ভবঘুরেকথা
ফকির লালন শাহ্

ফকির লালনের বাণী : কৃষ্ণলীলা

২০১.
আমি ক্ষণেক থাকি স্বরূপ দেশে
আবার বেড়াই হাওয়ায় মিশে।

২০২.
ভক্তের উদ্দেশ্যে শতদলে মিশে
ঘৃত ছানা পান করি।

২০৩.
আমি অযোধ্যার রাম গোপীগণের শ্যাম
যে ভাবে যখন ডাকে সে ভাবে পুরাই মনোস্কাম।

২০৪.
ভক্তের দ্বারে বাঁধা আছি তাই
শান্তিরসে ভোর করি।

২০৫.
আমাকে ধরা সহজ নয় আমি যশোদার কানাই
ভক্তের মন রক্ষা করতে গো ধেনু চরাই।

২০৬.
ভক্ত ছাড়া নাই কো আমি
সুবাতাসেতে ঘুরি।

২০৭.
আমি রাই হৃদরসে ভক্তে থাকি মিশে
ভক্তির পরীক্ষা হলে পায় সে আয়াসে।

২০৮.
ধন্য ভাব গোপীর ভাব
আহা মরি মরি।
যাতে বাঁধা ব্রজের শ্রহরি।

২০৯.
ছিলো কৃষ্ণের প্রতিজ্ঞা এমন
তাঁরে যে করে ভজন
তাইতে হয় তারি।

২১০.
সে প্রতিজ্ঞার না রহিল আর
করলো গোপীর ভাবে মনচুরি।

২১১.
ধর্মাধর্ম নাই সে বিচার
কৃষ্ণসুখের সুখ গোপীকার
হয় নিহারী।

২১২.
তাইতে দয়াময় গোপীর সদাই
মনের ভ্রমে তা জানতে নারি।

২১৩.
গোপীকার সামান্য বুঝে
হরিকে না পেলো ভজে
শ্রীনারায়ণী।

২১৪..
ভেবো না ভেবো না ও রাই আমি এসেছি।
আমি যে তোমায় বড় ভালোবাসি।

২১৫.
তুমি ভালোবাস মনে মনে
আমি বাসি তোমায় প্রাণে প্রাণে।

২১৬.
শয়নে কি স্বপনে তোমায় না হেরিলে
বৃন্দাবনে ছুটে আসি।

২১৭.
খুঁজলে পাবে কোথা বনে
আসা যাওয়া আমার নিষ্ঠুর মনে।

২১৮.
কখনো থাকি শ্রীবৃন্দাবনে কখনো গোচরণে
কখনো বাজাই বাঁশি।

২১৯.
মনে করো ও কমলিনী
তুমি তো প্রেম সোহাগিনী।

২২০.
তাইতে লালন ভনে প্রেমের কাহিনী
রাই প্রেমে মগ্ন দিবানিশি।

২২১.
মান কর না ওগো রাধে
তোমায় করি মানা।

২২২.
মনে করিলে ইহকালে
তোমার কাছে কেউ যাবে না।

২২৩.
আমার যতো বৃন্দে সখি
সবাই বলি যুগল দেখি।

২২৪.
সে জন্য তো কাছে থাকি
মনে বুঝে তাও দেখ না।

২২৫.
আমার কথা না রাখিলে
আমি নিশ্চয় যাবো চলে।

২২৬.
কাঁদতে হবে পদতলে
তখন আমরা আর আসবো না।

২২৭.
মনের গোড়া ছাই পরবে রাই
মনে একবার ভেবে দেখো তাই।

২২৮.
জয়কেতে শ্যাম দাঁড়িয়ে কেন
কৃষ্ণপানে চেয়ে,
সকালবেলা ওঁকে ছুঁয়ে
কে মরিবে নেয়ে।

২২৯.
যে ডাকে যায় তারই কাছে
বেড়ায় গোপায় নেচে নেচে
গেছে এঁটো হয়ে।

২৩০.
এঁটো পাতা কে চেটে খাবে
কে হারাতে মেয়ে।

২৩১.
ধনী বলে ও ললিতে
বলো গা ওকে উঠে যেতে
কেন এখানে দাঁড়িয়ে আছে
লাজের মাথা খেয়ে।

২৩২.
আমরা জায়গায় ছড়া-কাটি দিয়ে
আনি যে বয়ে।

২৩৩.
আমার হাড় করেছে কালি
চাইলে উহার রূপের ডালি
লয়ে যাক চন্দ্রাবলী
খাবে ধুয়ে ধুয়ে।

২৩৪.
মান ছেড়ে দাও ওগো রাধে, কৃষ্ণ কেঁদে কেঁদে কয়।
কৃষ্ণ গেলে ইহকালে তোমার কোন গতি নাই।

২৩৫.
কৃষ্ণের প্রতি মান করেছ
কোনটা মনে ভেবেছ
সেটা শুনতে চাই।

২৩৬.
মানের গোড়া
যায় না ছেঁড়া
নিজগুণে কাটো রাই।

২৩৭.
যত কথা বলি আমি
বুঝে দেখ তুমি
ভালোর জন্য বলি সদায়।

২৩৮.
আমার কথা
অমান্য করো না তা
বার বার তা কই তোমায়।

২৩৯.
ধনী মান ছেড়ে দাও
কৃষ্ণপানে স্বচক্ষে চাও
সে তোমার নিশ্চয়।

২৪০.
কালো ভালো নই-বা কিসে বল সবে।
বিচার করে দেখতে গেলে
কালোই ভালো বলবে শেষে।

২৪১.
কৃষ্ণ ছিল গোউর বরণ
বুকে দেখ কালীর চরণ।

২৪২.
সোনাবরণ লক্ষী ঠাকুরিনী
বিষ্ণুর চরণ টিপতেছে।

২৪৩.
কালো পাঠার মাংস ভালো
দুধ ভালো গাই হলে কালো।

২৪৪.
আবার দেখ কালো কোকিলে
মধুরতানে কৃহু-কৃহু ডাকতেছে।

২৪৫.
কালো চুলে শোভে নারী
সাদা হলে হয় সে বুড়ি
লালন বলে রসের বুড়ো
দেখ সাদা চুলে কলপ ঘষে।

২৪৬.
আর কতকাল আমায় কাঁদাবি
ও রাই কিশোরী,
আমি তো তোমার অনুগত
ছরণের ভিখারী।

২৪৭.
ও রাই তোমার জন্যে গোলোক ছেড়েছি
সকল ছাড়িয়ে মানবদেহ ধরেছি
আর কী বাকি আছেরে।

২৪৮.
এ ভাব করিয়ে স্মরণ, তুমি দাও হে চরণ
আপাতত: প্রাণ শীতল করি।

২৪৯.
বনে বনে ধেনু চরায় কেবা রাই
তোমার চন্দ্রবদন হেরিব মনে অন্য আশা নাই
ঐ রূপ জাগে যখন অন্তরে।

২৫০.
তখন উদাস মনে, ঘুরি বনে বনে
আবার মুগ্ধমনে বাজাই বাঁশরী।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!