খরস্রোতা দ্বারকা নদীর পাড়ে তারাপীঠের মহাশ্মশান। অনেকের বিশ্বাস, এই শ্মশানে কারও দেহ চিতার আগুনে পঞ্চভূতে বিলীন হয়ে গেলে তার নির্বাণ লাভ হয়। শ্মশানের মধ্যে একধারে রয়েছে বশিষ্ঠ মুনির পঞ্চমুণ্ডির আসন। তার পাশেই মাটিতে শোয়ানো আছে মহাসাধক বামাক্ষেপার পুণ্য দেহ।
বেশ কয়েকটি কুকুরের সঙ্গে বামাক্ষেপার সখ্যতা ছিল চোখে পড়ার মতো। বাবার সঙ্গলাভ থেকে তারা বঞ্চিত হত না কখনও। একপাতে তাদের সঙ্গে দুপুরের আহার করতেন মহাতাপস। তবে দিনের বিভিন্ন সময়ে তাঁর আচরণে নানান পার্থক্য লক্ষ্য করা যেত। কখনও তিনি দিগম্বর অবস্থায় উন্মাদের মতো আচরণ করতেন।
আবার কখনও গাঁজা বা কারণ সেবন করে থাকতেন মহানন্দে। আবার কখনও বা আচরণ করতেন বালকের মতো। সেই তিনিও মাঝে মধ্যে হয়ে উঠতেন পিশাচবৎ।
শাস্ত্র অনুসারে জানা যায়, দত্তাত্রেয়, দুর্বাসা, বশিষ্ঠদেব, ভুণ্ড প্রভৃতি ছিলেন তারাসিদ্ধ। বামাক্ষেপার বাবা যখন প্রয়াত হন তখন তাঁর বয়স মাত্র আঠারো বছর। অনন্যপায় হয়ে মা রাজকুমারী দেবী বামাক্ষেপাকে মামার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।
মামা নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য চাষের কাজে বামাচরণকে মাঠে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু মাঠে গিয়ে তিনি অন্য ভাবে বিভোর হয়ে যান। তাঁর সেই অন্যমনস্কতার সুযোগে গরুগুলি অন্যের ফসলের ক্ষতি করে। দিনের পর দিন প্রতিবেশীদের অভিযোগ শুনে তাঁকে আবার ফিরিয়ে আনা হয়, আটলায়, নিজের বাড়িতে।
বামাচরণকে নিয়ে চিন্তায় পড়ে যায় মা রাজকুমারীদেবী। কি করে সংসার চলবে? ভবিষ্যতে বামা কি করবেন- এইসব সাতপাঁচ ভেবে রাজকুমারী দেবীর দুশ্চিন্তা ক্রমশই বৃদ্ধি পেতে থাকে। তারাপীঠের শ্মশানে তখন প্রায়শই আসতেন বিভিন্ন তন্ত্রসাধকেরা।
মাঝে মাঝে বামাচরণও ছুটে যেতেন সেখানে। গ্রামের বিভিন্ন প্রান্তে ফুটে থাকা ফুল তুলে ঢেলে দিতেন তারামায়ের পাদপদ্মে। তারাপীঠের প্রধান পুরোহিতের দায়িত্বে তখন ছিলেন মোক্ষদানন্দ। বাবা কৈলাসপতিও তখন সেখানে থাকতেন।
কৈলাসপতি বাবার সংসার জীবন সম্পর্কে তেমন কোনও পরিচয় জানা যায় না। অনেকে তাঁকে মণি গোঁসাই বলে ডাকতেন। আবার কেউ কেউ তাঁকে ক্ষেপা বলেও ডাকতেন। তিনি বশিষ্ঠাসনে বসার অধিকারী ছিলেন।
জনশ্রুতি আছে, তারাপীঠে আসার আগে তিনি বৃন্দাবনে ছিলেন। কৃষ্ণসাধনায় সফল হয়ে তিনি শ্যামা তথা তারা মায়ের সাধনায় ব্রতী হন তারাপীঠে এসে। তুলসীর মালা গলায় পরে, ভৈরবীকে সঙ্গে নিয়ে সর্বদা মেতে থাকতেন তারানন্দে। কুলার্ণবের আনন্দ স্তোত্রে বর্ণনা করা হয়েছে-
বামে রামা রমন কুশলা দক্ষিনে পানপাত্র
মগ্ৰে ন্যস্তং মরিচ সহিতং শূকরস্যোষ্ণমাংসম্।
স্কন্ধে বীণা ললিত সুভগা সদগুরুণাং প্রপঞ্চঃ।
কৌলোধর্মঃ পরগগহনো যোগিনামপ্যগম্যঃ।।
অর্থাৎ কোলের বাম পাশে রমণকুশলা রামা, দক্ষিণে পানপাত্র, সন্মুখে মরিচের সঙ্গে উষ্ণ বরাহ মাংস, স্কন্ধে সুললিতা মোহিনী বীণা এবং সদগুরুদের সঙ্গ- এই ধরনের ভাবনা এবং সাধারণ মানুষ তো বটেই মহাতাপসদেরও ধারণার বাইরে। বিজ্ঞজনের মতে, ক্ষেপাবাবার মধ্যে এই ভাব দেখা যেত।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, তিনিই বামাচরণকে মন্ত্রদীক্ষা দিয়েছিলেন। তারাপীঠে আরও একজন কৈলাসপতি বাবা ছিলেন। তিনি মোক্ষদানন্দবাবার শ্বশুরকে মন্ত্রদীক্ষা দেন। সাংসারিক জীবনে তাঁর নাম ছিল ভুবনমোহন মুখোপাধ্যায়। নদীয়া জেলার অধিবাসী মোক্ষদানন্দ ত্রিশ বছর বয়সে বিবাহিত জীবনের মোহত্যাগ করে সন্ন্যাস জীবন যাপনের উদ্দেশ্যে কাশীতে চলে যান। সেখানে তিনি ব্রহ্মানন্দের কাছে মন্ত্রদীক্ষা দেন।
স্বামী ব্রহ্মানন্দ তাঁকে বীরভূমের সতীপীঠে সাধনা করতে বলেন। তারাপীঠেই তাঁর সাধন জীবনের অনেকটা সময় কেটেছে। একসময় রামানন্দ মণ্ডলের মেয়ে শুভঙ্করীকে তিনি ভৈরবী হিসেবে গ্রহণ করেন। মোক্ষদানন্দ বাবার সঙ্গে বামাচরণের অত্যন্ত সুসম্পর্ক ছিল। তিনি ডাবুকে অনাদিলিঙ্গের মন্দির তৈরি করান।
শবদাহ বাহকেরা তখন রাজকুমারী দেবীর সৎকার করার তোড়জোড় করছেন। এমন সময় দেখা গেল, বামাক্ষেপা সাঁতরে এপারে চলে আসছেন ওপার থেকে। তারপর শবদেহ বাহকদের কাছ থেকে কেড়ে নিলেন মায়ের মৃতদেহ। একখণ্ড কাপড় দিয়ে মাকে পিঠে বেঁধে ঝাঁপিয়ে পড়লেন নদীর জলে। তারপর নদী পার হয়ে এসে লেলিহান আগুনের মাঝে চিরবিদায় দিলেন নিজের জন্মদাত্রীকে।
অনেকে তাঁকে ডাবুকের কৈলাসপতি বলেও সম্বোধন করতেন। বহরমপুরের তারাক্ষেপা, বামাক্ষেপার কাছে মন্ত্রদীক্ষা গ্রহণ করেন। তিনি একসময় তারাপীঠের মন্দিরের প্রধান হন। সেখানে সাধনায় সিদ্ধিলাভ করেন কমলাকান্ত ভট্টাচার্য, চক্রবর্তী বাবা, খাঁকি বাবা, দয়ানন্দ সরস্বতী, জটামা, নিগমানন্দ পরমহংস প্রমুখ।
দিন যত এগোয়, বামাচরণ ততই তারামায়ের টানে বিভোর হয়ে যান। আগে স্থানীয় মানুষেরা তাঁকে ডাকতেন ‘হাউড়ে’ বলে। কিছুদিন পর থেকে তাঁকে ডাকা হত ‘ক্ষেপা’ নামে। পিতৃহারা হবার পর বামাচরণ বুঝতে পেরেছিলেন সংসারে আর্থিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে।
তাই কখনও কখনও অভাবে জর্জরিত নিজের মাকে প্রবোধ দিয়ে বলতেন, বামুনের ছেলে আমি। তুমি দেখো, কোথাও না কোথাও অন্তত পুজো করার কাজ আমার জুটে যাবে। মা, তুমি চিন্তা করো না, দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।
কাজের চেষ্টাও করেন বামাক্ষেপা। দু’এক জায়গায় কাজও পান। কিন্তু কয়েকদিন পরে আবার ফিরে আসে নিজেদের বাড়িতে। খুব সুন্দর গান গাইতে পারতেন তিনি। পূর্বজন্মের সংস্কার অনুযায়ী তিনি বেশিদিন সেখানেও পারেন নি। স্থায়ীভাবে থাকবার জন্য চলে এসেছিলেন তারাপীঠের মহাশ্মশানে।
এইভাবে চলতে চলতে একসময় লক্ষ্য করা গিয়েছিল, শরীরের প্রতি তাঁর বিন্দুমাত্র দৃষ্টি নেই, খাওয়া-দাওয়ার ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। বেশিরভাগ সময়ই থাকতেন খোলা আকাশের নীচে। গরম-ঠাণ্ডা-বর্ষা সবেতেই তিনি একইভাবে বিচরণ করতেন।
এরই মধ্যে একদিন সকালে ঘটে গেলো এক বিস্ময়কর ঘটনা। বামাক্ষেপা স্নান করতে গিয়েছিলেন শ্মশানসংলগ্ন নদীতে। হঠাৎ তাঁর চোখে পড়ল নদীর ওপারে ছোট ভাই রামচরণ মায়ের মৃতদেহ সৎকার করার জন্য নিয়ে এসেছে। তখন ভরা বর্ষা। তাই কিছুতেই নদী পেরিয়ে ওপারে তারাপীঠের শ্মশানে রাজকুমারী দেবীর দেহ নিয়ে আসা সম্ভবপর নয়।
কিন্তু মহাসাধক মায়ের অন্তিম সময় কোনও বাঁধাই মানতে রাজী হননি। মনেপ্রাণে চেয়েছিলেন মায়ের মৃতদেহের সৎকার হোক তারাপীঠের মহাশ্মশানে, যেখানে এই পৃথিবীর সঙ্গে চিরবন্ধন থেকে প্রত্যেককে মুক্ত করে দেন স্বয়ং মা তারা।
শবদাহ বাহকেরা তখন রাজকুমারী দেবীর সৎকার করার তোড়জোড় করছেন। এমন সময় দেখা গেল, বামাক্ষেপা সাঁতরে এপারে চলে আসছেন ওপার থেকে। তারপর শবদেহ বাহকদের কাছ থেকে কেড়ে নিলেন মায়ের মৃতদেহ। একখণ্ড কাপড় দিয়ে মাকে পিঠে বেঁধে ঝাঁপিয়ে পড়লেন নদীর জলে। তারপর নদী পার হয়ে এসে লেলিহান আগুনের মাঝে চিরবিদায় দিলেন নিজের জন্মদাত্রীকে।
এমনও শোনা যায়, জনৈক তরুণী বিধবা অতি শুদ্ধ মনে তাঁর জন্য খাবার তৈরি করে আনেন। ক্ষেপাবাবা সন্তুষ্ট হয়ে তাকে আশীর্বাদ করে বলেন, মা তোমার ধনে পুত্রে লক্ষ্মী লাভ হবে। তাঁর সেই আশীর্বাদ পরবর্তী সময়ে সত্যে পরিণত হয়। এক ধনী ব্যবসায়ীর সঙ্গে সেই তরুণী বিধবার বিয়ে হয় এবং যথাসময়ে তিনি সন্তানের মা হন।
মায়ের শবদাহের পরে আবার সেই একই আচরণ। কোনও দিকে খেয়াল নেই। হঠাৎ আদ্যশ্রাদ্ধের দিন তিনেক আগে ছোটভাইকে আদেশের সুরে বললেন, দেখিস মায়ের শ্রাদ্ধের সময় আশেপাশের গ্রামের কেউ যেন অভুক্ত না থাকে। রামচরণসহ উপস্থিত সবাই তো ক্ষেপাবাবার সে কথায় হতবাক হয়ে গেলেন।
কিযে বলছেন তিনি! নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো তাঁদের অবস্থা। কিন্তু শ্রাদ্ধের দিন দেখা গেল, জানা-অজানা অনেক মানুষ থরে থরে উপাচার ও খাবার নিয়ে আসছেন। চারিদিক ভরে গেছে অগণিত অতিথির উপস্থিতিতে।
হঠাৎ আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে গেল। শুরু হল মেঘের প্রবল গর্জন। সবাই প্রমাদ গুনছেন কি হবে, তারই আশঙ্কায়! বামাক্ষেপা তখন বসে আছেন তারাপীঠের শ্মশানে আপন খেয়ালে। আকাশে মেঘ দেখে তিনি ছুটে এলেন নিজের বাড়িতে। ভাইকে সান্তনা দিয়ে বললেন, তোরা কোনও চিন্তা করিস না। তারামায়ের আশীর্বাদে সবকাজ নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়ে যাবে।
সত্যিই তাই হল। তারামায়ের জয়ধ্বনির মাঝে সবাই দেখলেন, আটলা গ্রামের আশেপাশে উন্মত্ত হাঁতির মতো মেঘবৃষ্টির দাপাদাপি। অথচ শ্রাদ্ধের জায়গার আশেপাশে এক ফোঁটাও বৃষ্টি পড়ছে না। অনির্বচনীয় আনন্দের মাঝে কয়েক শ’মানুষ সেই অভাবনীয় দৃশ্য প্রত্যক্ষ করলেন।
তথাকথিত জাতপাত কিছুই মানতেন না বামাক্ষেপা। তিনি সন্ধান করতেন প্রকৃত মানুষের। নন্দ হাড়ি একজন তথাকথিত পিছিয়ে পড়া মানুষ ছিল তাঁর অনুগত। একসময় নন্দ হাড়ির দুটি হাত কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হয়। ওই অবস্থাতেই সে মহাতাপসের খাবার জল তুলে দিত।
একজন তাঁকে প্রশ্ন করেন, বাবা! ও জাতে হাড়ি তার ওপর আবার কুষ্ঠরোগ, ওর দু’টো হাতে ছেয়ে গেছে। আপনার মতো মানুষ কি করে ওর হাতে জলগ্রহণ করছেন?
কথাগুলি শুনে প্রচণ্ড ক্ষেপে গিয়ে ক্ষেপাবাবা বলেছিলেন, আমার ইচ্ছে আমি ওর হাতে জল খাই। তাতে তোর কী? এমন আর কত অসুস্থ, পিছিয়ে পড়া মানুষজনকে তিনি সুস্থতার সন্ধান দিয়েছেন অলৌকিকভাবে। এমনকি মৃত্যু পথযাত্রী মানুষকেও তিনি ফিরিয়ে দিয়েছেন প্রাণ।
এমনও শোনা যায়, জনৈক তরুণী বিধবা অতি শুদ্ধ মনে তাঁর জন্য খাবার তৈরি করে আনেন। ক্ষেপাবাবা সন্তুষ্ট হয়ে তাকে আশীর্বাদ করে বলেন, মা তোমার ধনে পুত্রে লক্ষ্মী লাভ হবে। তাঁর সেই আশীর্বাদ পরবর্তী সময়ে সত্যে পরিণত হয়। এক ধনী ব্যবসায়ীর সঙ্গে সেই তরুণী বিধবার বিয়ে হয় এবং যথাসময়ে তিনি সন্তানের মা হন।
চক্রবর্তীবাবা তারাপীঠে থাকার সময় সেখানে আসেন সাধক নাপিত গোঁসাই। তাঁর আদিবাড়ি ছিল সাঁইথিয়ার কাছে দেবপুর গ্রামে। তিনি বেশ কিছুদিন সংসারজীবনে আবদ্ধ ছিলেন। বাড়িতে তাঁর স্ত্রী, কন্যা ছিল। তারাপীঠের লাগোয়া শ্মশান হল মুণ্ডমালিনীতলা। অনেকের মতে, দ্বিতীয় জায়গাটি হল তারাপীঠ মহাশ্মশানেরই অংশ।
১৩১৮ সালের শ্রাবণ মাস। বৃষ্টির প্রকোপে এক মিনিটও রেহাই মিলছে না। এমন সময় ক্ষেপাবাবা ভক্তদের নির্দেশ দিয়ে বললেন, মোক্ষদানন্দ বাবাকে যেখানে সমাধি দেওয়া হয়েছে সেখানেই যেন এ দেহকে সমাধিস্থ করা হয়। ২রা শ্রাবণ রাতে তিনি তারামায়ের নাম জপ করতে করতে তারাপীঠে মহাসমাধিতে লীন হয়ে যান।
তারাপীঠে ক্ষেপাবাবার আশীর্বাদ লাভ করেছিলেন চটক বাবাজী ও হরে গোঁসাই। ক্ষেপাবাবার শরীর চলে যাবার পর তাঁরা বাবাকে সুক্ষ্মভাবে দর্শন করেন। গোঁসাই খুব ভাল গান গাইতে পারতেন। শোনা যায়, গোঁসাই একসময় মা তারার জ্যোতি দর্শন করেন। বামাক্ষেপা তখন স্বমহিমায় বিরাজ করছেন তারাপীঠে।
সেসময় অনেক সাধকের আবির্ভাব হয় সেখানে। এদেরই একজন হলেন, পঞ্চানন মিশ্র। তিনি ছিলেন বিহারের মিথিলা অঞ্চলের বাসিন্দা। সব সময় মগ্ন থাকতেন তারামায়ের জপধ্যানে। অন্যদিকে তিনি ভজনা করতেন গোবিন্দেরও। পরবর্তীসময়ে তিনি ফিরে যান মিথিলাতে। সেখানেই তাঁর জীবনাবসান হয়। বামাক্ষেপার পরে তারাপীঠের উচ্চমানের সাধক হিসাবে প্রমথনাথ চক্রবর্তীর নাম শোনা গেছে।
১৩১৪ সালে তিনি তারাপীঠে আসেন। তাঁকে সবাই চক্রবর্তীবাবা বলে ডাকতেন। তারাপীঠের মহাশ্মশানে একটি উঁচু মাচানের উপর তৈরি কুটিরে তিনি সাধনভজনে নিজেকে ব্যস্ত রাখতেন। গায়ত্রী মন্ত্রের প্রতি তাঁর পূর্ণ আস্থা ছিল। একসময় তিনি ক্ষেপাবাবাকে পুরোপুরি ভুল বোঝেন। পরে অবশ্য তাঁর ভুল ভাঙে।
কিন্তু কখনো বলতেন না, আমি ঈশ্বরের প্রতিভূ ইত্যাদি। সবসময় বলতেন, তারামাকে ডাকো, তিনিই তোমায় কৃপা করবেন। অথচ তাঁর আশীর্বাদে অনেকে কঠিন রোগের হাত থেকে রক্ষা পান। বিশেষ সূত্রে জানা যায়, তিনি জনৈক ডেভিড আর্থার সাহেবের ছেলেকে মারণ ব্যাধি হিসেবে চিহ্নিত যক্ষারোগ থেকে মুক্ত করেন।
চক্রবর্তীবাবা তারাপীঠে থাকার সময় সেখানে আসেন সাধক নাপিত গোঁসাই। তাঁর আদিবাড়ি ছিল সাঁইথিয়ার কাছে দেবপুর গ্রামে। তিনি বেশ কিছুদিন সংসারজীবনে আবদ্ধ ছিলেন। বাড়িতে তাঁর স্ত্রী, কন্যা ছিল। তারাপীঠের লাগোয়া শ্মশান হল মুণ্ডমালিনীতলা। অনেকের মতে, দ্বিতীয় জায়গাটি হল তারাপীঠ মহাশ্মশানেরই অংশ।
নাপিত গোঁসাই সেখানে সাধনভজনে মেতে থাকতেন। মাত্র তেত্রিশ বছর বয়সে মহাসাধিকা আনন্দময়ী মা তারাপীঠে আসেন। এক ব্যতিক্রমী প্রেক্ষাপটে তিনি সেখানে আসার প্রেরণা পেয়েছিলেন তাঁর স্বামী রমণীমোহন চক্রবর্তীর কাছ থেকে।
তারাপীঠ থাকার সময় আনন্দময়ী মা নিজে রান্না করে স্থানীয় মহিলাদের রান্না করে খাওয়ান। আনন্দময়ী মা’র আশ্রম মারফৎ মায়ের সম্পর্কে কিছু বিচিত্র ঘটনার কথা জানা গেছে। সেখানে থাকার সময় মা আনন্দময়ী মেয়েদের উপবীত দিয়েছিলেন। এছাড়াও তিনি সেখানে আশ্রম ও বানলিঙ্গ শিব স্থাপন করেন।
………………………..
পুনপ্রচারে বিনীত: প্রণয় সেন
……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….
…………………………
আরও পড়ুন-
যোগীবর শ্যমাচরণ লাহিড়ী মহাশয়
মহাযোগী শ্রীশ্রী তৈলঙ্গস্বামী
ত্রৈলঙ্গ স্বামীর কিছু কথা
গাঁধীজিকে ক্রিয়াযোগে দীক্ষা দিয়েছিলেন তিনি
তারা মায়ের আদরের দুলাল ‘বামাক্ষেপা’
মহর্ষি মহেশ যোগীর কথা
স্বামী শ্রীযুক্তেশ্বরের দর্শনলাভ : যোগী-কথামৃত থেকে
‘বাবাজী’ আধুনিক ভারতের মহাযোগী
বিনিদ্র সাধু
রামদাস বাবাজী
সীতারাম
তারাপীঠের ‘বামদেব’
বহুবর্ষজীবি শ্রীশ্রী বরফানী দাদাজি
মহাবতার বাবাজীর দর্শন লাভ: এক
মহাবতার বাবাজীর দর্শন লাভ: দুই
যোগীবর শ্রীশ্রী অমল বিকাশ চৌধুরী: এক
যোগীবর শ্রীশ্রী অমল বিকাশ চৌধুরী: দুই
যোগীবর শ্রীশ্রী অমল বিকাশ চৌধুরী: তিন