ফকির লালনের বাণী : প্রবর্তদেশ
৯৫১.
যদি শরায় কার্য সিদ্ধি হয়।
তবে মারফতে কেন মরতে যায়।
৯৫২.
শরিয়ত তার সরপোষ মানি
মারফত মূল বস্তু জানি।
৯৫৩.
উঠাইলে সরপোষ খানি
বস্তু লয় কি সরপোষ ধরে রয়।
৯৫৪.
শরিয়ত আর মারফত যমন
দুগ্ধেতে মিশানো মাখন।
৯৫৫.
মাথন তুললে দুগ্ধ তখন
ঘোল বলে তা তো জানো সবায়।
৯৫৬.
আউল আক্কেল দরিয়া
দেখনা মন তাতে ডুবিয়া।
৯৫৭.
মুর্শিদ ভজন যে লাগিয়া
লালন ডুবে ডোবে না তাই।
৯৫৮.
কররে পেয়ালা কবুল শুদ্ধ ইমানে।
মিশবি যদি জাত ছেফাতে
এ তনু আখেরের দিনে।
৯৫৯.
সাধিলে নূরের পিয়ালা
খুলে যাবে রাগের তালা।
৯৬০.
অচিন মানুষের খেলা
দেখবি তবে দু’নয়নে।
৯৬১.
জব্বরী ছত্তুরী ধরি
সাধরে আর নূর জহুরী।
৯৬২.
এ’চারের করণ ভারি
আছে’রে অতি গোপনে।
৯৬৩.
ফানা ফিনশেখ ফানাফের রাসুল
ফানা ফিল্লা ফানা বাকা স্থল,
এ’চার মোকামে লালন
মুর্শিদ ভজে নির্জনে।
৯৬৪.
ঐহিকের সুখ কয়দিনের বলো।
ঐ যে দেখতে দেখতে দিন ফুরাল।
৯৬৫.
হলো আসলে ভুল
পাকলরে চুল,
সুখের তরে ঘুরে ঘুরে
তোর জনম গেল।
৯৬৬.
ভিন্ন ভিন্ন ভাবছ সবে
নিত্যসুখে সুখি হবে,
এমন সুখের জন্যে
নবির ত্বরিক্বে এখন চল।
৯৬৭.
ইহকালে ভোগ করে সুখ
পরে যদি হলো অসুখ,
লালন বলে মনরে
ধর্মের জন্য অসুখ ভালো।
৯৬৮.
এই সুখে কি দিন যাবে।
একদিন হুজুরে হিসাব দিতে যে হবে।
৯৬৯.
হুজুরে মন তোর আছে কবলতি
মনে কি পড়ে না সেটি,
বাকির দায়ে কখন এসে
তিলেকে তরঙ্গ তুফান ঘটবে।
৯৭০.
আইন মাফিক নিরিখ দিতে মন
কেন এতো আড়িগুড়ি তোর এখন।
৯৭১.
পত্তন যে সময় হইলে জমায়
নিরিখ ভারি কি পাতলা দেখো নাই ভেবে।
৯৭২.
ছাড়ো ছাড়ো ও মন ছাড়োরে বিকার
সরল হয়ে জোগাও রাজকর।
৯৭৩.
এবার প’লে বাকি উপায় কৈ আর দেখি
লালন বলে দায়মাল হবি মন তবে।
৯৭৪.
কোন পথে যাবি মন ঠিক হলো না।
কর লাফালাফি সার কাজে শূণ্যকার
টাকশালে পড়লে যাবে জানা।
৯৭৫.
না জেনে করণকারণ
কথায় কী হবে।
৯৭৬.
কথায় যদি ফলে কৃষি
তবে কেন বীজ রোপে।
৯৭৭.
গুড় বললে কি মুখ মিষ্টি হয়
দীপ না জ্বাললে কি আধার যায়।
৯৭৮.
অমনি জানো হরি বলায়
হরি কি পাবে।
৯৭৯.
রাজায় পৌরুষ করে
জমির কর বাঁচে সে রে।
৯৮০.
সেই কি তোর একবারই কার্যরে
পৌরুষে ছাড়বে।
৯৮১.
গুরু চিনো খোদাকে মানো
সাঁইর আইন আমলে আনো।
৯৮২.
আমার শুনিতে বাসনা দেলে।
গুর সেই কথাটি বল খুলে।
৯৮৩.
যখন তোমার জন্ম হলো
বাবা তখন কোথায় ছিলো,
কার সঙ্গে মা যুগল হলো
কে তোমারে জন্ম দিল।
৯৮৪.
শুনি মায়ের পালিত ছেলে
দুটি গর্ভে জন্ম হলে,
কার গর্ভে কয় দিন ছিলে
তোমার হায়াত মউত কে লিখিলে।
৯৮৫.
মায়ের বাম অঙ্গে কেবা
বাবা দায়ে ঠেকায় সেবা,
লালন ভণে তাপিত প্রাণে
জ্ঞান-নয়নে দেবেন বলে।
৯৮৬.
কে বুঝিতে পারে মাওলার কুদরতি।
আপনি ঘুমান আপনি জাগে
আপনি লুটে সম্পত্তি।
৯৮৭.
গগনের চাঁদ গগনে রয়
ঘটেপটে তাঁর জ্যোতির্ময়,
তেমনি খোদা খোদরূপে রয়
তার অনন্তরুপ আকৃতি।
৯৮৮.
অনেকে তাই ভাবে সদা
নিরাকার বটে সেহি খোদা,
আহম্মদী কবে কেবা
করেছে সৃষ্টির স্থিতি।
৯৮৯.
আদমের কলবের মাঝে
আত্মা রুপে কে বিরাজে,
লালন বলে তাই না বুঝে
হল আজাজিলের দুর্গতি।
৯৯০.
খোদা রয় আদমে মিশে।
৯৯১.
কার জন্য মন হলি হত
সেই খোদা আদমে আছে।
৯৯২.
নাম দিয়ে সাঁই কোথায় লুকালে
মুর্শিদ ধরে সাধন করলে নিকটে মেলে।
৯৯৩.
আত্মা রূপে কর্তা হল
কর তার দিশে।
৯৯৪.
আল্লাহ আদম আর মোহাম্মদ
এই তিন জনে নাই ভেদাভেদ এক আত্মায় মিশে।
৯৯৫.
দেখবি যদি হযরত নবী
এসকেতে আছে।
৯৯৬.
যার হয়েছে ভবে মহা জ্ঞান
সে দেখবে নূর তাজউল্লাহ অন্যে দেখবে ক্যান।
৯৯৭.
ফকির লালন বলে জ্ঞানী যারা
দেখবে অনায়াসে।
৯৯৮.
ভবে এসে রঙ্গরসে
বিফলেতে জনম গেল।
৯৯৯.
কবে করবে ভজন ধর্ম যাজন
দিনে দিনে দিন ফুরালো।
১০০০.
থাকবে ছাপা কদাচ
যে সকল করছে কাজ,
তোমার নিজ মুখে তার সম্মুখে
ব্যক্ত হবে ভাল মন্দ।