-নূর মোহাম্মদ মিলু
الحمدلله رب العالمين والصلاة والسلام على سيدنا محمد رسوله الكريم
কারবালা প্রান্তরে আহলে বায়েতের লোকজন, নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ এমনকি দুধের শিশু পর্যন্ত পানির পিপাসায় ছটফট করছিল। ইয়াজিদ বাহিনী ইবনে জিয়াদের নেতৃত্বে ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা’লা আনহুর দলের লোকজনদের জন্য ফোরাতের পানি বন্ধ করে দিয়েছে। এক ফোটা পানিও যাতে আহলে বায়েত এবং নবী পরিবারের কেউ না পায় তার সব রকমের ব্যবস্থা করে রেখেছে হানাদার মুসলিম নামধারী নরাধমরা।
রাসুল এর আওলাদ ইমাম হুসাইনের নয়নের মনি শিশু আলী আজগরের জন্য পানি আনতে গিয়ে কারবালার প্রান্তরে কুখ্যাত ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে শহীদ হলেন হযরত আব্বাস আলামদার রহঃ।
রাসূলে পাক এর আওলাদের তাঁবুতে একফোঁটও পানি নেই। ছোট্ট ছোট্ট শিশুরা পানির জন্য ছটফট করছে। এমনকি পিপাসার্ত মায়েদের বুকের দুধও শুকিয়ে গেছে। শিশু আলী আজগর পানির পিপাসায় কাতরাচ্ছে। কেউবা পিপাসার যন্ত্রণায় বেহুঁশ হয়ে পরছে। এ করুণ দৃশ্য দেখে হযরত আব্বাস রহঃ আর বরদাশত করতে পারলেন না। পানির মশক হাতে নিয়ে দুর্বার গতিতে ছুটে চললেন তিনি।
ইয়াজিদ বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে ফোরাত নদী থেকে পানি ভরে কাঁধে নিলেন মশক। নিজে কিছুটা পানি পান করতে চেয়েও শিশু আজগরের তৃষ্ণার্ত মুখ এবং ইমাম হুসাইনের তৃষ্ণার্ত চেহারা মনে পড়ায় হাতের পানি পান না করে ফেলে দিলেন। এমন সময় তাঁকে হঠাৎ করেই ঘিরে ফেলল ইয়াজিদের দল। তিনি ইয়াজিদের বূহ্য ভেদ করে কিছুদূর অগ্রসর হতে পারলেও পেছন থেকে অনবরত তীর নিক্ষেপ করতে থাকে ইয়াজিদ বাহিনী।
আরো কিছুদূর অগ্রসর হওয়ার পর ইয়াজিদ বাহিনীর একজন হযরত আব্বাসের ডান হাত কেটে ফেলে। তিনি ঐ অবস্থায় মশক বাঁচিয়ে বাম হাতে নিলেন। কিন্তু ঐ জালিম তাঁর বাম হাতও কেটে নিল। তারপরও তিনি মশকের ফিতা চরম কষ্টে দাঁতে কামড়ে ধরে ছুটে চললেন ইমামের শিবিরের দিকে। মহাবীর আব্বাসের এই বীরত্ব দেখে জালিম ইয়াজিদীদের আর সহ্য হল না।
কারবালা প্রান্তরে যে স্থানে এই মহান বীর শাহাদাৎ বরণ করেছিলেন, সেখানেই তাঁকে দাফন করা হয়। ফোরাত নদীর তীরে তাঁর মাজারকে ঘিরে তৈরি হয়েছে মাসজিদে আব্বাস। যা আজো কোটি কোটি নবী-প্রেমিকের জিয়ারতের স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। যে পানির জন্যে তিনি প্রাণ দিয়েছিলেন, যে পানি ইয়াজিদী নরাধমরা পশুপাখির জন্য বৈধ করলেও নবী পরিবারের জন্য নিষিদ্ধ করেছিল, আল্লাহ পাক চাইলেই ইমাম শিবিরে সে পানি পৌঁছে দিতে পারতেন।
তারা এক সাথে ঝাঁপিয়ে পরে হযরত আব্বাসকে শহীদ করে দিল। এদিকে পানির জন্য ছটফট করতে থাকা দুধের শিশু হযরত আজগর এবং সাকীনার জন্য আর পানি নিয়ে যাওয়া হল না।
হযরত আব্বাস আলামদার রহঃ ছিলেন মওলা আলী বিন আবি ত্বালিব রাদ্বিয়াল্লাহু তা’লা আনহুমার পুত্র এবং ইমাম হুসাইনের বৈমাত্রেয় ভ্রাতা। তাঁর জন্ম ২৬ হিজরীতে। হযরত আলী তাঁকে সবার সাথে পরিচয় করে দিয়ে বলেছিলেন,
“এই হচ্ছে আব্বাস, হাশেমী বংশের চাঁদ!”
তিনি দেখতে ছিলেন অতীব সুদর্শন। জ্ঞানে এবং যুদ্ধ বিদ্যায় ছিলেন পারদর্শী। মওলা আলী নিজে তাঁকে যুদ্ধ কলাকৌশল এবং ধর্মীয় শিক্ষায় পূর্ণতা দিয়েছিলেন। হযরত আলী ছোটবেলায়ই এই মহাবীরের অনেক নিদর্শন লক্ষ্য করে নাম রেখেছিলেন আব্বাস, যার অর্থ সাহসী এবং বীর। পুরো নাম আবুল ফজল আব্বাস আলমদার ইবনে আলী রহঃ।
কারবালার যুদ্ধে মহরমের ১০ তারিখ শুক্রবার পবিত্র আশুরার দিনে তিনি ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে শাহাদাৎ বরণ করেন। ইমাম হুসাইন ও তাঁর পরিবারের প্রতি তাঁর আনুগত্য ও ভালোবাসা এতই প্রবল ছিল যে ফোরাত নদীতে নিজ হাতের তালুতে পানি ধরেও পিপাসার্ত নারী ও শিশুদের কথা মনে করে এবং বড় ভাই ইমাম হুসাইনের কথা ভেবে হাতের পানি পর্যন্ত ফেলে দেন।
যে পানির অভাবে নবী পরিবারের ছোট্ট মাসুম বাচ্চারা, নারী এবং যোদ্ধারা পিপাসায় ছটফট করে একে একে প্রাণ বিসর্জন দিচ্ছিলেন, তিনি কীভাবে নিজে সেই পানি পান করবেন?
কারবালা প্রান্তরে যে স্থানে এই মহান বীর শাহাদাৎ বরণ করেছিলেন, সেখানেই তাঁকে দাফন করা হয়। ফোরাত নদীর তীরে তাঁর মাজারকে ঘিরে তৈরি হয়েছে মাসজিদে আব্বাস। যা আজো কোটি কোটি নবী-প্রেমিকের জিয়ারতের স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। যে পানির জন্যে তিনি প্রাণ দিয়েছিলেন, যে পানি ইয়াজিদী নরাধমরা পশুপাখির জন্য বৈধ করলেও নবী পরিবারের জন্য নিষিদ্ধ করেছিল, আল্লাহ পাক চাইলেই ইমাম শিবিরে সে পানি পৌঁছে দিতে পারতেন।
আহলে বায়েতের ভালোবাসার প্রতিদান আলাহ পাক এভাবেই দিয়ে থাকেন। সমগ্র জগতবাসীর জন্য এ এক অসীম কারামত এবং নবীদুশমনদের জন্য এ এক বড় শিক্ষণীয় ব্যাপার যদিও তারা কোন কিছু থেকেই শিক্ষা গ্রহণ করে না। কারণ আল্লাহ পাক তাদের অন্তরকে হেদায়েত থেকে দূরে রেখেছেন। তাদেরকে করে দিয়েছেন অন্ধ এবং বধির। ফলে তারা দেখেও দেখে না, শুনেও শুনে না।
যেমনটি তিনি করেছিলেন শিশু ইসমাইল আঃ এর পদতলে পবিত্র জমজমের ফোয়ারা প্রবাহিত করে। যেমনটি করেছিলেন তাবুক অভিযানসহ অসংখ্য ঘটনায়। পানির কষ্ট এবং নিষ্ঠুরতার মধ্য দিয়ে ইমাম পরিবার একমাত্র ইসলামের সত্যকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য নিজেদের জীবন অকাতরে বিলিয়ে দিয়ে আমাদের সামনে প্রমাণ রেখে গেলেন, “শির দেগা, নেহি দেগা আমামা!”
আল্লাহ পাক যদি সেদিন এভাবে নবী-পরিবারের জীবন এবং ইজ্জতের বিনিময়ে ইসলামকে পুনরুজ্জীবিত না করতেন, তাহলে আজ অনেকেই নবী-পরিবারকে নিয়ে কটাক্ষ করতে দ্বিধা করত না। কিন্তু আল্লাহ পাক আমাদের জন্য তাঁর প্রিয় হাবীব এর পরিবারের আত্মত্যাগের মাধ্যমে শিক্ষাদান করলেন, নবী এবং আহলে বায়তের ভালোবাসাই হল ঈমানের মূল। এ
রপরও কিছু নরাধম কারবালার নির্মম ঘটনার নায়কদের শহীদ এবং জান্নাতী হিসেবে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তাদের কাছে ইমাম হুসাইন হলেন রাজনীতির শিকার আর কুখ্যাত ইয়াজিদ হল সত্যের মাপকাঠি।
কারবালার প্রান্তরে আল্লাহ পাক পানিবঞ্চিত তৃষ্ণার্ত অবস্থায় নবী-পরিবারকে যন্ত্রণা ভোগ করতে দিলেও পানি আহরণে শহীদ আবুল ফজল আব্বাস ইবনে আলী (রহ) এর পবিত্র মাজারে নিরন্তর পানির ফোয়ারা প্রবাহিত রেখেছেন। তৃষ্ণার্ত আবুল ফজল আব্বাস ইবনে আলী (রহ) এর পিপাসা মিটানোর জন্য আল্লাহ সুবহানাহু তা’লার পক্ষে থেকে এ এক নিয়ামত। আল্লাহ এভাবেই তাঁর প্রিয় বন্ধুদেরকে সম্মানিত করে থাকেন।
আহলে বায়েতের ভালোবাসার প্রতিদান আলাহ পাক এভাবেই দিয়ে থাকেন। সমগ্র জগতবাসীর জন্য এ এক অসীম কারামত এবং নবীদুশমনদের জন্য এ এক বড় শিক্ষণীয় ব্যাপার যদিও তারা কোন কিছু থেকেই শিক্ষা গ্রহণ করে না। কারণ আল্লাহ পাক তাদের অন্তরকে হেদায়েত থেকে দূরে রেখেছেন। তাদেরকে করে দিয়েছেন অন্ধ এবং বধির। ফলে তারা দেখেও দেখে না, শুনেও শুনে না।
……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….
…………………………
আরো পড়ুন:
১০ মহররম বিশ্ব শহীদ দিবস: পর্ব-১
১০ মহররম বিশ্ব শহীদ দিবস: পর্ব-২
কারবালার আগে
কারবালায় মাওলা ইমাম হুসাইনের শেষ প্রশ্ন
কারবালায় ইমাম কাসেম (আ) মর্মান্তিক ইতিহাস
কারবালায় আব্বাস আলমদারের মাজারে অলৌকিক পানি
ঈদ-ই-রিসালাত