লায়লী মজনুর ইশকে এলাহি
ওহে দরবেশ! একবার মজনু শুনলো লায়লী গরীবদের খাদ্যদ্রব্য দান করছে। মজনুও একটি কাঠের পাত্র নিয়ে অন্যান্যদের সাথে লাইনে দাঁড়াল। সকলকেই কিছু কিছু দিয়া বিদায় করলেও লায়লী কিন্তু মজনুকে কিছুই দিল না। অধিকন্তু তাকে দেখে লায়লী ঘরের ভেতর চলে গেল। এটা দেখে মজনু মনের উল্লাসে নাচতে আরম্ভ করল।
লোকে তাকে ধিক্কার দিয়া বলল- আরে নাচার মতো কি হল? অন্যান্যকে তো কিছু কিছু দিল। আর তোমাকে দেওয়া তো দূরের কথা। তোমার চেহারা দেখেই তো বাড়ির মধ্যে চলে গেল।
মজনু বলল- তোমরা ঠিকই বলেছ। আমাকে কিছুই দেয় নাই। কিন্তু এতে সত্য যে আমার প্রেমাষ্পদ আমাকে স্বচক্ষে দেখেছি। এর চেয়ে আনন্দের বিষয় আমার আর কি হতে পারে?
অতঃপর তিনি অশ্রু সজল নয়নে বললেন- ওহে দরবেশ! যে প্রেম সাগরে নিমজ্জিত সেই এ কথার মর্মার্থ উপলব্দি করতে পারবে। যে প্রেমের দাবী করে; তার কর্তব্য আজীবন প্রেমাষ্পদের দরজায় আঘাত হানা। ক্রমাগত আঘাতের ফলে একদিন না একদিন দ্বার উন্মুক্ত হবেই আর সে তাহার আকাঙ্খিত বস্তু লাভ করবেই।
কাযি হামিদ উদ্দীন নাগুরী (রহ) তাঁহার গ্রন্থের একস্থানে লিখেছেন-
“কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দিবেন – মজনুকে হাযির কর। তাকে হাজির করা হলে বলবেন- যে সমস্ত লোক পৃথিবীতে আমার প্রেমের দাবী করত তাদেরকে মজনুর সন্মুখে উপস্থিত কর।”
ওহে দরবেশ! নেজামী গানজুরী অতি উচ্চ পর্যায়ের একজন খোদা প্রেমিক ছিলেন। আধ্যাত্মিক প্রেম সমন্ধে তিনি বহু মূল্যবান তথ্য লিখে গেছেন। একবার আমি তার মজলিশে উপস্থিত হলাম। সেখানে আরো বহু দরবেশ উপস্থিত ছিলেন।
সকলকে উপস্থিত করা হলে আল্লাহতা’য়া এরশাদ করবেন-
“যদি প্রেমের দাবী কর তবে মজনুর ন্যায় কর। যতদিন সে জীবিত ছিল লায়লী ব্যতীত অন্য কিছুতে তার ধ্যান ছিল না। মৃত্যুর সময় সে লায়লীকে স্মরণ করেই মরেছে। আজ হাশরের মাঠেও তার মুখে সেই একই কথা- লায়লী।”
অতঃপর বললেন-
আশেকদের জন্য এটাই কষ্টি পাথর। অর্থাৎ যে ব্যক্তি বন্ধুত্বের দাবী করে তার কর্তব্য সেই দাবীতে দৃঢ় থাকা। দিনের পর দিন বন্ধুদের প্রেমের বাঁধন মজবুত হওয়া ব্যতীত যেন ঢিলা না হয়।
ওহে দরবেশ! নেজামী গানজুরী অতি উচ্চ পর্যায়ের একজন খোদা প্রেমিক ছিলেন। আধ্যাত্মিক প্রেম সমন্ধে তিনি বহু মূল্যবান তথ্য লিখে গেছেন। একবার আমি তার মজলিশে উপস্থিত হলাম। সেখানে আরো বহু দরবেশ উপস্থিত ছিলেন।
মজলিশে সা’মা (ভক্তিমূলক গান) হচ্ছিল। কাওয়াল যে গান করছিল- তার দুইটি লাইন এখনো আমার স্মরণে আছে।
তার অর্থ এই যে-
“প্রকৃত প্রেম কখনো হ্রাস পায় না
আর প্রকৃত প্রেমিকও পদঙ্খলন করে না,
যেই প্রেম যর্থার্থ নয় উহাতো যুবকদের
কাম প্রবৃত্তির উপকরণ মাত্র।”
……………………………
গ্রন্থসূত্র: ইসরারুল আউলিয়া
পুন:প্রচারে বিনীত: নূর মোহাম্মদ মিলু
……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….
……………
আরও পড়ুন-
অকর্মণ্য পুরোহিতশ্রেণী : কিস্তি এক
অকর্মণ্য পুরোহিতশ্রেণী : কিস্তি দুই
তন্ত্রের অর্থ, প্রাচীনত্ব ও সম্প্রদায়-ভেদ
তন্ত্রের দেহতত্ব
লোকায়ত, তন্ত্র, সাংখ্য : অসুর-মত
……………….
আরও পড়ুন-
মানুষ কী কারণে অসুখী হয়?
বায়রনীয় অ-সুখ
বিরক্তি এবং উত্তেজনা
অবসাদ
ঈর্ষা
পাপের চেতনা
সুখলাভ কি তবু সম্ভব?
উদ্দীপনা
স্নেহ-ভালবাসা
সুখী মানুষ