ভবঘুরেকথা
লালন বলে কুল পাবি না

-মূর্শেদূল মেরাজ

গ্রাম ছেড়ে অনেকটা ফাঁকা জায়গায় গাছগাছালির মধ্যে আখড়াবাড়ি আজিজ ফকিরের। খুবই জীর্ণ অবস্থা। একটা মাঝারি আকারের মাটির ঘর। সেটাও বহু পুরানো বোঝাই যায় তার করুণ অবস্থা দেখে। এক পাশে পাটখড়ির বেড়া দেয়া রান্নার উন্মুক্ত জায়গা।

সেখানে রান্না চলছে। আরেক পাশে পাটখড়ি আর টিনের চালের লম্বা মতো একটা ঘর। সেটাই সম্ভবত আখড়া ঘর। আর এসবের মাঝে ছড়ানো একটা উঠান। সেখানে শুকনো খড়কুটো ফেলে তার উপরে কাঁথা সতরঞ্জি ইত্যাদি বিছিয়ে আসর বসানো হয়েছে।

সেখানে গোল হয়ে বসে অল্প কয়েকজন মানুষ বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে সাঁইজির পদ করছে। উপরে একটা টকটকে লাল রঙের শামিয়ানা টানানোয় পুরো বিষয়টা জমে গেছে। সিনেমায় দেখানো বাউলের বাড়ি মনে হচ্ছে। অনেকটা আর্ট ফিল্মে দেখানো কোনো দৃশ্যের মতো।

বিভিন্ন বয়সের কিছু মানুষ বসে গান শুনছে। তবে বেশিভাগ মানুষই এটা সেটা নিয়ে ব্যস্ত। এদিক সেদিক ঘোরাঘুরি করছে। মনে হলো সব মিলিয়ে গোটা ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ জনের মতো মানুষ হবে।

এদিকটায় একটু শীত শীত ভাব আছে। যদিও এ কয়দিন বেশ গরম ছিল। হয়তো গাছপালার জন্য এখানে উত্তাপটা কম। আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গান শুনছি। সুযোগ পেলে ছবি তুলছি। কেউ কেউ আমার ঘাড়ের পেছন থেকে ক্যামেররার ভেতর দিয়ে ছবি দেখবার চেষ্টা করছে।

কথা শেষ করার আগেই রাসু আমাকে প্রায় টানতে টানতে অন্ধকারের মধ্যে নিয়ে চললো। বাঁশ ঝাড়ের জঙ্গলের ভেতর দিয়ে কোথায় চলছি কে জানে। তবে খারাপ লাগছে না। অহংকার সরিয়ে রাখতে পারলে জীবন কত সহজ। তাই না? কিন্তু অহংকার কি এতো সহজে দূর করা যায়!

বিষয়টা বেশ বিরক্তকর। খুব কানের কাছে এসে তারা নানান কথা বলছে। এতে না গানে মন দেয়া যাচ্ছে। না ছবি তোলায়। অগত্যা ছবি তোলা বন্ধ করে। কাঁধের ব্যাগ থেকে নতুন কেনা কুষ্টিয়ার গামছাখানা গায়ে জড়িয়ে নিলাম। এতে কিছুট আরাম হলো। শীতের পাতলা বাতাসটা সরাসরি এখন আর গায়ে লাগছে না।

আসার পর থেকেই লক্ষ্য করছি ‘রাসু পাগলা’ ফকির বাড়িতে বেশ নেতা নেতা ভাব নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। নিজ দায়িত্বে সকল কিছু তদারকি করছে। তার একটা প্রভাব আছে সেটা বোঝা যায়। সকলেই হাসিমুখে তার কোথা শুনেছে। সেও হাসি হাসি মুখে এটা সেটা বলছে।

আমি একা দাড়িয়ে আছি। বুঝতেছি না। রাসু পাগলার দিকে যাবো নাকি বসে গান শুনবো। এসব ভাবতে ভাবতে যখন সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না। তখন একটা সময় চোখাচোখি হতে হাতের ইশারায় রাসু আমাকে ডাকলো।

কাছে যেতেই রাসু বললো- চল আজিজ ফকিরের লগে দেখা দিয়া আসি।

-উনি এখানে নাই?

-আছে আছে। হের গুরুর বাড়িতে ভক্তি দিতে গেছে।

কথা শেষ করার আগেই রাসু আমাকে প্রায় টানতে টানতে অন্ধকারের মধ্যে নিয়ে চললো। বাঁশ ঝাড়ের জঙ্গলের ভেতর দিয়ে কোথায় চলছি কে জানে। তবে খারাপ লাগছে না। অহংকার সরিয়ে রাখতে পারলে জীবন কত সহজ। তাই না? কিন্তু অহংকার কি এতো সহজে দূর করা যায়!

এই যে আমি একটা কর্পোরেট জগৎ ছেড়ে পাগলের পিছু পিছু ছুটছি, একি আমার কোনো বিশ্বাস? ভালোবাসা?? ভক্তি???

নাকি এক খণ্ড অবসরে নিছক মজা নিতে এসেছি? ইউরোপীয় বিশেষ প্রতিনিধিরা যেমন শখ করে তৃতীয় বিশ্বের গ্রাম দেখতে আসে। গ্রামের মানুষ দেখতে আসে। তাদের সাথে ঘুরে বেড়ায় কয় দিন। তাদের সাথে হাসি হাসি মুখে ছবি তোলে। তাদের বাসায় থাকে। খায়।

শেষে বাড়ি ফিরে বিশাল এক প্রোজেক্ট বানায়। ভালোবাসাকে বিক্রি করে টাকার দরে? আমিও কি তাদেরই দলে? নিজের ফায়দা লুটতে তাদের ব্যবহার করছি? এই মানুষগুলোর সরলতা নিয়ে খেলছি? নিজের অস্থিরতা দূর করার জন্য এদের ভালোবাসাকে কাজে লাগাচ্ছি??

হুট করে কি মানুষ পাল্টে যায়? মানুষ এমন করে কি পাল্টাতে পারে?? বর্তমান পরিস্থিতিতে কি মানুষ গৌতম বুদ্ধ হতে পারে?? হওয়া সম্ভব??? হুটহাট করে কি আদৌ ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে পরা যায়? অনিশ্চিত এক জীবনের দিকে?? যেখানে কেবলই শূন্যতা!!

-কি ভাবিস?

আচমকা রাসুর কথায় হুস ফিরলো। পথের শেষে আধাপাকা সমাধির সামনে এসে থেমেছি আমরা। সেখানে কিছু মানুষ ভিড় করে আছে। রাসু ঠোটে আঙ্গুল দিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে বললো। নিয়ে অপেক্ষা করছে।

আমরা অপেক্ষা করছি হয়তো আজিজ ফকিরের জন্য। বা অন্য কোনো কারণে। আমার সেসব জানতে ইচ্ছে করছে না। রাসু যে কি সব বলে চলছে সেসবও আমার কানে ঢুকছে না।

কেবল মনে হচ্ছে আমি কি এই মানুষগুলোর সাথে অভিনয় করছি? ভনিতা করছি?? ঠকাচ্ছি তাদের ভাবনাকে?? নিজেকে বড় হীন মনে হচ্ছে। মানুষগুলো জীবন দিয়ে যা বিশ্বাস করছে। আমরা ছুটির অবসরে এসে এই মানুষগুলো সাথে মিশে কি তাদের বিশ্বাসকে যাচাই বাছাই করতে চাই?

আমি সে ভাবে পাঠ্যপুস্তকের বাইরে সৃজনশীল বই পড়িনি। সেই ছোটবেলায় কিছু পড়েছিলাম। তারপর সারা জীবন ধরে কেবল যা পড়লে আখেড়ে লাভ হবে। ক্যারিয়ার ডেভলপমেন্ট হবে তাই পড়েছি। ফাঁকতালে দুই একটা বই যে পড়িনি তা নয়। কিন্তু তারও উদ্দেশ্য ছিল আসলে তাই। ক্যারিয়ার ডেভলপমেন্ট।

কোথাও বা কারো কাছে হয়তো শুনেছিলাম এই এই বই পড়লে লাভ হবে। তাই পড়া হয়েছে। অন্যান্য শিল্পের বেলাও একই কথা খাটে। টিভি সিনেমা অনেক সময় অন্যদের পাল্লায় পরে বা সময় কাটাতে দেখা হয়। কিন্তু মাথায় সব সময়ই থাকে লাভ লসের হিসাব।

বড় গাড়ি, বড় বাড়ি, বাংলো, বিদেশে টুর, দামী খাবার, দামী পোশাক, সুখের সংসার, সাচ্ছন্দ্য এর বাইরে কোনো কিছু এই কিছুদিন আগেও তো কল্পনাতেও আসতো না। মানুষ আমাকে কি ভাবে দেখবে? আমি আমাকে মানুষের কাছে কি ভাবে উপস্থাপন করবো?

এই সবই আমার ভাবনার বিষয়বস্তু। কিন্তু আজ একটা বস্তা পরিহিত পাগলের সাথে দাঁড়িয়ে এই গভীর রাতে বাঁশ ঝাড়ের মধ্যে নিজেকে ঠিক চিনতে পরছি না। বড্ড বেশি অপরিচিত লাগছে। বুঝেই উঠতে পারছি না। কোনটা আমি?

এই আমিই কি আমি?? আমি কি আজন্ম এমনই একটা মানুষ হতে চেয়েছিলাম। যেখানে মানুষ লাভের না; বরঞ্চ লোকসানে আনন্দ পায়! অপরিচিত মানুষকে আদর করে ডেকে নিয়ে আসে খাওয়াবে বলে? সেবা দিবে বলে?? নাকি সেই আমিই আমি, যে লাভ ছাড়া কোনো কিছুই করে না।

একবার এক মিটিং-এ গেছি সিডনীতে। সেখানে যেয়ে দেখি বেশিভাগই ভারতবর্ষের মানুষ। তার উপর অনেকেই কোলকাতার বাঙালী। আলাপ জমে গেলো। ব্যবসায়িক টুরটা অনেকটা ব্যক্তিগত রূপ নিলো। তাই মিটিং শেষে তারা তাদের বাঙালীয়ানা আমাকে দেখাতে লাগলো।

আমি খালি বড় বড় চোখ করে অপেক্ষায় ছিলাম আবার সেই নাচটা কখন হবে। সেই মানুষগুলো আবার কখন পর্দায় আসবে। আজও এই আলো-আধারিতে সমাধির সামনে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছে সেই মানুষগুলো বিচিত্রসব মুখোশ পরে নাচতে শুরু করেছে আমার চারপাশে। ঢোল, করতাল, কাশি বাজিয়ে আমাকে বিদ্রূপ করে বলছে, ‘ইউ ডোন্ট বিলং হেয়ার। ইউ ডোন্ট বিলং হেয়ার।’

আমি এমন ভাব করতে থাকলাম যেন আমিও ভীষণ ভালোবাসি বাঙ্গালী সংস্কৃতিকে। নিজের মুখস্থ করা কিছু কোটেশন জুড়ে দিয়ে কথাবার্তা বেশ চালিয়ে গেলাম। সেই কাজে আমি বরাবরই বেশ পটু। তাই আলাপ জমাতে সময় লাগলো না। ভাবলাম যতটা মেশা যাবে ব্যবসা পেতে ততই সুবিধা হবে।

ঘটনা প্রসঙ্গে জানতে পারলাম, তাদের একটা ফিল্ম ক্লাব আছে। সেখানে সিনেমা দেখানোর আয়োজন করা হবে। ভেবেছিলাম হিন্দি সিনেমা দেখবো বড় পর্দায়। যেহেতু আমাদের দলের সকলেই বাঙালী তাই তারা অতি উৎসাহী হয়ে। আবেগে গদগদ হয়ে বাংলা সিনেমা প্রদর্শনের ব্যবস্থা নিলো।

মনে মনে চরম বিরক্ত হলেও উপরে উপরে হাসি হাসি মুখ করে সিনেমা দেখতে বসলাম। অনেক টাকার কাজ পাওয়ার কথা। তাই তাদের খুশি করা জরুরী। তাদের হা তে হা মেলাতেই হবে। কি আর করা। সিনেমা শুরু হলো। সেই সিনেমা আবার আর্ট ফিল্ম। ভয়ে ভয়ে আছি দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে গেলে লজ্জায় পরে যাব।

টুকটাক নাক ডাকার অভ্যাস আছে। যদি তা ঘটে যায় লজ্জায় মুখ দেখানো দায় হবে। চোখ টান টান করে দেখতে হবে বলে সেই প্রস্তুতি নিয়ে বসলাম। সিনেমা শুরু হলো। পরিচালক বা সিনেমার নাম আমার কোনটাই এখন মনে নেই।

সিনেমার মধ্যে মাঝে মাঝে বেশ কিছু মানুষ মুশোখ পড়ে একটা আদিবাসী গানের সাথে ধীর লয়ে নাচছিল। বিষয়টা আমাকে এতোটাই মুগ্ধ করলো যে, না ঘুমিয়েই পুরো সিনেমাটা দেখেছিলাম। কি একটা অদ্ভুত সুর, বিচিত্র নৃত্য। আমি সিনেমার মাথামুণ্ড কিছুই দেখি নাই।

আমি খালি বড় বড় চোখ করে অপেক্ষায় ছিলাম আবার সেই নাচটা কখন হবে। সেই মানুষগুলো আবার কখন পর্দায় আসবে। আজও এই আলো-আধারিতে সমাধির সামনে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছে সেই মানুষগুলো বিচিত্রসব মুখোশ পরে নাচতে শুরু করেছে আমার চারপাশে।

ঢোল, করতাল, কাশি বাজিয়ে আমাকে বিদ্রূপ করে বলছে, ‘ইউ ডোন্ট বিলং হেয়ার। ইউ ডোন্ট বিলং হেয়ার।’

রাসু হাত ধরে ঝাকি দিলো। আমি বাস্তবতায় ফিরে আসলাম। খেয়াল করলাম সমাধি প্রাচীর থেকে কয়েকজন এগিয়ে আসছে। তারা কাছাকাছি আসতেই রাসু পাগলা হাসি হাসি মুখে এগিয়ে গিয়ে প্রবীন খিলকাধারী সাধককে ভক্তি দিলো বেশ সময় নিয়ে। ধারণা করলাম, তিনিই আজিজ ফকির।

একাহারা গড়ন। বেশ পেটানো দেহ মনে হলো। বিশাল চুল কাঁধ ছাড়িয়ে গেছে। দাঁড়িতে গিট দিয়ে গুছিয়ে রাখা। হাতে একটা আঁকাবাঁকা তেলতেলে লাঠি।

ভক্তি শেষে আজিজ ফকির আর রাসু দুইজনের চোখই ছলছল করছে। তাদের চোখের দিকে তাকিয়ে আমারো কেনো জানি চোখ ভিজে আসতে চাইছিল। সর্বশক্তিতে তা দমন করার চেষ্টা যখন করছি। তখন রাসু আমাকে দেখিয়ে বললো- ফকির এই পোলাটার কথাই কইছিলাম। পাগলা। এক্কেরে পাগলা। বুঝলা।

-বাপ আসা আর যাওয়ার পথ একটা হইলেও তার মধ্যে বিস্তর ফাঁকার। বেশিভাগ মানুষ আসে অতি যত্নে। নয় মাস মায়ের গর্ভে জলের মধ্যে ভাসতে ভাসতে। কিন্তু যওয়া অনেক কঠিন বাপ। যাওয়া অনেক কঠিন। জীবন তো সহজ না। কি ভুল বললাম বাপ?

আজিজ ফকির দুই হাতে ভক্তি দিতে দিতে বললো- বাপ চলেন আখড়ার দিকে যাই। এইখানে আপনার ঠাণ্ডা লগবে। রাসু পাগলা আপনেরে কষ্ট দিতে এতো দূরে অন্ধকারের মধ্যে নিয়া আসছে। চলেন চলেন।

-আরে না না কি যে বলেন। আমার তো সব কিছু দেখতেই ভালো লাগছে আপনাদের।

-কি যে বলেন বাপ। আপনেরা শহরের মানুষ। এসব কি আর আপনেগের ভালো লাগবে? আমরা গাওগ্রামের মানুষ।

-আমি তো আপনাদেরই দেখতে আসছি।

-এইটা হইতেছে আমার গুরুর রওজা। তিনি বছর দুয়েক হইলো দেহ রাখছেন। গুরুকর্ম করতে আসছিলাম। চলেন এইবার আখড়ার দিকে যাই।

-গুরুকর্ম কি শেষ?

-আপাতত শেষ বাপ। সাঁইজির সাধুসঙ্গ গেলো তো সবাই এই চার পাঁচদিন জাগনা। সবাই ক্লান্ত। ভাবছিলাম এইবার অনুষ্ঠান করবোই না। ইংরেজি আর বাংলা তারিখের গড়বড়ে আমার খিলকার তারিখ পইরা গেছে সাঁইজির অনুষ্ঠানের মধ্যে। কি আর করা সকলে বললো ছোট কইরা কইরা ফেলতে তাই আর কি।

-ভালোই হয়েছে। অনুষ্ঠান করছেন বলে আপনার সাথে পরিচয়ের সুযোগ হলো।

-চলেন হাঁটতে হাঁটতে কথা বলি। এই বাজানের কেউ একটা টর্চ দে। অন্ধকার বাপ দেইখা হাইটেন। গ্রামের রাস্তা তো।

-অসুবিধা নাই। আপনি ভাববেন না। আমি তো এলাম এই পথেই।

-বাপ আসা আর যাওয়ার পথ একটা হইলেও তার মধ্যে বিস্তর ফাঁকার। বেশিভাগ মানুষ আসে অতি যত্নে। নয় মাস মায়ের গর্ভে জলের মধ্যে ভাসতে ভাসতে। কিন্তু যওয়া অনেক কঠিন বাপ। যাওয়া অনেক কঠিন। জীবন তো সহজ না। কি ভুল বললাম বাপ?

-না ঠিকই তো বলেছেন। এইভাবে তো ভাবি নাই।

-রাসু আপনার কথা বলছে আমারে। মেলার সময় ভক্তদের নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। তার উপর নানা জায়গা থেকে লোকজন আসে। আপনার সাথে দেখা করার সময় পাই নাই। ক্ষমা দিবেন।

-ছি ছি। কি যে বলেন। আমিই দেখা করতাম আপনার সাথে। রাসু বললো সঙ্গে নিয়ে আসবে তাই আপনার কাছে তখন নিয়ে যায় নাই।

-ঠিক করছে রাসু আপনারে ধরে নিয়ে আসছে। নইলে আপনাগের মতো মানুষ কি আর আমাগের সঙ্গে আসে।

-কি যে বলেন সাঁইজি।

লালন সাঁইজি বলছেন-

মনের মানুষ খেলছে দ্বিদলে।
যেমন সোদামিনি মেঘের কোলে।।

রূপ নিরূপন হবে যখন
মনের মানুষ দেখবি তখন,
জনম সফল হবেরে মন
সেরূপ দেখিলে।।

আগে না জেনে উপাসনা
আন্দাজি কি হয় সাধনা,
মিছে কেবল ঘুরে মরা
মনের গোলমালে।।

সেই মানুষ চিনলো যারা
পরম মহত্ম তারা,
অধিন লালন বলে
দেখ নয়ন খুলে।।

আবৃত্তির মতো করে আজিজ ফকির লাইনগুলো বলে গেলেন। লালনের গান এভাবে আগে শুনি নাই। আমি অবশ্য লালন সাঁইজির গানের কথাগুলো বই থেকে পড়ে বুঝবার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু এতো গভীর ভাবের আবৃত্তি শুনে মনটা ভালো হয়ে গেলো।

আসলেই তো! লালনের যে গানগুলোর সুর এখন পাওয়া যায় না। সেগুলোকে এভাবে কিছু করার চিন্তা নেয়া যেতেই পারে। খারাপ হবে বলে মনে হয় না। এসব যখন ভাবতে ভাবতে কখন ফকিরের আখড়ায় চলে এসেছি খেয়াল করিনি। যাওয়ার সময় যতটা পথ মনে হয়েছিল আসার সময় পথটা কমই মনে হলো।

উঠানে উঠতেই রান্নার মৌ মৌ গন্ধে ভুলে যাওয়া খিদেটা চাগার দিয়ে উঠলো। আজিজ ফকির যেন বিষয়টা বুঝেই বললো- যান বাপ। কলতলা থেকে চোখে-মুখে জল দিয়া আসেন। একটু সেবা নিয়া নেন। অধিবাসের সেবা হইতে হইতে রাত দুইটার বেশি বাজবো।

আসলে খিদের কথাটা মনে পরার পর তা ক্রমেই বেড়ে চলছে। তাই আর কথা না বাড়িয়ে কলতলার দিকে রওনা দিলাম।

আপন সুরাতে আদম
গঠলেন দয়াময়,
নইলে কী আর ফেরেস্তাকে
সিজদা দিতে কয়।।

আল্লাহ আদম না হলে
পাপ হতো সিজদা দিলে,
শিরিক পাপ যারে বলে
এ দিন দুনিয়ায়।।

দোষে সে আদমসফি
আযাযিল হলো পাপী,
মন তোমার লাফালাফি
তেমনি দেখা যায়।।

আদমি হলে আদম চিনে
পশু কী তার মর্ম জানে,
লালন কয় আধ্যজ্ঞানে
আদম চিনলে হয়।।

আসরে গান চলছে। গানের কথার অর্থ তেমন কিছুই বুঝতে পারছি না। বোঝার চেষ্টাও অবশ্য করছি না। সুর আর ভাবেই ডুবে আছি বলা যায়। শীতটা একটু বেড়েছে। সেবা নিয়ে সেই আখড়া ঘরে ঢুকেছি। এই আয়তকার ঘরটার দেয়াল ঘেঁষে বেশ কয়েকজন খিলকাধারী সাধুগুরু আসন নিয়ে বসেছেন।

তাদের প্রত্যেকের সাথেই দুইএকজন ভক্তও আছে। সকলকেই বড় ক্লান্ত দেখাচ্ছে। মায়েরা অনেকেই এরই মধ্যে গুটিশুটি হয়ে ঘুমিয়েছে। পাটখড়ির ফাঁকা দিতে শিরশির করে শীতের হালাকা বাতাস প্রবেশ করছে। তবে সাধুদের জন্য লেপ কম্বল বালিশ সব কিছুর ব্যবস্থাই করা হয়েছে।

আমি আজিজ ফকিরের আসনের একপাশে জায়গা নিয়েছি। আখড়া ঘরের সামনের বেড়াটা খুলে দেয়া হয়েছে। তাই এখানে বসেই উঠানের সমস্ত কিছু দেখা যাচ্ছে। আরাম পেয়ে এখানেই বসেই গান শুনতে শুনতে মধ্যরাত করে ফেলেছি। ঘোষণা দেয়া হয়েছে এটিই শেষ গান।

এরপর সেবা দেয়া হবে। রাতের সেবা। অধিবাসের সেবা। সত্যি কথা বলতে আমার আবারো বেশ খিদে খিদে লাগছে। একদফা খেয়েও কেনো আবার খিদে লাগছে কে জানে। আজিজ ফকির পাশ থেকে উঠে গেছে অনেকক্ষণ। রাসুও নেই আশেপাশে।

গান শেষে সব গোছানো হচ্ছে। সেবার আয়োজন হবে। আমিও উঠে বসেছি ঠিকঠাক মতো। এই কয় দিনে সাধুসঙ্গে কখন কি করতে হবে একটু আধটু বুঝতে শিখেছি বটে। কিন্তু মনে রাখতে পারি না। কখন কোন সেবা তার নাম মনে রাখতে পারি না।

একবার খাবার সময় উঠে হাত ধুতে গেলাম। পাশের সকলে বললো বসেন বাপ বসেন। হাত ধোয়ায়া দিবো। যারা সেবা দিবে তারার সেবাটা দিতে দেন। আমি লজ্জা পেয়ে বসে গিয়েছিলাম। আসলেই তো তাই। বিষয়টা আমি জানতাম। কিন্তু এতো দিনের স্বভাব পাল্টাতে পারিনি।

পাশে বসা বেশ বয়োজ্যেষ্ঠ এক সাধুগুরুর সাথে গান শোনার ফাঁকে ফাঁকে দুই একটা কথা হয়েছে। তিনি অতি মিহি স্বরে কথা বলেন। প্রথমেই বুঝতেই পারিনি তিনি আমাকে বলছেন। পরে ওনার ভক্ত ছেলে আমার মনোযোগ আকর্ষণ করায় বিষয়টা আমি ধরতে পারি।

সাধুর নাম বক্কর ফকির। এসেছেন মাগুরা থেকে।

আমি নিজের আসন ঠিকঠাক করে যখন বসছি তখন বক্কর ফকির নিচু স্বরে আমাকে বললো, বাজান আপনি একটা গান বলবেন না?

-গান বলবো মানে? ঠিক বুঝি নাই আপনার কথা সাধু।

পাশের ছোকড়াটা বললো- আরে সাঁইজি আপনারে একটা গান গাইতে বলতেছেন।

-আরে না না। সাধু, আমি গান গাইতে পারি না। আমার গলায় সুর নাই।

-সুর সবার গলায় থাকে না বাজান। তারে ধরতে হয়। কতজনরে দেখবেন তেমন গাইতে পারে না। খালি চিক্কুর মাইরা যায়। সবার গলায় কি আর সুর থাকে? অসুরেও তো গান করে।

-তা হয়তো করে। আমার সে অবস্থাও নেই সাধু। সুর-তাল কিছুই আমার জানা নেই। তা আপনি গান করেন?

-এক সময় করতাম বাজান। এখন আর পারি না। বয়স হইছে তো। গান করতে গেলে তার ভেতরে ঢুইকে যাই। হারায়া যাই। গাওয়া শেষ করতে পারি না।

-মানে?

-একবার এক ভক্তের বাড়িতে সঙ্গে গান করতে দাঁড়াইছি। ধরছি সাঁইজির পদ-

শুদ্ধপ্রেমের প্রেমিক মানুষ যে জন হয়।
মুখে কথা কউক বা না কউক
নয়ন দেখলে চেনা যায়।।

রূপে নয়ন করে খাঁটি
ভুলে যায় সে নাম মন্ত্রটি,
চিত্রগুপ্ত পাপপুণ্যটি
তার কি লিখবেন খাতায়।।

মণিহারা ফণি যেমন
প্রেম রসিকের দুটি নয়ন,
কি করতে কি করে সে জন
অন্ত নাহি বোঝা যায়।।

সিরাজ সাঁই কয় বারে বারে
শোনরে লালন বলি তোরে,
মদনরসে বেড়াও ঘুরে
সে ভাব তোমার কই দাঁড়ায়।।

পদটা করতে করতে মনে হইলো। সারাজীবন এর যে অর্থ দাঁড় করাইছি। গুরু যা বলছেন। নিজে যা বুঝছি। মানুষজন যা বলছে। অন্যান্য সাধুগুরুরা যা বলছেন। সব যেন হারায়ে গেলো চোখের সামনে। এর নতুন এক অর্থ চোখের সামনে খুইলে গেলো। আমি অবাক হয়ে সেই সব দেখতেছি চোখের সামনে।

বুঝতেছি নতুন করে জীবনের মানে। জগতের মানে। জগতের সত্যের মানে। সাঁইজির বচনের মানে। সব কিছু নতুন করে ধরা দিতেছে। আমি মুগ্ধ হয়ে দেখতেছি। বুঝতেছি। জানতেছি। আমি তো তিন অন্তরা গায়া তব্দা লাইগা দাঁড়ায়া আছি।

ঐদিকে যন্ত্রীরা তো সঙ্গত করেই যাইতেছে। করেই যাইতেছে। একসময় সবাই ভাবলো আমার শরীর খারাপ হইছে। কেউ ভাবলো আমার স্টোক করছে। আমারে ধরাধরি কইরা ঘরে নিয়া তুললো। কেউ মাথায় জল দেয়। কেউ কম্বল চাপায়। কেউ তেল ডলে। কেউ ডাক্তার ডাকে। হুলুস্তুল ব্যাপার।

এর একেক স্তরের স্বাদ একেক রকম। আপনি হয়তো উপরের স্তরের স্বাদ পান। আমি হয়তো কয়েক স্তর নিচের এই পর্যন্তই। কিন্তু এর স্তর যে কত। আর কত স্তর নিচে যে ডুবা যাইবে তার শেষ নাই। তবে সব স্তর লাগে না। যে স্তরে আপনার মনের প্রশ্নকে স্থির করে দিবে সেখানেই তখন শান্তি। তবে শেষ না।

আমি যত কই আমার কিছু হয় নাই। আমারে একটু একা থাকতে দাও। কিন্তু ভক্তদের তো মন মানে না। তারা সেবা করেই চলছে। করেই চলছে। আমার আর একলা হওয়া হয় না।

-তারপর?

-এতো আদরযত্নে কি আর ভাব থাকে বাজান? যে সত্যে প্রবেশ করতেছিলাম তার দরজা থেকে দেখেই ফিরে আসতে হইলো সেইবার।

-বলেন কি? সে তো এক আশ্চর্যজনক ঘটনা?? আমি তো চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছিলাম। বিষয়টা সাইন্সফিকশন ছবির মতো মনে হচ্ছিল?? আসলেই কি বাস্তব এটা সাধু? নাকি কল্পনা?? এরকমটা কি সব সময়ই হয়???

এক নি:শ্বাসে কথাগুলো বলে তারপর থামলাম।

বক্কর ফকির একটু সময় নিয়ে বললেন,

-বাজান এ সত্য না কল্পনা আমি বলতে পারবো না। কিন্তু যখন গভীর ভাব জাগে তখন সাঁইজির পদে ডুব দেয়া যায়। আপনিও চেষ্টা নিয়া দেখবেন। ডুবতে পারবেন। তয় একটা কথা-

-কি কথা?

-আপনি যতটা গভীর জলে সাঁতার জানবেন ততটাই ডুবতে পারবেন। এর বেশি কি আর পারবেন?

-মানে?

-মানে আপনি আপনার ভাবের স্তরের সমানই সেই পদের গভীরতার স্তরে ডুবতে পারবেন। তার বেশি তো পারবেন না। আমিও পারি না। আমারো এখনো অনেক অনেক বেশি ডুব সাঁতার জানা প্রয়োজন। বাজান এই জল হলো অতল। এর শেষ নাই। তবে একটা স্তর পর্যন্ত ডুবতে পারলে এর স্বাদ ভিন্ন হয়।

এর একেক স্তরের স্বাদ একেক রকম। আপনি হয়তো উপরের স্তরের স্বাদ পান। আমি হয়তো কয়েক স্তর নিচের এই পর্যন্তই। কিন্তু এর স্তর যে কত। আর কত স্তর নিচে যে ডুবা যাইবে তার শেষ নাই। তবে সব স্তর লাগে না। যে স্তরে আপনার মনের প্রশ্নকে স্থির করে দিবে সেখানেই তখন শান্তি। তবে শেষ না।

-সাঁইজি আপনার কথা আস্তে আস্তে জটিল হয়ে যাচ্ছে। আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। সেই শান্তি কি আপনি পেয়েছেন? কি সেই অনুভূতি একটু বলেন!

-বাজান সেই কথা বলা যায় না। বলা ঠিক না। আপনি চেষ্টা নেন। আপনি নিজে বুঝেন। নিজেই বুঝতে পারবেন।

-আমি তো সাধারণ মানুষ সাধু। আমি কি আর পারবো?

-পারবেন না কেন বাপ। অবশ্যই পারবেন। সাঁইজি এমন পথই দিয়া গেছেন, যা সকলের জন্য। এর জন্য দুইটা মাথা, তিনটা হাত, চাইরটা পা লাগবো না।

-হা হা হা।

-হাইসেন না বাজান। এই পথে যখন হাঁটতেছেন তখন চেষ্টা নিতে দোষ কি?

-তা কিভাবে চেষ্টা নিবো?

-পরতো পক্ষে তর্ক করবেন না। তর্ক শুরু করলেও থাইমা যাইবেন। যে বিষয়ে তর্কের বোধ জাগছে তা নিয়ে ভাবেন। সেই প্রসঙ্গে সাঁইজি কোন গান বলছেন সেই গান খোঁজার চেষ্টা করেন। সব গান হয়তো আপনি জানবেন না। তাও আপনার মতে যেটা মিলবে সেটা নিয়ে ভাবতে থাকেন।

অজয়গায়-কুজায়গায় কথা বলবেন না। যার তার সাথে কথা বলবেন না। কথা বলার জন্য মনের মানুষ খুঁজবেন। মনের মানুষের সাথে সময় কাটাবেন। নইলে একা সময় কাটাবেন। নিজের ভাবনাকে বার বার ভেঙ্গে ভেঙ্গে নতুন সম্পূর্ণ নতুন ভাবনায় প্রবেশের চেষ্টা করবেন।

অন্যের ভাবনার সাথে আপনি একমত নাও হইতে পারেন তারপরও চেষ্টা নিবেন যদি তাদের মতো করে ভাবেন তাহলে কি হয় সেটাও ভাববার।

-বাহ্ বাজান ভালো বলেছেন তো। বিষয়টা সহজ নয় বুঝতে পারছি। কিন্তু চেষ্টা নেওয়া যেতেই পারে। আরো একটু পরিষ্কার করে বিষয়টা বলেন তো সাধু।

-বাজান আমি মূর্খ মানুষ। স্কুলে চৌকাঠে যাই নাই কখনো। আমার কথা কি আর আপনার মনে ধরবো?

-কি যে বলেন সাধু। জ্ঞান কি আর স্কুলে মিলে?

-বাহ্ আপনিও তো ভালো কথা বলেন।

-সত্যি বলতে এই সব কথা আমার মুখের কথা না সাধু। এই কয়দিনে আপনাদের কাছ থেকেই শেখার চেষ্টা করছি। কেমন করে ভাবতে হয়। কেমন করে বলতে হয়। সারাজীবন তো নিজেকে প্রমাণ করতে গিয়ে কেবল অহংকার জমা করেছি।

-বাজান সময় না হলে কিছুই হয় না। সবই সময়ের খেলা। সময়ের আগে কিছুই হয় না। স্থূল-প্রবর্ত না শিখে সাধন দেশে গেলে বিপদ। মহাবিপদ। তবে ব্যতিক্রম আছে। অনেকে পারে। তয় সকলে এর গরম সহ্য করতে পারে না। অহংকার জমা করে ফেলে। তখন সেই জ্ঞান না নিজের কাজে লাগে না অন্যের।

-বাজান সেই ভাবে ডুবার বিষয়টা আরো একটু বলেন না?

-বাজান সাঁইজির সেই পদটা শুনছেন-

“আমি অপার হয়ে বসে আছি
ও হে দয়াময়,
পারে লয়ে যাও আমায়।।”

-জ্বি সাধু এটা তো খুবই পরিচিত গান।

-সেই ভাবে ডুবতে গেলে অপার হয়ে বসে থাকতে হয় বাজান। তাইলেই সেই ডাক আসে।

-আমার ডাক আসবে কবে সাধু?

-এখন সেবার ডাক আসছে বাজান। ঠিক হয়ে বসেন। হাতে জল দিবে। আগে সেবা নেই। পরে আবার কথা হবে নে বাজান। কি বলেন?

কি বলবো জানি না। মনের মাঝে নতুন করে হাজার প্রশ্নে জন্ম হয়েছে। হতে চলেছে। যার কোনো উত্তর এই মুর্হূতে আমার কাছে নেই। আবারো মনে হচ্ছে সেই বিচিত্র সব মানুষগুলো আচানক সব মুখোশ পরে নাচতে শুরু করেছে আমার চারপাশে। সিনেমার সেই দৃশ্যের মতো।

ঢোল, করতাল, কাশি বাজিয়ে আমাকে বিদ্রূপ করে বলছে, ‘ইউ ডোন্ট বিলং হেয়ার। ইউ ডোন্ট বিলং হেয়ার।’

(চলবে…)

<<লালন বলে কুল পাবি না: ছয় ।। লালন বলে কুল পাবি না: আট>>

.…………………………………………..
আরো পড়ুন:
সিজন : এক
লালন বলে কুল পাবি না: এক
লালন বলে কুল পাবি না: দুই
লালন বলে কুল পাবি না: তিন
লালন বলে কুল পাবি না: চার
লালন বলে কুল পাবি না: পাঁচ
লালন বলে কুল পাবি না: ছয়
লালন বলে কুল পাবি না: সাত
লালন বলে কুল পাবি না: আট

সিজন : দুই
লালন বলে কুল পাবি না: এক
লালন বলে কুল পাবি না: দুই

লালন বলে কুল পাবি না: তিন
লালন বলে কুল পাবি না: চার
লালন বলে কুল পাবি না: পাঁচ
লালন বলে কুল পাবি না: ছয়
লালন বলে কুল পাবি না: সাত
লালন বলে কুল পাবি না: আট

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!