ভবঘুরেকথা
রমণ মহর্ষি

-প্রণয় সেন

এক নবাগত আন্ধ্র যুবক রমণ মহর্ষিকে ইন্দ্রিয় চাঞ্চল্যের বিষয় বলাতে তিনি উত্তর দিলেন, ‘সবই মনের ব্যাপার, মনকে ঠিক করো।’

বেচারি ছেলেটি বললো, ‘সে তো ঠিক কথা স্বামী, কিন্তু যতই ক্রোধ দমনের চেষ্টা করি না কেন, বার বার রাগ হয়, আমি কি করব?’

রমণ মহর্ষি বললেন, ‘ও! তাই নাকি, তবে রাগের ওপর রাগ করো তাহলে ওটা ঠিক হয়ে যাবে।’ ঘরের সকলে হেসে উঠল। যে জগতের সবার ওপর রাগ করে সে যদি একবার ভাবে ও বিচার করে যে, সে কেনো নিজের ক্রোধের ওপর রাগ করে না, তাহলে কি তার ক্রোধ দমন হবে না?

দুই কিংবা তিন বছর আগে যার রমণ মহর্ষির কাছে অবাধ স্বাধীনতা ছিল এমন একজন ভক্ত, কেউ তাকে গালাগালি করেছে, এই কথা রমণ মহর্ষিকে পাঁচ ছ’বার বললেও রমণ মহর্ষি শুনেও কিছু বললেন না। যখন অনেকবার অনেকভাবে বলেও কোনো উত্তর পেল না তখন সে আর না থাকতে পেরে বললো, ‘আমায় মিছিমিছি গাল দিলে আরও রাগ হয়। যত চেষ্টাই করি না কেনো রাগ দমন করতে পারি না, আমি কি করব?’

রমণ মহর্ষি হেসে বললেন, ‘তুমিও তার সঙ্গে যোগ দিয়ে নিজেকে গালাগালি দাও, তাহলে সব ঠিক হয়ে যাবে।’ সবাই হেসে উঠল। ভক্তটি কিছু বুঝতে না পেরে বললে, ‘এতো বেশ ভাল কথা। আমিও আমাকে গালাগালি দেবো?’

আত্মজ্ঞানের সাধক হচ্ছে একটি অভিনেতার মতো। সে সাজ-গোজ করে কাজকর্ম করে, নিজে অভিনয়ের অংশঠুকুর কথাও ভাবে, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে তার রয়েছে প্রকৃত জ্ঞান। সে জানে, যে চরিত্র তার দ্বারা অভিনীত হচ্ছে সে নিজে তা মোটেও নয় প্রকৃত সে অপর এক ব্যক্তি। সেই রকম যখন তুমি নিশ্চিতরূপে জানো যে তুমি দেহ নও- তুমি আত্মা তখন এই দেহাত্মবুদ্ধি অথবা আমি এই দেহী এই চিন্তা তোমাকে চঞ্চল করে তুলবে কেন? 

‘হাঁ, নিশ্চই! তারা কাকে গালি দেয়, তোমার শরীরকে, তাই না? যত রাগ অভিমানের ভান্ডার এই শরীরের থেকে বড় শত্রু আর কে আছে? আমাদের একে ঘৃণা করাই উচিত। তা না ক’রে আমরা অসাবধান হলে, কেউ গালি দিয়ে তারা বরং আমাদের এ বিষয়ে সচেতন করে দেয়। অন্ততঃ তখন আমাদের বোঝা উচিত আর তাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে এটাকে হেয় করা উচিত।

পাল্টে গালাগালি দিয়ে কি লাভ? যারা আমাদের তিরষ্কার করে তারাই আমাদের সত্যিকারের বন্ধু। এরকম লোকের সঙ্গ ভাল। যারা প্রশংসা করে তাদের মধ্যে তুমি ভুল পথে চালিত হও। 

১৯২৪ সালে জুন মাসে আশ্রমে চোর এসেছিল আর তারা ভক্তদের গা হাত পর্যন্ত তুলেছিল। এমনকি রমণ মহর্ষির পায়েও দু এক ঘা দিয়েছিল। পরে নিজেদের মধ্যে মারের কথা বলাবলি করার সময়ে ভক্তরা বলেছিল, ‘অতি বদলোক তারা রমণ মহর্ষিকেও মারলো।’ রমণ মহর্ষি নাকি উত্তরে বলেছিলেন, ‘ও তোমরা ফুল দিয়ে পূজা করো, ওরা লাঠি দিয়ে করেছে। ওটাও একরকম পূজা। 

যদি তোমাদেরটা নি তবে ওদেরটাই বা নেব না কেন?’ তিনি বাস্তব উদাহরণ দিয়েই শিক্ষা দেন। এটাও কি সেইরকম একটা দৃষ্টান্ত নয়?

আত্মজ্ঞানের সাধক হচ্ছে একটি অভিনেতার মতো। সে সাজ-গোজ করে কাজকর্ম করে, নিজে অভিনয়ের অংশঠুকুর কথাও ভাবে, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে তার রয়েছে প্রকৃত জ্ঞান। সে জানে, যে চরিত্র তার দ্বারা অভিনীত হচ্ছে সে নিজে তা মোটেও নয় প্রকৃত সে অপর এক ব্যক্তি। সেই রকম যখন তুমি নিশ্চিতরূপে জানো যে তুমি দেহ নও- তুমি আত্মা তখন এই দেহাত্মবুদ্ধি অথবা আমি এই দেহী এই চিন্তা তোমাকে চঞ্চল করে তুলবে কেন? 

দেহ যা কিছু করুক না কেন তা তোমাকে ‘আত্মা’র ধৃতি থেকে বিচ্যুত করবে না। 

এই ধৃতি তোমার দেহের যে কোনো কর্তব্য বা আচরণকে ব্যাহত করবে না- যেমন ঐ অভিনেতার চরিত্রাভিনয় তার ব্যক্তিগত জীবনকে কোনোমতেই বিপর্যস্ত করে না।’

আধ্যাত্মিক গুরু মহর্ষি রমণ ছিলেন জীবন্মুক্ত ও ব্রহ্মজ্ঞানী মহান সাধক। তাঁর প্রকৃত নাম ভেঙ্কটরমণ আইয়ার। তিনি ৩০ ডিসেম্বর ১৮৭৯ সালে তামিলনাড়ুর তিরুকুজিতে এক তামিল-ভাষী ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫০ সালের ১৪ এপ্রিল অরুণাচলের শ্রী রমণ আশ্রমে তিনি পরলোকগমন করেন।

………………………..
পুনপ্রচারে বিনীত: প্রণয় সেন

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

………………….
আরও পড়ুন-
স্বামী অড়গড়ানন্দজী
ভোলানাথ চট্টোপাধ্যায়
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেব
শিরডি সাই বাবা
পণ্ডিত মিশ্রীলাল মিশ্র
নীলাচলে মহাপ্রভুর অন্ত্যলীলার অন্যতম পার্ষদ ছিলেন রায় রামানন্দ
ভক্তজ্ঞানী ধর্মপ্রচারক দার্শনিক রামানুজ
সাধক ভোলানন্দ গিরি
ভক্ত লালাবাবু
লাটু মহারাজ শ্রীরামকৃষ্ণের অদ্ভুত সৃষ্টি
কমলাকান্ত ভট্টাচার্য
ব্রাহ্মনেতা কেশবচন্দ্র সেন
পরিব্রাজকাচার্য্যবর শ্রীশ্রীমৎ দূর্গাপ্রসন্ন পরমহংসদেব
আর্যভট্ট কাহিনী – এক অজানা কথা
গিরিশচন্দ্র ঘোষ
কঠিয়াবাবা রামদাস
সাধু নাগ মহাশয়
লঘিমাসিদ্ধ সাধু’র কথা
ঋষি অরবিন্দ’র কথা
অরবিন্দ ঘোষ
মহাত্মাজির পুণ্যব্রত
দুই দেহধারী সাধু
যুগজাগরণে যুগাচার্য স্বামী প্রণবানন্দজি মহারাজ
শ্রী শ্রী রাম ঠাকুর
বাচস্পতি অশোক কুমার চট্টোপাধ্যায়ের লেখা থেকে
মুসলমানে রহিম বলে হিন্দু পড়ে রামনাম
শ্রীশ্রীঠাকুর রামচন্দ্র দেব : প্রথম খণ্ড
শ্রীশ্রীঠাকুর রামচন্দ্র দেব: দ্বিতীয় খণ্ড
শ্রীশ্রীঠাকুর রামচন্দ্র দেব : অন্তিম খণ্ড
মহামহোপাধ্যায় কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ
শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর
শ্রীশ্রী ঠাকুর সত্যানন্দদেব
মহাতাপস বালানন্দ ব্রহ্মচারী: এক
মহাতাপস বালানন্দ ব্রহ্মচারী: দুই
মহাতাপস বালানন্দ ব্রহ্মচারী: তিন
সাধক তুকারাম
সাধক তুলসীদাস: এক
সাধক তুলসীদাস: দুই
সাধক তুলসীদাস: তিন
শ্রীশ্রী মোহনানন্দ স্বামী: এক
শ্রীশ্রী মোহনানন্দ স্বামী: দুই
শ্রীশ্রী মোহনানন্দ স্বামী: তিন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!