ভবঘুরেকথা

অমিয়বাণী

ঠাকুর হচ্ছেন জীবন্ত, জ্বলন্ত উপনিষদ, জীবন্ত গীতা। তিনি চরাচর সর্বত্র পরিব্যপ্ত।

শ্রীশ্রীমা ও ঠাকুর অভেদ। শ্রীশ্রীমাকে দেখাও যা, ঠাকুরকে দেখাও তাই। তাঁর অসীম কৃপা জীবের ওপর। আমরা এক কণা পেলেই পূর্ণ হয়ে যাব। শ্রীশ্রীমার অপ্রাকৃত ভাগবতী তনু, যদিও তিনি মনুষ্যদেহ-ধারিণী। কোটি কোটি জন্মের ফলে শ্রীশ্রীমার দর্শন হয়।

লৌহ একবার পরশপাথর ছুঁলেই সোনা হয়। তুমি জান আর নাই জান, পরশপাথররূপ পরমারাধ্যা মা’র শ্রীপাদস্পর্শে তোমার দেহমনরূপ লৌহ, সোনা-কিনা ভোগাসক্তি ত্যাগ করে যোগ ভক্তি লাভে অনুরাগী হয়েছে। আমাদের জন্য আমাদের অপেক্ষা তাঁরই অধিক চিন্তা। বুড়ো হলেও মার কাছে আমরা কচি, ছেলেমানুষ।

শ্রীশ্রীমাঠাকুরণকে দেখেছি, ঠাকুরের চেয়ে আধার বড়। তিনি শক্তিরূপিণী কিনা, তাঁর চাপবার শক্তি কত? ঠাকুর চেষ্টা করেও পারতেন না, বাইরে বেরিয়ে পড়ত। মার ভাবসমাধি হচ্ছে, কিন্তু কাউকে জানতে দেন?

ঠাকুর নিজ জীবনে অদ্বৈতভাব চেপে বেশীরভাগ ভক্তিই প্রচার করেছেন। আর স্বামীজী ভক্তিকে চেপে অদ্বৈতভাব প্রচার করেছেন। কিন্তু স্বামীজীর মত ভক্তিমান লোক আর কয়টি আছেন?

স্বামীজীকে না বুঝলে ঠাকুরকে বোঝার সাধ্য নেই। রামচন্দ্রকে বুঝতে হলে আগে তাঁর ভক্ত হনুমানজীকে বুঝতে হয়। আর স্বামীজীকে বুঝলেই ঠাকুরকে বোঝা হল।

ভাব, মহাভাব, সমাধি হওয়াটাই ঠাকুরের স্বাভাবিক। মনকে জোর করে নীচে নামিয়ে রাখতে তিনি চেষ্টা করতেন।

সর্বদা জানবে আমি শ্রীশ্রীপ্রভুর সন্তান। যারা ঠাকুরের ভক্ত, তারা জীবন্মুক্ত। তাঁকে যে আপনার করে নেয়, সেই আপনার লোক।

অশরীরী ভগবান ভক্তের জন্যে দেহধারণ করে অবতীর্ণ হন, অশেষ দুঃখকষ্ট অকাতরে আমাদের জন্যে সহ্য করেন, এসব প্রত্যক্ষ করেছি, অনুভব করেছি।

ঠাকুরকে ধরার নাম ভাবশুদ্ধি। তাঁকে জানবে খুঁটি। খুঁটি ছেড়েছ কি পড়েছ। ভয় নেই, ভয় নেই, ঠাকুর রয়েছেন সামনে, পশ্চাতে। ঠাকুররূপী খুঁটি প্রাণপণে পাকড়ানোর নাম গীতার স্থিতপ্রজ্ঞ, স্থিতধী।

তাঁর স্মরণ, মননই হচ্ছে মনের চাঞ্চল্য দূর করার একমাত্র মহৌষধ। তাঁর কথাগুলি ধ্যান করে নিতে হবে। রোগের সেবা করছি মনে করবে না, জানবে মার সেবা করছি। এইটে পাকা হলেই একে জ্ঞান, ভক্তি বলে। সকলকে, পৃথিবীশুদ্ধ লোককে আপনার করতে হবে।

ভালবাসায় জগৎকে জয় কর- ইহাই রামকৃষ্ণমিশন।

ঠাকুরকে পেতে হলে হৃদয়টি সম্পূর্ণ পবিত্র করতে হবে। ভয় কি? ডুব দাও তাঁর নামে। ধ্যান-জপ, নিষ্কাম কর্ম দ্বারা মন ক্রমশ সূক্ষ্ম হয়। সেই সূক্ষ্ম মনের দ্বারা মনের যে বিচার, তাকেই বলে- ঊর্ধ্বরেতাত্মনাত্মানম্‌।

গুরু ইষ্ট একই জেনে ধ্যান করবে। যখন যেটি ভাল লাগে, যেটি খুশি তাতেই ধ্যান করে যাও। পবিত্রতাই শক্তি ও ভগবান। জ্ঞানভক্তি প্রীতি- এসব আমাদেরই ঘরের বস্তু জানবে। কেবল কাজ করলে জীবন শুষ্ক বোধ হয়ে যাবে, তাই ভক্তিযোগ চাই; বিচার চাই, জ্ঞানও চাই।

এই যে কাজকর্ম- সব ছাই ভস্ম। কে কার উপকার করবে? মাঝে পড়ে নিজের কল্যাণ- চিত্তশুদ্ধি হয়ে যায়। জানবে, তোমরা সব ঠাকুরের আর ঠাকুরও তোমাদের। ঠাকুর আমাদের, আমরা ঠাকুরের।

আনন্দ অনৈসর্গিক বস্তু। সকল আনন্দের আকর ঠাকুরের নাম। আপনার দোষ দেখাই সাধুত্ব। বিনয় হচ্ছে সাধুর ভূষণ। পরের স্বার্থ দেখাই সাধুত্ব।

তাঁর স্মরণ, মননই হচ্ছে মনের চাঞ্চল্য দূর করার একমাত্র মহৌষধ। তাঁর কথাগুলি ধ্যান করে নিতে হবে। রোগের সেবা করছি মনে করবে না, জানবে মার সেবা করছি। এইটে পাকা হলেই একে জ্ঞান, ভক্তি বলে। সকলকে, পৃথিবীশুদ্ধ লোককে আপনার করতে হবে।

তেজ না থাকলে কিছুই হবে না। এই তেজরূপ রজঃ হৃদয়ে না এলে সত্ত্বগুণ কখনও মনে প্রতিফলিত হবে না। সময় হলে ভগবান নিজেই এসে আমাদের খেলাঘর ভেঙ্গে দিয়ে নিজের কাছে টেনে নেন।

যতক্ষণ ‘‘নাহং, নাহং- তুঁহু, তুঁহু’’- এই ভাব ঠিক ঠিক না হয়, ততক্ষণ ‘আয় মা সাধন-সমবে; ডঙ্কা মেরে লব মুক্তিধন’- এই ‘বিদ্যার আমি’ আনতে হবে।

…………………………….
স্বামী প্রেমানন্দজীর কথা ‘অমিয়বাণী’

পুনঃপ্রচারে বিনীত -মেঘনা কুণ্ডু

…………………….
আপনার গুরুবাড়ির সাধুসঙ্গ, আখড়া, আশ্রম, দরবার শরীফ, অসাম্প্রদায়িক ওরশের তথ্য প্রদান করে এই “সাধু পঞ্জিকা” দিনপঞ্জিকে আরো সমৃদ্ধ করুন- voboghurekotha@gmail.com

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

………………………..
আরো পড়ুন:
মহাত্মা ফকির লালন সাঁইজি: এক
মহাত্মা ফকির লালন সাঁইজি: দুই
মহাত্মা ফকির লালন সাঁইজি: তিন


লালন ফকিরের নববিধান: এক
লালন ফকিরের নববিধান: দুই

লালন ফকিরের নববিধান: তিন

লালন সাঁইজির খোঁজে: এক
লালন সাঁইজির খোঁজে: দুই


মহাত্মা লালন সাঁইজির দোলপূর্ণিমা
মহাত্মা ফকির লালন সাঁইজির স্মরণে বিশ্ব লালন দিবস
লালন গানের বাজার বেড়েছে গুরুবাদ গুরুত্ব পায়নি
লালন আখড়ায় মেলা নয় হোক সাধুসঙ্গ
কে বলে রে আমি আমি
ফকির লালন সাঁই
ফকির লালনের ফকিরি
ফকির লালন সাঁই


বিশ্ববাঙালি লালন শাহ্
ফকির লালন সাঁইজির শ্রীরূপ
গুরুপূর্ণিমা ও ফকির লালন
বিকৃত হচ্ছে লালনের বাণী?

লালন অক্ষ কিংবা দ্রাঘিমা বিচ্ছিন্ন এক নক্ষত্র
লালন ফকির : হিন্দু কি যবন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!