ভবঘুরেকথা
ফকির লালন

-মূর্শেদূল মেরাজ

-বাজান… একটা কথা বলেন তো… চার প্রকার পুরুষের মধ্যে আমি কোনো প্রকারের মধ্যে পরি?

-বাজান জন্মান্তরের ফেরে পরে তুমি যে প্রকারের হইয়াই জন্মাও না কেনো কর্মগুণে তা পরিবর্তন করার উপায় তোমার হাতেই থাকে। তুমি নিজেরে উত্তম করবা না অধম করবা সেইটা তোমার উপর নির্ভর। স্বভাব গুণরে কর্মগুণ দিয়া পাল্টাইতে হয়।

-সেটা কিভাবে বাজান?

-বাৎসায়ন ঋষি যিনি এই ভাগ করছে সেও তো ডাকাত ছিল? তাই না? আজ কি আমরা তারে ডাকাত হিসেবে মনে রাখছি? নাকি ঋষি হিসেবে, তুমিই বলো?? সে তার কর্মগুণ দিয়া নিজ স্বভাব পরিবর্তন করতে পারলে আমরা কেন পারমু না বলো?

-বলা সহজ বাজান। কিন্তু করা কি সহজ…

-সহজ কাজ তো সবাই করতে পারে বাজান। কঠিন কাজ করাই তো সাধুর কাজ।

-আমি কি আর সাধু নাকি বাজান…

-বাজান। সবার মধ্যেই তো সাধু বাস করে। তাকে জাগায়া তোলাই তো কাজ। সাধু কোনো কিছু বাইরে থেকে নিয়ে সাধু হয় না। সবকিছু নিজের মধ্যেই থাকে। সেটা জাগায়া তুলতে হয়। তুমি যদি তোমার ভেতরের অসাধুত্বকে জাগায়া রাখো তাহলে সাধু তো ঘুমাইবোই।

অসাধুত্ব জাগায়া রাখা সহজ। এরজন্য কষ্ট করতে হয় না। তারে যত দিবা সে তত নিবো। মন্দ আচরণ, মন্দ অভ্যাস, মন্দ ভাষা, মন্দ খাবার মানে যাবতীয় মন্দরে লাই দিলেই বাড়ে। কিন্তু শুদ্ধতা এমনি এমনি আসে না। তারে জাগাইতে হইলে সকল মন্দত্বের গতি পরিবর্তন করতে হইবো।

-এসব তো অনেক পড়েছি বাজান। কিন্তু দমন তো হয় না।

-বাজান দমন করতে গেলেই বিপদ। দমন করা যাইবো না। তার গতিপথ পরিবর্তন করতে হইবো?

-মানে?

-ধরো তোমার মধ্যে ক্রোধ জাগছে। সেই ক্রোধরে তুমি দমন কইরে রাখলে। এতে কি হইবো জানো?

-কি হবে?

-ক্রোধ জমে জমে দেহের ভেতর রোগ সৃষ্টি করবো। একদিন যখন জমা সব ক্রোধ এক সাথে বের হইবে সেদিন সর্বনাশ হয়ে যাবে। তাই ষড়রিপু দমন না নিয়ন্ত্রণ করা শিখা লাগে…

-এ বিদ্যা শিখবো কেমন করে বাজান?

-এ বিদ্যা তো এক দিনে রপ্ত হয় না। দীর্ঘ সময় লাগে। তবে অসম্ভব নয়। চাইলেই শিখা যায়।

-শুরু কিভাবে করা যায়?

-অনেক ভাবেই করা যায় বাজান। তবে সবার আগে চাই বিনয় আর ভক্তি। মনে যদি বিনয় ভক্তি জন্ম নেয় তাহলে শ্রদ্ধা জন্মাইবো। প্রেমের বিকাশ ঘটবো। আর প্রেমের উদয় হলে বাকি পথটা চলা সহজ। যতদিন প্রেমের উদয় না হবে ততদিন আদব-ভক্তি-বিনয়কে শুদ্ধ করে যেতে হবে তবেই হবে বাজান। সাঁইজির একটা পদ আছে না-

শুদ্ধ প্রেম রসিক বিনে কে তারে পায়।
যার নাম আলেক মানুষ
আলেকে রয়।।

রস রতি অনুসারে
নিগূঢ় ভেদ জানতে পারে,
রতিতে মতি ঝরে
মূল খণ্ড হয়।।

নীরে নিরঞ্জন আমার
আদি লীলা করে প্রচার,
জানলে আপন জন্মের বিচার
সব জানা যায়।।

আপন আপন জন্মলতা
খুঁজো তার মূলটি কোথা,
লালন কয় পাবি সেথা
সাঁইর পরিচয়।।

ভেবেছিলাম এতো মানুষ চলে গেলো সারাদিন ধরে আজ হয়তো নিরিবিলি পরিবেশ হবে। কিন্তু আমার ধারণা ভুল প্রমাণ করতেই যেন আজ মানুষ আসতেই আছে, আসতেই আছে। সন্ধ্যার পর পর আর পা ফেলার জায়গা নেই কোথাও।

পথের পাশে দাঁড়িয়ে মানুষের এই স্রোত দেখে ধামের দিকে না এগিয়ে শ্মশানের দিকে হাঁটা দিলাম। সকল পথ দিয়েই মানুষ কেবল আসছেই। আমিই যেন উল্টো পথে যাত্রা করেছি। হাঁটতে হাঁটতে শ্মশান পেরিয়ে কখন যে নদীর পাড়ে চলে এসেছি খেয়াল করিনি।

এখানেও প্রচুর মানুষ। অনেকে এদিকটাতেও আশ্রয় নিয়েছে। নদীর পাড় ঘিরে ছোট বড় দলে মানুষ বসেছে। অনেক আসরেই সাঁইজির পদ চলছে। অস্থায়ী দোকানপাটের সংখ্যাও কম না। বিশাল বিশাল কয়েকটা নৌকা ভিড়ে আছে পাড়ে। সেগুলোতেও মানুষ আসর জমিয়েছে। একজন অসম্ভব সুন্দর গান গাইছে।

অনেকের সাথে আমিও তাদের সাথে একটু জায়গা করে নৌকার চাতালে উঠে বসলাম। একজন হাসি মুখে জায়গা করে দিয়ে আমার দিকে হাতের মন্দিরাটা এগিয়ে দিলো। নিচু স্বরে বললো- নেন দাদা বাজান।

আমি মাথা নেড়ে জানিয়ে দিলাম আমি বাজাতে জানি না। বাদ্যযন্ত্র বাজাতে না পারার কষ্ট গোপন করে হাসি হাসি মুখে গান শুনতে লাগলাম। যারা গাইছে তাদের দেখেই মনে হচ্ছে সকলেই শ্রমজীবী মানুষ। গায়ের মলিন বস্ত্র, শক্ত পেশীর উপর ফুলে উঠা শিরা উপশিরা কঠোর পরিশ্রমের সাক্ষ দিচ্ছে।

কঠিন পরিশ্রম করেও কি অপূর্ব গানের গলা ধরে রেখেছে এই মানুষগুলো। কি দরদী কণ্ঠ। মন ভরে যাচ্ছে। তাদের গাওয়া অনেক গানই আমি আগে শুনিনি।

নৌকার অন্য প্রান্তে আরেকটা দল গাইতে শুরু করলো। এই দল একটা গায় আর অন্য প্রান্তের দল আরেকটা গায়। এভাবে পাল্টি গান চলতে শুরু করলো একসময়। বিষয়টা বেশ দারুণ লাগলো। সম্ভবত এরা যে প্রশ্ন তুলছে অন্য পক্ষ গানের মধ্য দিয়ে তার উত্তর দিচ্ছে। আমি ঠিক ধরতে পারছি না।

গানের ফাঁকে মন্দিরা বাদকের সাথে একটু সক্ষতা গড়ে তোলার চেষ্টা করলাম। জানা গেল, তারা সিরাজগঞ্জ থেকে নৌকা করে লালন সাঁইজির সাধুসঙ্গে আসছে। চল্লিশ জনের বেশি মানুষ নিয়ে প্রায় চারদিন ধরে বিভিন্ন ঘাটে ঘাটে ঘুরে তারপর এসেছে।

এই নৌকা আগেও এসেছে তবে সে এই প্রথম। নাম বৈদ্যনাথ। তাদের প্রায় সকলেই কৃষিকাজ না থাকলে ঢাকা শহরে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করে। অনেকে রিকশা-ভ্যানও চালায়। মোট কথা যে কাজ পায় সেই কাজই করে। তাদের এক মহাজনের নৌকা এটা। সেই মহাজন সাঁইজির বিরাট ভক্ত।

পাগল আছে বইলাই তো দুনিয়া দেইখ্যা মজা মিলে। পাগল ছাড়া দুনিয়া অচল। লালনও তো পাগল। তুই ক। পাগল না?? আরে সে পাগল না হইলে কি আমাগো পাগল বানায়? পাগলের মেলা বসায়??? হা হা হা-

তিনি প্রতিবছর আসেন। যাদের পান সকলকেই সাথে নিয়ে আসেন। কথাগুলো টানা শোনার পর তাদের মহাজনের সাথেও পরিচয় হওয়ার বাসনা জাগলো। জানলাম, তিনি সারারাত ধামেই থাকেন ভোরে এসে নৌকায় ঘুমান। এক সময় গান থেমে আসলে শ্মশানের দিকে হাঁটা দিলাম রাসু পাগলার খোঁজে।

নৌকার অন্যরা মঞ্চের দিকে রওনা দিলো। অবশ্য বৈদ্যনাথ আমার পিছু নিলো। আমার মতো সেও ভিড়ের মধ্যে যাওয়ায় উৎসাহ দেখালো না। শ্মশানে ঢুকবার মুখেই রাসুকে পেয়ে গেলাম। সে আরো বেশ কয়েকজনকে নিয়ে আসর জমিয়ে বসেছে।

আমাকে দেখেই হাসি হাসি মুখে বললো, চইলা আয়। পাগলের মেলা বসাইছি। দেখ কত পাগল এক সাথ করছি।

আসলেই বিচিত্র সব পাগল এক সাথে হয়েছে। একজনের গায়ে চটের পোশাক, আরেকজনের পুরো গায়ে বিশাল মোটা শেখল ঝুলানো। তার সাথে বিশাল বিশাল তালা ঝুলছে। একজন মাথার জট এমনভাবে সাজিয়ে রেখেছে যে দেখে মনে হচ্ছে শিং গজিয়েছে।

তাদের পাশে জায়গা করে বসতেই একজন আমার দিকে সিদ্ধির বাঁশি এগিয়ে দিলো। রাসু পাগলা কড়া চোখে তার দিকে তাকিয়ে বললো, আরে করস কি? করস কি? বাপ আমার এসব খায় না। তোরা খা।

আমার দিকে তাকিয়ে রাসু বললো- শোন! মনে রাখবি পাগলরা হইলো জগতের আলো। পাগল না থাকলে দুনিয়া আন্ধার হইয়া যাইবো। বলতো কেন?

-কেন?

-পাগল না থাকলে সবাই তো সকালে ঘুম থেকে উঠবো। কামে যাইবো। কাম থেকে ফিরবো। বিয়া করবো। শাদী করবো। বাচ্চা পয়দা করবো। একদিন মইরা যাইবো। এইটা তো সবাই পারে। কিন্তু পাগল হইতে পারে কয়জন তুই ক?

পাগল আছে বইলাই তো দুনিয়া দেইখ্যা মজা মিলে। পাগল ছাড়া দুনিয়া অচল। লালনও তো পাগল। তুই ক। পাগল না?? আরে সে পাগল না হইলে কি আমাগো পাগল বানায়? পাগলের মেলা বসায়??? হা হা হা-

-পাগলরা সংসার করে না? জন্ম দেয় না?

-শোন পাগল হইলো সব নিয়মের বাইরে। তাগো বুঝার সাধ্য কার আছে। সেই জন্যই তো কয় পাগল। সাধন ভজন মানুষ করে কেন? করে শিশুর মতোন হওনের জন্যই তো? তাই না? আরে দেখোস না, মাইনষ্যে কয় শিশু আর পাগলের ভোট হয় না। তারা হইলো সিদ্ধান্ত নেওনের বাইরের মানুষ। তারা হইলো পবিত্র। তাগো লাজ-লজ্জা-ঘৃণা-পিত্তা নাই। বুঝিলি কিছু?

-রাসু তোমারে দেখে মনে হয় না তুমি গভীর ভাবে ভাবো। তুমি কি আসলেই পাগল? নাকি পাগলের ভাব ধরছো বলো তো?

-হা হা হা। পাগল হওন কি আর সোজা কথারে?? আমি পাগল কিন্তু মাথা খারাপ না। বুঝলি…

-হা হা হা। ভালো বলছো। পাগল কিন্তু মাথা খারাপ না।

বৈদ্যনাথের টুংটাং মন্দিরা বাজানোকে লক্ষ করে পাশের এক পাগলী গাইতে শুরু করে দিলো-

আমারে কি রাখবেন গুরু চরণদাসী।
ইতরপনা কার্য আমার ঘটে অহর্নিশি।।

জঠর যন্ত্রণা পেয়ে
এসেছিলাম কড়ার দিয়ে।
সে সকল গিয়াছি ভুলে ভবে তে আসি।।

চিনলাম না সে গুরু কি ধন
করলাম না তার সেবা সাধন।
ঘুরতে বুঝি হলো রে মন আবার চুরাশি।।

গুরুরূপ যার বাঁধা হৃদয়
শমন বলে তার কিসের ভয়।
লালন বলে মন তুই আমায় করিলি দোষী।।

গত এক বছর জীবন দা’কে যত বেশি মিস করেছি। সেই হাহাকারটা এই তিন দিনে কমেছে অনেকটাই। প্রতিবার তাকে স্মরণ হওয়ার সাথে সাথে হাহাকারের বদলে কৃতজ্ঞতা ভাব জন্মাছে। তিনি ছিলেন বলেই তো এতোগুলো মানুষের সাথে সাক্ষাৎ হচ্ছে।

সত্যিই মনে হচ্ছে আসলে আমি মানুষের সাথে সাক্ষাৎ করছি। সারাজীবন যাদের সাথে সঙ্গ করেছি তাদের কতজন প্রকৃত অর্থে মানুষ তার বিবেচনা বারবারই স্মরণে চলে আসছে। এই মানুষগুলোও দোষেগুণে সমৃদ্ধ। কিন্তু এদের মমতার জায়গাটা অনাবিল-নির্মল।

সেই ছোটবেলায় গ্রামের বাড়িতে গিয়ে এমন কিছু মানুষের সাক্ষাৎ পেয়েছিলাম। যাদের মমতা এখনো মনে পরে। কিন্তু পরবর্তিতে সেই স্মৃতি নিয়েই যখন বড় হয়ে তাদের কাছে গিয়েছি। তখনো তাদের মধ্যে মমতা পেয়েছি। কিন্তু সর্বক্ষণই মনে হয়েছে তাদের একটা সূক্ষ্ম স্বার্থ আছে তাতে।

একা পেলেই তাদের বিভিন্ন আবদার তাদের সাথে দূরত্বই সৃষ্টি করেছে। এটা সেটা তাদের দেইনি বা তাদের জন্য করিনি তা নয়। তা পেলে তাদের আনন্দ দেখে বেশ লাগতো। কিন্তু কোনো কারণে কিছু করতে না পারলে তারা যে বিষদাগার ছড়াতে শুরু করলো তার পর আর সেসবে আমাকে ভুলাতে পারেনি।

একবার অফিস বিশাল জ্বলে জড়িয়ে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলে মনে আছে নিকট আত্মীয় এমনকি ঘরের মানুষও পরের মতো আচরণ শুরু করেছিল। আশারবাণী দিয়েছে অনেকেই, কিন্তু তখন আমার ফ্ল্যাট-গাড়ি সহ কত টাকা মাসিক কিস্তি দিতে হয় সেটা তো সবারই জানা ছিল।

অফিস বন্ধ হয়ে গেলে বা চাকরি চলে গেলে কি হবে ভেবে ভেবে যখন আমি দিশেহারা, তখন খুব স্পষ্টভাবেই বুঝেছি আমি নি:স্ব হয়ে গেলে এদের অনেকেই আমার পাশে থাকবে না। যাদের ভরসা করে বেঁচে আছি তাদের আচরণের পরিবর্তন আমাকে আরো দিশেহারা করেছিল।

পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর ভেবে নিয়েছি সেসবই আমার সন্দেহপ্রবণ মনের খেলা ছিল। কিন্তু মনের খুব গোপন ঘরে একটা প্রশ্নবোধক চিহ্ন কিন্তু রয়েই গেছে। এমন একটা প্রশ্ন মনে খুব ছোট্ট আকারে থেকে গেলেও মানুষের সব কিছু থাকলেও সে নিজে জানে তার কিছুই নেই।

সাজনের বাউল মেলা পাইবা। আসল বাউল পাইবা না। আসল বাউল থাকে মনে। সাজনের বাউল থাকে পথে ঘাটে। তারা তাগো মতোন থাকুক। চিন্তা নিও না। আজ হোক কাল হোক তাদের মধ্যেও ভাব জাগবো। সাঁইজি কাউরেই ছাড় দেয় না। যার যা হিসাব তা তারে বুঝায়া দেয়।

ইস্ কি সব ভাবছি এসব সাঁইজির গ্রামে বসে? না আর নেতিবাচক কিছুই ভাবতে চাই না। বাঁচতে চাই জীবনের উল্লাসে। কৃতজ্ঞতা জীবন দা’ তুমি এক নতুন জীবনের খোঁজ দিয়েছ বলে। শত-সহস্র কোটি সালাম তোমাকে জীবন দা’। যেখানেই থাকো ভক্তি নিও। আর যদি এখানে থাকো দেখা দিও।

জীবন দা’র দেখা না পেলেও মধ্যরাতে পরিচয় হলো মিলন নামে এক গায়কের সাথে। কচকচা নতুন বানানো বাউলের পোশাক পরা যুবকটি কয়েকজনকে নিয়ে আড্ডা দিচ্ছিল চায়ের দোকানের বাইরে। আমাকে দেখে হাসি হাসি মুখে বললো, আরে ইকবাল ভাই কেমন আছেন?

আমি হকচকিয়ে বললাম, দু:খিত ভাই আমি ইকবাল নই, আপনি মনে হয় ভুল করছেন।

যুবকটি নিজের ভুল বুঝতে পেরে বললো, ওহ্ আপনি দেখতে অনেকটা ইকবাল ভাইয়ের মতোই।

-আমি অগ্নি।

যুবকটি এবার বেশ ভাব নিয়ে বললো- আমি লালন শিল্পী মিলন। আপনি আমাকে চেনেন না? ইউটিউব খুললেই আমার গান পাবেন। আমি তো লালন গান নতুন করে গাচ্ছি। আরে অমুক যে গায় ওর গান কি হয় আপনিই বলেন? আর নাম হইলে কি হবে। আমার গান শুনবেন দেখবেন কি গাইছি।

ফেসবুকে আমার ফলোয়ারের সংখ্যা জানেন? আর ওরা তো ফেসবুকই খুলতেই পারে না। অশিক্ষিত কোথাকার। আমার তো ওসব শিল্পীর সাথে কথা বলতেই রুচিতে বাঁধে। কি আপনিই বলেন?

আমাকে কিছু বলতে হলো না। তাদের আশপাশের লোকগুলো মিলন বাউলের গুণগান গাইতে শুরু করলো। আমিও মানে মানে কেটে পরলাম। মিলন বাউল কোনো বিশেষ কেউ না। তার কথা না লিখলেও পারতাম। কিন্তু এমন বেশ কিছু মানুষের কথাই শুনেছি পাশে দাঁড়িয়ে বা পাশাপাশি হাঁটতে গিয়ে।

তাদের অনেকে হয়তো ভালো গান করে। করবারই কথা, কারণ নতুন পোশাক-পরিচ্ছদ বানিয়ে হাতে একতারা নিয়ে যখন ঘুরে বেড়াচ্ছে নিশ্চয়ই তাদের মধ্যে শিল্পত্ব আছে। তারা লালন গান করে কিন্তু তাদের মাঝে বিনয় ভক্তি নেই। আছে কেবল অহংকার।

এ কথাগুলো যখন বাজানকে বলছিলাম শেষ রাতের দিকে। তখন বাজান হাসতে হাসতে বললো-

-শোন বাজান। সাজনের বাউল মেলা পাইবা। আসল বাউল পাইবা না। আসল বাউল থাকে মনে। সাজনের বাউল থাকে পথে ঘাটে। তারা তাগো মতোন থাকুক। চিন্তা নিও না। আজ হোক কাল হোক তাদের মধ্যেও ভাব জাগবো। সাঁইজি কাউরেই ছাড় দেয় না। যার যা হিসাব তা তারে বুঝায়া দেয়।

কত মাইনষেরেই তো দেখলাম সাঁইজিরে নিয়া ব্যবসা করতে। তারা বেশি দিন সেই ভাব নিয়ে টিকতে পারে না। হয় ভাব পরিবর্তন হয় নইলে…

-নইলে কি বাজান?

-নইলের হিসাব বুঝার দরকার নাই বাজান। তারচেয়ে মন দিয়া গানটা শোন। ঐ যে মঞ্চে হইতেছে…

বিনা পাগালে গড়িয়ে কাঁচি
করছো নাচানাচি,
ভেবেছো কামার বেটারে
ফাঁকিতে ফেলেছি।।

জানা যাবে এসব নাচন
কাঁচিতে কাটবে না যখন
কারে করবি দোষী;
বোঁচা অস্ত্র টেনে কেবল
মরছো মিছামিছি।।

পাগলের গোবধ আনন্দ
মন তোমার আজ সেহি ছন্দ
দেখে ধন্দ আছি;
নিজ মরণ পাগলে বোঝে
তাও তোমার নাই বুঝি।।

কেন রে মন এমন হলি
আপন ফাঁকে আপনি প’লি
তাও তো মহাখুশি;
সিরাজ সাঁই কয় লালন রে তোর
জ্ঞান হলো নৈরাশী।।

(চলবে…)

<<লালন বলে কুল পাবি না: তিন ।। লালন বলে কুল পাবি না: পাঁচ>>

…………………………………………..
স্থিরচিত্র: ফাহিম ফেরদৌস

.…………………………………………..
আরো পড়ুন:
সিজন : এক
লালন বলে কুল পাবি না: এক
লালন বলে কুল পাবি না: দুই
লালন বলে কুল পাবি না: তিন
লালন বলে কুল পাবি না: চার
লালন বলে কুল পাবি না: পাঁচ
লালন বলে কুল পাবি না: ছয়
লালন বলে কুল পাবি না: সাত
লালন বলে কুল পাবি না: আট

সিজন : দুই
লালন বলে কুল পাবি না: এক
লালন বলে কুল পাবি না: দুই

লালন বলে কুল পাবি না: তিন
লালন বলে কুল পাবি না: চার
লালন বলে কুল পাবি না: পাঁচ
লালন বলে কুল পাবি না: ছয়
লালন বলে কুল পাবি না: সাত
লালন বলে কুল পাবি না: আট

Related Articles

2 Comments

Avarage Rating:
  • 0 / 10
  • Bappa Mandal , বৃহস্পতিবার ৩০ জুলাই ২০২০ @ ২:১৩ পূর্বাহ্ণ

    আপনিও দেখছি পাগল, নইলে পাগল খোঁজেন কেন!!!

    ৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷ চালিয়ে যান,,,,

    • ভবঘুরে , বৃহস্পতিবার ৩০ জুলাই ২০২০ @ ৩:৩৫ পূর্বাহ্ণ

      জয়গুরু

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!