ফকির লালনের বাণী : সাধকদেশ
১৬০১.
মাগীর দায়ে মুড়িয়ে মাথা
হালসে বেহাল যোগী।
১৬০২.
ভোলা মহেশ্বর মাগীর দাসী
তাইতে শিব শ্মশানবাসী।
১৬০৩.
সিরাজ সাঁই কয় লালন কিসি
তোর এতো পদবী।
১৬০৪.
জলে স্থলে ফুল বাগিচা ভাই।
এমন ফুল আর দেখি নাই।
১৬০৫.
ফুলের নামটি নীল লাল জবা
তার ফুলে মধু ফলে সুধা
তাঁর ভঙ্গি বাঁকা।
১৬০৬.
সে ফুল তুলতে গেলে মদনসাপা
সে যে সদাই ছাড়ে হাঁই।
১৬০৭.
ফুলের রসিক যাঁরা মর্ম জেনে
ডুব দিলো সেই জীবনফুলে
ঐ ফুলে আছে মধু রাখা।
১৬০৮.
তার মনের কি ভয় আর রয়
ও দেবে শ্রীগুরুর দোহাই।
১৬০৯.
এবার ব্রহ্মা মাকে করে বাধ্য
মদন রাজার সঙ্গে যুদ্ধ
কার কি সাধ্য দেখা।
১৬১০.
ফকির লালন বলে ওটা মরলে
যেতো আমার বালাই।
১৬১১.
চিনবে তারে এমন আছে কোন ধনী।
নয় সে আকার নয় নৈরাকার
নাই ঘরখানি।
১৬১২.
বেদ আগমে জানা গেল
ব্রহ্মা যারে ঢুঁড়ে হদ্দ হলো।
১৬১৭.
জীবের কি সাধ্য বলো
তারে চিনি।
১৬১৮.
কতো কতো মুনিজনা
করে রে যোগসাধনা।
১৬১৯.
লীলার অন্ত কেউ পেলো না
লীলা এমনই।
১৬২০.
সবে বলে কিঞ্চিৎ ধ্যানী
গন্য সে হন শূলপাণি।
১৬২১.
লালন বলে কবে আমি
হবো তেমনি।
১৬২২.
আর কেনরে মন ঘুর বাহিরে
চল না আপন অন্তরে।
১৬২৩.
বাইরে যার তত্ত্ব কর অবিরত
সেত আজ্ঞাচক্র বিহারে।
১৬২৪.
বামে ইড়া-নাড়ি দক্ষিণে পিঙ্গলা
সেত রজ্রঃগুনে করিতেছে খেলা।
১৬২৫.
মধ্যে শতগুন সুষুম্না বিমলা
ধর ধর তারে সদরে।
১৬২৬.
কুলুকুন্ডলিনী শক্তি বাযু বিকারে
অচৈতন্য হয়ে আছে মূলাধারে।
১৬২৭.
গুরুদত্তা তত্ত্ব সাধনেরই জোরে
চেতন কর তাহারে।
১৬২৮.
মূলাধার অবধি পঞ্চচক্র ভেদী
লালন বলে আজ্ঞাচক্রে রয় নিরবধি।
১৬২৯.
হেরিলে সে নিধি যাবে ভব ব্যাধি
ভাসবি আনন্দ সাগরে।
১৬৩০.
ও মন দেহের খবর না জানিলে
মানুষ রতন ধরা যায় না।
১৬৩১.
আপন দেহে মানুষ আছে
কর তাহার ঠিকানা।
১৬৩২.
জীবাত্মা পরমাত্মা
পরেমশ্বর আত্মা ঈশ্বর আত্মা।
১৬৩৩.
ভূত আত্মা দিয়ে পঞ্চআত্মা
দড় হয় এদের চিনা।
১৬৩৪.
দলপদ্মে রঙ দেখলে পরে
তবেই চিনা যাবে আপনারে।
১৬৩৫.
অন্যে কি তাই বলবে তোরে
কর গুরু সাধনা।
১৬৩৬.
ঘুমায় যখন এই মানুষে
মন মানুষ রয় দেশে দেশে।
১৬৩৭.
লালন বলে গতি পাই উদ্দিশ্যে
এমন অমূল্য ধন দেখলে না।
১৬৩৮.
চিনি হওয়া মজা কি খাওয়া মজা
দেখ দেখি মন কোনটা সোজা
সালেক্য সামীপ্য ষাষ্টি
সারুপ্য মূক্তি আদি
বলেছে যা;
এসব মুক্তি সেধে সেও তো
হয়ে রয় যমের প্রজা।
১৬৩৯.
নিরবান মুক্তি সাধে যত
লয় হয় পশুর মত
কেমনে মুক্তি মজা;
কি করে তাতে যায়
দুঃখ সুখ বোঝা।
১৬৪০.
সমঝে ভবে কর সাধন
যাতে মেলে গুরুর চরন
অটল ধজা
সিরাজ সাঁই কয় কারন;
শোনরে লালন
ছাড় সাধের জল সেচা।
১৬৪১.
পূর্বের কথা ছাড়ান দাও ভাই।
সে লেখা তো থাকে না
সাধনের দ্বারাই।
১৬৪২.
বাদশা গুরু গুরু বাদশা
এ সব কথা সাধু ভাষা,
এ কথায় করে নিরাশা
জীব পড়ে দুর্দশায়।
১৬৪৩.
তাইতে বলি ওরে কানা
সর্বজীব হয় গুরুজনা।
১৬৪৪.
করো চৈতন্য গুরুর সাধনা
তাতে কর্মভোগ যায়।
১৬৪৫.
ধর্মাধর্ম সব নিজের কাছে
জানা যায় সাধনের বিচে।
১৬৪৬.
লালন কয় আমার ভুল হয়েছে
ভেবে দেখি তাই।
১৬৪৭.
দয়াল তোমার নাম নিয়ে
তরনী ভাসাইলাম যমুনায়।
১৬৪৮.
তুমি খোদার নাবিক, পারের মালিক
সে আশায় চড়িয়াছি আজ নায়।
১৬৪৯.
চিরদিন কান্ডারি হয়ে
কত তরি বেড়াও বয়ে।
১৬৫০.
আমার জীর্নতরী রেখ যতনে
যদি তোমার মনে লয়।