ভবঘুরেকথা
ফকির লালন

ফকির লালনের বাণী : সাধকদেশ

৫১.
ভাবশূন্য হইলে হৃদয়
বেদ পড়িলে কী ফল হয়,
ভাবের ভাবি থাকলে সদাই
গুপ্ত-ব্যক্ত নীলা সব জানা যাবে।

৫২.
দ্বিদলে সহস্র দল
একরূপে সাঁই করে আলো,
সেইরূপে যে নয়ন দিল
মহাকাল শমন তার কী করিবে।

৫৩.
অদেখা ভজনা করা
আঁধার ঘরে সর্প ধরা,
লালন বলে, ভাবুক যারা
জ্ঞানের বাতি জ্বেলে চরণ পাবে।

৫৪.
কি শোভা দ্বিদলের পরে।
রসমণি মাণিক্যে রূপ ঝলক মারে।

৫৫.
আবিম্বু গম্ভুতে সনিত্য গোলক
বিরাজ করে তাহে পূর্ণ ব্রহ্মলোক।

৫৬.
হলে দ্বিদল নির্ণয়, সব জানা যায়
প্রসন্ধি থাকে না সাধন দ্বারে।

৫৭.
শতদল সহস্র দলের দল
রসরতি রূপে করে চলাচল।

৫৮.
দ্বিদলে স্থিতি, বিদ্যুৎ আকৃতি
ষোড়দলে বারাম যোগান্তরে।

৫৯.
ষোড়দলে সেতো ষড়তত্ত্ব হয়
দশমদলে মৃণালগতি গঙ্গা বয়।

৬০.
ওসে ত্রিধারা তার, ত্রিগুণে বিচার
লালন বলে গুরু অনুসারে।

৬১.
আশেকে উন্মত্ত যারা।
সাঁইয়ের মনের বিয়োগ জানে তারা।

৬২.
কোথা বা শরার টাটি
আশেকে বেভুল সেটি,
মাশুকের চরণ দুটি
রয়েছে সে রূপ নিহারা।

৬৩.
মাশুক রূপটি হৃদয়ে রেখে
আশেকের বাতি জ্বেলে দেখে,
শত শত স্বর্গ দেখে
মাশুকের চরণের ধরা।

৬৪.
নাহি মানে ধর্মাধর্ম
নাহি তার কর্মাকর্ম,
যার হয়েছে বিকারশূন্য
লালন কয় তার করণ সারা।

৬৫.
সহজে অধর মানুষ না যায় ধরা।
হতে হবে জ্যান্তে মরা।

৬৬.
অধর ধরার এমনি ধারা
গুরু শিষ্য ঐক্য করা।

৬৭.
হায়াত নদীর মধ্যে স্থিতি
আজগুবি ফুল হয় উৎপত্তি।

৬৮.
মেঘের কোলে বিদুৎ খেলে
অমনি সেরূপ যায়রে চলে।

৬৯.
নয়নকোণে মেঘ আকৃতি
দেখবে সে রূপের জ্যোতি।

৭০.
বলিরে মানুষ মানুষ এই জগতে।
কী বস্তুু কেমন আকার
পাইনে দেখিতে।

৭১.
যে চারে হয় ধড় গঠন
আগমেতে আছে রচন,
ঘরের মাঝে কোনজন
হয় তাই জানতে।

৭২.
এই মানুষ না যায় চেনা
কি বস্তু কেমন জনা।

৭৩.
নৈরাকার নিরঞ্জনা
যাই না তারে চিনতে।

৭৪.
মূল মানুষ এই মানুষে
ছাড়াছাড়ি কতটুকু সে।

৭৫.
খেলছে মানুষ নীরে ক্ষীরে।
আপন আপন ঘর খোঁজ
কেন হাতরে বেড়াও কোলের ঘরে।

৭৬.
নীরসিন্ধু গভীর অতিকায়
ডুবলে কত আজব কাণ্ড দেখা যায়,
নীরের ভাণ্ড, পুরা ব্রহ্মাণ্ড
কাণ্ড বলতে নয়ন ঝরে।

৭৭.
শূন্যদেশে হয় মেঘের উদয়
নীরদ বিন্দু বারি বরিষণ তায়।

৭৮.
ফলছে কত ফল, রঙ বেরঙের হল
আজব কুদরতি ফল ভাবের ঘরে।

৭৯.
ইন্দ্র ডঙ্কা নাহি সে রাজ্যে
সহজ মানুষ ফেরে সহজে।

৮০.
রাগ অনুরাগ যার বাঁধা আছে তার
সোনার মানুষ আলাপন হৃদকমলে।

৮১.
বেদ পুরাণ আদি রাগের অনুবাদী
নব অনুরাগী তা দেয় রে ফেলে।

৮২.
অনুরাগী মন সদাতে রত
মনিহারা রূপ ফণীর মত।

৮৩.
দেখলে তাহার মুখ হৃদয়ে বাড়ে সুখ
অঙ্গ পরশিলে প্রেম উজ্জ্বলে।

৮৪.
অনুরাগী মন যেদিকে ফিরায়
পূর্ণচন্দ্র রূপ ঝলক দেখতে পায়।

৮৫.
ক্ষণেক হাসে মন ক্ষণেক সচেতন
ক্ষণেক ব্রহ্মাণ্ডের উপর যায়রে চলে।

৮৬.
অনুরাগের সদায় যে করে আশা
অনুরাগে হয় তার দশম দশা।

৮৭.
লালন ফকির কয় অনুরাগ যার নাই
ও তার কার্য সিদ্ধি হয় কোন কালে।

৮৮.
শুদ্ধপ্রেমের প্রেমিক মানুষ যে জন হয়।
মুখে কথা কউক বা না কউক
নয়ন দেখলে চেনা যায়।

৮৯.
রূপে নয়ন করে খাঁটি
ভুলে যায় সে নাম মন্ত্রটি,
চিত্রগুপ্ত পাপপুণ্যটি
তার কি লিখবেন খাতায়।

৯০.
মণিহারা ফণি যমন
প্রেম রসিকের দুটি নয়ন।

৯১.
আছে যার মনের মানুষ মনে তোলা।
সেকি জপে অন্য মালা,
অতি নির্জনে বসে
দেখছে খেলা।

৯২.
কাছে রয় ডাকবো তারে উচ্চস্বরে
কোন পাগলা,
যে যা বোঝে মন সেই তা বুঝে
থাকরে ভোলা।

৯৩.
যার যেখানে ব্যথা হাত সেখানে
করে ডলামলা,
তেমনি যেন মনের মানুষ
মনে তোলা।

৯৪.
দেখে সে রূপ করিয়ে চুপ
রয় নিরালা,
লালন ভেড়ের লোক দেখানো
মুখে হরি হরি বলা।

৯৫.
আমি অপার হয়ে বসে আছি
ও হে দয়াময়,
পারে লয়ে যাও আমায়।

৯৬.
আমি একা রইলাম ঘাটে
ভানু সে বসিল পাটে,
(আমি) তোমা বিনে ঘোর সংকটে
না দেখি উপায়।

৯৭.
নাই আমার ভজন-সাধন
চিরদিন কুপথে গমন।

৯৮.
নাম শুনেছি পতিত-পাবন
তাইতে দিই দোহাই।

৯৯.
অগতির না দিলে গতি
ঐ নামে রবে অখ্যাতি।

১০০.
কোথায় আনিলে আমায় পথ ভুলালে।
দুরন্ত তরঙ্গে তরীখানি ডুবালে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!