সাংখ্য-দর্শনের উৎস : কিস্তি তৃতীয়
-দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
আধুনিক গবেষকেরা সাংখ্যের উৎস-প্রসঙ্গে যে মতবাদ রচনা করেছেন আমরা একটু পরেই তার আলোচনায় প্রত্যাবর্তন করবো। তার আগে সাংখ্যের সঙ্গে তন্ত্রের সম্পর্কটাকে আরো একটু খুঁটিয়ে পরীক্ষা করা দরকার।
প্রথমত, বঙ্কিমচন্দ্র যদিও সাংখ্যের সঙ্গে তন্ত্রের সম্পর্কটি দেখতে পেয়েছেন তবুও তার মতে এ-সম্পর্কের ব্যাখ্যা হলো, তন্ত্রের মূল তত্ত্বগুলি সাংখ্য-দর্শনের কাছ থেকেই পাওয়া- “সাংখ্যের প্রকৃতি পুরুষ লইয়া তন্ত্রের সৃষ্টি”। বস্তুত শুধু বঙ্কিমচন্দ্রই নন, ইউরোপীয় বিদ্বানেরাও শাক্ত ধ্যানধারণার ব্যাখ্যায় এ-জাতীয় একটা সহজ সমাধানকে গ্রহণ করাই নিরাপদ বোধ করেছেন। যেমন শাক্ত ধ্যানধারণা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে-
It has been supplied with a philosophical justification, being a popularised version of the Samkhya principle of the union of the soul of the universe (purusa) with the primordial essense (prakriti).[৭১৫]
অর্থাং, সংক্ষেপে, এই শাক্ত মতবাদ সাংখ্য-দর্শনের পুরুষ ও প্রকৃতির মিলনের এক জনপ্রিয় সংস্করণ হিসেবে দার্শনিক ব্যাখ্যার মর্যাদাও লাভ করেছে।
সাংখ্যের উৎস-প্রসঙ্গে আধুনিক বিদ্বানের যে-সব মতবাদ রচনা করেছেন তা নিয়ে আলোচনা তোলবার আগে আমাদের পক্ষে বলে নেওয়া প্রয়োজন, এ-বিষয়ে ঐতিহাসিক তথ্য বলতে ঠিক কী পাওয়া যায়, কিংবা ঠিক কোন ধরনের মালমশলার সাহায্যে আধুনিক বিদ্বানেরা তাদের ওই মতবাদগুলিকে নির্মাণ করবার চেষ্টা করে থাকেন।
আমাদের মন্তব্য হলো, আদি-আকৃত্রিম সাংখ্যের পুরুষকে soul ofthe universe আখ্যা দেওয়ার মতোই শাক্ত মতবাদকে সাংখ্যের জনপ্রিয় সংস্করণ বলে কল্পনা করাটাও ঐতিহাসিক বোধের পরিচায়ক নয়। আদিতে সাংখ্যের পুরুষ যে আত্মা বা soul বোঝায়নি, এ-বিষয়ে কিছু তথ্য আমরা ইতিপূর্বেই উল্লেখ করেছি; যদিও কীভাবে এই পুরুষই ঔপনিষদিক চিন্তার প্রভাবে ক্রমশ আত্মা-
এমনকি, উপনিষদের নিত্য-শুদ্ধ-বুদ্ধ-মুক্ত আত্মাই- বোঝাতে শুরু করেছে সে-আলোচনা এখনো আমাদের পক্ষে বাকি আছে। কিন্তু তন্ত্রের ওই প্রকৃতি আর পুরুষের তত্ত্বের জন্য যে কোনো দার্শনিক সম্প্রদায়ের কাছেই ঋণী হবার প্রয়োজন নেই- অতএব সাংখ্যের কাছেও নয়-সে-কথা আমরা বিস্তারিতভাবেই আলোচনা করেছি।
কেননা, আমরা দেখেছি যে, কৃষিকেন্দ্রিক জাদুবিশ্বাস থেকেই তন্ত্রের শুধু মৌলিক তত্ত্বগুলিই নয়- এমনকি, আচারঅনুষ্ঠানের দিকগুলিও- অনিবার্যভাবেই জন্মলাভ করেছে। এখানে আমরা তাছাড়াও আর একটি যুক্তির অবতারণা করতে চাই।
যদিই বা ধরে নেওয়া যায় যে, তন্ত্রের ওই পুরুষ-প্রকৃতির তত্ত্ব সাংখ্যের কাছ থেকে গৃহীত হয়েছে, তাহলেও এইপ্রসঙ্গে আরো একটি মৌলিক সমস্যা বাকি থাকে- সাংখ্যের ওই পুরুষ-প্রকৃতির তত্ত্বই বা এলো কোথা থেকে? কপিল নামের জনৈক আদিবিদ্বানের মস্তিষ্ক থেকে? কিন্তু কপিল যে সত্যিই কে ছিলেন তা আমাদের জানা নেই।
এমন কি, কপিল বলতে আদ্যিকালের কোনো এক নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে বোঝাতো কি না তাও সন্দেহের কথা। অপরপক্ষে, ওই প্রকৃতি আর পুরুষের নারীবাচকত্ব আর পুরুষবাচকত্বের প্রতি উপযুক্ত গুরুত্ব দিলে এ-কথাই সন্দেহ করবার সুযোগ থাকে যে, সাংখ্যের মতো ওই আপাত-বিস্ময়কর দার্শনিক চিন্তাধারা একজন ব্যক্তিবিশেষের মস্তিষ্ক-প্রসূত না হওয়াই স্বাভাবিক – কৃষিবিদ্যার প্রাথমিক পর্যায়ে এ-জাতীয় কল্পনার অন্তত মূল কাঠামোটুকু সার্বভৌম এবং অনিবার্যও।
আমরা ইতিপূর্বেই দেখেছি, প্রাচীন চীন এবং প্রাচীন মিশর ও মেসোপটেমিয়াতেও বিশ্বসৃষ্টিকে নর-নারীর মিলন-প্রসূত হিসেবেই বোঝবার চেষ্টা করা হয়েছিলো এবং অধ্যাপক জর্জ টম্সন দেখিয়েছেন সে-চিন্তার বীজ আদিম সমাজের মধ্যেই নিহিত রয়েছে।
দুঃখের বিষয় আদিম সমাজের চিন্তাচেতনার দিক থেকে সাংখ্যের উৎসকে বোঝবার চেষ্টা আধুনিক বিদ্বানদের মধ্যে দেখা যায় না। ফলে সাংখ্যের উৎপত্তি-প্রসঙ্গে তারা যে-মতবাদগুলি প্রণয়ন করেছেন সেগুলি ঐতিহাসিকভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আমরা এবার সংক্ষেপে সেই মতবাদগুলি বিচার করবো।
সাংখ্যের উৎস-প্রসঙ্গে আধুনিক বিদ্বানের যে-সব মতবাদ রচনা করেছেন তা নিয়ে আলোচনা তোলবার আগে আমাদের পক্ষে বলে নেওয়া প্রয়োজন, এ-বিষয়ে ঐতিহাসিক তথ্য বলতে ঠিক কী পাওয়া যায়, কিংবা ঠিক কোন ধরনের মালমশলার সাহায্যে আধুনিক বিদ্বানেরা তাদের ওই মতবাদগুলিকে নির্মাণ করবার চেষ্টা করে থাকেন।
প্রথমত, মনে রাখা দরকার, সাংখ্যদর্শনের নিজস্ব পুঁথিপত্র বলতে সত্যিই যৎসামান্য এবং সাংখ্যের প্রাচীনত্বের তুলনায় এই পুঁথিগুলি নেহাতই অর্বাচীন। মূল পুঁথি বলতে দুটি। এক- ঈশ্বরকৃষ্ণের সাংখ্যকারিকা- তাতে মোট ৭২টি শ্লোক পাওয়া যায়। দুই- সাংখ্য-প্রবচন-সূত্র।
তাছাড়া, উপনিষদাদি প্রাচীন সাহিত্যে সাংখ্য বা অন্তত সাংখ্যের মূল পরিভাষার উল্লেখ পাওয়া যাচ্ছে- এই জাতীয় উল্লেখ থেকেই কয়েকজন আধুনিক বিদ্বান অনুমান করছেন যে, সাংখ্যের আদিরূপটিকে ওই উপনিষদাদি গ্রন্থ থেকেই অনুমান বা পুনর্গঠন করতে হবে। অতএব, সাংখ্যের নিজস্ব সাহিত্যের বাইরে সাংখ্যের বা সাংখ্য-দর্শনের মূল তত্ত্বগুলির পরিচয় প্রধানত কোথায় কোথায় পাওয়া যায় তা এখানে উল্লেখ করা বাঞ্ছনীয় হবে।
যদিও এই সাংখ্যপ্রবচন-সূত্রকে কপিলের নিজস্ব রচনা বলেই উল্লেখ করা হয় তবুও আধুনিক বিদ্বানেরা ও নিঃসন্দেহেই প্রমাণ করেছেন যে, এই সূত্রগুলি নেহাতই অর্বাচন- আনুমানিক পঞ্চদশ শতাব্দীতে রচিত। তুলনায়, ঈশ্বরকৃষ্ণের কারিকা নিশ্চয়ই প্রাচীনতর- আনুমানিক দ্বিতীয় শতাব্দীর রচনা।
ঈশ্বরকৃষ্ণের কারিকার উপর দুটি খুব নামকরা ভাষা আছে। এক, গৌড়পাদের ভাষা- আনুমানিক অষ্টম শতাব্দীতে রচিত। দুই, বাচস্পতিমিশ্রের সাংখ্যতত্ত্বকৌমুদী- আনুমানিক নবম শতাব্দীতে রচিত।
সাংখ্য-প্রবচন-সূত্রের উপর সবচেয়ে বিখ্যাত ভাষ্য বিজ্ঞানভিক্ষুর সাংখ্য-প্রবচন-ভাষ্য- অনুমানিক ষোড়শ শতাব্দীতে রচিত। এই সাংখ্য-প্রবচন ভাষা, এমন কি সাংখ্য-প্রবচন-সূত্রও- যে সাংখ্য-দর্শনের মূল তত্ত্বগুলিকে অত্যন্ত প্রকটভাবে বিকৃত করেছে সে-বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই; আমরা একটু পরে তার আলোচনা তুলবো।
আপাতত এইটুকু কথাই পর্যাপ্ত হবে যে, সাংখ্য-প্রবচন-সূত্র বা বিজ্ঞানভিক্ষুর ভাষা থেকে সাংখ্যের আদিরূপটিকে সংগ্ৰহ করা সম্ভব নয়।
সাংখ্যের নিজস্ব সাহিত্য বলতে বাকি থাকে ঈশ্বরকৃষ্ণের কারিকা। কিন্তু, এ-কারিকাও যদি দ্বিতীয় শতাব্দীর রচনা হয় তাহলে তার মধ্যেও সাংখ্যের আদি-অকৃত্রিম রূপটির পরিচয় পাবার সম্ভাবনাও খুব বেশি নয়; কেননা, এ-বিষয়ে কোনো রকম সন্দেহের অবকাশই থাকতে পারে না যে, সাংখ্য-দর্শন অন্তত সনতারিখের দিক থেকে অনেক অনেক পুরোনো।
এ-কথার পক্ষে নানান রকম প্রমাণ রয়েছে। যেমন মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী বলছেন, “কৌটিল্য তিনটি মাত্র দর্শনের উল্লেখ করেন- সাংখ্য, যোগ ও লোকায়ত; কৌটিল্য ২৩০০ বৎসর পূর্বের লোক”। এবং “বৌদ্ধধর্ম সাংখ্যমত হইতে উৎপন্ন হইয়াছে, এ-কথা অশ্বঘোষ একপ্রকার বলিয়াই গিয়াছেন। বুদ্ধদেবের গুরু আডার কলম উদ্রক দু’জনেই সাংখ্যমতাবলম্বী ছিলেন”। অধ্যাপক রিচার্ড গার্বে[৭১৮] এমনকি অথৰ্ববেদ-এর মধ্যেও সাংখ্যের উল্লেখ খুঁজে পাচ্ছেন।
তাছাড়া, উপনিষদাদি প্রাচীন সাহিত্যে সাংখ্য বা অন্তত সাংখ্যের মূল পরিভাষার উল্লেখ পাওয়া যাচ্ছে- এই জাতীয় উল্লেখ থেকেই কয়েকজন আধুনিক বিদ্বান অনুমান করছেন যে, সাংখ্যের আদিরূপটিকে ওই উপনিষদাদি গ্রন্থ থেকেই অনুমান বা পুনর্গঠন করতে হবে। অতএব, সাংখ্যের নিজস্ব সাহিত্যের বাইরে সাংখ্যের বা সাংখ্য-দর্শনের মূল তত্ত্বগুলির পরিচয় প্রধানত কোথায় কোথায় পাওয়া যায় তা এখানে উল্লেখ করা বাঞ্ছনীয় হবে।
উপনিষদে সাংখ্যের উল্লেখ হিসেবে আধুনিক বিদ্বানের প্রধানত নিম্নোক্ত নজিরগুলির প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চান-
কঠোপনিষৎ- ১,৩-১০ও১১।।২,৩-৭ও৮
শ্বেতাশ্বতরোপনিষং- ১,-৮ও১০।।৩-১২।।৪,-৫ও১০।।৫-২,৭ও৮।।৬,-১০,১৩ও১৬।।
প্রশ্নোপনিষৎ- ৪,৮।।
মৈত্রায়ণী উপনিষৎ- ২,৫।।৩,২-৫।।৪,৩।।৫,৩।।৬:৫,১০,১৯,২৮,৩০,৩৪,।।৭,১।।
এ-ছাড়া অবশ্যই মহাভারতের মধ্যে, বিশেষত শ্রীমদ্ভগবদগীতায়, সাংখ্যের সুদীর্ঘ উল্লেখ রয়েছে। এবং অধ্যাপক সুরেন্দ্রনাথ দাসগুপ্ত বলছেন, চরকসংহিতায় সাংখ্যের যে-প্রাচীনতর রূপটির পরিচয় পাওয়া যায়, আধুনিক বিদ্বানেরা, দুঃখের বিষয়, তার প্রতি উপযুক্ত মনোযোগ দেন না।
দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত হলো, রিচার্ড গার্বে প্রমুখ কোনো কোনো আধুনিক গবেষক যেমন বলছেন, বেদ-বহির্গত মানুষদের চিন্তা-চেতনার মধ্যেই এ-দর্শনের উদ্ভব হয়েছিলো। উপনিষদের মধ্যেই সাংখ্য-দর্শনের বীজ আবিষ্কার করতে হলে এই উভয় সিদ্ধান্তকেই কেন পরিহার করা প্রয়োজন তার আলোচনা দীর্ঘ করবার দরকার পড়ে না।
আমাদের মন্তব্য হলো, চরকসংহিতার সাক্ষ্য অবশ্যই মূল্যবান; কিন্তু এই প্রসঙ্গেই অধ্যাপক সুরেন্দ্রনাথ দাসগুপ্ত- তথা আধুনিক বিদ্বানদের মধ্যে প্রায় সকলেই- অপেক্ষাকৃত অনেক বেশি মূল্যবান সাক্ষ্যের প্রতি কিছুটা যেন উদাসীন। সেটি হলো, বেদান্তসূত্র। অধ্যাপক সুরেন্দ্রনাথ দাসগুপ্তের কাল-নির্ণয় অনুসারেও এই ব্রহ্মসূত্র খৃস্টপূর্ব ২০০-র পরে রচিত নয়; অপরপক্ষে চরকসংহিতা ৭৮ খৃস্টাব্দে রচিত।
কিন্তু শুধুমাত্র এই সনতারিখের প্রাচীনত্বই নয়, আমরা একটু পরেই দেখাবার চেষ্টা করবো যে, এই ব্রহ্মসূত্রের সাক্ষ্যকে অগ্রাহ্য করেছেন বলেই আধুনিক বিদ্বানের একটি মূল ভ্রান্তির বশবর্তী হয়েছেন। সে-ভ্রান্তি হলো, উপনিষদে সাংখ্যের বা সাংখ্য-দর্শনের তত্ত্বগুলির নাম-উল্লেখ থেকেই তারা কল্পনা করেছেন যে, সেখানেই সাংখ্য-দর্শনের প্রাচীনতর রূপটির পরিচয় পাওয়া যেতে পারে।
অথচ ব্রহ্মসূত্রের সাক্ষ্যকে অগ্রাহ্য না করলে তারা স্পষ্টষ্ট দেখতে পেতেন যে, বাদরায়ণের মতে উপনিষৎ বা বেদান্তের প্রধানতম প্রতিপক্ষ বলতে এই সাংখ্যদর্শনই অতএব উপনিষদে সাংখ্যের উল্লেখগুলি সাংখ্য-দর্শনের ব্যাখ্যা বা বর্ণনা নয়- তার বদলে আদি-সাংখ্যের খণ্ডন-প্রচেষ্টাই।
অতএব, ব্রহ্মসূত্র থেকে সাংখ্যের প্রতি বেদান্ত বা উপনিষদের ভঙ্গিটিকে ভালো করে বুঝে নিয়ে তারপর উপনিষদের ওই অংশগুলির ব্যাখ্যা খোঁজা প্রয়োজন। আমরা পরে প্রধানত সেই পদ্ধতিই অবলম্বন করে অগ্রসর হবার চেষ্টা করবো।
মোটের উপর এই হলো সাংখ্য-দর্শনের আদিরূপকে পুনর্গঠন করবার মালমশলা। এগুলির কথা মনে রেখে এবার আধুনিক বিদ্বানদের সিদ্ধান্তগুলি পর্যালোচনা করা যাক।
অধ্যাপক ওল্ডেনবার্গ(৭২০) বলছেন, উপনিষদের মধ্যে- বিশেষত কঠ এবং শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের কোনো কোনো উক্তির মধ্যেই- সাংখ্য-দর্শনের বীজ আবিষ্কার করা যায়। অতএর তার মতে, এ-বিষয়ে দুটি প্রচলিত সিদ্ধান্ত বর্জন করা প্রয়োজন। প্রথম সিদ্ধান্ত হলো, কপিল নামের জনৈক আদি-বিদ্বানই সাংখ্য-দর্শন প্রবর্তন করেছিলেন।
দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত হলো, রিচার্ড গার্বে প্রমুখ কোনো কোনো আধুনিক গবেষক যেমন বলছেন, বেদ-বহির্গত মানুষদের চিন্তা-চেতনার মধ্যেই এ-দর্শনের উদ্ভব হয়েছিলো। উপনিষদের মধ্যেই সাংখ্য-দর্শনের বীজ আবিষ্কার করতে হলে এই উভয় সিদ্ধান্তকেই কেন পরিহার করা প্রয়োজন তার আলোচনা দীর্ঘ করবার দরকার পড়ে না।
কিন্তু প্রশ্ন ওঠে, অন্যান্য প্রাচীন রচনায় সাংখ্যের যে-পরিচয় পাওয়া যায় তার সঙ্গে কঠ এবং শ্বেতাশ্বতর উপনিষদে পাওয়া সাংখ্য-দর্শনের সংস্করণটির মিল আছে কিনা? যদি না-থাকে তাহলে সেই অমিলের ব্যাখ্যা কী?
তিন- প্রাক্-ক্লাসিক্যাল সাংখ্য- অর্থাৎ কিনা, সাংখ্যের সেই আদি-রূপ, যার সঙ্গে বৈদান্তিক চিন্তাধারার সংমিশ্রণ হবার ফলেই শেষ পর্যন্ত ওই “এপিক সাংখ্য” বা সাংখ্যের শ্রীমদ্ভগবদগীতা সংস্করণটির উদ্ভব হয়েছিলো। জ্যাকবির কাল-নির্ণয় অনুসারে, এই প্রাক্-ক্লাসিক্যাল বা আদি-সাংখ্যের যুগ হলো খৃস্টপূর্ব ৮০০; তারপর, খৃস্টপূর্ব ৫০০ বরাবর তা ক্লাসিক্যাল-সাংখ্যের রূপ পরিগ্রহ করেছে।
অধ্যাপক ওল্ডেনবার্গ বলেন, শ্রীমদ্ভগবদগীতায় এবং ঈশ্বরকৃষ্ণের কারিকায় সাংখ্যের যে-রূপকে আমরা দেখতে পাই তার সঙ্গে কঠ ও শ্বেতাশ্বতর-তে পাওয়া রূপটির বৈষম্য আছে। এই বৈষম্যের ব্যাখ্যা হলো, কঠ ও শ্বেতাশ্বতর-র সংস্করণটিই সাংখ্যের আদি-সংস্করণ; উত্তরকালে দুটি স্বতন্ত্র পথে বিকশিত হতে হতে গীতায় ও কারিকায় সাংখ্য দুটি স্বতন্ত্র মূর্তি, ধারণ করেছে।
জে, ডাহলম্যান-এর(৭২১) মতে সাংখ্যের আদিরূপটিকে ঔপনিষদিক ঐতিহ্যের মধ্যেই খুঁজে পাওয়া যায়; কিন্তু সাংখ্যের এই ঔপনিষদিক সংস্করণটির সঙ্গে গীতায় পাওয়া সংস্করণটির অমিল নেই। অতএব উত্তরকালে সাংখ্যের বিকাশকে দুমুখে মনে করবার কোনো কারণ নেই। উপনিষদ আর গীতায় সাংখ্যের যে-পরিচয় পাওয়া যায় তাই উত্তরকালে পরিবর্তিত হয়ে কারিকার সাংখ্যে পরিণত হয়েছে।
ডাহলম্যানের সিদ্ধান্তের সঙ্গে নানাবিষয়ে মতান্তর থাকলেও অধ্যাপক বেলভেলকার ও রানাডে[৭২২] উপরোক্ত বিষয়ে মোটের উপর তাঁর সঙ্গে একমত। অর্থাৎ, উপনিষদ ও গীতায় সাংখ্যের যে-পরিচয় পাওয়া যায় তার মধ্যে মূলতঃ কোনো পার্থক্য নেই এবং এই পরিচয়ই হলো সাংখ্যের আদি-অকৃত্রিম পরিচয়।
অবশ্যই, এ-পরিচয়ের প্রাচীনতম নিদর্শন পাওয়া যাচ্ছে কঠ এবং শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের মধ্যে। অতএব, অধ্যাপক বেলভেলকার ও রানাডে সিদ্ধান্ত করছেন, “ওল্ডেনবার্গ যখন কঠ ও শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের মধ্যে সাংখ্যের উৎস অনুসন্ধান করেন তখন আমরা মোটের উপর তার সঙ্গে একমত হই।”
ডক্টর ই. এইচ. জনস্টন[৭২৩] “প্রাচীন সাংখ্য” নামের বইতে সাংখ্যের উৎপত্তি সংক্রান্ত সমস্যার নতুন করে আলোচনা তুলেছেন। যদিও তিনি অধ্যাপক ওল্ডেনবার্গ-এর মতো শুধু কঠ এবং শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের মধ্যেই সাংখ্যের সূত্রপাত আবিষ্কার করতে রাজি নন, তবুও তিনি মোটের উপর ঔপনিষদিক সাহিত্যের মধ্যেই এ-সূত্রপাত দেখতে চান: কেবল শ্বেতাশ্বতর ও কঠ উপনিষদের বদলে তিনি বৃহদারণ্যক, ছান্দোগ্য এবং প্রশ্ন উপনিষদের সাক্ষ্যগুলির উপর বেশি গুরুত্ব আরোপ করতে চান।
আধুনিক বিদ্বান-মহলে উপনিষদ-সাহিত্যের মধ্যেই সাংখ্যের উৎস আবিষ্কার করবার আর একটি উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত হলো এ-বিষয়ে শ্রীযুক্ত জ্যাকবির[৭২৪] রচনাবলী।
অন্যান্য কয়েকজন আধুনিক বিদ্বানের মতো জ্যাকবিও মনে করেন যে, সাংখ্য-দর্শনের উৎপত্তি বৌদ্ধধর্মের চেয়েও প্রাচীন এবং গীতায়- বা মহাভারতে- সাংখ্য-দর্শনের যে-পরিচয় পাওয়া যায় তার মধ্যে আদি অকৃত্রিম সাংখ্য-দর্শনের সঙ্গে বেদান্ত-দর্শনের সংমিশ্রণ চোখে পড়ে। তাহলে, প্রশ্ন ওঠে, সেই আদি-সাংখ্যের রূপ কী?
জ্যাকবি এখানে তিনটি পারিভাষিক শব্দ ব্যবহার করেছেন। এক- এপিক সাংখ্য- অর্থাৎ কিনা, মহাভারতে সাংখ্য-দর্শনের যে-সংস্করণটির পরিচয় পাওয়া যায়। দুই- ক্লাসিক্যাল সাংখ্য- অর্থাৎ কিনা, ঈশ্বরকৃষ্ণের কারিকায় সাংখ্য-দর্শনের যে-সংস্করণটির পরিচয় পাওয়া যায়।
তিন- প্রাক্-ক্লাসিক্যাল সাংখ্য- অর্থাৎ কিনা, সাংখ্যের সেই আদি-রূপ, যার সঙ্গে বৈদান্তিক চিন্তাধারার সংমিশ্রণ হবার ফলেই শেষ পর্যন্ত ওই “এপিক সাংখ্য” বা সাংখ্যের শ্রীমদ্ভগবদগীতা সংস্করণটির উদ্ভব হয়েছিলো। জ্যাকবির কাল-নির্ণয় অনুসারে, এই প্রাক্-ক্লাসিক্যাল বা আদি-সাংখ্যের যুগ হলো খৃস্টপূর্ব ৮০০; তারপর, খৃস্টপূর্ব ৫০০ বরাবর তা ক্লাসিক্যাল-সাংখ্যের রূপ পরিগ্রহ করেছে।
ওই প্রাক্-ক্লাসিক্যাল-সাংখ্য সম্বন্ধে জ্যাকবির কয়েকটি মন্তব্য অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক। যেমন তিনি বলছেন, এই আদি-সাংখ্যের বক্তব্যটা উত্তরকালের মতো মোটেই অধিবিদ্যামূলক ছিলো না- জ্ঞানের বদলে কর্মের উপরই প্রধান গুরুত্ব দেওয়া হতো এবং মার্জিত দার্শনিক-মহলের পরিবর্তে এই সাংখ্যের উপদেশ জনসাধারণের উদ্দেশ্যেই যে প্রচারিত হতো তা অনুমান করবারও যথেষ্ট কারণ আছে।
এবং আমরা যদি এই বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে কোনো একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কেই গোড়ার মতো সমর্থন করবার চেষ্টা না করি- যদি আমরা নৈর্ব্যক্তিকভাবে এই সম্প্রদায়গুলির যুক্তি ও উদ্ধৃতিকে বিচার করতে রাজি হই- তাহলে আমাদের পক্ষে এর মধ্যে কোনো একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কেই বৈদান্তিক চিন্তাধারার একমাত্র পরিবাহক বলে ঘোষণা করা উচিত হবে না।
জ্যাকবির এ-জাতীয় মন্তব্যের তাৎপর্য কেন গুরুত্বপূর্ণ সে-কথা পরে বোঝা যাবে। আপাতত প্রশ্ন হলো, তিনি যাকে ওই প্রাক্-ক্লাসিক্যাল বা আদি-সাংখ্য বলে উল্লেখ করতে চান তার পরিচয় কোথায় পাওয়া যাবে? উত্তরে জ্যাকবি বলছেন, উপনিষদ-সাহিত্যের মধ্যেই-
তবে তা শ্বেতাশ্বতর বা কঠ উপনিষৎ নয়, তার বদলে ছান্দোগ্য-উপনিষদের ষষ্ঠাধ্যায়ের দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ খণ্ডের মধ্যে, যেখানে উপদেশ দেওয়া হয়েছে যে, সৎস্বরূপ থেকে তেজ, অপ, ও অন্নের স্মৃষ্টি হরেছিলো, এই আদি দেবত্রয়ের মিশ্রণেই জগদ্যুৎপত্তি হয়েছিলো অতএব অগ্নি সূর্যাদি সমুদয় বস্তুতে আদি দেবত্রয়ের অবস্থিতি আছে।
তাহলে, আধুনিক বিদ্বান-মহলে এই হলো একজাতীয় সিদ্ধান্ত এবং এ-জাতীয় সিদ্ধান্তের মূল কথা হলো, ঔপনিষদিক সাহিত্যের মধ্যেই সাংখ্যের বীজ খুঁজে পাওয়া সম্ভব- যদিও অবশ্য ঠিক কোন উপনিষদের ঠিক কোন্ অংশের মধ্যে এই বীজ লুকোনো আছে, সে-প্রশ্নে উক্ত বিদ্বানের একমত নন।
কিন্তু এ-জাতীয় সিদ্ধান্ত স্বীকারযোগ্য হতে পারে না। ঔপনিষদিক সাহিত্যের মধ্যেই সাংখ্য-দর্শনের বীজ অন্বেষণ করা নিষ্ফল প্রচেষ্টায় পর্যবসিত হতে বাধ্য। এ-মন্তব্যের চূড়ান্ত প্রমাণ অবশ্য ওই ঔপনিষদিক সাহিত্যের আভ্যন্তরীণ সাক্ষ্যই।
কিন্তু সে-সাক্ষ্য বিচার করবার আগে আমরা বলতে চাই, ওই আধুনিক বিদ্বানের সাংখ্যের আদিরূপ সন্ধানের সময় এ-বিষয়ে বাদরায়ণের ব্রহ্মসূত্রের অত্যন্ত মূল্যবান ইংগিতগুলিকে অগ্রাহ্য করেছেন বলেই উপনিষদের মধ্যে কোথাও কোথাও সাংখ্য-দর্শনের পরিভাষা ব্যবহৃত হতে দেখে ভ্রান্তভাবে কল্পনা করেছেন যে, তার মধ্যেই প্রকৃত সাংখ্য-দর্শনের বীজ লুকোনো রয়েছে।
তাই, উপনিষদের এই অংশগুলিকে বিশ্লেষণ করবার আগে আমরা এ-বিষয়ে বেদান্তসূত্র বা ব্রহ্মসূত্রের মূল্যবান ইংগিতগুলির উল্লেখ করবো।
প্রথমত, এ-বিষয়ে নিশ্চয়ই কোনো সন্দেহের অবকাশ থাকতে পারে না যে, বাদরায়ণের ব্রহ্মসূত্রের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো ঔপনিষদিক বা বৈদান্তিক চিন্তাধারাকেই সুসংহত ও সুসম্বদ্ধভাবে প্রকাশ করা। অতএব বলা যায় যে, উপনিষদের মূল দার্শনিক তত্ত্বের মুসংহত পরিচয় আমরা বাদরায়ণের ব্রহ্মসূত্রের মধ্যেই খুঁজে পাবো।
এই উক্তির বিরুদ্ধে আপত্তি তুলে কেউ বলতে পারেন, উত্তরকালে বিভিন্ন বৈদান্তিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে এই ব্রহ্মসূত্রের বিভিন্ন ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে এবং ব্যাখ্যাকারদের মধ্যে প্রত্যেকেই মূল উপনিষদের নজির দেখিয়ে প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে, তার নিজস্ব ব্যাখ্যাটিই শ্রুতিসঙ্গত।
এবং আমরা যদি এই বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে কোনো একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কেই গোড়ার মতো সমর্থন করবার চেষ্টা না করি- যদি আমরা নৈর্ব্যক্তিকভাবে এই সম্প্রদায়গুলির যুক্তি ও উদ্ধৃতিকে বিচার করতে রাজি হই- তাহলে আমাদের পক্ষে এর মধ্যে কোনো একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কেই বৈদান্তিক চিন্তাধারার একমাত্র পরিবাহক বলে ঘোষণা করা উচিত হবে না।
(চলবে…)
<<সাংখ্য-দর্শনের উৎস : কিস্তি দ্বিতীয় ।। সাংখ্য-দর্শনের উৎস : কিস্তি চতুর্থ>>
……………………….
আরও পড়ুন-
সাংখ্য-দর্শনের উৎস : কিস্তি প্রথম
সাংখ্য-দর্শনের উৎস : কিস্তি দ্বিতীয়
সাংখ্য-দর্শনের উৎস : কিস্তি তৃতীয়
সাংখ্য-দর্শনের উৎস : কিস্তি চতুর্থ
সাংখ্য-দর্শনের উৎস : কিস্তি পঞ্চম
সাংখ্য-দর্শনের উৎস : কিস্তি ষষ্ঠ
সাংখ্য-দর্শনের উৎস : কিস্তি সপ্তম
………………….
লোকায়ত দর্শন (২ম খণ্ড- বস্তুবাদ)- দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়।
……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….
……………..
৬৯৪. সাংখ্যকারিকা ২১, গৌড়পাদভাষ্য।
৬৯৫. বিশ্বকোষ ৭:৫০৭।
৬৯৬. হরপ্রসাদ শাস্ত্রী- বৌদ্ধধর্ম ৩৭ ৷
৬৯৭. H. Zimmer PI 282–সাংখ্যকারিকাকে লেখক আরো পরে (পঞ্চম শতাব্দীর মাঝামাঝি ) রচিত বলে বিবেচনা করেন। মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রীও (বৌদ্ধধর্ম ৩৮) একই মত পোষণ করেন।
৬৯৮. সাংখ্যকারিকা ৭০।
৬৯৯. ঐ ৭১।
৭০০. শঙ্করাচার্য- ব্রহ্মসূত্রভাষ্য ২.৪.৯।
৭০১. S. N. Dasgupta HIP 1:213.
৭০২. S. K. Belvalkar & R. D. Ranade HIP 2:412.
৭০৩. Ibid. 2:413f.
৭০৪. H. H. Wilson SK 160.
৭০৫. P. B. Chakravarti ODSST দ্রষ্টব্য I
৭০৬. বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়- রচনাবলী (সাহিত্য-সংসদ ) ২:২২২।
৭০৭. মণীন্দ্রমোহন বস্তু- সহজিয়া সাহিত্য ৫২ ৷
৭০৮. উমেশচন্দ্র ভট্টাচার্য- ভারতদর্শনসার ১৪৯-৫০।
৭০৯. S. K. Belvalkar & R. D. Ranade op. cit. 2:428.
৭১০. ব্রহ্মসূত্রভাষ্য ২.২.৭। নিয়োস্থত তৰ্জমা কালীবর বেদান্তবাগীশ ২:১৪০।
৭১১. ERE 11:191.
৭১২. P. R. T. Gurdon K xix-xx.
৭১৩. G. Thomson SAGS 153.
৭১৪. K. Marx. & F. Engels C 210.
৭১৫. ERE 6:706.
৭১৬. R. Garbe SPB Preface ix.
৭১৭. হরপ্রসাদ শাস্ত্রী- বৌদ্ধধর্ম ৩৭।
৭১৮. S. K. Belvalkar & R. D. Ranade op cit. 2:415.
৭১৯. S.N. Dasgupta op. cit. 1:213.
৭২০. S. K. Belvalkar & R. D. Ranade op. cit. 2:418f.
৭২১. Ibid. 2:420f.
৭২২. Ibid. 2:426f.
৭২৩. E. H. Johnston Es.
৭২৪. S. K. Belvalkar & R. D. Ranade op cit. 2:416.
৭২৫. ব্রহ্মসূত্রভাষ ২. ১, ১২। তর্জমা- কালীবর বেদান্তবাগীশ ২:৪৭।
৭২৬. ঐ ২, ১, ১। তৰ্জমা- কালীবর বেদাস্তবাগীশ ২৮।
৭২৭. ঐ। কালীবর বেদান্তবাগীশ ২:১০।
৭২৮. R. Garbe IACOPVMCSS Preface xx-xxi.
৭২৯. H. Zimmer PI 281.
৭৩০. ব্রহ্মসূত্রভাষ্য ১. ৪.১। তর্জমা- কালীবর বেদান্তবাগীশ ১:৪৯৭।
৭৩১. P. B. Chakravarti ODSST 4.
৭৩২. Ibid.
৭৩৩. তর্জমা- কালীবর বেদাস্তবাগীশ ২:১২৩-৪।
৭৩৪. তর্জমা- কালীবর বেদান্তবাগীশ ২:১২৮।
৭৩৫. কালীবর বেদান্তবাগীশ- সাংখ্য-দর্শনম্ ২২১-২।
৭৩৬. R. Garbe SPB Preface দ্রষ্টব্য।
৭৩৭. S. N. Dasguta op. cit. 1:213.
৭৩৮. R. Hume TPU.
৭৩৯. বরং আমরা দেখাবার চেষ্টা করেছি (পৃ. ৫৩৬ ), গীতা-বর্ণিত অসুরমতের সঙ্গেই সাংখ্যের আদিরূপের সংযোগ অনুমান করা যায়। গীতার দ্বিতীয় অধ্যায়ে বর্ণিত মতটিই যদি আদি-অকৃত্রিম সাংখ্য হতো তাহলে অবশ্যই বাদরায়ণ সাংখ্য-খণ্ডনের জন্য অতো আয়োজন করতেন না।
৭৪০. ব্রহ্মসূত্রভাষ্য ২. ১. ২.।
৭৪১. R. Garbe IACOPVMCSS Preface xii.
৭৪২. F. Engels LF 19.
৭৪৩. R. Garbe op. cit. Preface xix.