ভবঘুরেকথা

সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: এক

১.
১২ বৎসর ভক্তি সহকারে নমস্কারের ফল একটি মন্ত্রযুক্ত নমস্কারে লাভ হয়। মন্ত্র বলে প্রণামের ফল অধিক।
-শ্রী শ্রী সীতারাম কথামৃত

২.
শ্রীশ্রী বাবাকে সে যত ভালোবাসে যে যত নাম করে। বাবা বড় নাম ভালোবাসেন। সদা সর্বদা নাম শোনাবি।
-শ্রী শ্রী সীতারাম কথামৃত

৩.
জন্মদাতা পিতা হইতে ব্রহ্মদাতা পিতা গুরুই শ্রেষ্ঠ, সেইজন্য সতত গুরুকে পিতার অপেক্ষা পূজনীয় মনে করিবে।
-ওঙ্কারনাথ রচনাবলী (নবম খণ্ড)

৪.
নাম রূপকে প্রণাম, নাম জাপককে প্রণাম, যিনি নাম করিয়া শুদ্ধ হইয়াছেন তাহাকে প্রণাম, যিনি নাম করিয়া নামময় হইয়াছেন তাহাকে প্রণাম।
-শ্রী শ্রী নারদ ভক্তিসূত্র

৫.
এই পুণ্যভূমিতে যাঁরা জন্মান, তাঁদের জন্মজন্মান্তরের বহু পুণ্য ছিল- এ কথা শাস্ত্র বলেন। দেবগণও এই পবিত্র ভারতে জন্মাতে ইচ্ছা করেন।

৬.
নামই পরম তীর্থ, পৃথিবীতে যত তীর্থ আছে- নামই সকলের অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ তীর্থ। একমাত্র নাম অবলম্বন করলে মানুষ সমস্ত তীর্থ স্নানের ফললাভ করে।

৭.
কৃষ্ণ কৃষ্ণ জপকারীর পাপের লেশমাত্র থাকে না। ইহ জন্মকৃত, কোটি কোটি জন্মকৃত সমুদয় পাপ নিঃশেষে ভস্মীভূত হয়ে যায়।
-ওঙ্কারনাথ রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড)

৮.
দেখ, আমি যাবো লোকের দ্বারে দ্বারে, গিয়ে বলবো- ওরে! তোদের সকল দুঃখের অবসান হবে- তোরা ‘আমি তোমার শরণাগত’ বলে ভগবানের স্মরণ গ্রহণ করে নাম কর।
-শ্রী নামামৃত লহরি

৯.
শ্রী ভগবান বলেছেন- অন্য ক্ষুদ্র দেবতা ভক্ত অধম, মন্ত্র ভক্ত মধ্যম, আমার ভক্ত উত্তম, আর গুরুভক্ত উত্তমেরও উত্তম। গুরুভক্তিমান মানবগণের ত্রিভুবনে কি সাধ্য নহে, অর্থাৎ সমস্তই তাহাদের করতলগত।

১০.
জয়গুরু সম্প্রদায়ের যা কিছু সব ঠাকুরের। তোরা সবাই কায়মনোবাক্যে ঠাকুরের কাজ করিস্-সীতারাম এই চায়। তোরা সবাই মিলে যা, তোদের হৃদয়বীনায় একটি সুর উঠুক-গুরুসেবা, এর দ্বারাই কৃতার্থ হবি।

১১.
আমাদের পথ ‘প্রণাম মার্গ’। যা কিছু সব তুমি- এই মনে করে প্রণাম করা অভ্যাস করবি। নাম করতে করতে প্রণাম করবি, প্রণাম করতে করতে নাম করবি। এর দ্বারা মৃত্যুকে জয় করতে সমর্থ হবি।
-মণিমালিকা

১২.
বুঝলে সীতারাম! গুরুর সেবা, গুরুর ধ্যান, গুরুর স্তব, গুরুর জপ, গুরুপূজা, গুরুতৃপ্তি, গুরুতে ভক্তি- জন্ম ভাগ্য বসে যে মানবগণের কোনোক্রমে হয় তাদের মন্ত্রসিদ্ধি হয়- তারা জীবনমুক্ত।
-সীতারাম (খেপার ঝুলি)

১৩.
সর্বদা ‘গুরু’ ‘গুরু’ ‘গুরু’ নাম জপ করিলে মহা তপস্যা করা হয়। অতি পাতকী গতিহীন বাক্তিও যদি গুরুনাম জপ করে, সে কৃতার্থ হয়, তাহার সর্বতীর্থে স্নান করা হয়, সে পবিত্র হয়, সে মোক্ষলাভে সমর্থ হয়। -ওঙ্কারনাথ রচনাবলী (নবম খণ্ড)

১৪.
জগতে এমন কোনো ব্যাঘাত নাই যে আমার আশ্রিতকে পদচ্যুত করতে পারে। রাম রাম গর্জন শুনলে যমের হাতে যমদণ্ড ও শিথিল হয়ে পড়ে। নাম কর, সব চলে যাবে- যাবেই। বিশ্বশরীরী আমি, আমার শরীরের মধ্যে তুই রয়েছিস।
-সীতারাম কথামৃত

১৫.
গুরু শক্তি ক্ষণিক স্পর্শের আনন্দ দান করেন না। তিনি কুণ্ডলিনীকে জাগিয়ে দেন। তখন সাধক কৃতার্থ হয়। আধার অনুযায়ী গুরুশক্তিই সকলকে নিয়ে চলেছেন। প্রারব্ধ কর্ম ক্ষয় করতে করাতে শ্রীগুরুই সকলকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন।
-শ্রী শ্রী সীতারাম কথামৃত

১৬.
গুরুদেবের উচ্ছিষ্ট সর্বাঙ্গে লেপন করলে বজ্র কখনো তার গাত্র ভেদ করতে পারে না। ভক্তিভাবে যিনি গুরুদেবের উচ্ছিষ্ট ভোজন করেন, জগন্মাতা অন্নপূর্ণা তাকে ঐশ্বর্য প্রদান করে থাকেন রাম রাম সীতারাম, জয় জয় রাম সীতারাম।
-ওঙ্কারনাথ রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড)

১৭.
প্রায়শ্চিত্ত করলে পাপ যায় বটে, কিন্তু মন পুর্নবার অসৎ পথে ধাবিত হয়। প্রায়শ্চিত্তের দ্বারা পাপ সমূলে ধ্বংস হয় না। যে ব্যক্তি পাপের মূল উৎপাটন করতে চান তার পক্ষে হরির নামকীর্তনই উত্তম প্রায়শ্চিত্ত। নামকীর্তনের দ্বারা চিত্তশুদ্ধ হয়।
-ওঙ্কারনাথ রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড)

১৮.
যোগ তো সকলে করবার অধিকারী নয়। যারা যোগী নন তাদের গতি কি? তাদের গতি নাম। নাম-যানে আরোহন করে আমার ভক্ত আমার পরমধামে উপস্থিত হয়। ওরে ওরে, নাম যে আশ্রয় করে, তাকে কি আর কিছু ভাবতে হয়? মৃত্যু সংসার সাগর হতে আমি তাকে উদ্ধার করি।

১৯.
কৃষ্ণ কৃষ্ণ জপ করা আর কৃষ্ণের সঙ্গে থাকা এক কথা। কেবল ডাকবি! উঠতে বসতে খেতে শুতে নিয়মে অনিয়মে হেলায় শ্রদ্ধায়- কেবল ডাকবি। বাবাকে সে ততো ভালোবাসে যে যত নাম করে, বাবা তোদের বড়ো নাম ভালোবাসে- সদা সর্বদা নাম শোনাবি। তোদের বাবাকে নামে ডুবিয়ে রাখবি।
-মণিমালিকা

২০.
কাঁচ পরিস্কার করিতে যেমন চুনের প্রয়োজন, কাপড়ের ময়লার জন্য সাবানের, বাসন পরিষ্কারের জন্য তেঁতুল, তেমনই চিত্তভূমি পরিষ্কার করিতে হইলে নামরূপ মাঞ্জনের প্রয়োজন। অন্তরের সহিত নামজপ বা নামসাধন সর্বকালে সর্বাবস্থায় অভ্যাস করিবে। নামের দ্বারাই নামিকে পাওয়া যায়।
-শ্রী শ্রী নামামৃত লহরি

২১.
সীতারামের সাধক জীবনের অনুসরণের চেষ্টা করছে শুদ্ধানন্দ, সাতগেছের পাঁচু, বেলুনের সুশীল, সেবানন্দ, বৃন্দাবন। ধীরানন্দ- সীতারামকে অনুসরণের চেষ্টা করছে বলে মনে করি। অবশ্য একদিন কৃতকার্য হবেই বলে এ বিশ্বাস রাখি। যেদিন সম্পূর্ণভাবে অনুসরণ করতে পারবে, সেদিন ভগবৎ সাক্ষাৎকার লাভে সমর্থ হবে।

২২.
যাদের ভক্তি আছে তারা ভক্তিভরে নাম করুন। যাদের নেই তারা কি কবে ভক্তি আসবেন বলে চুপ করে থাকবে? তারা অমনোযোগে অশ্রদ্ধায় অভক্তিতে ডাকতে আরম্ভ করলে দয়াময় নাম তাকে শ্রদ্ধা ভক্তি অলংকারে সাজিয়ে বুকে তুলে নেবেন, এ যে কলিযুগ। অতি সহজে মানুষ ভগবানকে পায়।
-ওঙ্কারনাথ রচনাবলী (৩য় খণ্ড)

২৩.
তিনি গুরু, তিনি পিতা, তিনি-ই মাতা, তিনি-ই বান্ধব, যিনি সতত কেবল হরিনাম স্মরণ করতে শিক্ষা দেন। এ জগতে শেখাবারও একটি বস্তু- মাত্র আমার নাম। ঐটি যিনি শিক্ষা দেন, তার মতো হিতকারী জগতে আর কেহ নাই। ত্রিভুবনে এমন কোনো দ্রব্য নাই, যা দান করে হরিনাম দাতার নিকট ভক্ত অঋণী হতে পারে। ওরে! ওরে। হরিনাম দান, আমাকে দান, আত্মদান- এক কথা।

২৪.
রাম রাম সীতারাম শ্রদ্ধা সহকারে পুরুষ হরিনাম সংকীর্তন করলে ক্রমশ: সাতটি সত্য ফল লাভ হয়। প্রথম ভূমিকায় পাপ নাশ, দ্বিতীয় ভূমিকায় মহাপুণ্য, তৃতীয় চতুর্বিধ বৈরাগ্য, চতুর্থে গুরুসেবা, পঞ্চমে আত্মবোধ, ষষ্ঠে ভ্রান্তিনাশ, সপ্তম ভূমিকায় সম্পূর্ণ আনন্দময় আমার বোধ ও আমাতে নিত্ত স্থিতি লাভ- রাম রাম সীতারাম সীতারাম।
-ওঙ্কারনাথ রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড)

২৫.
বৈকালে গিয়ে সমুদ্র দর্শন করিস তো? জল দেখায় আমি যথেষ্ট উপকার পেয়েছিলাম। তরঙ্গের উপর তরঙ্গ দেখতে দেখতে চিত্ত সতই স্থির হয়ে যায়। যে সময় সাক্ষাৎ দর্শনের জন্য পুরীধামে মৌন গ্রহণ করেছিলাম, তখন বৈকাল থেকে রাত্রী পর্যন্ত সমুদ্র দর্শন করতাম। মনঃস্থিরের যত উপায় আছে জল দেখা তার মধ্যে সর্বপ্রধান বলে মনে করি। তবে একাকী বসে দেখতে হবে।
-মণিমালিকা

সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: দুই>>

……………….
আরও পড়ুন-
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: এক
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: দুই
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: তিন
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: চার
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: পাঁচ
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: ছয়
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: সাত
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: আট
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: নয়

……………….
আরও পড়ুন-
মহানবীর বাণী: এক
মহানবীর বাণী: দুই
মহানবীর বাণী: তিন
মহানবীর বাণী: চার
ইমাম গাজ্জালীর বাণী: এক
ইমাম গাজ্জালীর বাণী: দুই
গৌতম বুদ্ধের বাণী: এক
গৌতম বুদ্ধের বাণী: দুই
গৌতম বুদ্ধের বাণী: তিন
গৌতম বুদ্ধের বাণী: চার

গুরু নানকের বাণী: এক
গুরু নানকের বাণী: দুই
চৈতন্য মহাপ্রভুর বাণী
কনফুসিয়াসের বাণী: এক
কনফুসিয়াসের বাণী: দুই

…………………….

আপনার গুরুবাড়ির সাধুসঙ্গ, আখড়া, আশ্রম, দরবার শরীফ, অসাম্প্রদায়িক ওরশের তথ্য প্রদান করে এই দিনপঞ্জিকে আরো সমৃদ্ধ করুন- voboghurekotha@gmail.com

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!