ব্রাহ্মধর্ম্ম গ্রহণ ও ধর্ম্মদীক্ষা
যাঁহারা কেবল ধর্ম্মমতের পরিবর্ত্তনের জন্য নয়, কিন্তু প্রবল ধর্ম্মাকাঙ্ক্ষায় পরিচালিত হইয়া ব্রাহ্মধর্ম্ম গ্রহণ করেন এবং ব্রাহ্মসমাজে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে সর্ব্ব বিষয়ে ঈশ্বরের ইচ্ছাতে আত্মসমর্পণ করিবার জন্য যাঁহারা সঙ্কল্পরূঢ় হন, তাঁহাদের পক্ষে ব্রাহ্মধর্ম্ম গ্রহণ ও ধর্ম্মদীক্ষা উভয় অনুষ্ঠান এক হইয়া দাঁড়ায়। এরূপ স্থলে ব্রাহ্মধর্ম্ম গ্রহণের পদ্ধতি অনুসৃত হইবে।
এইরূপ একটি অনুষ্ঠানে অবলম্বিত উপদেশের ধর্ম্ম নিম্নে মুদ্রিত হইবে।
“কল্যাণভাজন শ্রী… …, আজ তুমি যে সঙ্কল্প গ্রহণ করলে, তার দায়িত্ব ও গুরুত্ব ভাল ক’রে অনুভব কর। আজ তুমি শুধু মানুষের সম্মুখে নিজের মতামত স্বীকার করচ না; কিন্তু ঈশ্বরের অনুগত হ’য়ে চলবে ব’লে, তিনি চালক হ’য়ে যে পথে তোমাকে চালাবেন সে পথেই তুমি চলবে ব’লে, তিনি চালক হ’য়ে যে পথে তোমাকে চালাবেন সে পথেই তুমি চলবে ব’লে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হ’চ্চ।
ঈশ্বরের বিশেষ করুণা ভিন্ন এই শুভ সঙ্কল্প প্রাণে উদয় হয় না। আজ তোমার এই সঙ্কল্পে তুমি তাঁর হাত দেখ এবং তাঁর হাতে তুমি পূর্ণভাবে আত্ম সমর্পণ কর। ধর্ম্মজীবনের পথে চলবার এক মাত্র মন্ত্র, ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন। আজ তোমার প্রাণ ঈশ্বরকে বলুক, যে যায যাক্, যে থাকে থাক্, শুনিয়া চলি তোমারি ডাক। আজ ভেবে দেখ, এই মন্ত্রে কি তুমি প্রাণকে বেঁধেছে?
ভেবে দেখ, কেন তুমি সংসারের গুরুজন ও প্রিয়জনদের অসন্তোষ ভাজন হ’তে যাচ্চ, কেন সংসারে এত ক্লেশ উৎপন্ন করতে যাচ্চ। সকলের চেয়ে বড় যিনি, যাঁর প্রিয় হবার জন্য সকলের অপ্রিয় হওয়া সাজে, তাঁর চরণে কি তুমি ভাল ক’রে মাথা রেখেছ? তুমি কি সঙ্কল্প নিয়েছ যে, নিজ ইচ্ছা রুচি বাসনা কল্পনা চিন্তা- সকলেরই উপরে নিরন্তর ঈশ্বরের চক্ষুকে রাখবে এবং তাঁর অনুমোদন ভিন্ন কিছু করবে না?
আজকার এ অনুষ্ঠানকে তুমি শুধু সমাজ পরিবর্ত্তন ব’লেও দেখো না। ইহা জীবন পরিবর্ত্তন। রোমান্ ক্যাথলিকদের মধ্যে যারা সন্ন্যাস গ্রহণ করে, তাদের সম্বন্ধে পূর্ব্বে এই প্রথা ছিল যে, মৃত দেহের কৃষ্ণবণ্য আবরণ বস্ত্র দিয়ে বেষ্টন ক’রে তাকে মঠের বাহির হ’তে মঠের ভিতরে আনা হ’ত। ইহার মর্ম্ম এই ছিল যে, আজ হ’তে এর সংসারের জীবন শেষ হ’ল, অন্য জীবন আরম্ভ হ’ল। তেমনি তুমি মনে রেখো, আজ হ’তে তোমার নিজ ইচ্ছায় চলার জীবন শেষ হ’ল ; প্রভুর ইচ্ছায় চলার জীবন আরম্ভ হ’ল।
নিরন্তর আত্মপরীক্ষা ও আত্মসমর্পণের দ্বারাই এ জীবন রক্ষা করা সম্ভব হয়। তুমি আত্মপরীক্ষা ও আত্মসমর্পনের ব্যাকুলতাকে আগুনের মতন প্রাণে জ্বালিয়ে রাখবে ; কখনও নিস্তেজ হ’তে দেবে না। যে-সঙ্গে, যে-প্রভাবে এই ব্যাকুলতাকে ক্ষীণ করে দেয়, তাকে সর্ব্বদা বিষের ন্যায় ত্যাগ করবে।
এঁরা এখন ব্রাহ্মসমাজে দেহে না থাকলেও প্রাণ রূপে আছেন। এঁরাই তোমাকে আদর করে গ্রহণ করচেন, ইহাই আজ তুমি সর্ব্বাগ্রে অনুভব কর। তার পর আমরা এঁদের পশ্চাতে আছি। আমরাও তোমাকে আদর করে গ্রহণ করছি। আজ ঈশ্বরের আশীর্ব্বাদ, সেই পুজ্য অগ্রণীদের আশীর্ব্বাদ এখানে উপস্থিত সকলের আশীর্ব্বাদ ন্ত্রতামার মস্তকে পতিত হোক।”
ঈশ্বরের চরণদুর্গে তুমি অভয় আশ্রয় লাভ কর। তা হলে পাপ প্রলোভন, লোকনিন্দা বিদ্রূপ উপহাস, দু:খ দারিদ্র্য অন্ধকার, কিছুই তোমাকে পরাস্ত করতে পারবে না। তাঁরি দিকে তাকাও, আমাদের দিকে তাকাইও না। সংসারের লোক তোমাকে বলতে পারে, ব্রাহ্মসমাজ কি একটা যাবার জায়গা? ওখানকার মানুষগুলি অপদার্থ ওখানে প্রাণ নাই।
তখন তুমি সেই সত্যস্বরূপ পবিত্রস্বরূপ পরমেশ্বরের দিকে দৃষ্টি রেখো। ব্রাহ্মসমাজকে শুধু কয়েকজন দুর্ব্বল মানুষের সমাজ বলে দেখো না। ধর্ম্মবীর কর্ম্মচারী চরিত্রবীরগণের জীবনের দ্বারা। ব্রাহ্মসমাজের ইতিহাস উজ্জ্বল। ব্রাহ্মসমাজ কাদের সমাজ? রাজর্ষি রামমোহন, মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ, ব্রহ্মানন্দ কেশবচন্দ্র, আচার্য্য শিবনাথ- প্রথমত: ও প্রধানত: এঁদের সমাজ বলেই ব্রাহ্মসমাজকে ভাব।
এঁরা এখন ব্রাহ্মসমাজে দেহে না থাকলেও প্রাণ রূপে আছেন। এঁরাই তোমাকে আদর করে গ্রহণ করচেন, ইহাই আজ তুমি সর্ব্বাগ্রে অনুভব কর। তার পর আমরা এঁদের পশ্চাতে আছি। আমরাও তোমাকে আদর করে গ্রহণ করছি। আজ ঈশ্বরের আশীর্ব্বাদ, সেই পুজ্য অগ্রণীদের আশীর্ব্বাদ এখানে উপস্থিত সকলের আশীর্ব্বাদ ন্ত্রতামার মস্তকে পতিত হোক।”
…………………………
ব্রাহ্মধর্ম্ম ও ব্রাহ্মসমাজ
……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….
………
আরও পড়ুন-
ব্রাহ্মসমাজ
সাধারণ ব্রাহ্মসমাজের সভ্য হইবার যোগ্যতা
ব্রাহ্ম ধর্মের মূল সত্য
ব্রহ্ম মন্দিরের ট্রাস্টডিড
ব্রাহ্মধর্ম্মের মূল সত্য
আত্মা
মানুষের ভ্রাতৃত্ব
উপাসনা ও প্রার্থনা
শাস্ত্র
গুরু
মধ্যবর্ত্তী ও প্রেরিত
সুখ-দু:খ : দু:খবাদ ও আনন্দবাদ
পাপ ও পুণ্য
পুনর্জ্জন্ম
পরকাল
স্বর্গ ও নরক
ধর্ম্ম রক্ষা
পরিবারে পুরুষ ও নারীর অধিকার-সাম্য
ব্রাহ্মসমাজের প্রতি ব্রাহ্মদিগের কর্ত্তব্য
সমবেত উপাসনা
পূর্ণাঙ্গ উপাসনার আদর্শ
স্তুতি
বিবিধ অবস্থায় প্রার্থনা
নৈমিত্তিক অনুষ্ঠান
সন্তান জন্ম
ব্রাহ্মধর্ম্ম গ্রহণ ও ব্রাহ্মসমাজে প্রবেশ
ধর্ম্মসাধন ব্রতে দীক্ষা
ব্রাহ্মধর্ম্ম গ্রহণ ও ধর্ম্মদীক্ষা
বিবাহ ও তাহার আনুসঙ্গিক অনুষ্ঠান
বিবাহের বাগদান
বিবাহ
মৃত্যু ও অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়া
শ্রাদ্ধ
গৃহ প্রবেশ
ব্রহ্ম ও ব্রহ্মের স্বরূপ
ব্রহ্ম ধ্যান
ব্রাহ্মধর্ম
সকলেই কি ব্রাহ্ম?
ব্রাহ্মোপসনা প্রচলন ও পদ্ধতি
আদি ব্রাহ্ম সমাজ ও “নব হিন্দু সম্প্রদায়”
পূর্ণাঙ্গ উপাসনার আদর্শ