উপাসনা ও প্রার্থনা
ঈশ্বরের উপাসনা সম্পূর্ণরূপে অন্তরেরই ব্যাপার। ইহার জন্য বাহ্য উপকরণের প্রায়োজন নাই। যদি সুন্দর পুষ্প পত্রাদি, সুগন্ধি দ্রব্য প্রভৃতি সম্মুখে রাখিলে মন অধিক সহজে ঈশ্বরের দিকে গমন করে, তবে তাহা রাখিতে দোষ নাই ; কিন্তু ঐ পুষ্পাদি উপাসনার উপকরণ নহে।
ঈশ্বরের উপাসনা কিরূপে করিতে হয়? ঈশ্বর আমাদের নিত্য সন্নিহিত এবং তিনি আমাদের অন্তরের নিবেদন গ্রহণ করিবার জন্য নিত্য উৎসুক, ইহা অনুভব করিয়া তাঁহার স্বরূপ চিন্তন ও আরাধনা, নীরবে তাঁহার সান্নিধ্য উপলব্ধি, তাঁহার আলোকে আত্মাপরীক্ষা, তাঁহার ইচ্ছা জ্ঞাত হইবার ও তৎসাধনে আপনাকে নিয়োগ করিবার জন্য ঐকান্তিক সঙ্কল্প, তাঁহার নিকটে ব্যাকুল প্রার্থনা -এই সকলের দ্বারাই তাঁহার উপাসনা হয়।
উপাসনা করিতে হইলে প্রথমেই চিত্তকে বহির্বিষয় হইতে ফিরাইয়া আনিতে হয় এবং ব্রহ্মসহবাসে থাকিবার আকাঙ্খাকে অন্তরে প্রবল করিয়া তুলিতে হয়। মিলিত উপাসনার সময়ে এই প্রযাসকে ‘উদ্বোধন’ বলা হয়।
অনুকূল স্থানে এবং অনুকূল সময়ে উপাসনা করাই প্রশস্ত, ইহাতে সন্দেহ নাই। কিন্তু যখন যেখানে মন ব্যাকুল হইবে, সেই সময়ে ও সেই স্থানেই ঈশ্বরের উপাসনা ও ঈশ্বরের নিকটে প্রার্থনা করা উচিত। ঈশ্বরের উপাসনা দ্বারাইমা নবের পার ত্রিক ও ঐহিক কল্যাণ হয়।
উপাসনা দুই প্রকারের- একাকী ও মিলিত। একান্ত মনে একাকী পরমেশ্বরের উপাসনা করা আবশ্যক এবং সমবিশ্বাসিগণের এবং পরিবারস্থ সকলের সহিত হৃদয়ে হৃদয়ে মিলিত হইয়াও ঈশ্বরের উপাসনা করা আবশ্যক।
উপাসনা করিতে হইলে প্রথমেই চিত্তকে বহির্বিষয় হইতে ফিরাইয়া আনিতে হয় এবং ব্রহ্মসহবাসে থাকিবার আকাঙ্খাকে অন্তরে প্রবল করিয়া তুলিতে হয়। মিলিত উপাসনার সময়ে এই প্রযাসকে ‘উদ্বোধন’ বলা হয়।
ঈশ্বরকে নিরন্তর স্মরণ করা, তাঁহার আলোকে আত্মপরীক্ষা করা, আপনার সাংসারিক ও আধ্যাত্মিক তাবৎ অবস্থা তাঁহার নিকটে নিবেদন করা, তাঁহার ইচ্ছা বুঝিবার ও পালন করিবার জন্য সঙ্কল্প করা, অপরাধের জন্য অনুতাপ ও আত্মসংশোধনের জন্য চেষ্টা করা এবং সর্ব্ব বিষয়ে ঈশ্বরের নিকটে আলোক ও বল ভিক্ষা করা- এ সমস্তই প্রার্থনার অন্তর্গত। সকল সময়ে, সকল স্থানে, সকল অবস্থায় এই ভাবে প্রার্থনারয় নিযুক্ত হইতে হয়।
ঈশ্বর আমার নিকটে আছেন, ইহা অনুভব করিয়া তাঁহার স্তুতি করা এবং তাঁহাকে হৃদয়ের ভক্তি প্রীতি ও কৃতজ্ঞতা অর্পণ করার নাম ‘আরাধনা’। আরাধনা উপাসনার অতি শ্রেষ্ঠ অঙ্গ। আরাধনার দ্বারা আত্মা ক্রমশ ঈশ্বরের সহিত যুক্ত থাকিতে, তাঁহার ইচ্ছার অনুগত হইতে ও তাঁহার প্রেমানুভূতিতে অভ্যস্ত হইতে শিক্ষা করে।
ঈশ্বরের সান্নিধ্যের এবং তাঁহার প্রেম ও সৌন্দর্য্যের অনুভূতিতে নীরবে মনকে মগ্ন করার নাম ‘ধ্যান’।
আরাধনা ও ধ্যান অনুকূল সময়ের ও অনুকূল স্থানের অপেক্ষা রাখে। কিন্তু প্রার্থনার জন্য অনুকূল স্থান কালের অপেক্ষা নাই ; প্রার্থনা সর্ব্বদাই করিতে হয়। ‘প্রার্থনা’ অর্থ শুধু যাচ্ঞা নহে।
ঈশ্বরকে নিরন্তর স্মরণ করা, তাঁহার আলোকে আত্মপরীক্ষা করা, আপনার সাংসারিক ও আধ্যাত্মিক তাবৎ অবস্থা তাঁহার নিকটে নিবেদন করা, তাঁহার ইচ্ছা বুঝিবার ও পালন করিবার জন্য সঙ্কল্প করা, অপরাধের জন্য অনুতাপ ও আত্মসংশোধনের জন্য চেষ্টা করা এবং সর্ব্ব বিষয়ে ঈশ্বরের নিকটে আলোক ও বল ভিক্ষা করা- এ সমস্তই প্রার্থনার অন্তর্গত। সকল সময়ে, সকল স্থানে, সকল অবস্থায় এই ভাবে প্রার্থনারয় নিযুক্ত হইতে হয়।
সমবেত উপাসনার ও প্রার্থনার কয়েকটি আদর্শ চতুর্থ অধ্যায়ে প্রদত্ত হইল।
…………………………
ব্রাহ্মধর্ম্ম ও ব্রাহ্মসমাজ
……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….
………
আরও পড়ুন-
ব্রাহ্মসমাজ
সাধারণ ব্রাহ্মসমাজের সভ্য হইবার যোগ্যতা
ব্রাহ্ম ধর্মের মূল সত্য
ব্রহ্ম মন্দিরের ট্রাস্টডিড
ব্রাহ্মধর্ম্মের মূল সত্য
আত্মা
মানুষের ভ্রাতৃত্ব
উপাসনা ও প্রার্থনা
শাস্ত্র
গুরু
মধ্যবর্ত্তী ও প্রেরিত
সুখ-দু:খ : দু:খবাদ ও আনন্দবাদ
পাপ ও পুণ্য
পুনর্জ্জন্ম
পরকাল
স্বর্গ ও নরক
ধর্ম্ম রক্ষা
পরিবারে পুরুষ ও নারীর অধিকার-সাম্য
ব্রাহ্মসমাজের প্রতি ব্রাহ্মদিগের কর্ত্তব্য
সমবেত উপাসনা
পূর্ণাঙ্গ উপাসনার আদর্শ
স্তুতি
বিবিধ অবস্থায় প্রার্থনা
নৈমিত্তিক অনুষ্ঠান
সন্তান জন্ম
ব্রাহ্মধর্ম্ম গ্রহণ ও ব্রাহ্মসমাজে প্রবেশ
ধর্ম্মসাধন ব্রতে দীক্ষা
ব্রাহ্মধর্ম্ম গ্রহণ ও ধর্ম্মদীক্ষা
বিবাহ ও তাহার আনুসঙ্গিক অনুষ্ঠান
বিবাহের বাগদান
বিবাহ
মৃত্যু ও অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়া
শ্রাদ্ধ
গৃহ প্রবেশ
ব্রহ্ম ও ব্রহ্মের স্বরূপ
ব্রহ্ম ধ্যান
ব্রাহ্মধর্ম
সকলেই কি ব্রাহ্ম?
ব্রাহ্মোপসনা প্রচলন ও পদ্ধতি
আদি ব্রাহ্ম সমাজ ও “নব হিন্দু সম্প্রদায়”
পূর্ণাঙ্গ উপাসনার আদর্শ