ভবঘুরেকথা
লালন অক্ষ কিংবা দ্রাঘিমা বিচ্ছিন্ন এক নক্ষত্র!

-হাসিদা মুন

‘সব লোকে কয় লালন কী জাত সংসারে লালন কয় জাতের কী রূপ আমি দেখলাম না দুই নজরে। ‘লালন ছিলেন একজন মানবতাবাদী, যিনি ধর্ম বর্ন গোত্রসহ সকল প্রকার জাতিগত বিভেদ থেকে সরে এসে মানবতাকে সর্বোচ্চ স্থান দিয়েছিলেন। অসাম্প্রদায়িক এই মনোভাব থেকেই তিনি তার গানসমূহ রচনা করেন। তার গান ও দর্শন যুগে যুগে প্রভাবিত করেছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুলের মত বহু খ্যাতনামা কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক, বুদ্ধিজীবিসহ অসংখ্য মানুষকে।

বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী একজন বাঙালী যিনি ফকির লালন, লালন সাঁই, লালন শাহ, মহাত্মা লালন ইত্যাদি নামেও পরিচিত। তিনি একাধারে একজন আধ্যাত্মিক বাউল সাধক, মানবতাবাদী, সমাজ সংস্কারক, দার্শনিক, অসংখ্য অসাধারণ গানের গীতিকার, সুরকার ও গায়ক ছিলেন। লালনকে বাউল গানের একজন অগ্রদূত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তার গানের মাধ্যমেই ঊনিশ শতকে বাউল গান বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করে।

তাকে ‘বাউল সম্রাট’ হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। লালনকে বাউল মত এবং গানের একজন অগ্রদূত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বাউল মত সতেরো শতকে জন্ম নিলেও লালনের গানের জন্য ঊনিশ শতকে বাউল গান জনপ্রিয়তা অর্জন করে। বাউল গান যেমন মানুষের জীবন দর্শন সম্পৃক্ত, তেমনি বিশেষ সুর সমৃদ্ধ। বাউলরা সাদামাটা জীবনযাপন করেন এবং একতারা বাজিয়ে গান গেয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ানোই তাদের অভ্যাস।

২০০৫ সালে ইউনেস্কো বাউল গানকে বিশ্বের মৌখিকক এবং দৃশ্যমান ঐতিহ্যসমূহের মাঝে অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ হিসেবে ঘোষনা করে।

‘এই মানুষে সেই মানুষ আছে …

বাউলেরা উদার ও অসাম্প্রদায়িক ধর্মসাধক। তারা মানবতার বাণী প্রচার করেন। বাউল মতবাদের মাঝে বৈষ্ণবধর্ম এবং সূফীবাদের প্রভাব লক্ষ করা যায়। বাউলরা সবচেয়ে গুরুত্ব দেয় আত্মাকে। তাদের মতে আত্মাকে জানলেই পরমাত্মা বা সৃষ্টিকর্তাকে জানা যায়। আত্মা দেহে বাস করে তাই তারা দেহকে পবিত্র জ্ঞান করেন। সাধারণত অশিক্ষিত হলেও বাউলরা জীবনদর্শন সম্পর্কে অনেক গভীর কথা বলেছেন। বাউলরা তাদের দর্শন ও মতামত বাউল গানের মধ্য দিয়ে প্রকাশ করে থাকেন।


মুহম্মদ মনসুরউদ্দিন একাই তিন শতাধিক লালনগীতি সংগ্রহ করেছেন যা তাঁর হারামণি গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে। এ ছাড়াও তাঁর অন্য দুটি গ্রন্থের শিরোনাম যথাক্রমে ‘লালন ফকিরের গান’ এবং ‘লালন গীতিকা’ যাতে বহু লালন গীতি সংকলিত হয়েছে।

একটি গানে লালনের প্রশ্ন ‘এমন সমাজ কবে গো সৃজন হবে? যেদিন হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রিস্টান জাতি গোত্র নাহি রবে।।’ ‘আমার আপন খবর আপনার হয় না’ লালনের গান লালগীতি বা লালন সংগীত হিসেবে পরিচিত। লালন তার সমকালীন সমাজের নানান কুসংস্কার, সাম্প্রদায়িকতা, সামাজিক বিভেদ ইত্যাদির বিরুদ্ধে তার রচিত গানে তিনি একই সাথে প্রশ্ন ও উত্তর করার একটি বিশেষ শৈলি অনুসরন করেছেন। এছাড়া তার অনেক গানে তিনি রুপকের আড়ালেও তার নানান দর্শন উপস্থাপন করেছেন।

‘আছে আদি মক্কা এই মানব দেহে-বাউলদের জন্য তিনি যেসব গান রচনা করেন, তা কালেকালে এত জনপ্রিয়তা লাভ করে যে মানুষ এর মুখে মুখে তা পুরো বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লালনের গানে প্রভাবিত হয়ে, প্রবাসী পত্রিকার ‘হারামনি’ বিভাগে লালনের কুড়িটি গান প্রকাশ করেন। মুহম্মদ মনসুরউদ্দিন একাই তিন শতাধিক লালনগীতি সংগ্রহ করেছেন যা তাঁর হারামণি গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে।

এ ছাড়াও তাঁর অন্য দুটি গ্রন্থের শিরোনাম যথাক্রমে ‘লালন ফকিরের গান’ এবং ‘লালন গীতিকা’ যাতে বহু লালন গীতি সংকলিত হয়েছে। জ্যোতিরিন্দ্রিনাথ ঠাকুর সম্পাদিত ‘বীণা’, ‘বাদিনী’ পত্রিকায় ৭ম সংখ্যা ২ ভাগ (মাঘ) ১৩০৫-এ ‘পারমার্থিক গান’ শিরোনামে লালনের ‘ক্ষম অপরাধ ও দীননাথ’ গানটি স্বরলিপিসহ প্রকাশিত হয়। এ পত্রিকায় ৮ম সংখ্যা ২ ভাগ (ফাগুন) ১৩০৫-এ প্রকাশিত আরেকটি লালনগীতি ‘কথা কয় কাছে দেখা যায় না’ দুটি গানেরই স্বরলিপি করেন ইন্দিরা দেবী।

প্রেমদাস বৈরাগী গীত এ লালন গীতি সংগ্রহ করেছিলেন মুহাম্মাদ মনসুরউদ্দীন এবং তা মাসিক প্রবাসী পত্রিকার হারামণি অংশে প্রকাশিত হয়েছিল। লালনের গানের কথা, সুর ও দর্শনকে বিভিন্ন গবেষক বিভিন্নভাবে উল্লেখ করেছেন।

লালন গবেষক আবুল আহসান চৌধুরী বলেন, অনেক গান যাতে লালন বলে কথাটির উল্লেখ আছে তার সবই প্রকৃতপক্ষে লালনের নয়। মন্টু শাহ নামের একজন বাউল, তিন খন্ডের একটি বই প্রকাশ করেছেন যাতে তিনি মনিরুদ্দিন শাহ নামক লালনের সরাসরি শিষ্যের সংগৃহীত লালন সংগীতগুলো প্রকাশ করেছেন।


দেশ-বিদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে অসংখ্য মানুষ লালন স্মরণোৎসব ও দোল পূর্ণিমায় এই আধ্যাত্মিক সাধকের দর্শন অনুস্মরণ করতে প্রতি বছর এখানে এসে থাকেন। ২০১০ সাল থেকে এখানে পাঁচ দিনব্যাপী উৎসব হচ্ছে। এই অনুষ্ঠানটি “লালন উৎসব” হিসেবে পরিচিত।

‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়’ লালনের গান ও দর্শনের দ্বারা অনেক বিশ্বখ্যাত কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক প্রভাবিত হয়েছেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ লালনের মৃত্যুর ২ বছর পর তার আখড়া বাড়িতে যান এবং লালনের দর্শনে প্রভাবিত হয়ে ১৫০টি গান রচনা করেন। তার বিভিন্ন বক্তৃতা ও রচনায় তিনি লালনের প্রসংগ তুলে ধরেছেন। লালনের মানবতাবাদী দর্শনে প্রভাবিত হয়েছেন সাম্যবাদী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। আমেরিকান কবি এলেন গিন্সবার্গ লালনের দর্শনে প্রভাবিত হন এবং তার রচনাবলীতেও লালনের রচনাশৈলীর অনুকরণ দেখা যায়।

তিনি After Lalon নামে একটি কবিতাও রচনা করেন। লালনের সংগীত ও ধর্ম-দর্শন নিয়ে দেশ-বিদেশে নানা গবেষণা হয়েছে ও হচ্ছে। ১৯৬৩ ছেঁউড়িয়ায় আখড়াবাড়ি ঘিরে লালন লোকসাহিত্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর লালন লোকসাহিত্য কেন্দ্রের বিলুপ্তি ঘটিয়ে ১৯৭৮ সালে শিল্পকলা একাডেমীর অধীনে প্রতিষ্ঠিত হয় লালন একাডেমী। তার তিরোধান দিবসে ছেঁউড়িয়ার আখড়ায় স্মরণোৎসব হয়।

দেশ-বিদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে অসংখ্য মানুষ লালন স্মরণোৎসব ও দোল পূর্ণিমায় এই আধ্যাত্মিক সাধকের দর্শন অনুস্মরণ করতে প্রতি বছর এখানে এসে থাকেন। ২০১০ সাল থেকে এখানে পাঁচ দিনব্যাপী উৎসব হচ্ছে। এই অনুষ্ঠানটি “লালন উৎসব” হিসেবে পরিচিত।

‘জাত গেল জাত গেল বলে একি আজব কারখানা, গোপনে যে বেশ্যার ভাত খায় তাতে ধর্মের কী ক্ষতি হয় লালন বলে জাত কারে কয় এই ভ্রমও তো গেল না।‘ লালনের সময়কালে যাবতীয় নিপীড়ন, মানুষের প্রতিবাদহীনতা, ধর্মীয় গোঁড়ামি-কুসংস্কার, লোভ, আত্মকেন্দ্রিকতা সেদিনের সমাজ ও সমাজ বিকাশের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সমাজের নানান কুসংস্কারকে তিনি তার গানের মাধ্যমে করেছেন প্রশ্নবিদ্ধ।

আর সে কারণেই লালনের সেই সংগ্রামে আকৃষ্ট হয়েছিলেন বহু শিষ্ট ভূস্বামী, ঐতিহাসিক, সম্পাদক, বুদ্ধিজীবী, লেখক এমনকি গ্রামের নিরক্ষর সাধারণ মানুষও। আধ্যাত্মিক ভাবধারায় তিনি প্রায় দুই হাজার গান রচনা করেছিলেন। তার সহজ-সরল শব্দময় এই গানে মানবজীবনের রহস্য, মানবতা ও অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পেয়েছে। লালনের বেশ কিছু রচনা থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে তিনি ধর্ম-গোত্র-বর্ণ-সম্প্রদায় সম্পর্কে অতীব সংবেদনশীল ছিলেন।

ব্রিটিশ আমলে যখন হিন্দু ও মুসলিম মধ্যে জাতিগত বিভেদ-সংঘাত বাড়ছিল তখন লালন ছিলেন এর বিরূদ্ধে প্রতিবাদী কন্ঠস্বর। তিনি মানুষে-মানুষে কোনও ভেদাভেদে বিশ্বাস করতেন না। মানবতাবাদী লালন দর্শনের মূল কথা হচ্ছে মানুষ। আর এই দর্শন প্রচারের জন্য তিনি শিল্পকে বেছে নিয়েছিলেন। লালনকে অনেকে পরিচয় করিয়ে দেবার চেষ্টা করেছেন সাম্প্রদায়িক পরিচয় দিয়ে। কেউ তাকে হিন্দু, কেউ মুসলমান হিসেবে পরিচয় করাবার চেষ্টা করেছেন।

লালনের প্রতিটি গানে তিনি নিজেকে ফকির(আরবি ‘’সাধু’) হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। লালন সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, “লালন ফকির নামে একজন বাউল সাধক হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, জৈন ধর্মের সমন্বয় করে কী যেন একটা বলতে চেয়েছেন – আমাদের সবারই সেদিকে মনোযোগ দেওয়া উচিৎ।

‘আট কুঠুরী নয় দরজা আঁটা মধ্যে মধ্যে ঝরকা কাঁটা।
তার উপরে সদর কোঠা আয়না মহল তায়’

সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে? লালন এক আত্মা একটি রহস্যময় পরমানন্দ। যে মরিয়া হয়ে অনুসন্ধান করে বেড়িয়েছেন সব পার্থিব বিষয়, অস্বীকার করে রহস্যময় বা আধ্যাত্মিক ধরনের তথাকথিত ‘বাউল’ বা ‘ফকিরবাদ’- নির্মাণ করে গেছেন অদ্ভুত গাঁথুনিতে সময়ের ধাপে ধাপে পা রেখে ক্রমান্বয়ে উচ্চ মার্গে গিয়ে ঠেকেছে যার বিস্তার যা মাপসই কোন এককে মাপা অসম্ভব। লালন জড়বাদী ছিলেন, তিনি নিত্যানন্দ ঐতিহ্য মধ্যে নিমজ্জিত উপাদান ছিলো শরীর বা দেহঘড়ি’।


এ কাজ এক শরীরের উপাদান প্রৈতি ছাড়া প্রেম করতে পারা কিন্তু প্রেম শরীর রূপান্তরিত খোরাক খোঁজে কামনার তাঁরা তা ‘পঞ্চরসে’ নিবৃত করতে পারে অযাচিত কিছুকে।

বোধের ক্ষমতা থেকে মানব দেহ ‘বিচ্ছেদ’ হয়ে বাইরে এলে যেন কোন পরম সত্যকে কেবল ভুল বা অযৌক্তিক বলে মনেকরা হয় যেখানে মানব ও পরম সত্য ওতপ্রোতভাবে সংরক্ষিত তাঁর কাছে মানে হল যে ‘শরীরের’ মহাবিশ্ব এবং মহাবিশ্বের সাথে অঙ্গাঙ্গী জড়িত এই শরীর – যা নিয়ন্ত্রিত হয় পরমাত্মার সাথে পরম মিলনে, যা কিনা জাত পাত সম্পর্কের ঊর্ধ্বে থেকে যায়।

এটা লালনের জন্য লালনতন্ত্র যা সর্বজনবিদিত তাঁর নীতি বৈচিত্রে দেখা যায়, এ অর্থে উপাদান হিসেবে শারীরিক মহাবিশ্ব জানতে উপায় হচ্ছে মানুষের কাম যৌন প্রৈতি কিংবা তাড়না। এক্ষেত্রে প্রেম শরীরের মধ্যে একসঙ্গে বিষ এবং অমৃত মিশ্রিত করা, বিষ থেকে অমৃত নিষ্কাশন জ্ঞানী ব্যক্তির পক্ষেই সম্ভব। এ কাজ এক শরীরের উপাদান প্রৈতি ছাড়া প্রেম করতে পারা কিন্তু প্রেম শরীর রূপান্তরিত খোরাক খোঁজে কামনার তাঁরা তা ‘পঞ্চরসে’ নিবৃত করতে পারে অযাচিত কিছুকে।


এমনকি ভারতীয় উপমহাদেশে উপনিবেশ-বিরোধী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের চূড়ায় জাতীয়তাবাদ প্রত্যাখ্যাত হয় তাঁর দর্শনে সেটা ছিলো ক্ষমার দর্শন-ক্ষোভের নয়। তাঁর বিপক্ষ পক্ষ ও প্রতিপক্ষ ছিলো অনেক, বিড়ম্বনা আর্থিক সামাজিক সাম্প্রদায়িকতার ঊর্ধ্বে থেকে লম্বা পথ যাত্রা করতে হয়েছে তাঁকে। লালন শাহ!

শুধুমাত্র মানুষের প্রেমের মধ্যে কামনার রুপান্তর ক্ষমতা আছে এবং যে বিন্দুতে লয় হচ্ছে বা হয় তাহলো আত্মিক মিলন, ভজন এবং প্রেম রূপ কাম’। দেহ হচ্ছে এই তিনের মেলা, তিন অর্থাৎ নিজ সত্যের মধ্যে শ্রেণীবদ্ধ করা হয় যা কিনা একটি সংকীর্ণ উত্তরণ। এই বিশ্বের অস্বচ্ছ ছাদ অতিক্রম করে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডতে উন্নত প্রভুর সান্নিধ্য ও চৈতন্যে চিরকাল সহাবস্থান।

উভয় যা পৃথক আত্মা এবং পরমাত্মার বিনাশযোগ্য বাস্তবতা এর অচিন্ত্য থেকে ভিন্ন ভেদাভেদ নেই, সেখানে অনুভূতিতে বিলিন হতে হয়। আত্মপক্ষকে পরমাত্মায় প্রথাগত এ কাজটি ধরিয়ে দিতে হাতে খড়ি দেবার জন্য চাই এক দীক্ষাগুরু বা সাঁই এবং এক অর্থে লালন’ তাই ই। শারীরিক-সত্য ও আধ্যাত্মিক সত্য সামাজিক অবস্থার প্রতি তিনি মনোযোগী ছিলেন এবং এই তাঁর সহজ ব্যক্ততা গভীরভাবে চলমান ভাষায় প্রকাশিত না বুঝার অক্ষমতা কিংবা সমস্যা গানের মাধ্যমে প্রতিফলিত করেছেন সহজ ভাষার প্রয়োগে।

অনুরণন সময় কাল উত্তীর্ণ করে তাঁর অনুগামীদের এবং অন্যান্যদের অন্তরে হারিয়ে যায় পক্ষান্তরে ছড়িয়েও যায়। লালন ধর্মীয় সংঘাত বিরুদ্ধ ছিলেন এবং তার গান অনেক সম্প্রদায়ের বিভক্ত করা এবং সহিংসতা উৎপন্ন করার পরিপন্থী, যে পরিচয়ের রাজনীতি উপহাস করেছেন তিনি। এমনকি ভারতীয় উপমহাদেশে উপনিবেশ-বিরোধী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের চূড়ায় জাতীয়তাবাদ প্রত্যাখ্যাত হয় তাঁর দর্শনে সেটা ছিলো ক্ষমার দর্শন-ক্ষোভের নয়।

তাঁর বিপক্ষ পক্ষ ও প্রতিপক্ষ ছিলো অনেক, বিড়ম্বনা আর্থিক সামাজিক সাম্প্রদায়িকতার ঊর্ধ্বে থেকে লম্বা পথ যাত্রা করতে হয়েছে তাঁকে। লালন শাহ! লালন ফকির সাঁই বা মহাত্মা লালন ফকির (১৭৭৪ – ১৮৯০), বাংলা বাউল সাধক, অতীন্দ্রিয় গীতিকার, সমাজ সংস্কারক ও চিন্তাবিদ। তাঁর সঙ্গে এতধারা বিশ্বের সকল মানুষের অমৃত আনন্দভাণ্ডার বাংলা সংস্কৃতিতে যার গান মানবতাবাদীর ধারক ও বাহক অনুপ্রাণিত।

এমন কি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কিছু গান সংগ্রহ করেন পুস্তিকা আকারে প্রকাশিত ‘লালন’ চর্চিত গানের মধ্যে সুর শৈলী অনুসরণ করেন ঠাকুর’ তারপর মানুষ লালনকে জানতে ও চিনতে পারে। অনেকে সহ অনেক কবি সামাজিক ও ধর্মীয় চিন্তাবিদদের প্রভাবিত করে। সে সময় এভাবেই সাংস্কৃতিক ধর্মীয় সহনশীলতার একাংশেও একটি আইকন হয়ে গেছেন লালন’।

…………………………………..
চিত্র:
ফকির লালন সাঁইজির প্রকৃত কোনো ছবি নেই। লেখাতে ব্যবহৃত ছবিটি লালন ফকিরের কাল্পনিক একটি ছবি মাত্র। বহুল ব্যবহৃত হলেও এই ছবির সাথে লালন সাঁইজির আদৌ কোনো যোগসূত্র আছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায় না।

………………………..
আরো পড়ুন:
মহাত্মা ফকির লালন সাঁইজি: এক
মহাত্মা ফকির লালন সাঁইজি: দুই
মহাত্মা ফকির লালন সাঁইজি: তিন

লালন ফকিরের নববিধান: এক
লালন ফকিরের নববিধান: দুই
লালন ফকিরের নববিধান: তিন

লালন সাঁইজির খোঁজে: এক
লালন সাঁইজির খোঁজে: দুই

লালন সাধনায় গুরু : এক
লালন সাধনায় গুরু : দুই
লালন সাধনায় গুরু : তিন

লালন-গীতির দর্শন ও আধ্যাত্মিকতা: এক
লালন-গীতির দর্শন ও আধ্যাত্মিকতা: দুই

ফকির লালন সাঁই
ফকির লালনের ফকিরি
ফকির লালন সাঁইজি
চাতক বাঁচে কেমনে
কে বলে রে আমি আমি
বিশ্ববাঙালি লালন শাহ্ফকির লালন সাঁইজির শ্রীরূপ
গুরুপূর্ণিমা ও ফকির লালন
বিকৃত হচ্ছে লালনের বাণী?
লালন ফকিরের আজব কারখানা
মহাত্মা লালন সাঁইজির দোলপূর্ণিমা
লালন ফকির ও একটি আক্ষেপের আখ্যান
লালন আখড়ায় মেলা নয় হোক সাধুসঙ্গ
লালন অক্ষ কিংবা দ্রাঘিমা বিচ্ছিন্ন এক নক্ষত্র!
লালনের গান কেন শুনতে হবে? কেন শোনাতে হবে?
লালন গানের ‘বাজার বেড়েছে গুরুবাদ গুরুত্ব পায়নি’
‘গুরু দোহাই তোমার মনকে আমার লওগো সুপথে’
মহাত্মা ফকির লালন সাঁইজির স্মরণে বিশ্ব লালন দিবস

Related Articles

1 Comment

Avarage Rating:
  • 0 / 10
  • Limon , সোমবার ১৫ এপ্রিল ২০১৯ @ ১১:১৫ অপরাহ্ণ

    জয় গুরু।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!