাজ সাই কয় কি আন্দাজি
লালন ফকির মুড়ায় মাথা।
৬৪৯.
রাত পোহালে পাখি বলে
দে রে খাই দে রে খাই,
আমি গুরু কার্য মাথায় রেখে
কি করি আর কোথায় যাই।
৬৫০.
এমন পাখি কে বা পোষে
খেতে চায় সাগর শুষে
তারে কি দিয়ে জোগাই;
আমার বুদ্ধি গেল সাধও গেল
নাম হল রে পেটুক সাঁই।