ভবঘুরেকথা
ফকির লালন

ভক্তের দ্বারে বাঁধা আছেন সাঁই

-মূর্শেদূল মেরাজ

মাই ডিভাইন জার্নি : পনের

নওগাঁর লুৎফর বাউলের সাথে পরিচয় ঘটেছিল এই কংক্রিটের শহর ঢাকাতেই। মলিন বস্ত্র পরিহিত লুৎফর রহমান যখন মঞ্চে গাইতে উঠলেন, উপস্থাপক তাকে লালন শিল্পী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিলেন। যদিও সেদিন অনুষ্ঠানের প্রাসঙ্গিকতায় ভিন্ন মহতের গান পরিবেশন করেছিলেন তিনি।

সেই দলে কয়েকজন লালন গানের শিল্পী থাকায় আলাপ জুড়ে দিতে বেশি সময় লাগলো না। জানা গেলো, তাদের অনেকে জীবনের শেষ প্রান্তে চলে আসলেও, এই প্রথম ঢাকা শহরে এসেছেন। গ্রামে কৃষি কাজ করেন। তবে সন্ধ্যা হলেই একত্রিত হন লালনে ডুবে যেতে।

সকলের মধ্যে লুৎফর রহমান সাধুই আমাকে বিশেষভাবে আকর্ষণ করলো। সকলে অল্প-বিস্তর কথাবার্তা বললেও তিনি ছিলেন চুপচাপ-একাকী। যেন নিজেকে গুটিয়ে রেখেছেন। দেখলেই বোঝা যায় তিনি আড্ডাবাজ মানুষ। মনের মানুষ। নিরবতাই তার প্রতি আরো বেশি উৎসাহি করে তুললো আমাকে।

অনেক কৌশলে দলের প্রধানদের পাশ কাটিয়ে তার কাছাকাছি হলাম। কথায় কথা বাড়লো। আলাপ জমলো। ইচ্ছা ছিল তার দরদী কণ্ঠে লালনের বাণী শুনবো। কিন্তু সারাদিন বাসে ভ্রমণ করে এসে অনুষ্ঠান করে ততক্ষণে সকলেই ক্লান্ত। রাতটা কোনো মতে কাটিয়ে ভোরের আলো ফুটতেই আবার ফিরে যাবেন পাহাড়পুর।

উনারও ইচ্ছে ছিল আমাকে অন্তত একটা পদ শোনাবেন। কিন্তু পরিস্থিতি অনুকুলে নেই। অনুষ্ঠান শেষে তাদের ফিরতে হবে আয়োজকদের ব্যবস্থা করা নির্দিষ্ট থাকার স্থানে। আমাকেও ফিরতে হবে নীড়ে। কিছুদিন পরই দোল পূর্ণিমা। তাই জানতে চাইলাম কুষ্টিয়ায় সাঁইজির আখড়ায় কি দেখা হবে? দোল পূর্ণিমার সাধুসঙ্গে??

যে আনন্দ নিয়ে শহরের অভিজাত এলাকায় ছুটে গিয়েছিলাম গান শুনতে, ততক্ষণে সেই খুশি খুশি ভাবটা আর নেই। লুৎফর বাউলের কথাগুলো গভীর ভাবনায় ফেলেছে। ভাবছিলাম সাঁইজির ধামে যাওয়ার জন্য আকুল হয়ে থাকা এক সাধকের কথা। কিন্তু সামান্য কিছু টাকার জন্য তাকে বসে থাকতে হয় যোজন যোজন দূরে।

লালন গানের সাধক শিল্পী লুৎফর রহমান অসহায়ের মতো আমার দিকে তাকিয়ে বললো, বাপু! নওগা থেকে কুষ্টিয়া যাইতে তো অনেকগুলা টেকা লাগে। এতো টাকা জোগার করতে পারি না। বয়স হইছে এখন তো জমিতে আগের মতো কাজও করতে পারি না। টাকাও থাকে না হাতে।

আমাদের গ্রাম ও আশপাশ থেকে অনেকেই যায় সাঁইজির ধামে। আমি টাকা দিতে পারি না, তাই এখন আর আমারে নেয় না সাথে। আগের বয়স থাকলে হাঁইটাই রওনা দিতাম। অহন দেহে কুলায় না বাপু।

তাও সাঁইজির ধামে তো যাইতেই হয়। তবে বছরের দুই অনুষ্ঠানে পারি না। দোলে যাইতে পারি না, তয় কার্তিকের সাধুসঙ্গে যাই টেকা জোগাইতে পারলে।

আমরা বড় রাস্তায় যাওয়ার আগ পর্যন্ত পায়ে হেঁটে এগিয়ে চলছিলাম। গ্রামের একদল শিল্পী, যাদের বেশিভাগ হয়তো শিল্পী হিসেবে সেভাবে কখনো সামান্য সম্মানটুকু পায়নি। তারা ঢাকা শহরে এসেছেন গান পরিবেশন করতে। সেকারণেই তাদের আনন্দের সীমা নেই। ক্লান্ত দেহে বাদ্যযন্ত্রের বক্সপেটরা বয়ে নিয়ে হাসি হাসি মুখেই সকলে চলছে। সাথে আমিও।

যে আনন্দ নিয়ে শহরের অভিজাত এলাকায় ছুটে গিয়েছিলাম গান শুনতে, ততক্ষণে সেই খুশি খুশি ভাবটা আর নেই। লুৎফর বাউলের কথাগুলো গভীর ভাবনায় ফেলেছে। ভাবছিলাম সাঁইজির ধামে যাওয়ার জন্য আকুল হয়ে থাকা এক সাধকের কথা। কিন্তু সামান্য কিছু টাকার জন্য তাকে বসে থাকতে হয় যোজন যোজন দূরে।

মাঝে আমার সাঁইজির ধামে যাওয়া হয়নি দুই/এক বার। অনুষ্ঠানের সময় সাঁইজির ধাম থেকে দূরে থাকতে যে কি পরিমাণ মানুষিক কষ্ট নিয়ে থাকতে হয়; তা কাউকে বলে বোঝানো সম্ভব নয়। সেই যন্ত্রণা সহ্যের বাইরে। আমার মতো নিকৃষ্ট ভক্তের যদি মনের অবস্থা এমন হয়, তাহলে যারা জীবন বাজি রেখেছেন সাঁইজির নামে; তাদের কি অবস্থা হয়?

আর ভাবতে পারছিলাম না, লুৎফর বাউলের কথা বা লুৎফর বাউলদের কথা। ইস্ কত সামান্য ক্ষমতা দিয়ে পাঠালে সাঁই। কারো জন্য কিছুই করতে পারলাম না। নিজের অসহায়ত্বকে বুকে চেপে লুৎফর বাউলের পাশাপাশি হাঁটতে গিয়ে মনে হচ্ছিল- আমাদের মধ্যে পার্থক্য একটাই; লুৎফর বাউল কথাগুলো মুখ ফুটে বলতে পারে, আর আমি পারি না।

আসলেই কি লুৎফর বাউলদের জন্য কিছুই করার নেই? কিচ্ছু করার নেই??

কারো পাশে দাঁড়ানোর জন্য যে আর্থিক ও মানুষিক সক্ষমতা দরকার তা এই জীবনে আর অর্জন করতে পারলাম কই? এসব ভাবতে ভাবতেই কত কত লুৎফর বাউলকে হারিয়ে ফেলি তার হিসেব রাখাও বেশিভাগ সময় কষ্টকর। তারপরও লুৎফর বাউলরা নিশ্চিন্তে থাকতে দেয় না। মনের দৃশ্যপটে উঁকি দিয়ে জানান দিয়ে বলে-

মন আমার কী ছার গৌরব করছো ভবে।
দেখ না রে মন হাওয়ার খেলা
হাওয়া বন্ধ হতে দেরি কি হবে।।

বন্ধ হবে এই হাওয়াটি
মাটির দেহ হবে মাটি,
বুঝে সুঝে হও মন খাঁটি
কে তোরে কতই বোঝাবে।।

থাকলে ঘরে হাওয়াখানা
মওলা বলে ডাক রসনা,
কালশমন করবে রওনা
কখন যেন কু ঘটাবে।।

ভবে আসার অগ্রে যখন
বলেছিলে করবো সাধন,
লালন বলে সে কথা মন
ভুলেছ এই ভবের লোভে।।

বাসা থেকে খানিকটা দূরে হলেও। পুরান ঢাকার আঁকাবাঁকা গলির রাস্তার উপর চায়ের দোকানের এক আড্ডায় সেসময় প্রায়ই যেতাম। সেই গলির উল্টো দিকে আরেকটা সরু গলির মুখে কোমড়ে ছোট্ট লাল গামছা জড়ানো এক জটাধারীকে দেয়ালে ঠেস দিয়ে প্রাশয়ই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতাম।

জটাধারীর চক্ষু রক্তবর্ণ। এক হাতে কবজি থেকে কুনুই পর্যন্ত অনেকটা জায়গা জুড়ে লাল সুতায় মোড়ানো। অন্য হাতে অতি ব্যবহারে তেলতেলে মসৃণ ছোট একটা বাঁকা লাঠি। আড্ডার সদস্যদের কাছে জটাধারীর কথা জানতে চাইলেও কৌশলে তারা যেন তা এড়িয়ে যেত, বলেই মনে হতো। কেউ কিছুই বলতো না। কথা পাল্টে ফেলতো।

তারা চায়ের দোকানের বেঞ্চিতে এমনভাবে বসতো, দেখে মনে হতো তারা চায় না যেন জটাধারীর দিকে নজর পরে। আমিও আর কিছু জানতে চাইতাম না তাদের কাছে।

পরে জেনেছিলাম তারা সকলেই জটাধারীর দরশন প্রার্থী। তবে জটাধারী সন্ধ্যা মিলিয়ে যাওয়ার অনেকটা পরে দেখা সাক্ষাতের পর্বটা শুরু করেন। এর আগে কাউকে কাছে ঘেঁষতে দেন না। যদি ভুল করে কেউ সম্মুখে চলে আসে তাহলে নাকি তার কপালে খারাবি নেমে আসে। এমনটাই প্রচলিত ছিল।

আমার অবশ্য জটাধারীর রক্তবর্ণ চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে মন্দ লাগতো না। যদিও বেশি সময় ধরে তাকানো মুশকিল ছিল। সেই অর্ন্তভেদী দৃষ্টিতে আগুন ঝড়তো। তাকে কথা বলতে দেখনি কখনো। ইশারাতেই কাজ চালাতেন। দুপুরের পর পর এসে দাঁড়াতেন গলির মুখে। একই ভঙ্গীতে দাঁড়িয়ে থেকে সন্ধ্যা একটু ঘন হলে চলে যেতেন উল্টো পথে।

একদিন একা পেয়ে দোকানির কাছে জানতে চাইলাম জটাধারীর কথা। চা দোকানি কানের কাছে মুখ এনে নিচু স্বরে বললো, দাদা! ওনার থেকে সাবধান। ব্যাটা জাদু জানে। তার সাথে কথা বললেই ধরা খায়া যাইবেন। হের অনেক খ্যামতা।

আমি মনে মনে আকর্ষণ বোধ করতে শুরু করলাম। তখন আমার আড্ডায় মূল ফোকাস থাকতো জটাধারী। ভালো করে খেয়াল করতে শুরু করলাম তাকে। অনেক সময় নিয়ে ধীরে ধীরে অত্যন্ত যত্নের সাথে চা পান করত জটাধারী। মাথা নেড়ে ইশারা করলেই দোকানি বিশেষ কাপে তাকে চা দিয়ে আসতো।

চা পান শেষ হলেও ততক্ষণ কাপটা হাতেই ধরে রাখতেন, যতক্ষণ দোকানি তা নিয়ে না আসতো। হাতের ইশারা করলে দোকানি সিগারেট ধরিয়ে তার হাতে গুজে দিয়ে আসতো। মাঝেমধ্যে দোকানির দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য হাতের লাঠিটা দেয়ালে ঠুকতেন। আরেকটা বিষয় লক্ষণীয় ছিল, তিনি যতটা সময় দাঁড়িয়ে থাকতেন ততটা সময় সে গলি দিয়ে তেমন কেউ যাতায়াত করতো না।

সে গলিটা অবশ্য একটা কানা গলি। ভেতরে কোনো দোকানপাট নেই। বেশিভাগ বাড়িরই পেছনের দিক হওয়ায় এমনিতেই যাতায়াত ছিল কম। আরো ভালো করে খেয়াল করার পর বুঝতে পারলাম, এলাকার না হলেও অনেকে দূরত্ব রেখে উল্টো দিকের গলিতে ঘুরঘুর করতো।

সেখানে অল্প বয়সী একটা ছেলে নিচু স্বরে তাদের কিছু বলতো। তারা আরো দূরে গিয়ে অপেক্ষা করতো।

পরে জেনেছিলাম তারা সকলেই জটাধারীর দরশন প্রার্থী। তবে জটাধারী সন্ধ্যা মিলিয়ে যাওয়ার অনেকটা পরে দেখা সাক্ষাতের পর্বটা শুরু করেন। এর আগে কাউকে কাছে ঘেঁষতে দেন না। যদি ভুল করে কেউ সম্মুখে চলে আসে তাহলে নাকি তার কপালে খারাবি নেমে আসে। এমনটাই প্রচলিত ছিল।

কিছুদিনের মধ্যেই জটাধারীর সাথে চোখে চোখে কথা শুরু হলো যেন। একই দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে কোনরূপ ইশারা-ইঙ্গিত না দিয়েই জটাধারী যেন বলতো, ভালো আছ তো?

আমি না বুঝেই মাথা নেড়ে সায় দিতাম।

দৃষ্টিতে কোনো পরিবর্তন না করে কি করে এই কাজটি তিনি করেন, এই রহস্য বুঝতে যেয়েই মনে হয় এমন জায়গায় বসতে বা দাঁড়াতে শুরু করলাম যাতে জটাধারীর দিকে বেশি সময় তাকিয়ে থাকতে পারি, কাউকে কিছু না বুঝতে দিয়ে।

এভাবে চোখে চোখে কথা বাড়তে শুরু হওয়ার কিছুদিন পর সকলের অগোচরে সেই অল্প বয়সী ছেলেটা আমাকে কানে কানে বলে গেলো, ওস্তাদ আপনেরে যাইতে বলছে। আমার পিছে পিছে আহেন।

আমিও অদম্য কৌতূহল দমিয়ে রাখতে না পেরে চললাম তার পিছু পিছু। সেই গলি ধরে অনেকটা এগিয়ে একটা এক পকেটের গ্রিলের দরজা পেরিয়ে অন্ধকার পথ দিয়ে সরু সিঁড়ি বেড়ে উঠে গেলাম দোতলায়। সে জায়গাটা আরো অন্ধকার।

প্রথম যে লম্বা মতো ঘরটায় প্রবেশ করলাম, তার স্বল্প আলোতে দেখলাম এক পাশে পরপর কয়েকটা গ্যাসের চুলা জ্বলছে। সেখানে আশটে গন্ধযুক্ত কি একটা রান্না করছে বেশ বয়স্ক এক নারী। সেই ধোয়া আর গরমের মধ্যেই মেঝেতে বিছানা করে গাদাগাদি করে কয়েকজন দেদারসে ঘুমাচ্ছে।

সেটি পেরিয়ে ঢুকলাম পরের ঘরে। সেখানে মেঝেতে ফরাসের উপর বেশ কয়েকজন নারী-পুরুষ বসে নিচু গলায় নিজেদের মধ্যে গল্পে মশগুল। এরপর কয়েক প্রস্থ পর্দা সরিয়ে ছেলেটা আমাকে যে ঘরটায় ঢুকিয়ে দিলো সেটি একটি ভিন্ন জগৎ। ঘরটিকে মোটামুটি বড়ই বলা যায়। যার সর্বত্র ভারি কাপড়ের পর্দায় মোড়া।

স্বল্প পাওয়ার জ্বলে থাকা বাতির আলোতে চোখে পরলো- ঘরের প্রায় মাঝামাঝি জায়গাতে মেঝের উপরেই একটা ছোট্ট অগ্নিকুণ্ড। অগ্নিকুণ্ড ঘিরে তিনপাশে বিভিন্ন আকার-আকৃতির মোমবাতি-আগরবাতি জ্বলছে। তারই একপাশে জটাধারী পদ্মাসনে বসে আছে।

পরনে লাল বস্ত্র, কপাল থেকে মাথার মধ্যখান পর্যন্ত মোটা করে দেয়া সিঁদুর। সেই বাঁকা লাঠিতে ভর করে আছে দুই হাত, মাথাটা সামনের দিকে ঝুঁকে আছে।

অল্প বয়সী ছেলেটা আমাকে রেখে চলে গেছে। অন্ধকার সয়ে আসতে দেখতে লাগলাম ঘরের চারপাশ জুড়ে নানা ধরনের জিনিসপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ঠিক চলচ্চিত্রে যেমন তান্ত্রিকদের কল্পিত ঘর সাজানো হয় অনেকটা তেমন। তবে এ ঘরের কোনো কিছুই নতুন নয়। অতি ব্যবহারে তেলতেলে মসৃণ এবং বেশ চকচকে।

কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। ধূপ, আগরবাতি আর অগ্নিকুণ্ড থেকে আসা বিচিত্র একটা গন্ধে মাথা ধরে যাচ্ছিল। একসময় জটাধারী মুখ তুলে তাকালো। তার চোখের আগুন এখন অনেক বেশি তীব্র। ইশারায় বসতে বললেন পাশে। শতরঞ্জির উপর বসে অবাক বিস্ময় আগুনের পাশে লাল সিঁদুরে মাখানো খুলিটা দেখছিলাম।

এর আগেও বেশ কয়েকবার মানুষের খুলি দেখেছি। মেডিকেলের শিক্ষার্থীদের সেসব খুলি এমন ভয়ঙ্কর দেখতে নয় মোটেও। জটাধারী নিরবতা ভেঙ্গে বললো, ‘ক্ষমতা লুকায়া রাখবার লাগে। ক্ষমতা দেখাইবার জিনিস না। ক্ষমতা রাখবা লুকায়া।

ভয় পেয়েছিলাম কিনা জানি না। তবে বহুদিন সেই পাড়ায় আর যাইনি। জটাধারীর সাথে পরবর্তিতে আবারো সাক্ষাৎ হয়েছে বহুবার, সে অন্য গল্প। এতো বছর পর হিসেব করলে দেখা যায়, জটাধারীর কথাই ঠিক। ক্ষমতার পথ আমার নয়। আসলেই নয়। নইলে কি আর আমার দশা এমন হয়?

যদি ষোল আনার চৌদ্দ আনা জানো, তাইলে দেখাইবা দুই আনা, বলবা দুই আনা। দশ আনা নিজের ভিতরে রাখবা। দেখাইবা না-বলবা না। বেকুবরা ক্ষমতা দেখায়া বেড়ায়। বেকুবরা সব বইলা বেড়ায়। চালাক হইবা। তয় চতুর হইবা না।’

এরকম অনেক কথাই বলেছিল। সব কথা মনে নেই। তিনি যা বলতে চেয়েছিল তার সারমর্ম হলো- ক্ষমতা অর্জন করা সম্ভব। কিন্তু তার জন্য চাই সাধনা। সাধনে অপার্থিব সব ক্ষমতা অর্জন করা সম্ভব। যার দ্বারা সকলকে হাতের মুঠোর রাখা যাবে। সকল কিছু নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। তবে তার জন্য করতে হবে ত্যাগ-উৎসর্গ-বিসর্জন।’

আমার ডান হাতের তালু শক্ত করে অনেকটা সময় চেপে ধরে থেকে জটাধারী বলেছিল, ‘এইটা তোর পথ না। তুই যা… চইলা যা। এই খানে আর আসবি না। আমি ডাকলেও তুই আর কখনো আসিস না। চইল্যা যা।’

সেই সময়টায় আমি আগাগোড়া যুক্তিবাদী। জটাধারীর কথা বা তার কাণ্ডর্কীতি বিশ্বাস করার কোনো মানেই হয় না। তবে যে পরিবেশে তিনি এসব কথা বলছিলেন স্বীকার করতেই হবে, তা ছিল বেশ গা ছমছম করা। মনে হচ্ছিল যত দ্রুত সম্ভব এ কক্ষ থেকে বের হয়ে যেতে পারলেই মঙ্গল।

জটাধারীও আমাকে বেশিক্ষণ আটকে রাখেনি। এটা সেটা কত কি দিয়ে একটা কবজ ধারণ করার কথা বলেছিল। আমি সেসবে পাত্তা দেইনি। ঘোরের মধ্যে দুলতে দুলতে কিভাবে যে ফিরেছিলাম তার বর্ণনা দেয়া সম্ভব নয়।

ভয় পেয়েছিলাম কিনা জানি না। তবে বহুদিন সেই পাড়ায় আর যাইনি। জটাধারীর সাথে পরবর্তিতে আবারো সাক্ষাৎ হয়েছে বহুবার, সে অন্য গল্প। এতো বছর পর হিসেব করলে দেখা যায়, জটাধারীর কথাই ঠিক। ক্ষমতার পথ আমার নয়। আসলেই নয়। নইলে কি আর আমার দশা এমন হয়?

ক্ষমতার পথ আমার নয় বলেই কি ফকিরিকে ভালোবেসেছি? কিন্তু ভালোবেসেই বা কি পেলাম?? না ফকিরের চরণ-না ফকিরি। তবে এ কথাও ঠিক, এ নিয়ে হা-হুতাশ করার মতো প্রাণী আমি নই। পথিকের কাজ পথ চলা। প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসেবে কি আর পথ এগোয়? পথিকের কাজ তো পথ চলা। তাই না? সেই ভরসাতেই পথ চলি।

যখন সেইসব সকল বন্ধুদের ত্যাগ করেছি যাদের সাথে কেমন আছি, ভালো আছির পর আর কোনো কথা খুঁজে পাই না। যাদের সঙ্গ আর আনন্দ দেয় না। কার কি আছে, কি নেই, সেই সব হিসেবের যোগ বিয়োগ গুণ ভাগের একই কথার পুনরাবৃত্তি যখন বিরক্ত করছিল।

তখন বাদ দিতে দিতে দেখি ঝুলিতে আর কোনো বন্ধু অবশিষ্ট নেই। এখানে এ কথা স্বীকার করে নিতে লজ্জা নেই, আমিও কারো ভালো বন্ধু হয়ে উঠতে পারিনি কখনোই।

এই পাহাড় সম শহরে আড্ডা বন্ধ করে দিলে মধ্যবিত্ত বাঙালী মানুষিকতায় বেঁচে থাকা কতটা দুঃসাধ্য তা কি আর বলে বোঝোতে হবে? আড্ডাবাজ মাত্রই তা অনুধাবন করতে পারবে। এটা সেটা কত কিছুই করি কিন্তু মন ভরে না। ঠিক তখনি সে দম বন্ধ করা একঘেয়ামী জীবনে এক খণ্ড আশ্রয় হয়ে উঠেছিল স্বামীবাগের লোকনাথ বাবার আশ্রম। বাবার আশ্রমে কি আছে জানি না। তবে গেলে মন ভালো হয়ে যায়।

সময়ে সময়ে আমি লোকনাথ বাবা আর ফকির লালনকে ভিন্ন করতে পারি না। তারা দু’জনই জীব তরাতে এসেছিলেন এই ধরণীতে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো তারা দুই জন একই সময় বাঙলা অঞ্চল আলো করে রেখেছিলেন। আবার একই বছর দুইজন দেহত্যাগ করেন। বাবা জ্যেষ্ঠে আর সাঁইজি কার্তিকে। সময়ের হিসেবে লোকনাথ বাবা সাঁইজির কয়েক দশক আগে এই রূপে জন্মেছিলেন। যাক সে কথা।

সন্ধ্যা ভক্তির আগে বাবার আশ্রমে নিবেদন সংগীতে রাম প্রসাদী গান হলেও মাঝে মাঝেই কেউ কেউ গেয়ে উঠে সাঁইজির পদ। কেনো জানি না, লোকনাথ বাবার আশ্রমে যখন সন্ধ্যায় সাঁইজির পদ হয় তখন মন চনমন করে উঠে। ভাবতে বেশ লাগে, এক মহত শুনছেন আরেক মহতের গান।

ঠিক এই তরঙ্গটা ধরবার জন্য সন্ধ্যা হলেই কেউ জেনো আমাকে টানতে শুরু করে। আমার সকল রাস্তাই যেন গিয়ে মিলে বাবার আশ্রমে।

আমিও রওনা দেই আমার মনের পিছু পিছু। আমার শহুরে সাঁইজির কাছে। যিনি বুক চিতিয়ে ভক্তদের উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, ‘রণে বনে জলে জঙ্গলে যখনই বিপদে পরবে, আমাকে স্মরণ করো, আমিই রক্ষা করব।’

আর লালন সাঁইজি বলেছেন- ‘হক নাম বল রসনা, যে নাম স্মরণে যাবে জঠর যন্ত্রণা।’

যে যোগ-বিয়োগের হিসেব না মেলাতে পেরে বন্ধু-সাথী-সঙ্গীদের ত্যাগ করেছিলাম। সেই যোগ বিয়োগের হিসেবই মিলিয়ে দিয়েছিল বাবার আশ্রমে আসা এক সাধুগুরু। সেই সাধুকে মাঝে মাঝেই বাবার আশ্রমে এক কোনে চুপটি করে বসে থাকতে দেখতাম।

এই এক আর এক মিলনে যখন দুই হয় তখন হইলো যোগ। মানে দুই জনের সাক্ষাৎ। আরো গভীরে বললে তা হইলো ‘মেরাজ’। মানে ঊর্দ্ধলোকের সাক্ষাৎ। এ সাক্ষাৎ কোনো সাধারণ সাক্ষাৎ নয় বাপ।

তিন মাথা এক করে বসে থাকতেন তিনি। আমিও সেখানে কাউকে চিনি না। কারো সাথে আলাপ নেই। আমিও ঘুরে ঘুরে দেখি। কোথাও বসে থাকি। সময় কাটাই।

একদিন সন্ধ্যার আরতির আগে যখন সেই সাধুগুরু সাঁইজির বাণী ধরলেন তার দরদী কণ্ঠে, সেদিন পণ করলাম উনার সাথে কথা বলতেই হবে। তক্কে তক্কে থাকায় সুযোগও এসে গেলো একদিন। আলাপে জানলাম ঢাকায় এক ভক্ত ছেলের বাড়িতে এসেছেন। নিবাস ঝিনাইদহ।

ভক্ত ছেলে সারাদিন অফিসে থাকে। সে সময় বাড়িতে একা সময় কাটে না। তাই বাবার আশ্রমে চলে আসেন। মানুষ দেখে দেখে বেশ সময় কাটে। সাধুর অন্য ভক্তরাও যারা আসে সকলেই সন্ধ্যার পরে। তাই এ সময়টা বাবার আশ্রমেই থাকেন। মিরপুরে এক ভক্ত ছেলে আছে। তার বাসায় উঠলে শাহ্ আলীর মাজারে সময় কাটান।

বয়সের ভারে নুয়ে পরলেও সাধুর কণ্ঠ বেশ টনটনে। বাবার প্রসাদ খেতে খেতে সেই টনটনে কণ্ঠে একদিন আমাকে বললেন-

শোন্ বাপ! মনে রাখবি, ‘এক’ আর ‘এক’ মিলনে, মানে ‘যোগ’ করলে হয় দুই। মানে শিষ্য যখন গুরু পায় বা গুরু যখন শিষ্য পায় তখন এক আর এক মিলে হয় ‘দুই’। এই দুই আবার একও হয় কিন্তু তা আরো অনেক পরের হিসাব।

এই এক আর এক মিলনে যখন দুই হয় তখন হইলো যোগ। মানে দুই জনের সাক্ষাৎ। আরো গভীরে বললে তা হইলো ‘মেরাজ’। মানে ঊর্দ্ধলোকের সাক্ষাৎ। এ সাক্ষাৎ কোনো সাধারণ সাক্ষাৎ নয় বাপ।

ঐ যে একটা পদ আছে না- ‘দেখলে ছবি পাগল হবি, ঘরে রইতে পারবি না।’ এ হইলো সেই পাগল করা দরশন।

সাধক জালাউদ্দিন খাঁর পদ এইটা। মহাত্মা লালন সাঁইজি দেহত্যাগের চাইর বছর পর তেনার জন্ম। তিনিও মস্ত বড় মাপের সাধক। বড় কঠিন কথা বলতেন। গূঢ়রহস্যের কথা। তার পদ বোঝা একটু শক্ত। আমরা তাকে আজো চিনতে পারি নাই বাপ। আজো চিনতে পারি নাই…। যাক সে কথা। যোগ বিয়োগের কথা বলি শোন্-

যখন শিষ্য গুরুর সন্ধান না পেয়ে বিবাগী হয়ে ঘুরে-ফেরে তখন কি হয়? তখন হইলো ‘বিয়োগ’। এক থেকে এক বিয়োগ করলে হয় শূন্য। তাই তখন শিষ্যের ভেতর কেবল শূন্যতা বিরাজ করে। হাহাকারে নিমর্জ্জিত থাকে। এ হইলো বিয়োগের যন্ত্রণা।

বলতে পারিস… যোগই হইলো না তার আবার বিয়োগ কিরূপে? তাই না? কিন্তু এই খানে তর্ক না… বুঝতে হইবো… গুরুর সাথে তো জন্মজন্মান্তরের সম্পর্ক। তাই তারে যতক্ষণ পর্যন্ত না খুঁজে পাওয়া যায় ততক্ষণ তা হয় বিয়োগ। এর জন্যই হইলো হাহাকার… শূন্যতা…

আর শিষ্য যখন গুরুবাক্য মেনে গুরুর গুণ নিজরূপে ধারণ করে, তখন যে গুণের আদান প্রদান হয়; তখন গুরু আর শিষ্য মিলে হয়ে যায় ‘এক’। মানে এক আর একের ‘গুণফল’ হইলো এক। ঠিক কিনা বাপ? গুণ হইলো পূর্ণতা। গুণ ধারণ করতে পারলেই তো গুণী হয়। আর গুরুর গুণ ধারণ করতে পারলে পায় পূর্ণতা।

আর শিষ্য যখন গুরুবাক্য অগ্রাহ্য করে। গুরুর মনে বেদনার সৃষ্টি করে। গুরু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তখন হয় ‘ভাগ’। মজার কথা হইলো, এক আর এক ভাগ হইলোও হয় এক। কিন্তু এই এক পূর্ণতা নির্দেশ করে না। এটা হইলো ভাগফল। মানে খণ্ডন। মানে অসম্পূর্ণ।

ভাগে শিষ্যের মনে বিচ্ছেদ বেদন থাকতেও পারে; নাও থাকতে পারে। শিষ্য যদি তার কৃতকর্মের দহনে জ্বলে তাহলে হয় বিচ্ছেদ আর যদি কৃতকর্মের গড়িমায় উজ্জীবিত থাকে তাহলে ভোগে অহং-এ। তখন সে ডুবে থাকে কামনা-বাসনার মহা সমুদ্রে। সে হয় ব্যভিচারী।

ভাগ বিষয়টা একটু জটিল বাপ। ভাগে গুরু হইলো ‘ভাজ্য’। শিষ্য হইলো ‘ভাজক’। বিচ্ছেদ হলো ‘ভাগফল’। এইখানেই শেষ না। আরেকটা বিষয় থেকে যায় সেটা হলো ভাগশেষ। আর এই বিচ্ছেদে যদি ভাগশেষ বলে কিছু থাকে তবে সেটা হলো গুরুর করুণা আর ভক্তের অনুরাগ।

এর যদি চূড়ান্ত বিকাশ হয় তাহলে গুরু আবার শিষ্যকে গ্রহণ করতেও পারে। কিন্তু ভাগশেষ শূন্য হলে সেই সম্ভবনা আর থাকে না।

বুঝলি বাপ? হিসাব কি মিলল?? হিসাবটা মিলায়া নিতে হয় বাপ। হিসাব না মিললে সাধন-ভজন হইবো কেমনে? সাঁইজির একটা পদ আছে না-

দোটানাতে ঘুরলে পথে
সন্ধ্যে বেলায় উপায় নাই,
কাশী কি মক্কায় যাবি
চল রে যাই।।

মক্কাতে ধাক্কা খেয়ে
যেতে চাও কাশী ধামে,
এমনি জালে কাল কাটালে
ঠিক না মানে কোথা ভাই।।

নৈবেদ্য পাকা কলা
দেখে মন ভোলে ভোলা,
সিন্নি বেলায় দরগা-তলা
তাও দেখে মন খলবলায়।।

চুল পেকে হলে বুড়ো হুড়ো
না পেলে পথের মুড়ো,
লালন বলে, সন্ধি জেনে
না পেলে জল নদীর ঠাঁই।।

যোগের… গুণের… গুরু যেমন আছে জগতে, তেমনি আছে ভোগের গুরুও। সেই ধারায় গুরুবাদের অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে একে ব্যবসায় পরিণত করেছে অনেকে। বাহারি সব লোক দেখানো কায় কারবার ফেঁদে তারা লোভী মানুষদের ফাঁদে ফেলে।

যারা জগতে কেবল চাই চাই করে। কামনা-বাসনায় ডুবে থাকে। আমার আমার করে দিশাহারা থাকে তারা এদের এড়াতে পারে না।

তখন ঘোর বর্ষা, বন্যা হয় হয় করছে। নদী-নালার পানি ফুলে ফেঁপে ফোসফোস করছে। এক বন্ধুর সাথে গেছি চাঁপাইনবাবগঞ্জ। সে আবার নিয়ে গেছে তার এক বন্ধুর বাসায়।

যাত্রার শুরুতে বৃষ্টিটা টুপটাপ শব্দে পড়লেও যখন সেই বন্ধুর বড়িতে গিয়ে পৌঁছালাম সেই যে মুষল ধারায় বৃষ্টি শুরু হলো, তা আর শেষ হয় না। ঘুরাঘুরি মাথায় উঠলো। বেলায় বেলায় খাও আর ঘুমাও। তার উপর বিদ্যুৎ একবার গেলে দিন ঘুরে গেলেও আসার নামটি নেয় না।

বিলাসের মধ্যে একটাই, সারাদিন নানা জাতের বাহারি সব আম খাওয়া। বন্ধুটির মা পরম যত্নে সেই আম কেটে কেটে খাওয়ায় আর বলে, সেটা তার বাপের বাড়ির কোন আত্মিয়ের কোন বাগান থেকে পাঠিয়েছে। কিন্তু আমাদের মন মরা ভাব কাটে না কিছুতেই।

শেষে তৃতীয় দিন সকালে বন্ধুর মা বললো, এক কাজ করো নইলে, ওর বড় মামার বাড়িতে যাও। সেখানে গুরুজী আসছেন। নানান লোকজন আছে তোমাদের ভালো লাগবে। একেবারে বাড়ি পর্যন্ত গাড়ি যায়, সমস্যা হবে না।’

খাবার পৌঁছে দিতে গিয়ে দেখি। আমরাই নই এমন হাড়ি-পাতিল-সসপেন-হটপট-টিফিন ক্যারিয়ারে করে অসংখ্য মানুষ খাবার নিয়ে সেখানে লম্বা লাইনে অপেক্ষা করছে। মামা বাড়ি বলেই হয়তো সকল নিয়ম ভেঙ্গে আমরা সেই বিশেষ ঘরে প্রবেশের অনুমতি পেয়ে গেলাম।

আমরাও সেই ভালো হবে এমনটা ভেবে, দুপুরের খাওয়ার পাট চুকিয়ে মামা বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। যাওয়ার সময় বুঝলাম বিষয়টা ভিন্ন। বন্ধুর মা গুরুর জন্য বিভিন্ন পদের রান্না করে পাঠাচ্ছেন আমাদের দিয়ে।

তিনি নিজ পুত্রকে এই বৃষ্টির মধ্যে কোনো ভাবেই এতো সব জিনিসপত্র দিয়ে পাঠাতে রাজি করাতে না পেরে আমাদের ফাঁদে ফেলেছেন। অগত্যা আমরা বৃষ্টির মধ্যে সেই খাবার-দাবারের মহাসমারোহ নিয়ে হাঁটুজল টপকে কোনো মতে আছাড় খাওয়া থেকে বেঁচে বন্ধুর মামার বাড়িতে উপস্থিত হলাম। পথের দুঃসহ বিবরণ আর নাই বা দিলাম।

সেখানে গিয়ে দেখি এলাহি কারবার। বিশাল জায়গা নিয়ে ছড়ানো বাড়ির একটা অংশ সাজানো হয়েছে জমকালো করে। দামী দামী পর্দা, জড়ি, ঝালর, ঝাড়বাতি, আলোকসজ্জা দিয়ে মুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বৃষ্টির মধ্যেও অনেক লোকের সমাগম। সকলে ব্যস্ত। কথা বলার ফুরসত নেই কারো। শেষে বন্ধুর মামী এসে আমাদের উদ্ধার করে ভেতরে নিয়ে গেলেন।

খাবার পৌঁছে দিতে গিয়ে দেখি। আমরাই নই এমন হাড়ি-পাতিল-সসপেন-হটপট-টিফিন ক্যারিয়ারে করে অসংখ্য মানুষ খাবার নিয়ে সেখানে লম্বা লাইনে অপেক্ষা করছে। মামা বাড়ি বলেই হয়তো সকল নিয়ম ভেঙ্গে আমরা সেই বিশেষ ঘরে প্রবেশের অনুমতি পেয়ে গেলাম।

ভেতরে প্রবেশ করতেই দামী আতরের তীব্র গন্ধের সাথে আগরবাতির গন্ধ মিশে একটা মাতাল করা পরিবেশে গিয়ে পরলাম। চকচকে দামী টাইলসের মেঝেতে দামী কার্পেটের উপর বিশাল জায়গা জুড়ে নরম বিছানা পাতা। তার এক কোণে গুটিকয়েক লোক বসে আছে।

মাঝে বিশাল বিশাল বাহারি থালার উপর মোমবাতি-আগরবাতি সব জ্বলছে। পাশেই মখমলের তক্তোপসে সবুজ চাদরের উপর জড়ির কাজ করা দামী আসনের উপর নবাবী কায়দায় বাঁকা খাস্তা টুপি পরা একজন প্রকাণ্ড থলথলে দেহের নুরানী চেহারার মাঝ বয়সী লোক হেলান দিয়ে বসে আছেন।

বুঝতে বাকি রইলো না তিনিই গুরুজী। বা পাশের ফাঁকা জায়গাটায় খাবারের সমস্ত কিছু নামিয়ে রাখার পর বন্ধুটি বললো, হুজুর মা আপনার জন্য পাঠিয়েছে। গুরুজী খাবারের উপর একবার নজর বুলিয়ে চোখ বন্ধ করে হাতের ইশারা করলো। তৎক্ষণাৎ দুই-তিন জন সাগরেদ টুপ করে খাবারগুলো পর্দা দিয়ে ঢাকা ভিতরের আরেকটা ঘরে নিয়ে চলে গেলো।

আমরা কার্পেটের উপর পাতা নরম বিছানার এক পাশে বসে পরলাম। গুরুজী আমাদের বিশেষ পাত্তা দিলেন না। লোকজনের আসা যাওয়া চলতে লাগলো। কেউই খালি হাতে নয়। সকলেই খাবার-দাবার টাকা-পয়সা উজার করে দিয়ে চললো। মনে হলো উপঢৌকনের পরিমাণ যাদের বেশি গুরুজী তাদের সাথে সৌজন্যতা ভালোই করলেন।

গুরুজীর সামনে বিশাল জড়ি লাগানো বৃত্তাকার বোলটা বান্ডিল বান্ডিল টাকায় ভরে উঠতে লাগলো। একটা ভরে গেলে সাগরেদরা সেটা ভিতরে নিয়ে আরেকটা খালি বোল রেখে যাচ্ছে। এভাবে চলতে লাগলো।

রাত বাড়তে বাড়তে সাগরেদরা ক্লান্ত হয়ে গেলো জিনিসপত্র টেনে টেনে ভেতরের ঘরে নিয়ে যেতে যেতে। তবে গুরুজীর ভাবসাবে তাকে বেশ নিরাশই মনে হলো। বন্ধুটির মামা অবশ্য বারবার দুই হাত কচলাতে কচলাতে গুরুজীকে বুঝিয়ে বলতে লাগলো, গুরুজী বৃষ্টির জন্য সবাই আসতে পারতেছে না। বাইরে যে অপেক্ষা করবে তারও উপায় নাই উঠানে পানি জমছে। তাই লোকজন কম আজকে।

আমরা একে অন্যের দিকে তাকালাম। বোঝার চেষ্টা করলাম বৃষ্টি না হলে কি হতো! মাহফিল শেষে রাতের খাওয়ার সময় আমরা গুরুজীর সাথে একই রুমে বসলাম খেতে। গুরুজীর খাওয়ার রুচি আর খাবারের বাহারি পদ দেখে আমাদের খাওয়া থেমে গেলো।

মাথার উপর একটা বিশাল ফ্যানের পাশাপাশি দুই পাশে দুটি স্ট্যান্ড ফ্যান চালিয়ে তিনি খেয়েই চলছেন খেয়েই চলছেন। একজন সাগরেদ উনার পেছনে বসে আসে একটু পর পর তার মাথা ঘাড় মুছিয়ে দিচ্ছে। অতি উৎসাহি একজন হাত পাখা দিয়েও বাতাস করছে।

বন্ধুটির মামা-মামী সহ আরো বেশ কয়েকজন ব্যস্ত গুরুজীর পাতে এরপর কি দিতে হবে এই নিয়ে। গভীর রাত পর্যন্ত লোকজন আসতেই থাকলো। আমাদের জন্য দোতলায় থাকবার ব্যবস্থা হয়েছে। বন্ধুটি জানালেন গুরুজী প্রতি বর্ষায় ভক্ত বাড়ি ঘুরে বেড়ান। এ সময় ওয়াজ-মাহফিল বন্ধ থাকে। তাই ভক্ত বাড়ি ঘুরে ঘুরে সময় কাটান।

জেনেছিলাম বর্ষাকলে মহামতি গৌতম বুদ্ধ ভক্তদের নিয়ে আশ্রমেই অবস্থান করতেন তাদের সাধন-ভজন জ্ঞান দেয়ার জন্য। কিন্তু এই গুরুজী দেখি একেবারে উল্টো। তিনি ভক্তদের লুটতে বের হয়ে পরেন ঘোর বর্ষাতেই।

এইভাবে একবার দেশ ঘুরলে নাকি কম করে হলেও কয়েক কোটি টাকা নিয়ে তবে দরবারে ফিরেন। কথাটা এমনিতে শুনলে হয়তো বিশ্বাস হতো না। কিন্তু আমরা কয়েক ঘণ্টায় যা দেখলাম, তাতে অস্বীকারই বা করি কি করে!

পরদিন একটু বেলা করে ঘুম ভাঙার পর ঘর থেকে বেড়িয়ে বাড়ির ছাদের খোলা জায়গাটায় গিয়ে দাঁড়ালাম। আকাশে ঘন মেঘ থাকলেও বৃষ্টি তেমন নাই। নিচে তাকিয়ে দেখি বাইরের উঠানে প্রচুর লোকজন ভিড় করেছে। অনেকেই ভিজে চুপচুপ করছে।

তারা অসহায়ের মতো উঁকি দিয়ে ভেতর বাড়ির পথে তাকিয়ে আছে। তাদের বেশি ভাগকেই দরিদ্র বলেই মনে হলো। কারো হাতে পেঁপে, কারো হাতে আম, কারো হাতে মুরগী ইত্যাদি ইত্যাদি।

দীর্ঘ নি:শ্বাসের শব্দে উপস্থিতি টের পেয়ে বন্ধুটির দিকে তাকাতে সে করুণ স্বরে বললো, বুঝলেন ভাই! এইসব দেখতে চাই না বলেই আসতে চাইনি। এরা সবাই কিন্তু গুরুজীর ভক্ত-অনুসারী। কিন্তু দামী উপহার আনতে পারেনি বলে গুরুজীর দরশন পাচ্ছে না।

গুরুজীকে এক পলক দেখবার জন্য এরা কি না করে। এই বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে কত দূর দূরান্তর থেকেই না এসেছে। দেখেন তাদের বসবার কোনো আয়োজন নাই। অথচ যারা দামী দামী উপহার টাকা-পয়সা নিয়া আসবে তাদের জন্য থাকবে বিশেষ ব্যবস্থা। কাল রাতে তো সব দেখলেনই নিজ চোখে।

-তাহলে এই দরিদ্র লোকগুলোকে গুরুজী দরশন দেবেন না? তারা যা যা এনেছে হাতে করে তা কি নেয়া হবে না??

-আরে ভাই কি বলেন। নিবে না মানে। গুরুজী হইলো রক্তচোষা। আসলে উনার বাবা ছিলেন কামেল লোক। তিনি দেহ রাখছেন। সিলসিলা অনুযায়ী তার পুত্র এখন গুরুর আসন পেয়েছে। উনার মন ভরে না কিছুতেই। দরিদ্র লোকজন বেশি হলে একসময় তিনি বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াবেন। তখন দেখবেন সবাই যা যা এনেছে সবই তার সাগরেদরা ঠিক ঠিক বুঝে নেবে।

এই নি:স্ব রিক্ত মানুষগুলোর কিন্তু এসব দিয়েই মুক্তি দেয়া হবে না। সবাইকেই গুরু ভক্তি হিসেবে অন্তত শ খানেক করে হলেও টাকা দিতে হবে, গুরুজী চলে যাবার আগে ভাগেই। এজন্য তাদের অনেককে করতে হবে ধার-কর্য। দূর দূরান্তর থেকে এ পর্যন্ত আসতেই হয়তো অনেকের অবস্থা খারাপ।

গুরুজীর ঘরে কত খাবার নষ্ট হবে কিন্তু এদের দেয়া হবে না। অথচ দেখেন এদেরই কিন্তু গুরুজীকে দরশন বেশি প্রয়োজন।

এসব ঘটনা দেখে যাওয়া ভিন্ন আর কিইবা করার থাকে। তবে এসব দেখলে গুরু ভক্তি বিষয়টার উপরে বিতৃষ্ণা চলে আসে। অথচ সকল শাস্ত্রই গুরুকে দিয়েছে সর্বচ্চো সম্মানের আসন। বলা হয়েছে গুরুই সকল ভক্তির যোগ্য। এরজন্য রীতিমত রচিত হয়েছে গুরুমন্ত্র। যে গুরুমন্ত্র পাঠ করলে গুরুকে ভক্তি না করে উপায় থাকে না। আবারো খুঁজতে পথে নামতে হয় গুরুর দরশন… গুরুর চরণ…

সেই অবিস্মরণীয় গুরুমন্ত্রটি এই অংশে উল্লেখ না করে পারলাম না-

ওঁ অজ্ঞান-তিমিরান্ধস্য জ্ঞানাঞ্জন-শলাকয়া।
চোখরুন্মীলিতং যেন তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ।।১
মন্ত্রঃ সত্যং পূজা সত্যং সত্যং দেবো নিরঞ্জনঃ।
গুরোর্বাক্যং সদা সত্যং সত্যমেব পরং পদম্।।২

অখণ্ড-মণ্ডলাকারং ব্যাপ্তং যেন চরাচরম্।
তত্পদং দর্শিতং যেন তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ।।৩
পিতৃমাতৃ-সুহৃদ্বন্ধু-বিদ্যা-তীর্থানি দেবতা।
ন তুল্যং গুরুণা শীঘ্রং স্পর্শয়েৎ পরমং পদম্।।৪

গুরুর্ব্রহ্মা গুরুর্বিষ্ণুঃ গুরুর্দেবো মহেশ্বরঃ।
গুরুরেব পরং ব্রহ্ম তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ।।৫
ধ্যানমূলং গুরোমূর্ত্তিঃ পূজামূলং গুরোঃ পদম্।
মন্ত্রমূলং গুরোর্বাক্যং মোক্ষমূলং গুরোঃ কৃপা।।৬

ব্রহ্মানন্দং পরম-সুখদং কেবলং জ্ঞানমূর্ত্তিম্।
দ্বন্দ্বাতীতং গগন-সদৃশং তত্ত্বমস্যাদি-লক্ষ্যম্।।
একং নিত্যং বিমলমচলং সর্ব্বদা সাক্ষিভূতম্।
ভাবাতীতং ত্রিগুণ-রহিতং সদ্গুরুং তং নমামি।।৭
ত্বমেব মাতা চ পিতা ত্বমেব। ত্বমেব বন্ধুশ্চ সখা ত্বমেব।
ত্বমেব বিদ্যা দ্রবিণং ত্বমেব। ত্বমেব সর্ব্বং মম দেবদেব।।৮

সংস্কৃত এই মন্ত্রের সহজ অর্থ করলে আমি যা বুঝি তাও না লিখে থাকি কি উপায়ে-

অজ্ঞান-তিমিরাচ্ছন্ন নয়ন জ্ঞানাঞ্জনের ছড়িতে
উন্মুক্তকারী সেই পরম গুরুকে ভক্তি।১
ব্রহ্মবাক্য সত্য, ব্রহ্মনিবেদন সত্য, সত্য তার সর্বব্যাপীতা
সর্বদা সত্য গুরুবাক্য, সত্য পরমের চরণ।২

অখণ্ড-মণ্ডলাকার চরাচর এই বিশ্ব যাঁর দ্বারা পরিব্যাপ্ত
সেই চরণ যিনি দর্শন করান সেই গুরুর প্রতি ভক্তি।৩
পিতামাতা, সখা-বন্ধু, বিদ্যাবুদ্ধি, তীর্থ, দেবতা
কিছুই তার তুল্য নয় যে পরম চরণের সংস্পর্শ দিবেন গুরু।৪

গুরুই ব্রহ্মা, গুরুই বিষ্ণু, গুরুই দেব মহেশ্বর,
গুরুই পরব্রহ্ম স্বরূপ, সেই গুরুকে ভক্তি।৫
গুরুপ্রতিরূপই ধ্যান, গুরুচরণই নিবেদনের স্থান,
গুরুবাক্যই মন্ত্র, গুরুকৃপাই মুক্তি।৬

ব্রহ্মানন্দ পরম সুখী জ্ঞান-প্রতিরূপ,
দ্বন্দ্বের অতীত, আকাশসম উদার, তত্ত্বের উৎস।
এক, নিত্য, বিমল, অচল, সর্ব্বদা সাক্ষীস্বরূপ,
ভাবাতীত ও ত্রিগুণাতীত, সেই সদ্গুরুকে ভক্তি।৭
তুমিই মাতা, তুমিই পিতা। তুমিই বন্ধু, তুমিই সখা।
তুমিই বিদ্যাবুদ্ধি, তুমিই ধনৈশ্বর্য্য। তাহাই প্রাণদেবতা যথাসর্বস্ব।৮

এই যদি হয় গুরুর স্বরূপ তবে তাঁর চরণে নিবেদিত না হয়ে কি আর উপায় থাকে? তাই গুরু প্রাপ্তিতে ভক্তকে যেমন নিবেদিত হতে হয় তেমনি গুরুকেও ভক্তের প্রাণদেবতা হয়ে উঠতে হয়ে। গুরুকে নিয়ে ভক্তের মনে ভালোবাসা-ভক্তি-শ্রদ্ধার পাশাপাশি প্রশ্ন-জিজ্ঞাসা থাকতে পারে কিন্তু সন্দেহ-সংশয় জাগলেই ঘোর অমানিশা।

অনেকে বলেন, যে গুরু তোমার সম্পূর্ণ চেনা। যার পাশে তুমি সবচেয়ে বেশি সাচ্ছন্দবোধ করো সে তোমার গুরু হবার জন্য যথাযথ নয়। কারণ গুরু এক রহস্যের আধার। তাকে যদি তুমি চিনে ফেলো তাহলে সে তোমার ভালো বন্ধু হতে পারে গুরু কদাৎ নয়।

যে গুরুকে তুমি প্রতিনিয়ত আবিষ্কার করো। যার কথার গভীরতা তোমাকে সর্বক্ষণ ভাবনার অতলে নিয়ে যায় সেই হলো সদগুরু। যার প্রতিক্ষায় আছ তুমি পথ চেয়ে।

একবার এক সাধু বলেছিল, ‘বুঝলা বাপ! ভক্তের টাকায় ঘাড় ভাইঙ্গা খাওয়ার লাইগ্যাও অনেকে গুরু সাজে। দেখবা নিজের সহায় সম্পত্তি সব নিজের পুলাপুনের মধ্যে ভাগ কইরা দিয়ে ভক্তের টেকায় মৌজ করে। আমার গুরু বলতো, আরে বেটা! ভক্তরাও তো তোরই সন্তান, তাই না?

তা সম্পত্তি সব নিজের পুলাপানরে দিলে হইবো? সম্পত্তি সবতেরেই দিতে হইবো সমান ভাগে। তারপর হবি ফকির। সব বিলায়া দিতে না পারলে ফকির কস কেমনে নিজেরে! নিজের পুলাপানরে সব দিয়ে যদি কস তোর কিছু নাই তাইলে কি সুবিচার হইলো?

সবাই কি তোর সন্তান না? খালি আছলাঝোলা নিয়া ঘুরলেই কি আর ফকির হয়রে মদনা। গুরু হওয়ার আগে ভক্ত হ।’

এতো সব হিসেব নিকাষের মাঝে আমার মনে কেবল সাঁইজির এই পদটাই বারবার বাজে-

ভক্তের দ্বারে বাঁধা আছেন সাঁই।
হিন্দু কি যবন বলে জাতের বিচার নাই।।

ভক্ত কবির জেতে জোলা
শুদ্ধ ভক্তি মাতোয়ালা,
ধরেছে সেই ব্রজের কালা
দিয়ে সর্বস্ব ধন তাই।।

রামদাস মুচি ভবের পরে
ভক্তির বল সদাই করে,
সেবায় স্বর্গে ঘণ্টা পড়ে
সাধুর মুখে শুনতে পাই।।

এক চাঁদে হয় জগৎ আলো
এক বীজে সব জন্ম হলো,
লালন বলে মিছে কলহ
ভবে দেখতে পাই।।

(চলবে…)

…………………………..
আলোকচিত্র: ফাহিম ফেরদৌস

…………………………..
আরো পড়ুন:
মাই ডিভাইন জার্নি : এক :: মানুষ গুরু নিষ্ঠা যার
মাই ডিভাইন জার্নি : দুই :: কবে সাধুর চরণ ধুলি মোর লাগবে গায়
মাই ডিভাইন জার্নি : তিন :: কোন মানুষের বাস কোন দলে
মাই ডিভাইন জার্নি : চার :: গুরু পদে মতি আমার কৈ হল
মাই ডিভাইন জার্নি : পাঁচ :: পাপীর ভাগ্যে এমন দিন কি আর হবে রে
মাই ডিভাইন জার্নি : ছয় :: সোনার মানুষ ভাসছে রসে
মাই ডিভাইন জার্নি : সাত :: ডুবে দেখ দেখি মন কীরূপ লীলাময়
মাই ডিভাইন জার্নি : আট :: আর কি হবে এমন জনম বসবো সাধুর মেলে
মাই ডিভাইন জার্নি : নয় :: কেন ডুবলি না মন গুরুর চরণে
মাই ডিভাইন জার্নি : দশ :: যে নাম স্মরণে যাবে জঠর যন্ত্রণা
মাই ডিভাইন জার্নি : এগারো :: ত্বরাও গুরু নিজগুণে
মাই ডিভাইন জার্নি : বারো :: তোমার দয়া বিনে চরণ সাধবো কি মতে
মাই ডিভাইন জার্নি : তেরো :: দাসের যোগ্য নই চরণে
মাই ডিভাইন জার্নি :চৌদ্দ :: ভক্তি দাও হে যেন চরণ পাই

মাই ডিভাইন জার্নি: পনের:: ভক্তের দ্বারে বাঁধা আছেন সাঁই
মাই ডিভাইন জার্নি : ষোল:: ধর মানুষ রূপ নেহারে

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!