ফকির লালনের বাণী : প্রবর্তদেশ
১২০১.
ফকির লালন বলে প্রেম পিরিতি
তৃতীয় ভজনের এই রীতি।
১২০২.
জেনে নামাজ পড়ো হে মোমিনগণ।
না জেনে পড়লে নামাজ
আখেরে তার হয় মরণ।
১২০৩.
এক মোমিন মক্কায় যেতে, লোক ছিলো না সাথে
সে ভাবে মনে মনে আল্লা কী করি এখন
নামাজ কাজা হলে হবে আখেরে মরণ।
১২০৪.
তাঁর সঙ্গে ছিল চেীষট্রি জন, তাই গুণ করে তখন
তার গড় লায়েক ছাব্বিশ জন, সঙ্গে নিল লায়েক তিরিশ জন
অজু বানাইয়া নামাজ আদায় করে তখন।
১২০৫.
নামাজে যখন, সেজদা দিলো সাতাশ জন
আর বৈমুখ হয়ে তখন, বসে রইলো তিনজন
লালন বলে ঐ তিনজনাই ঘুরায় ত্রিভুবন।
১২০৬.
প্রেম রসিকা হবো কেমনে।
করি মানা কাম ছাড়েনা মদনে।
১২০৭.
এই দেহেতে মদন রাজা করে কাচারি
কর আদায় কড়ি লয়ে যায় হুজুরি।
১২০৮.
মদন তো দুষ্ট ভারি তারে দাও তহশিলদারি
করে সে মুন্সিগিরি গোপনে।
১২০৯.
চোর দিয়ে চোর ধরাধরি এ কি কারখানা
আমি তাই জিজ্ঞাসিলে তুমি বলো না।
১২১০.
সাধুরা চুরি করে চোরেরা পালায় ডরে
লয়ে যায় শূন্য ঘরে কোনখানে।
১২১১.
অধীন লালন বিনয় করে সিরাজ সাঁইয়ের পায়
স্বামী মারিলে লাথি নালিশ করিব কোথায়।
১২১২.
তুমি মোর প্রানপতি কি দিয়ে রাখবো রতি
কেমনে হব সতী চরণে।
১২১৩.
কতোজন ঘুরছে আশাতে খুঁজে পেলাম না এই জগতে।
অর্থ করে বোঝ ভাইরে বর্ত আছে অজুদে।
১২১৪.
কুড়ি চক্ষু চৌদ্দ হস্ত তাই শুনে হলাম ব্যস্ত,
শোনার করণ করি ন্যস্ত শুনবো আমি তোমার মুখেতে।
১২১৫.
শুনে এলাম আরেক কথা এক ফেরেস্তার দুইটি মাথা,
কও তো তার মোকাম কোথা এও শুনবো তোমার কাছেতে।
১২১৬.
মুর্শিদের মুখে শুনি খায় না কোন দানাপানি,
লালন বলে কিঞ্চিৎ ধ্যানী সবুজ রঙ তাঁর গায়েতে।
১২১৭.
হরি নাম যত্ন করে হৃদয় মঝে রাখবে মন।
ও নাম গলদ করলে হারিয়ে যাবে
হরি বলা হবে অকারণ।
১২১৮.
নিজ হরি নাম করে খাঁটি
হিংসা নিন্দা দাও গো মাটি,
হবা নির্বিকার পরিপাটি
পাবা হরির দরশন।
১২১৯.
হরির সঙ্গে কর যদি ভাব
দিও না কথার জবাব,
থাকবে না আর পারের অভাব
গোলকপুরে হবে গমন।
১২২০.
লোক দেখিয়ে হরি বলা
ভজন সাধন হবে ঘোলা।
১২২১.
লালন বলে রং মাখানো মালাঝোলা
গলায় রাখো কি কারণ।
১২২২.
আগে পাত্র যোগ্য না করে যেজন সাধন করে।
সে তো প্রেমিক নয় তারে কামী বলে,
যেমন চকমকি পাথরে সদা
অগ্নি ঝরে।
১২২৩.
হেতু ইচ্ছায় করে পিরিত
পায় না হিত তার হয় বিপরীত
যেমন গাভীর ভান্ডে গোরোচোনা
গাভী তার মর্ম জানে না।
১২২৪.
ভক্ষণ ছিন্ন আদি করে নিরবধি
শুল্ক বস্তু মিশে সদা বিন্দু ঝরে।
১২২৫.
জলন্ত আগুনে যদি ঘৃত
রাখে নিরবধি
যেমন দুগ্ধেতে কলস পুরি
লয়ে রাখি গঙ্গাবারি।
১২২৬.
সে ক্ষুদ্র অপরাধী তাই পড়ে
প্রমাদে সুরোপর্শ্বে অপবিত্র করে।
১২২৭.
না হতে প্রবর্তের দিশা
আগে কর সিদ্ধির আশা
পুরায় না তার মনেরই আশা
যেমন অগ্নিতে পতঙ্গ পড়ে হলো সেই দশা।
১২২৮.
ভাবুক জনা না শুনিল মানা
লালন বলে সে মাথা দিয়ে উল্টে পড়ে।
১২২৯.
মায়ার বশে কাঁদবি বসে আর কতকাল
ওরে মন তোর শিয়রেতে এল মহাকাল।
১২৩০.
একদিনান্তে মনভ্রান্তে ভজলি না মন গুরুর চরণযুগল
যে দিন এসে ঘিরবে তোরে সেদিন পড়ে রবে মায়াজাল।
১২৩১.
গুরু বলে ডাকলিনে মিছে মায়ায় হলি মত্ত হারালি জ্ঞানতত্ত্ব
গুরুবস্তু কি পদার্থ চেনো না কুপথ ছেড়ে সুপথে কেন চলো না।
১২৩২.
তাই বলিরে ও পাগল মন হও না কেন মনের মতন
যার জন্য তুই করিস রোদন তার দেখিনে চোখের জল।
১২৩৩.
চক্ষু কর্ণ নাসিকা মুখ এক জা’গায় বসত কেউ দেখে না কারো মুখ
যেমন লেংড়ার ইচ্ছায় বেড়ায় হেঁটে বোবার ইচ্ছায় কথা ফোটে।
১২৩৪.
অন্ধের ইচ্ছায় বিদ্যা ঘটে সবই টলে ঘটাপটে
লালন বলে যার যেমন কাজ তাঁর তেমনই ফল।
১২৩৫.
কোন চরণ এই দীনহীনকে দেবে।
দুটি চরণ বৈ নয়, আছে শত ভক্তের হৃদয়
দয়াময় আমার ভাগ্যে কি হবে।
১২৩৬.
শুনেছি সেই ত্রেতা যুগে
রাম অবতার ভক্তের লেগে
মহাতীর্থস্থান যোগে
যুদ্ধ জয় কলরবে।
১২৩৭.
তুমি গায়াসুরকে চরণ দিয়ে
বন্ধু হয়েছো ভক্তিভাবে।
১২৩৮.
প্রহ্লাদ নারদাদি
চরণ সাধে নিরবধি
আমার বঞ্চিত বিধি
এ নিধনের ভার কে লবে।
১২৩৯.
চরণ পাবার আশায় ত্রিপুরারই বেড়ায়
শ্মশানে পাগল ভাবে।
১২৪০.
পাষানী মানব হলো চরণ ধূলায়
চরণমালা হুনুর গলায়
হৃদয় মাঝে চরণ দোলায়
নূপুর বাজে সু-রবে।
১২৪১.
লালন বলে চরণ বিক্রেতা জনমের মতো
ফিরে কি কেহ আর পাবে।
১২৪২.
এ ভবতরঙ্গ কিসে পার হবি
মন জানলি না,
গুরুর চরণ না করিলে শরণ
পারে যাওয়া তোর হবে না।
১২৪৩.
সেই যে নদীর উল্টো তালা
সাবধানে করিও খোলামেলা
চাবি যেন হারাও না।
১২৪৪.
চাবি হারালে পরে পড়বি ফেরে
পারে যাওয়া হবে না।
১২৪৫.
ওই যে নদীর তিনটা ধারা
কত ধনীর ভারা যাচ্ছে মারা
সচেতনের ভারা যায় না মারা।
১২৪৬.
একবার রাধা বলে বাদাম তুলে
উজান কেন ধর না।
১২৪৭.
ঐ না সাধের জীর্ণ তরী
কেমনে করে দেব ভবপাড়ি
ভাবি সেই ভাবনা।
১২৪৮.
লালন বলে তাই যার মনেতে নাই
তার পাড়ি বুঝি জমে না।