সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: দুই
২৬.
স্বপ্নরাজ্যে আমরা বাস করি। এখানকার হাসিকান্না সুখ, দুঃখ অভাব স্বাচ্ছন্দ্যের কোনো মূল্য নাই, সবই নশ্বর; এই আছে এই নেই, সত্য শুধু শ্রী ভগবানের নাম। যত পারিস পুঁজি করতে চেষ্টা করবি। যেমন লোক স্টেশনে গাড়িতে ওঠবার জন্য প্রস্তুত হয়ে গাড়ির অপেক্ষা করে, সেইরূপ সর্বদা প্রস্তুত হয়ে যে নাম নিয়ে থাকতে পারবে, সেই যথার্থ বুদ্ধিমান- কখন ডাক পড়বে ঠিক নাই।
-মণিমালিকা
২৭.
হে পুত্র! প্রত্যহ যার মন্দিরে ‘কৃষ্ণ কৃষ্ণ’ এই নাম কীর্তন হয়, সেস্থানে গয়া, কাশি, পুষ্কর, কুরুক্ষেত্র আদি তীর্থসমূহ নিশ্চল ভাবে অবস্থান করেন। যে কৃষ্ণ নাম অবলম্বন করেছে, যার জিহ্বা কৃষ্ণ নামের রস গ্রহণ করতে সমর্থ হয়েছে, তাকে আর কিছু করতে হয় না। সর্বদা ‘কৃষ্ণ’ ‘কৃষ্ণ’- কারী ভক্তকে আমি বুকে করে রাখি এবং বুকে করে আমার বৈকুণ্ঠে নিয়ে যাই। তুই উচ্চকণ্ঠে কৃষ্ণ নাম কীর্তন কর।
২৮.
নামই পরম ধর্ম, রাজা যুধিষ্ঠির ভীষ্মকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘কো ধর্ম্মো: সর্বধর্মাণাং ভবৎ পরম মতো:’ সকল ধর্মের মধ্যে আপনার মতে কোনটি পরম ধর্ম? তিনি বললেন- আমার মতে সকল ধর্মের অধিকতম ধর্ম ভক্তি সহকারে স্তবের দ্বারা পুণ্ডরীকাক্ষের অর্চনা। নামের মতো আমার আর অন্য স্তব নাই। নামই পরম অর্থ, এ অর্থ লাভ করলে মানুষের পাবার আর কিছু বাকি থাকে না। আরে! নামের বলে আমাকে পায়, তখন পাবার আর কি বাকি থাকে?
২৯.
আধঘণ্টা নামকরে তারপর বোস। এবার ইষ্টমন্ত্র জপ করতে আরম্ভ কর। মন চঞ্চল হচ্ছে? তা হোক। মনস্থির করে জপ নয়, জপ করতে করতে মন স্থির হবে, হবেই হবে। মন চঞ্চল হলেও জপ ব্যার্থ হয় না। যে কটি মন্ত্র জপ করবি, সে কটি বৃথা হবে না। জপ করতে করতে শরীর রোমাঞ্চিত হবে, চোখে জল আসবে, প্রাণটা ভরে যাবে, নাদজ্যোতি পাবি। ক্রমে ক্রমে তু্ই সাধন রাজ্যে প্রবেশ করতে সমর্থ হবি।
-ওঙ্কারনাথ রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড)
৩০.
সুখের আশায় মুগ্ধ হইয়া মরণের উপকূলে ধরিয়া আছি। আয়ু পলে পলে কাল-সাগরে মিলিতেছে। কখন কোন মুহূর্তে মহাকালের প্রলয়-বিষাণ বাজিয়া উঠিবে, তখন সকল সুখের আশায় জলাঞ্জলি দিয়ে শান্ত শিশুটির মতো মরণের কোলে ঢলিয়া পড়িতে হইবে। আশার আবাসে ধূ ধূ করিয়া কালানল জ্বলিয়া উঠিবে, সংসার স্বজন-ধন-মান-গর্ব সব পড়িয়া থাকিবে; সঙ্গী শুধু কর্মফল। সেই কর্মফলকে সঙ্গে লইয়া অজানা অচেনা পথে যাইতে হইবে।
৩১.
‘ছবিতে প্রার্থনা’- না বৃথা নয়। তুই যে এই দেহযন্ত্রের ছবির পূজা করেছিস ভোগ-আদি দিয়েছিস তাতো এর কোনো উপকারের জন্যে নয়- তোর সুপ্ত সদ্বৃত্তি জাগাবার এবং একাগ্রতা বৃদ্ধির নিমিত্ত। যন্ত্রী বিশ্ববোপে আছেন, তিনি সুপ্ত সদ্বৃত্তিকে উদ্বুদ্ধ এবং একাগ্রতা বৃদ্ধি করেন, এ সম্বন্ধে কোনো সংশয় নাই, নাই, নাই। প্রার্থনা সম্বন্ধে তোর কোনটি মঙ্গলজনক তিনি তা বোঝেন এবং তোর যাতে ইহলোক ও পরলোকে কল্যাণ হয় সেই ব্যবস্থা করেন।
-মণিমালিকা
৩২.
গায়ে, দেয়ালে নাম লেখার বিধান আমি দিয়েছি। তার দ্বারা আত্মকল্যাণ ও জগতের কল্যাণ হয়। স্বীয় শরীরে নাম লিখলে শরীর পবিত্র হয়। দেয়ালে নাম লিখলে গৃহই পবিত্র হয়ে যায়। নাম আমি স্বতন্ত্র নই। বিগ্রহ দর্শনে মানুষ যেমন পাপশূন্য হয়, তদ্রূপ দেয়ালে বা কারো গাত্রে নাম অঙ্কিত দেখলে আমাকে দেখা হয়; দর্শনকারীর চক্ষু ধন্য হয়, সে পবিত্র হয়ে যায়। পৌঁছুতে হবে ‘সব বাসুদেবে’- ইন্দ্রিয়গণের দ্বারা যত নাম সঞ্চয় করতে পারা যায় ততই ভালো।
-নামামৃত লহরী
৩৩.
মানুষ গোনা দিন নিয়ে জন্মগ্রহণ করে, সূর্যের উদয়-অস্তের দ্বারা নিত্য সে আয়ু ব্যয়িত হয়। কিন্তু মহামায়ার মায়ায় মানুষ বুঝতে পারে না যে তার গোনা দিন ফুরিয়ে যাচ্ছে। যে দিন চলে গেছে এদিন সেদিন নয়- পরমায়ু গ্রাসকারী নতুন দিন। শত প্রাণপাতেও কেহ পুরাতন একটি দণ্ড বা পল ফিরিয়ে আনতে পারে না। যেদিন কৃষ্ণকীর্তন হয় সেদিন আয়ুর অপব্যয় হয় না, যে কার্য করতে দেহ ধারণ করেছে সে কার্য সফল হয়ে থাকে।
-ওঙ্কারনাথ রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড)
৩৪.
মানুষ জন্ম-জন্মান্তরে যেমন সাধনা করে আসে, তদ্রূপ তাদের অধিকার লাভ হয়। মন্ত্রযোগ, লয়যোগ, হঠযোগ, রাজযোগ, কর্ম, ভক্তি, জ্ঞানের মধ্যে যার যেটি করা আছে তার সেটি ভালো লাগে; সে সেই পথ অনন্য ভাবে ধরে সাধন রাজ্যে অগ্রসর হয়ে আমাকে প্রাপ্ত হয়। পথের ভিন্নতা থাকলেও আমি ভিন্ন নই। যে যে পথ দিয়ে আসুক না কেন, একমাত্র আমাকেই তারা প্রাপ্ত হয়। সকলের প্রাপ্তব্য অদ্বিতীয় পুরুষোত্তম আমি। আমার শরণাগত হয়ে কেবল নাম কর; আমি তোকে মৃত্যু সংসার সাগর হতে উদ্ধার করবো।
-ওঙ্কারনাথ রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড)
৩৫.
তুই নাম কর। আমার নাম আমি শুনতে খুব ভালোবাসি। যে নাম করে, আমি তার দ্বারা ক্রীত হই। নাম মূল্যে ভক্ত আমাকে কিনে ফেলে। তাই কলিযুগের মহামন্ত্র সর্বদা গান করবি, করাবি। বল আমার সঙ্গে বল-
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।
-ওঙ্কারনাথ রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড)
৩৬.
এসো এসো ছুটে এসো- নাম নাও, মানব জনম ধন্য হবে। পরমানন্দ সাগরে ডুবে যাবে। নাম করো নাম করো। আর বিলম্ব করো না। দিন দিন আয়ু চলে যাচ্ছে। উঠতে বসতে খেতে শুতে কেবল বলো-
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ, কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে,
হরে রাম হরে রাম, রাম রাম হরে হরে।।
৩৭.
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।
এ নাম অবলম্বনে পাপী, তাপী, রোগী- শোকী, দরিদ্র সকলের দুঃখ দূর হবেই হবে। নাম করতে কোনো অর্থ ব্যয়ের প্রয়োজন নাই। মাত্র সকালে- সন্ধ্যায় একঘণ্টা করে নাম করলেই শব্দ ব্রহ্মের প্রকৃত রূপ ফুটে উঠবে।
-মণিমালিকা (৩য় অধ্যায়)
৩৮.
ওরে বাস্তুহারা, ওরে সর্বহারা সীতারামের বাবারা! সর্বদা কীর্তন কর। মহামন্ত্র নামের প্লাবনে ভেসে যাক গ্রামের পর গ্রাম নগরের পর নগর। মর্ত্যে নেমে আসুক বৈকুণ্ঠ ভুবন- তোমাদের সহায় শ্রী ভগবান- জপ কর, গুরু গুরু কীর্তন কর-
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।
– মণিমালিকা
৩৯.
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।
হাততালি দিয়ে নাম কর। কিছুক্ষণ করে দেখ, রস পাবে পাবেই। রস বৈ স- তিনি রসময়। নাম নামি অভিন্ন। নাম অবলম্বন করলে নামি আর দূরে থাকতে পারবেন না। নাম করতে রস পাওনা পূর্বকর্মদোষে, নাম কর- দুষ্কৃতি দূর হোক- রস আসবে, চিত্ত ভরে যাবে।
-তোদের সীতারাম
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: তিন>>
……………….
আরও পড়ুন-
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: এক
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: দুই
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: তিন
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: চার
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: পাঁচ
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: ছয়
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: সাত
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: আট
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: নয়
……………….
আরও পড়ুন-
মহানবীর বাণী: এক
মহানবীর বাণী: দুই
মহানবীর বাণী: তিন
মহানবীর বাণী: চার
ইমাম গাজ্জালীর বাণী: এক
ইমাম গাজ্জালীর বাণী: দুই
গৌতম বুদ্ধের বাণী: এক
গৌতম বুদ্ধের বাণী: দুই
গৌতম বুদ্ধের বাণী: তিন
গৌতম বুদ্ধের বাণী: চার
গুরু নানকের বাণী: এক
গুরু নানকের বাণী: দুই
চৈতন্য মহাপ্রভুর বাণী
কনফুসিয়াসের বাণী: এক
কনফুসিয়াসের বাণী: দুই
…………………….
আপনার গুরুবাড়ির সাধুসঙ্গ, আখড়া, আশ্রম, দরবার শরীফ, অসাম্প্রদায়িক ওরশের তথ্য প্রদান করে এই দিনপঞ্জিকে আরো সমৃদ্ধ করুন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….