আত্মা
আমি আছি, এ জ্ঞান সকল মানুষেরই আছে। এই ‘আমি’ শরীর নাই, রক্ত মাংস নই, চক্ষু কর্ণ বা কোন ইন্দ্রিয় নই। কিন্তু আমিই চক্ষুর দ্বারা দেখি, কর্ণের দ্বারা শ্রবণ করি, শরীরের দ্বারা সমুদয় অভিপ্রেত কার্য্য সম্পন্ন করি। যে আমি এইরূপে দর্শন করি শ্রবণ করি, চিন্তা করি, যে আমি হিতাহিত বুঝিতেছি, যে আমি সৌন্দর্য্য অনুভব করিতেছি, যে আমি পূর্ণের দিকে যাইবার জন্য লালায়িত, সেই আমিই আত্মা।
পরমাত্মাকে জানা ও তাঁহার সঙ্গে নিত্য প্রেমযোগে যুক্ত থাকা আত্মার চরম লক্ষ্য। এই জন্য আত্মা সেই জ্ঞানময় প্রেমময় পুণ্যময় পরম পুরুষেরই সদৃশভাব-সম্পন্ন হইয়া, অথচ অপূর্ণ ও সীমাবিশিষ্ট হইয়া সৃষ্টি হইয়াছে।
আত্মা অমর। শরীর যখন বিনষ্ট হয়, অর্থাৎ শরীরের ক্রিয়া যখন শেষ হয়, এবং শরীরের পরমাণুসকল যখন পরস্পর হইতে বিচ্ছিন্ন হইতে থাকে, তখনও আত্মা থাকে। আত্মা এখনও যেমন ঈশ্বরেতে আছে, তখনও তেমনই ঈশ্বরকে আশ্রয় করিয়া বাস করে। এখন শরীরের সহিত সংযুক্ত, তখন শরীরবিহীন, এই মাত্র প্রভেদ।
পরমাত্মা ও জীবাত্মার সম্বন্ধ
ঈশ্বর ও মানবাত্মার মধ্যে আশ্রয়-আশ্রিত, উপাস্য উপাসকের সম্বন্ধ। পরমেশ্বর উপাস্য, মানবাত্মা উপাসক ; পরমেশ্বর মানবাত্মারর আশ্রয়, আত্মা তাঁহার আশ্রিত। ইহাই উভয়ের মধ্যে নিত্যকালের সম্বন্ধ। আশ্রয় ও আশ্রিত, দাতা ও গ্রহীতা, প্রেরক ও প্রেরিত, চালক ও চালিত, ইত্যাদি নানারূপ সম্বন্ধ ঈশ্বর ও মানবের মধ্যে চিরকাল বর্ত্তমান থাকিবে।
ব্রহ্মের সহিত জীবাত্মার এই অচ্ছেদ্য যোগের রহস্য বুঝিতে না পারিয়া এবং প্রাচীন ‘সোহহং’ বাক্যের প্রকৃত অর্থ না বুঝিয়া কেহ কেহ বলেন, “আমিই সেই পরব্রহ্ম”। ইহা ব্রাহ্মধর্ম্মবিরোধী মত।
মানবাত্মাকে অজ্ঞতা, দুর্ব্বলতা, ক্ষুদ্রতা প্রভৃতি বর্ত্তমান। কিরূপে তাহাকে ‘ব্রহ্ম’ বলিয়া নির্দ্দেশ করা সম্ভব হইতে পারে? বিশেষত: “আমিই ব্রহ্ম” এই মত সর্ব্বপ্রকার উন্নতি-চেষ্টার অন্তরায় ও ধর্ম্মসাধনের বিরোধী। এই মত মানিলে কে কাহার উপাসনা করে, কে কাহাকে প্রেম ভক্তি অর্পণ করে, কে কাহার নিকটে প্রার্থনা করে?
…………………………
ব্রাহ্মধর্ম্ম ও ব্রাহ্মসমাজ
……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….
………
আরও পড়ুন-
ব্রাহ্মসমাজ
সাধারণ ব্রাহ্মসমাজের সভ্য হইবার যোগ্যতা
ব্রাহ্ম ধর্মের মূল সত্য
ব্রহ্ম মন্দিরের ট্রাস্টডিড
ব্রাহ্মধর্ম্মের মূল সত্য
আত্মা
মানুষের ভ্রাতৃত্ব
উপাসনা ও প্রার্থনা
শাস্ত্র
গুরু
মধ্যবর্ত্তী ও প্রেরিত
সুখ-দু:খ : দু:খবাদ ও আনন্দবাদ
পাপ ও পুণ্য
পুনর্জ্জন্ম
পরকাল
স্বর্গ ও নরক
ধর্ম্ম রক্ষা
পরিবারে পুরুষ ও নারীর অধিকার-সাম্য
ব্রাহ্মসমাজের প্রতি ব্রাহ্মদিগের কর্ত্তব্য
সমবেত উপাসনা
পূর্ণাঙ্গ উপাসনার আদর্শ
স্তুতি
বিবিধ অবস্থায় প্রার্থনা
নৈমিত্তিক অনুষ্ঠান
সন্তান জন্ম
ব্রাহ্মধর্ম্ম গ্রহণ ও ব্রাহ্মসমাজে প্রবেশ
ধর্ম্মসাধন ব্রতে দীক্ষা
ব্রাহ্মধর্ম্ম গ্রহণ ও ধর্ম্মদীক্ষা
বিবাহ ও তাহার আনুসঙ্গিক অনুষ্ঠান
বিবাহের বাগদান
বিবাহ
মৃত্যু ও অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়া
শ্রাদ্ধ
গৃহ প্রবেশ
ব্রহ্ম ও ব্রহ্মের স্বরূপ
ব্রহ্ম ধ্যান
ব্রাহ্মধর্ম
সকলেই কি ব্রাহ্ম?
ব্রাহ্মোপসনা প্রচলন ও পদ্ধতি
আদি ব্রাহ্ম সমাজ ও “নব হিন্দু সম্প্রদায়”
পূর্ণাঙ্গ উপাসনার আদর্শ