-ফিরোজ এহতেশাম
টুনটুন: দ্যাখো দিনি, তোমার রাধা-কৃষ্ণ, এই যে মা পাকে পাকে আছে না?
ফিরোজ: আছে।
টুনটুন: যোগিনী যোগ করা শিখাবে। ইনি যোগিনী। তোমাকে যোগ করা শেখাবে ও। মেয়েছেলে তোমার ব্যবহারের জিনিস না। আমি তো আগেই বলেছি।
ফিরোজ: উনি তো তাহলে এক ধরনের গুরুও।
টুনটুন: ও-ই গুরু। ওকে যে মানতে পারল সে-ই গুরুর দেখা পাইল।
ফিরোজ: ও আচ্ছা-আচ্ছা, উনিই আসলে গুরু।
টুনটুন: তুমি এলে, ওকে ইচ্ছামতো ব্যবহার করলে। ওর কথা শোনো নাই। ওর কথা শুনলে তোমার পুঁঞ্জি ঠিক থাকবে, ব্যবসায় গণ্ডগোল হবে না। মাল সবাই সঠিকভাবে পাবে। আর ওর কথা না শুনলে… ওর ইচ্ছামতো ব্যবহার হও। মা জননী, মেয়েরা ধর্ম করতে আসেনি তো। ও এসছে ধর্ম করাতে। তুমি ধর্ম করবে, ও তোমাকে ধর্ম করাবে।
ফিরোজ: তাহলে এ হিসেবে তো নারী জাতি পুরুষের উপরে?
টুনটুন: উপরে বলতে স্থান উচ্চে। ওকে সম্মান করাই ধর্ম।
ফিরোজ: আচ্ছা লালনের গানে অনেক ক্ষেত্রেই ব্যবহার হয় ‘তিন’ শব্দটা, এই তিনের মাহাত্ম্যটা কী?
টুনটুন: আলিফ, লাম, মীম। আলিফে একজন, লামে একজন, মীমে একজন। তোমার ভিতর দেখো দিনি কয়জন আছে। দেখো তুমি গোনে গোনে। ভিতরে স্ত্রী-লিঙ্গ আছে। তোমার কাছে পুং লিঙ্গ আছে, আবার…
ফিরোজ: ক্লিব লিঙ্গ আছে।
টুনটুন: সবই আছে তোমার কাছে। কোনটা ব্যবহার করলে তুমি লাভবান হবা সেটা তুমি তো জানোই। তোমাকে সেইরূপ পথ অবলম্বন করতে হবে।
ফিরোজ: তিনের মাহাত্ম্যটা তাইলে বিশাল তো… আল্লাহ, মোহাম্মদ আর আদম?
টুনটুন: তিনের মর্ম সাধিলে হয় স্বরূপ দর্শন। একের যুতে তিনের লক্ষণ… লালন তার একটা গানে বলছেন-
দ্বীনের ভাব যেদিন উদয় হবে।
সে দিন মন তোর ঘোর অন্ধকার ঘুচে যাবে,
মনিহারা ফণি যেমন এমনি ভাব রাগের করণ
অরুণ বসন ধারণ বিভূতি ভূষণ লবে।।
হাদিসে লিখেছে প্রমাণ আপনারে আপনি কে জান
কোথা হতে কি রূপে সে কহিছে জবান,
না করলি মন সেসব দিশে তরিকার মঞ্জিলে বসে
তিনেতে তিন আছে মিশে মিশে ভাবুক হলে জানতে পাবে।।
ভাবশূন্য হৃদয় মুখে পড় কালাম আল্লার
তাই কি মন পাবি নিস্তার ভেবেছ এবার,
অঙ্গে ধারণ কর বেহাল, হৃদে জ্বালো প্রেমের মশাল
দুই নয়ন হইবে উজ্জ্বল, মুরশিদ বস্তু দেখতে পাবে।।
একের যুতে তিনের লক্ষণ, তিনের ঘরে আছে সে ধন
তিনের মর্ম সাধিলে হয় স্বরূপ দর্শন,
সাঁই সিরাজের হক্কের বচন, ভেবে বলে ফকির লালন
কথায় কি তোর হয় আচরণ, সাথি হও মন দ্বীনের ভাবে।।
একে তো আল্লাহ। দুয়ে নবী। তিনে আদম।। একের যুতে তিনের লক্ষণ, তিনের ঘরে আছে সেই ধন…
ফিরোজ: আচ্ছা, নফি এজবাত, এই জিনিসটা কী, একটু বলেন তো?
টুনটুন: ওই যে গুপ্ত কথাটা-
‘নফি এজবাত যে জানে না
মিছেরে তার পড়াশুনা,
লালন কয় ভেদ উপাসনা
না জেনে চটকে মারে।।’
নফি এজবাত যে জানে তার কোনো অবধারি নাই, সে কারও সঙ্গে কথা বলে না, কারও কাছে থাকে না, সে একা একা। দায়েমীর নাম অবধারি। ওই নামাজের কোনো অবধারি নাই।
ফিরোজ: আচ্ছা দায়েমী নামাজ আছে না, এ নামাজটা কী রকম?
টুনটুন: দায়েমী নামাজ। সঠিক আল্লাহর সাথে, আল্লাহকে বুঝে, নবীকে জেনে আল্লাহ-নবীর রোল করাটাই হচ্ছে দায়েমী নামাজ। ওই মুহূর্তে আল্লাহ আর নবী হয়ে যাওয়া। আল্লাহ হও তুমি, ওকে নবী বানাও। যাতে তোমার এই গুপ্তস্থানটা নষ্ট না হয়। যেদিন থেকে তুমি ভিতরে গেছিলে, যেদিন তুমি ডিম্ব হয়ে ভিতরে চলে গেলে সেদিন থেকে মায়ের কিন্তু আর ফুল হয়নি। ফুল হইছে?
ফিরোজ: না।
টুনটুন: গর্ভপাত হওয়ার পরে যায়ে ফুল হইছে। তাইলে প্রতি মাসে যে রক্তটা ক্ষরণ হইত ওগুলো গেল কোথায়?
ফিরোজ: তাই তো, মাসিক যেইটা…
টুনটুন: ওইটা তুমি-আমি খেয়ে আমাদের এই হাড়, শরীর, নখ, চোখ, দৃষ্টি- সব কিছুই ওইটা খেয়ে হইছে। হুঁমম… আমার ঘুম এসে গেল যে…
ফিরোজ: লালন সাঁইজির দর্শনটা কী, এইটা একটু বলবেন সংক্ষেপে?
টুনটুন: লালন সাঁইজির দর্শন হচ্ছে… আমি দেখেছি উনাকে, উনার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে, অপরূপ সে এক মানব…
ফিরোজ: কীভাবে দেখা হইল?
টুনটুন: আমি স্বপ্নে দেখেছি। আমি ঘুমের ঝোরেই দেখেছি।
ফিরোজ: ও, আচ্ছা-আচ্ছা।
টুনটুন: অপরূপ মানুষ। আল্লাহর রূপের কোনো শেষ আছে? আল্লাহর রূপটা হচ্ছে এমনই। আল্লাহ নিজে কোনো রূপ ধরেননি। আল্লাহ অনন্তের মধ্যে ঢুকেছে, কিন্তু একটা রূপ, গোপন রূপ আছে। যে পেল সেই রূপের সন্ধান সে ওই রূপ নিয়েই থাকবে। আসার পথটাই হচ্ছে আল্লাহর গেট। ওই গেটেই আল্লাহ থাকে।
ফিরোজ: গেটে? আচ্ছা। লালন সাঁইজির দর্শনটা জানতে চাচ্ছিলাম।
টুনটুন: দর্শন বলতে গেলে কী দর্শন?
ফিরোজ: তাঁর জীবন দর্শনটা।
টুনটুন: তাঁর জীবন দর্শনটা হইছে মানবতাবাদী ধর্ম। উনার জন্ম কুষ্টিায়াতেই, আশেপাশেই, যশোর-কুষ্টিয়াতেই।
ফিরোজ: এ নিয়ে অনেকে তো অনেক কথা বলেন।
টুনটুন: বলে। বললে হবে কী। তিনি যে বাংলা ব্যবহার করেছেন তাতে আদি কুষ্টিয়ার বাংলা ব্যবহার করেছেন। এই জন্য আমি বলি লালন সাঁইজি আমাদের দেশেরই মানুষ। এই দেশেই তিনি জন্ম হয়েছেন। তবে আমার মুহম্মদ (সা) তো কোনো মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করে, পুরুষের সঙ্গে তো হয়নি। মা আমেনা ফুল শুঙ্গে হযরত মুহম্মদ (সা)-কে জন্ম দেন। আব্দুল্লাহর…
ফিরোজ: আব্দুল্লাহর বীজে হয়নি?
টুনটুন: না।
ফিরোজ: কীভাবে হইল তাহলে?
টুনটুন: হ্যাঁ, ও-ই, এটা তো আল্লাহর খেলা।
ফিরোজ: ও।
টুনটুন: এইটাই তো আল্লাহর খেলা।
ফিরোজ: মুহম্মদ আব্দুল্লাহর ছেলে, রজঃবীজে জন্ম নিলে যেই গানটা আছে, মানে রাছুল যিনি নয় গো তিনি আব্দুল্লাহর তনয় যে গানটা…
টুনটুন: হু, কেউ মানে কেউ মানে না।
ফিরোজ: মানে আব্দুল্লাহর বীজ তার দরকার হয় নাই। মা আমেনার…
টুনটুন: আব্দুল্লাহর বীজ ছাড়াই মা আমেনার গর্ভে তিনি এসেছেন।
ফিরোজ: এখন তো অনেক ক্ষেত্রে লালনের কথা, সুর- এগুলা বিকৃত করে গাওয়া হয়- এ নিয়ে আপনি কী বলবেন?
টুনটুন: এ নিয়ে বলার কিছু নাই। আল্লাহ যে দিন হেফাজত করবে… তাছাড়া মারামারি, গুণ্ডামি করার কোনো আমার তো অধিকার নাই। আমি আমার মতো গাচ্ছি, আরেকজন হয়ত বলছেন, না, উনি ভারতের সুর ব্যবহার করছেন।
আরেকজন বলছেন, না, উনি… কেউ বলছেন, ওয়েস্টার্ন মিউজিকের সঙ্গে গান গাচ্ছেন, হেনতেন… এগুলা করা ঠিক না, হেনতেন… আমরা তো করি নাই, যারা করছে তাদেরকে নিষেধ কর, আমার কাছে আসছিস কেন?
ফিরোজ: বিকৃত সুর ঠিক করার কোনো বুদ্ধি নাই?
টুনটুন: একদিন ওরাই ঠিক হয়ে যাবে।
ফিরোজ: নিজে নিজে ঠিক হয়ে যাবে?
টুনটুন: আল্লাহ জ্ঞান দিয়ে দিবে। যদি থাকে ওই পথ ধরে তাহলে হয়ত পেয়ে যাবে। এখন হয়ত গাচ্ছে, তখন লজ্জা লাগবে, এটা কী ভুল করেছি, কী ভুল গেয়েছি, তখন জ্ঞান হবে।
ফিরোজ: সাধুসঙ্গের বিষয়টা একটু বলেন। সাধুসঙ্গ করলে কী হয়?
টুনটুন: সাধুসঙ্গ করলে কী হয়? জ্ঞান হয়।
ফিরোজ: সাধুসঙ্গ করলে জ্ঞান হয়?
টুনটুন: জ্ঞান হয়। জ্ঞান লাভ করার জন্যে সাধুসঙ্গ। মানুষের জ্ঞানেরই অভাব, তাছাড়া সবই আছে।
ফিরোজ: সাধুসঙ্গে কী হয়? তত্ত্বকথা আলোচনা…
টুনটুন: তুমি যদি জানতে চাও গুরুর কাছে, তোমার গুরু সব বলবে তোমাকে।
ফিরোজ: সাধুসঙ্গের মধ্যে কি বাউলদের খেলাফত দেওয়ার বিষয়টাও থাকে?
টুনটুন: ওটাও আছে। যখন গুরুপ্রাপ্ত হওয়ার দ্বারে পৌঁছে যায় তখন গুরু নিজেই তাকে খেলাফত দেয়।
ফিরোজ: বাউলধর্মের মূল টার্গেটটা কী, উদ্দেশ্যটা কী?
টুনটুন: আল্লাহ প্রাপ্ত হওয়া। সৃষ্টিকর্তা প্রাপ্ত হওয়া। টার্গেট।
ফিরোজ: আপনার সম্পর্কে জানতে চাই, মানে, আপনার শৈশবকাল, কীভাবে লালনের দিকে আসলেন, আপনার জীবনের কাহিনী…
টুনটুন: শৈশবকাল থেকে সংসারী, তখন আমার মা মারা যায়, তখন আমার চোদ্দ বছর বয়স। আমার পুরো নাম জালাল উদ্দিন টুনটুন ফকির। এখন আমি টুনটুন ফকির নামেই পরিচিত। আমি এসএসসি পর্যন্ত পড়াশুনা করছি। এসএসসির পর আর লেখাপড়া… দেশে যুদ্ধ লেগে গেল।
আমি ১৯৪৮ সালে কুষ্টিয়ায় জন্মগ্রহণ করি। এসএসসির পরই জীবিকা নির্বাহের জন্য মোটর শ্রমিকে যোগ দিলাম। মোটর শ্রমিকে যোগ দিয়ে ওটা ৭০ সাল থেকে ৯০ সাল পর্যন্ত বিশ বছর করার পরে…
ফিরোজ: মোটর শ্রমিক হিসেবে আপনি কী করতেন?
টুনটুন: ড্রাইভারি করেছি, সুপারভাইজারি করেছি। বাসে, পরিবহণে। বিশ বছর ওটা করার পরে সরকারি চাকরি করলাম পর্যটন করপোরেশনে। এক মন্ত্রী গান শুনে একটা চাকরি দিয়ে দিল। ওটা ৯০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত দশ বছর করে আর করতে পারিনি, আর ভাল্লাগেনি।
ফিরোজ: ওটা কী কাজ ছিল?
টুনটুন: অফিস পিয়নের চাকরি ছিল।
ফিরোজ: আপনি গান শুরু করলেন কবে থেকে?
টুনটুন: গান বহু আগে থেকে, ছোটবেলা থেকেই গাই। এসএসসি থেকেই।
ফিরোজ: লালনের পথে কী করে আকৃষ্ট হইলেন? আপনার গুরু কে?
টুনটুন: লালনের পথে আকৃষ্ট হইলাম লালন সাঁইজির কালাম শুনে। ‘কী হবে আমার গতি…’। সাঁইজির প্রতিটা গানই আকৃষ্ট করার মতো। প্রত্যেকটা অর্থবহ গান। লালন সাঁইজি বাংলা ভাষায় স্বআনন্দে মহাকাব্য রচনা করে দিয়ে গেছেন।
আনন্দের সঙ্গে। তাই ধর্মটা হচ্ছে আনন্দ। যে ত্যাগ করেছে তার আনন্দ হয়েছে। আনন্দে সে হরি হরি করে বলবে… তার আর পেটে খিদে নাই, তার আর যম-যন্ত্রণা নাই, এই ভব কারাগারে তার আর কোনো যন্ত্রণা থাকে না। আমার গুরু নহিরুদ্দিন ফকির।
ফিরোজ: আপনার কাছে লালনকে কী রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের চেয়ে বড় মনে হয়?
টুনটুন: রবীন্দ্রনাথ কলেজে গেছে, ভালো খাওয়া-দাওয়া করেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে গেছে। নজরুল যা-ই কিছু করুক স্কুলে গেছে, আর্মির চাকরি করেছে… এরা স্কুল-শিক্ষিত। আর লালন সাঁই হচ্ছে আধ্যাত্মিক। তিনি কোনো স্কুলের পড়াশুনা না। আমার নবী সাহেব যে রকম, তিনিও ওরকম কোনো স্কুলের লেখাপড়া করেননি।
ফিরোজ: তিনি দিব্যজ্ঞানী, স্বশিক্ষিত… মানে লালনকে আপনি সবচেয়ে উঁচু মনে করেন?
টুনটুন: উঁচু মনে করি। কারণ লালনকে আমি গুরু মানি। আমার গুরু লালন।
ফিরোজ: ২০০০ সালে আপনি চাকরি ছেড়ে দিয়ে পুরোদমে গান গাওয়া শুরু করলেন?
টুনটুন: হ্যাঁ। এরপর থেকেই গান নিয়ে আছি।
ফিরোজ: আপনি গান করেন, রেকর্ড হয়, সিডি বের হয়। আপনার তো অ্যালবাম আছে অনেকগুলা। এখন পর্যন্ত (সেপ্টেম্বর ২০১৬) কয়টা অ্যালবাম বের হইছে?
টুনটুন: ১১টা অ্যালবাম বের হইছে।
ফিরোজ: আপনার প্রথম অ্যালবামের নাম কী?
টুনটুন: ‘ট্রাক ড্রাইভার’। ট্রাক ড্রাইভার, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। তারপরে ‘ল্যাম্পের আলো’। তারপরে ‘লণ্ঠনে রূপের বাতি’। তারপরে ‘পারের তরী’। তারপরে ‘গুরু বিনে’। আর সব ভুলি গেছি নামগুলা।
ফিরোজ: লালনের সাধনায় আধ্যাত্মিকতার স্থান আছে কী? থাকলে এই আধ্যাত্মিকতাকে তিনি কিভাবে সামাজিক ক্রিয়াকর্মের সাথে সমন্বয় করেছিলেন বা মিলিয়ে ছিলেন? অর্থাৎ তাঁর আত্মিক সাধনা ও বাহ্যিক কর্মের মধ্যে যোগসূত্রটা কী ছিল?
টুনটুন: লালন সাঁই কোনোদিনই সংসার করেননি… লালন সাঁইজি মোসলমান ঘরের ছেলে বা লালন সাঁইজি মোসলমান। আবার আরেক জায়গাতে দেখছি যে লালন সাঁইজি হিন্দু। কোনটা নেবে?
ফিরোজ: কোনোটা নেয়ার দরকার আছে কি? উনি তো নিজেই বলছেন আমি এসব হিন্দু-মুসলমানের ঊর্ধ্বে…
টুনটুন: আমার হযরত মুহম্মদ (সা) তাঁর মায়ের দুধ পায়নি। কেন পায়নি? তাঁকে মেরে ফেলা হবে। কে মেরে ফেলাবে? তাঁর চাচারা। কৃষ্ণরও কিন্তু ওই একই দশা। আমার লালন সাঁইয়েরও ওই একই দশা।
ফিরোজ: কারা মেরে ফেলত লালন সাঁইজিকে?
টুনটুন: এই সমাজের কিছু মুসলমান, কিছু হিন্দু, গোড়া হিন্দু, সাম্প্রদায়িকতা ছিল না তখন? তখন তো সমাজটা সাম্প্রদায়িকতার জালে একদম জড়ায়ে ছিল। এখন ওইটা অনেকখানি কেটে গেছে।
তারপরেও সাম্প্রদায়িকতা রয়ে গেছে। যেদিনকা সাম্প্রদায়িকতা-এই হিন্দু, ওই মুসলমান, এই খ্রিস্টান-এইসব থাকবে না সেইদিন হব আমরা এক।
ফিরোজ: লালনের সময় তো বিভিন্ন ধর্ম, জাত-পাত ইত্যাদি ছিল সামাজিক সমস্যা। লালন তার জীবন ও গানের ভেতর দিয়ে যেসবের বিরোধীতা করে গেছেন। এখন তো সমাজ পরিবর্তিত হইছে।
নতুন নতুন মাত্রায় সামাজিক সমস্যাগুলা আমাদের সামনে উপস্থিত হচ্ছে। তো বর্তমানে বাউলদের সামাজিক-রাজনৈতিক করণীয়গুলা কী? মানে বাউলরা এখন কী করতেছেন?
(চলবে…)
………..
আরো পড়ুন:
যে পেল সেই রূপের সন্ধান: এক
যে পেল সেই রূপের সন্ধান: দুই
যে পেল সেই রূপের সন্ধান: তিন
যে পেল সেই রূপের সন্ধান: চার
…………
সাক্ষাৎকারটি ফিরোজ এহতেশামের ‘সাধুকথা: ১৩ বাউল-ফকিরের সাথে কথাবার্তা’ বই থেকে পুনর্মুদ্রিত।
স্থিরচিত্র: সংগৃহিত