ফকির লালনের বাণী : প্রবর্তদেশ
৮৫১.
দেখে শিমুল ফুল সদাই ব্যাকুল
দু কুল হারালাম মনের ফেরে।
৮৫২.
মনের গুনে কেউ হয় মহাজন
ঠাকুর হয়ে কেউ নিত্য পূজা পায়।
৮৫৩.
আমার এমনে তো, আমায় করলো হত
মনকে বুঝাইতে নারে জনমভরে।
৮৫৪.
মন কি মনাই হাতে পেলাম না
কেমনে আর করি সাধনা।
৮৫৫.
লালন বলে আমি, হলাম পাতালগামী
কী করিতে এসে গেলাম কী করে।
৮৫৬.
প্রেম-নহরে ভেসেছে যারা।
বেদবিধি শাস্ত্র অগণ্য মানে না আইন ছাড়া।
৮৫৭.
চার বেদ চৌদ্দ শাস্ত্র
কাজ কিরে তার সে সব খবর।
৮৫৮.
জানে কেবল নূক্তা খবর
নূক্তা হয় না হারা।
৮৫৯.
প্রেমের রসিক হয় যে জনে
মন থাকে তার রূপের পানে,
অন্যরূপ সে নাহি জানে
আশেকে পাগলপারা।
৮৬০.
বলে গেছেন আপে বারি
রূপের কাছে আজ্ঞাকারী,
লালন তাই কয় ফুকারি
সিরাজ সাঁইয়ের ধারা।
৮৬১.
কী হবে আমার গতি।
কত বেড়াই কতই শুনে
ঠিক দাড়ায় না কোন প্রতি।
৮৬২.
যাত্রাভঙ্গ যে নাম শুনে
সেইি বানর হনুমানে,
নিষ্ঠা ভক্তি রামচরনে
সাধুর খাতায় তার সুখ্যাতি।
৮৬৩.
কলার ডেগো সর্প হলো
চাম কেটোয়ায় গঙ্গা এল,
এ সকল ভক্তির বল
আমার নাই কোন বল ভক্তি।
৮৬৪.
মেঘপানে চাতকের ধ্যান
অন্য বারি করে না পান,
লালন বলে জগৎ প্রমাণ
ভক্তির শ্রেষ্ঠ সেহি ভক্তি।
৮৬৫.
সে-ধন কি চাইলে মেলে।
হরি-ভক্তের অধীনে কালে কালে।
৮৬৬.
ভক্তের বড় পণ্ডিত নয়
প্রমাণ তার প্রহ্লাদকে কয়।
৮৬৭.
যারে আপনি কৃষ্ণ গোঁসাই
অগ্নিকুণ্ডে বাঁচাইলে।
৮৬৮.
বনের একটা পশু বই নয়
ভক্ত হনুমান তারে কয়,
কৃষ্ণরূপ সে রামরূপ ধরায়
কেবল শুদ্ধ ভক্তি বলে।
৮৬৯.
অভক্তে সে দেয় না দেখা
কেবল শুধু ভক্তের সখা,
লালন ভেড়োর স্বভাব বাঁকা
অধরচাঁদকে রইলো ভুলে।
৮৭০.
বেদে কি তার মর্ম জানে।
যে রূপের লীলাখেলা এই দেহভুবনে।
৮৭১.
পঞ্চতত্ত্ব বেদের বিচার
পণ্ডিতেরা কর প্রচার।
৮৭২.
মানুষতত্ত্ব ভজনের সার
বেদ ছাড়া বৈরাগ্যের সনে।
৮৭৩.
গোলে হরি বললে কি হয়
নিগূঢ় তত্ত্ব নিরালা পায়।
৮৭৪.
নীরেক্ষীরে যুগল রয়
সাঁইর বারামখানা সেখানে।
৮৭৫.
পড়িলে কি পায় পদার্থ
আত্মতত্ত্বে যারা ভ্রান্ত।
৮৭৬.
লালন বলে সাধু মহান্ত
সিদ্ধ হয় আপনারে চিনে।
৮৭৭.
সে-প্রেম গুরু জানাও আমায়।
মনের কৈতব আদি যাতে ঘুঁচে যায়।
৮৭৮.
দাসীকে আজ নিদয় হয়ো না
দাও হে কিঞ্চিৎ প্রেম উপাসনা।
৮৭৯.
ব্রজের জরদ কাল, গৌরাঙ্গ হলো
কোন প্রেম সেধে বাঁকা শ্যামরায়।
৮৮০.
পুরুষ কোনদিন সহজ ঘটে
শুনলে মনের সন্দ যায় মিটে।
৮৮১.
তবে তো জানি, প্রেমের করণি
সহজে সহজে লেনা-দেনা হয়।
৮৮২.
কোন প্রেমে বল গোপীর দ্বারে
কোন প্রেমে শ্যাম রাধার পায়ে ধরে।
৮৮৩.
বলো বলো তাই, হে গুরু গোঁসাই
অধীন লালন বিনয় করে কয়।
৮৮৪.
সে প্রেম সামান্যে কি জানা যায়।
যে প্রেম সেধে গৌর হলেন বাঁকা শ্যামরায়।
৮৮৫.
দেবের দেব পঞ্চানন
সেধে দেয় প্রেম সেই একজন।
৮৮৬.
বুকে নিয়ে শক্তির আসন
সে না মহাশয়।
৮৮৭.
প্রেমী এক চণ্ডীদাসে
বিকালো রজকিনীর পাশে।
৮৮৮.
মরে আবার জীবন আশে
জীবন দান পায়।
৮৮৯.
মরে যেবা ডুবতে পারে
প্রেম ভয় জানায় তারে।
৮৯০.
চল দেখি মন কোন্ দেশে যাবি।
অবিশ্বাসী হলে মন কোথায় কি পাবি।
৮৯১.
এদেশের ভূত প্রেত সকলে
মুক্তি পেত ফয়তা দিলে।
৮৯২.
পেড়োর ভুত কোন্ দেশে গেলে
মুক্তি পায় সে ভাবি।
৮৯৩.
বুঝনা মন তীর্থ করা
মিছামিছি খেটে মরা।
৮৯৪.
পেড়োর কাজ পিড়েয় সারা
নিষ্ঠা হয় মন যদ্যাপি।
৮৯৫.
বারো ভাটি বাংলা জুড়ে
এক মাটি আছে পরে।
৮৯৬.
পেঁড়োর ভূত হয় যে জনা শোন রে মনা।
কোন দেশে সে মুক্তি পায়
ফয়তায় ভূত সেরে যায় পেঁড়োর দরগায়।
৮৯৭.
মক্কায় মুনি শয়তান আছে
ভূত হয় জানি পেঁড়োর মাঝে,
সে-কথা পাগলে বোঝে
দেখ এই দুনিয়ায়।
৮৯৮.
মুরদার নামে ফয়তা দিলে
মুরদা কি পায় সেখানে গেলে,
তবে কেন পিতা-পুত্রে
দোজখে যায়।
৮৯৯.
মরার আগে ম’লে পরে
আপন ফয়তা আপনি করে,
তবে আখের হতে পারে
হীন লালন কয়।
৯০০.
জানগে যা সেই রাগের করণ।
যাতে কৃষ্ণপ্রেম বরণ হলো
গৌরবরণ।