পূর্ণব্রহ্ম শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের আবির্ভাব তিথি উপলক্ষে
মহাবারুণী মেলা ও মহাস্নান উৎসব
“চলো চলো ওড়াকান্দি প্রেম বারুণী প্রেম স্নান,
বাজাও ডংকা, উড়াও নিশান, সবাই বলো জয় হরিচাঁন।।”
পূর্ণব্রহ্ম পূর্ণাবতার শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের শুভ আবির্ভাব উপলক্ষ্যে মহাবারুণী মেলা ও মহাস্নান উৎসব
জয় হরি বল
সূধী
হরিভক্ত সকলকে অভিবাদন। মতুয়াবাদ তথা মতুয়া মতাদর্শের প্রবর্তক, দলিত-পতিত জাতির ত্রাতা ও মুক্তিদাতা, মনুষ্যত্বের অধিকার প্রতিষ্ঠাতা, ধর্মীয় অধিকার দাতা পূর্ণব্রহ্ম পূর্ণাবতার পতিত পাবন শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর ১৮১২ খ্রিস্টাব্দের (১২১৮ বঙ্গাব্দ) ১১ মার্চ (ফাল্গুনী মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথিতে) অবিভক্ত বাংলার ফরিদপুর (অধুনা গোপালগঞ্জ) জেলার মুকসুদপুর (বর্তমান কাশিয়ানী) মহকুমা অন্তর্গত ওড়াকান্দির পার্শ্ববর্তী সফলাডাঙ্গা গ্রামে আবির্ভূত হয়েছিলেন।
আসছে ৩০ মার্চ ২০২০ খ্রিস্টাব্দ মোতাবেক ১৬ চৈত্র ১৪২৮ রোজ মঙ্গল-বুধবার পূর্ণান্দন পূর্ণাবতার ভগবান শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মোৎসব বা আবির্ভাব দিবস, মহামেলা, পূর্ণ্যস্নান। মহাতীর্থ শ্রীধাম ওড়াকান্দিতে আগত সকল হরিভক্ত মা বাবা ভাই বোন ও বন্ধুদেরকে প্রণাম, আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই।
এতদ্বারা পূূর্ণব্রহ্ম ভগবান শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর ও পতিত পাবন মুক্তিবারিধি, শিক্ষার দিশারী ভগবান শ্রীশ্রী গুরুচাঁদ ঠাকুরের সকল ভক্তদের জন্মোৎসব, মহামেলা স্নান সুন্দর ও সার্থক করার জন্য অনুরোধ করা হইলো।
এ উৎসবকে কেন্দ্র করে ঠাকুরবাড়ির এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বসবে মেলা। মেলায় শুধু ধর্মীয় উপকরণ নয় মৎ, বেশ, বাঁশ, তৈজসপত্র, আসবাবপত্র থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় ও উপহার সামগ্রীর বিশাল সমাবেশ ঘটে থাকে।
দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ভক্তকূল হাতে বিজয় ও সত্যের লাল নিশান এবং কাশি-ডাংখা বাজিয়ে উলু ধ্বনি দিয়ে ‘হরি বল হরি বল’ ধ্বনি উচ্চারণ করতে করতে মাইলের পর মাইল পথ পায়ে হেঁটে পাড়ি দিয়ে আসেন তীর্থভূমি শ্রীধাম ওড়াকান্দিতে।
খুলনা, যশোর, নড়াইল, বরিশাল, ভোলা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, কুমিল্লা, চাঁদপুর, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, রাজবাড়ি, মাদারীপুর, ঝিনাইদহ, মাগুরাসহ বিভিন্ন জেলা ও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, নেপাল এবং শ্রীলঙ্কাসহ বিভিন্ন দেশের মতুয়া ভক্তরা এ স্নানোৎসবে যোগ দিয়ে থাকে।
এই মহামিলনে ও বারুণী স্নানে আপনিও আমন্ত্রিত।
মহাতীর্থ শ্রীধাম ওড়াকান্দি জন্মোৎসব পূর্ণ্যস্নান:
৩০ মার্চ ২০২২ খ্রিস্টাব্দ।
১৬ চৈত্র ১৪২৮ বঙ্গাব্দ।
রোজ মঙ্গলবার ও বুধবার।
লগ্ন:
১৬ চৈত্র/৩০ মার্চ বুধবার।
মধুকৃষ্ণ ত্রয়োদশী স্নান আরম্ভ:
১৫ চৈত্র মঙ্গলবার ৩:০৪ মিনিট থেকে ১৬ চৈত্র বুধবার বেলা ১১:২৩ মিনিট পর্যন্ত মহাবারুণীর পুণ্য স্নান।
মাহেন্দযোগে:
১৬ চৈত্র বুধবার (দিবা) ২:১১ মিনিট হতে ৩:৫১ মিনিট পর্যন্ত।
অমৃতযোগে:
১৬ চৈত্র বুধবার (দিবা) ৭:৪২ মিনিট গতে ১০:০২ মিনিট পর্যন্ত।
স্থান:
তীর্থ সম্রাট
শ্রীধাম ওড়াকান্দি।
কাশিয়ানী, গোপালগঞ্জ, বাংলাদেশ।
সকল হরি ভক্তের আগমন শুভহোক।
হরিবোল হরিবোল হরিবোল।ৱ
শ্রীধাম ওড়াকান্দি তীর্থযাত্রীদের জন্য
১. শ্রীধামে জুতা নিয়ে প্রবেশ নিষেধ, এটি না নিয়ে যাওয়াই ভালো, সেচ্ছাসেবীরা কোনো ক্রমেই আপনাকে জুতা পায়ে প্রবেশ করতে দিবে না।
২. এখানের জল অনন্য অঞ্চলের মতো সুস্বাদু নয়, তাই কিছু পরিমাণ সুস্বাদু জল সঙ্গে নেওয়া ভালো। তবে ওখানে জলছত্র থাকবে এবং সেখানে জল পাবেন।
৩. ত্রিগুণের মিলন মেলা, অতএব সব ধরনের লোকই সেখানে থাকবে। তাই বদ লোক থেকে সাবধান।
৪. বিভিন্ন স্থানে মহাপ্রসাদের ব্যবস্থা করা হয়। তন্মধ্যে ঘৃতকান্দি ও ঠাকুরের হিজল গাছের কাছে ব্যপক পরিসরে।
৫. স্নানের জন্য দুটি পুকুর রয়েছে যা কামনা ও দুধ সাগর নামে পরিচিত। কামনা সাগর ঠাকুরবাড়ির প্রবেশদ্বারে এবং দুধ সাগর হরিমন্দিরের পিছনে অবস্থিত।
৬. রেষ্টুরেন্টে সাত্ত্বিক বা নিরামিষ আহার গ্রহণ বাঞ্ছনীয়।
৭. ডংঙ্কার সাথে সাংঘর্ষিক আদি ভাব বিকৃত করে এমন বাদ্য যন্ত্র না বাজানোই উত্তম।
৮. নিশানকে ভক্তিসহকারে ধারণ করতে হবে এবং দলের সমগ্র নিশানগুলো সমভাবে সমান্তরালে সামনের দিকে একটু হেলে থাকবে। সর্বোপরি দলপতিকে পূর্ণ অনুসরণ করতে হবে।
৯. বিশুদ্ধ ভক্তি ছাড়া এখানে কিছুই প্রাপ্তি ঘটবে না। পবিত্র মন নিয়ে ভক্তি ও প্রেমের সহিত শ্রীধামে শুভাগমন করতে হবে এবং হরি কল্পবৃক্ষে প্রার্থনা করতে হবে।
পথনির্দেশনা-
ঢাকা থেকে-
ঢাকার গুলিস্তান-সায়দাবাদ-যাত্রাবাড়ি থেকে মাওয়াগামী যে কোনো বাসে করে মাওয়া ঘাটে পৌঁছে যেতে পারেন। নতুন এক্সপ্রেসওয়ে খুলে দেওয়ায় আগের তুলনায় বর্তমানে ঢাকা থেকে মাওয়া যেতে সময় লাগে ৪০মিনিটের মতো। সেখান থেকে লঞ্চ-ফেরি-স্প্রীবোর্ডের যে কোনোটাতে করে পদ্মা পাড়ি দিতে হবে। ঘাটে নেমে একটু এগুলেই পেয়ে যাবেন গোপালগঞ্জের সরাসরি বাস।
বাসের বিকল্প হিসেবে মাইক্রোবাসেও বাকিটা পথ যেতে পারেন। এতে সময় অনেকটা বাঁচলেও ভাড়া গুণতে হবে দ্বিগুণের বেশি। গোপালগঞ্জ জেলা শহর থেকে প্রায় ২৭ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত শ্রীধাম ওড়াকান্দি ঠাকুরবাড়ি। উপজেলা সদর হতে তিলছড়া বাসস্ট্যান্ড হতে পূর্বদিকে বাইপাস সড়ক দিয়ে খাগড়াবাড়ীয়া-আড়ুয়াকান্দি-ওড়াকান্দি ঠাকুরবাড়ী।
বাস বা মাইক্রোতে যেটাইতেই যান নামতে হবে তিলছড়া বাসস্ট্যান্ডে। সেখান থেকে ওড়াকান্দির সিএনজি বা মাহেন্দ্রা পাওয়া যায়। সেখানে নেমে হেঁটে ঠাকুর বাড়ি শ্রীধাম ওড়াকান্দি।
অথবা ঢাকার যে কোন বাস স্টেশন থেকে ‘ঢাকা টু গোপালগঞ্জ’ বা ‘ঢাকা টু খুলনাগামী’ বাসে উঠতে হবে। তারপর গোপালগঞ্জের কাছাকাছি পৌঁছানোর পূর্বে পথে ‘তিলছড়া’ বা ‘গোপালপুর’ স্টপিজে যেকোনো একটিতে নামতে হবে। তিলছড়া নামলে ইজিবাইকে করে ঠাকুরবাড়ির সামনে নামতে পারবেন। ভাড়া ২০/২৫ টাকা।
আর গোপালপুর স্টপিজে নামলে সেখান থেকে ইজি বাইকে করে ‘রামদিয়া বাজার’। রামদিয়া বাজার থেকে ইজি বাইকে করে ওড়াকান্দি। গোপালপুর থেকে রামদিয়া বাজার ১৫ টাকা আর রামদিয়া বাজার থেকে ঠাকুরবাড়ি ১৫ টাকা ভাড়া লাগবে।
তবে তিলছড়া থেকে সরাসরি ঠাকুরবাড়ি যাওয়ার চাইতে গোপালপুর থেকে রামদিয়া বাজার হয়ে ঠাকুরবাড়ি যাওয়ার পথ (রাস্তা) অনেক ভাল।
খুলনা থেকে-
খুলনা টু ঢাকা/ফরিদপুর//মাওয়া/ভাঙ্গা যে কোন বাসে করেই ওড়াকান্দি যাওয়া যায়। খুলনা থেকে গোপালগঞ্জ অতিক্রম করার পর প্রথমে ‘গোপালপুর’ তারপর ‘তিলছড়া’ স্টপিজ পরবে। তিলছড়া নামলে ইজিবাইকে করে ঠাকুরবাড়ির সামনে নামতে পারবেন। ভাড়া ২০/২৫ টাকা।
আর গোপালপুর স্টপিজে নামলে সেখান থেকে ইজি বাইকে করে ‘রামদিয়া বাজার’। রামদিয়া বাজার থেকে ইজি বাইকে করে ওড়াকান্দি। গোপালপুর থেকে রামদিয়া বাজার ১৫ টাকা আর রামদিয়া বাজার থেকে ঠাকুরবাড়ি ১৫ টাকা ভাড়া লাগবে।
তবে তিলছড়া থেকে সরাসরি ঠাকুরবাড়ি যাওয়ার চাইতে গোপালপুর থেকে রামদিয়া বাজার হয়ে ঠাকুরবাড়ি যাওয়ার পথ (রাস্তা) অনেক ভাল।
বরিশাল থেকে-
বরিশাল থেকে বাসে ‘পয়সারহাট’, ‘পয়সারহাট’ থেকে ‘গোপালগঞ্জ বেদগ্রাম’ সরাসরি লোকাল বাস চলাচল করে। এইসব লোকাল বাস ১০ মিনিট পরপর ছেড়ে যায়। গোপালগঞ্জের বেদগ্রামে নেমে সেখান থেকে রিকসায় ‘কুয়াডাঙ্গা’ স্টপিজে যেতে হবে।
সেখানেও ১০ মিনিট পর পর বাস ছেড়ে যায়। কুয়াডাঙ্গা থেকে কুয়াডাঙ্গা টু ব্যাসপুরগামী বাসে উঠতে হবে। ৪৫/৫০ মিনিট পরেই ‘গোপালপুর’ স্টপিজ। বা একটু সামনে এগুলে ‘তিলছড়া’ স্টেশন। তিলছড়া নামলে ইজিবাইকে করে ঠাকুরবাড়ির সামনে নামতে পারবেন। ভাড়া ২০/২৫ টাকা।
আর গোপালপুর স্টপিজে নামলে সেখান থেকে ইজি বাইকে করে ‘রামদিয়া বাজার’। রামদিয়া বাজার থেকে ইজি বাইকে করে ওড়াকান্দি। গোপালপুর থেকে রামদিয়া বাজার ১৫ টাকা আর রামদিয়া বাজার থেকে ঠাকুরবাড়ি ১৫ টাকা ভাড়া লাগবে।
তবে তিলছড়া থেকে সরাসরি ঠাকুরবাড়ি যাওয়ার চাইতে গোপালপুর থেকে রামদিয়া বাজার হয়ে ঠাকুরবাড়ি যাওয়ার পথ (রাস্তা) অনেক ভাল।
অথবা বরিশাল থেকে ‘টেকেরহাট’ হয়েও ওড়াকান্দি যাওয়া যায়। বরিশাল থেকে অনেক বাসই টেকেরহাট চলাচল করে। যে কোনো বাসে টেকেরহাট আসতে হবে। সেখান থেকে আবার গোপালগঞ্জগামী বাসে উঠতে হবে। নামতে হবে ‘উলপুর’ স্টপিজে। সময় লাগবে ৪০/৪৫ মিনিটের মতো।
সেখানে নেমে ইজিবাইকে করে ‘রামদিয়া বাজার’। রামদিয়া বাজার থেকে ইজি বাইকে করে শ্রীধাম ওড়াকান্দি। উলপুর থেকে রামদিয়া বাজার ২৫/৩০ টাকা। রামদিয়া বাজার থেকে ঠাকুরবাড়ি ১৫ টাকা ভাড়া লাগবে।
উল্লেখ্য, মহাবারুণী উৎসবের সময় হাজার হাজার গাড়ী আসে। তাই তিলছড়া, গোপালপুর, উলপুর প্রভৃতি জায়গায় আসার পরে আর প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞা থাকায় কোন গাড়ী, ভ্যান এমনকি মটর সাইকেলও আর শ্রীধামের দিকে ঢুকতে দেয়না। তাই এসময় বাকী পথ পায়ে হেঁটেই যেতে হবে।
বি: দ্র: ঢাকা থেকে মাওয়া হয়ে সন্ধ্যা রাত ৭ টার পরে ফেরি লঞ্চ বন্ধ থাকায় রাতে এ পথে চলাচল মুশকিল হবে।
……………………..
তথ্য কৃতজ্ঞতা: মতুয়া গ্রুপসমূহ।
…………………….
আপনার গুরুবাড়ির সাধুসঙ্গ, আখড়া, আশ্রম, দরবার শরীফ, অসাম্প্রদায়িক ওরশের তথ্য প্রদান করে এই দিনপঞ্জিকে আরো সমৃদ্ধ করুন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….
…………………..
আরও পড়ুন-
জানুয়ারি’২২ দিনপঞ্জি (পৌষ-মাঘ)
ফেব্রুয়ারি’২২ দিনপঞ্জি (মাঘ-ফাল্গুন)
মার্চ’২২ দিনপঞ্জি (ফাল্গুন-চৈত্র)
এপ্রিল’২২ দিনপঞ্জি (চৈত্র-বৈশাখ)
মে’২২ দিনপঞ্জি (বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ)
জুন’২২ দিনপঞ্জি (জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ়)
জুলাই’২২ দিনপঞ্জি (আষাঢ়-শ্রাবণ)
আগস্ট’২২ দিনপঞ্জি (শ্রাবণ-ভাদ্র)
সেপ্টেম্বর’২২ দিনপঞ্জি (ভাদ্র-আশ্বিন)
অক্টোবর’২২ দিনপঞ্জি (আশ্বিন-কার্তিক)
নভেম্বর’২২ দিনপঞ্জি (কার্তিক-অগ্রহায়ণ)
ডিসেম্বর’২২ দিনপঞ্জি (অগ্রহায়ণ-পৌষ)